ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

আরাফাত সামির আবির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ১৩ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তোমরা যারা এই ইউনিটের পরীক্ষায় বসতে চাও, তারা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে থাকবে তা নিয়ে থাকছে আজকের আলোচনা।

প্রতিদিন কত ঘণ্টা পড়াশোনা?
এর উত্তরে যেটা বলব, দিনে যত ঘণ্টা পড়লে ঘুমানোর আগে তুমি মনে করতে পারবে যে আজ তুমি কোনো ফাঁকি দাওনি, তোমার ততটুকুই পড়া উচিত। আমার মনে হয়, প্রতিদিন গড়ে ৬-৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করা একটা ভালো অনুশীলন; দীর্ঘ সময়ের চেয়েও ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনা করা বেশি জরুরি ভর্তি পরীক্ষার সময়ে।

শক্তিমত্তা-দুর্বলতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা
একজন মানুষের জন্য তার নিজেকে নিয়ে পুরোপুরি ধারণা থাকা সবচেয়ে জরুরি। নিজেকে নিয়ে SWOT (Strength, Weakness, Opportunity, Threat) অ্যানালাইসিস করতে পারো। এভাবে কোন বিষয়গুলোতে তুমি দুর্বল আর কোনগুলোতে তোমার প্রস্তুতি ভালো, সে-সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা রাখার চেষ্টা করতে পারো।

মানবণ্টন, বিগত বছরের প্রশ্ন সমন্ধে সম্যক ধারণা
প্রথমেই প্রকাশিত সার্কুলার থেকে নিজস্ব ইউনিটের মানবণ্টন, সময় এবং পুরো পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত ধারণা রাখতে হবে। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করলে নিজের অবস্থান এবং প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, যেটা প্রতিটি সাবজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ টপিক বুঝতে সাহায্য করবে।

বেশি বেশি অনুশীলন
বেশি বেশি পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করো। এই পরীক্ষা তোমার ভুলগুলো কাটাতে সাহায্য করবে। কোন বিষয়ে  কম নম্বর পাচ্ছ, কোন বিশেষ টপিকগুলো বারবার ভুল করছ—বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করো পরীক্ষাগুলোর ফলাফল থেকে।

আরাফাত সামির আবির

আরাফাত সামির আবির

লিখিত অংশে ভালো নম্বর
লিখিত অংশে তোমাকে খাতায় সৃজনশীলতা দেখাতে হবে। উত্তরপত্র অন্যদের চেয়ে আলাদা করতে হবে। সৃজনশীলতা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম। খাতায় উক্তি, চিত্র, গ্রাফ, চার্ট থাকলে ভালো নম্বর ওঠে। টু দ্য পয়েন্টে উত্তর করতে হবে। কারণ লিখিত পত্রে উত্তরের স্পেস নির্ধারিত করা থাকে। অনুবাদ ও শুদ্ধিকরণের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে।

আমি লিখিত অংশে লিখেছি ছোট ছোট করে কিন্তু সব লিখেছি, অন্য রকম করে লিখেছি। পরীক্ষার আগের দুই সপ্তাহ প্রতিদিন নিজে নিজে ৪০ মিনিটে (পরীক্ষায় ৪৫) লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার অনুশীলর করেছি এবং ট্রান্সলেশন থেকে শুরু করে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন—প্রতিটি টপিকের জন্য বিশেষ যত্ন নিয়েছি।

বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ
ইংরেজি: ভোকাবুলারি অংশটা প্রতিদিন রিভিশন দিতে হবে। Synonym, antonym, analogy, preposition, group verbs, spelling, phrase & idioms–অংশগুলো প্রতিদিন চর্চা করতে হবে। গ্রামার অংশের জন্য অনুশীলন করে সেন্স ডেভেলপ করার চেষ্টা করতে হবে।

বাংলা: বাংলায় টেক্সট বইয়ের গদ্য ও পদ্যের ওপর ভালো দখল রাখতে হবে। শব্দার্থ, পঙ্‌ক্তি, লেখক-কবিদের বিভিন্ন গ্রন্থ, শূন্যস্থান, সন্ধি, সমাস, বাগধারা, শব্দ, কারক থেকে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন হয়ে থাকে।

হিসাববিজ্ঞান: থিওরি এবং অঙ্ক—দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ঘড়ি ধরে দ্রুততার সঙ্গে নির্ভুলভাবে সমস্যার সমাধান করার অনুশীলন করতে হবে।

ফিন্যান্স/মার্কেটিং: ফিন্যান্সে সূত্রের প্রয়োগ, ব্যাংকিং, বিমা থেকে সম্প্রতি অনেক বেশি প্রশ্ন হচ্ছে, ক্রিটিক্যাল থিংকিং টাইপের প্রশ্ন বেশি আসছে। মার্কেটিংয়ের জন্য গতানুগতিক প্রস্তুতিই যথেষ্ট।

ব্যবসায় নীতি: খুব সহজেই নম্বর তোলা যায় এ বিষয়ে। তাই চান্স পেতে হলে এই বিষয়ের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি আবশ্যক। থিওরিটিক্যাল প্রশ্নই বেশি আসে এখানে। বিভিন্ন আইন, তত্ত্ব, ব্যবস্থাপনা বিশারদ, ব্যবসায় পরিবেশ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক।

সাধারণ জ্ঞান: যারা বিষয় পরিবর্তন ইউনিটে পরীক্ষা দেবে, তারা সাধারণ জ্ঞানের একটা সহায়ক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারো। সাধারণ জ্ঞানে সাম্প্রতিক বিষয়াবলি, সাধারণ গণিত, আইসিটি থেকে বর্তমানে বেশি প্রশ্ন আসে। অল্প এবং কৌশলী প্রস্তুতিতে এই ইউনিটে খুব ভালো করা সম্ভব।

নিজস্বতা বজায় রাখা
নিজের কাজে ও কৌশলে ফ্লেক্সিবিলিটি থাকা ভালো। পরীক্ষার আগে নিজেকে সুস্থ রাখতে হবে। পরীক্ষার দিনে যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে পরীক্ষার হলে রওনা দিতে হবে। কঠিন পরিস্থিতিতেও যারা নিজের নিজস্বতা বজায় রাখতে পারে, নিজেকে শান্ত রাখতে পারে, তারা ঠিকই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। সবার জন্য শুভকামনা।

আরাফাত সামির আবির, ফিন্যান্স বিভাগ, ১ম স্থান, গ ইউনিট (২০২০-২১), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

ঢাবির ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

আরাফাত সামির আবির

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল। ছবি: সংগৃহীত

আগামী ১৩ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তোমরা যারা এই ইউনিটের পরীক্ষায় বসতে চাও, তারা কীভাবে প্রস্তুতি নিলে অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে থাকবে তা নিয়ে থাকছে আজকের আলোচনা।

প্রতিদিন কত ঘণ্টা পড়াশোনা?
এর উত্তরে যেটা বলব, দিনে যত ঘণ্টা পড়লে ঘুমানোর আগে তুমি মনে করতে পারবে যে আজ তুমি কোনো ফাঁকি দাওনি, তোমার ততটুকুই পড়া উচিত। আমার মনে হয়, প্রতিদিন গড়ে ৬-৮ ঘণ্টা পড়াশোনা করা একটা ভালো অনুশীলন; দীর্ঘ সময়ের চেয়েও ধারাবাহিকভাবে পড়াশোনা করা বেশি জরুরি ভর্তি পরীক্ষার সময়ে।

শক্তিমত্তা-দুর্বলতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা
একজন মানুষের জন্য তার নিজেকে নিয়ে পুরোপুরি ধারণা থাকা সবচেয়ে জরুরি। নিজেকে নিয়ে SWOT (Strength, Weakness, Opportunity, Threat) অ্যানালাইসিস করতে পারো। এভাবে কোন বিষয়গুলোতে তুমি দুর্বল আর কোনগুলোতে তোমার প্রস্তুতি ভালো, সে-সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা রাখার চেষ্টা করতে পারো।

মানবণ্টন, বিগত বছরের প্রশ্ন সমন্ধে সম্যক ধারণা
প্রথমেই প্রকাশিত সার্কুলার থেকে নিজস্ব ইউনিটের মানবণ্টন, সময় এবং পুরো পরীক্ষাপদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত ধারণা রাখতে হবে। বিগত বছরের প্রশ্ন সমাধান করলে নিজের অবস্থান এবং প্রশ্নের প্যাটার্ন সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়, যেটা প্রতিটি সাবজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ টপিক বুঝতে সাহায্য করবে।

বেশি বেশি অনুশীলন
বেশি বেশি পরীক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করো। এই পরীক্ষা তোমার ভুলগুলো কাটাতে সাহায্য করবে। কোন বিষয়ে  কম নম্বর পাচ্ছ, কোন বিশেষ টপিকগুলো বারবার ভুল করছ—বিশ্লেষণ করতে চেষ্টা করো পরীক্ষাগুলোর ফলাফল থেকে।

আরাফাত সামির আবির

আরাফাত সামির আবির

লিখিত অংশে ভালো নম্বর
লিখিত অংশে তোমাকে খাতায় সৃজনশীলতা দেখাতে হবে। উত্তরপত্র অন্যদের চেয়ে আলাদা করতে হবে। সৃজনশীলতা একেকজনের ক্ষেত্রে একেক রকম। খাতায় উক্তি, চিত্র, গ্রাফ, চার্ট থাকলে ভালো নম্বর ওঠে। টু দ্য পয়েন্টে উত্তর করতে হবে। কারণ লিখিত পত্রে উত্তরের স্পেস নির্ধারিত করা থাকে। অনুবাদ ও শুদ্ধিকরণের ওপর বিশেষ জোর দিতে হবে।

আমি লিখিত অংশে লিখেছি ছোট ছোট করে কিন্তু সব লিখেছি, অন্য রকম করে লিখেছি। পরীক্ষার আগের দুই সপ্তাহ প্রতিদিন নিজে নিজে ৪০ মিনিটে (পরীক্ষায় ৪৫) লিখিত পরীক্ষা দেওয়ার অনুশীলর করেছি এবং ট্রান্সলেশন থেকে শুরু করে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন—প্রতিটি টপিকের জন্য বিশেষ যত্ন নিয়েছি।

বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ
ইংরেজি: ভোকাবুলারি অংশটা প্রতিদিন রিভিশন দিতে হবে। Synonym, antonym, analogy, preposition, group verbs, spelling, phrase & idioms–অংশগুলো প্রতিদিন চর্চা করতে হবে। গ্রামার অংশের জন্য অনুশীলন করে সেন্স ডেভেলপ করার চেষ্টা করতে হবে।

বাংলা: বাংলায় টেক্সট বইয়ের গদ্য ও পদ্যের ওপর ভালো দখল রাখতে হবে। শব্দার্থ, পঙ্‌ক্তি, লেখক-কবিদের বিভিন্ন গ্রন্থ, শূন্যস্থান, সন্ধি, সমাস, বাগধারা, শব্দ, কারক থেকে প্রতিনিয়ত প্রশ্ন হয়ে থাকে।

হিসাববিজ্ঞান: থিওরি এবং অঙ্ক—দুটোই সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ঘড়ি ধরে দ্রুততার সঙ্গে নির্ভুলভাবে সমস্যার সমাধান করার অনুশীলন করতে হবে।

ফিন্যান্স/মার্কেটিং: ফিন্যান্সে সূত্রের প্রয়োগ, ব্যাংকিং, বিমা থেকে সম্প্রতি অনেক বেশি প্রশ্ন হচ্ছে, ক্রিটিক্যাল থিংকিং টাইপের প্রশ্ন বেশি আসছে। মার্কেটিংয়ের জন্য গতানুগতিক প্রস্তুতিই যথেষ্ট।

ব্যবসায় নীতি: খুব সহজেই নম্বর তোলা যায় এ বিষয়ে। তাই চান্স পেতে হলে এই বিষয়ের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি আবশ্যক। থিওরিটিক্যাল প্রশ্নই বেশি আসে এখানে। বিভিন্ন আইন, তত্ত্ব, ব্যবস্থাপনা বিশারদ, ব্যবসায় পরিবেশ প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ টপিক।

সাধারণ জ্ঞান: যারা বিষয় পরিবর্তন ইউনিটে পরীক্ষা দেবে, তারা সাধারণ জ্ঞানের একটা সহায়ক প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে পারো। সাধারণ জ্ঞানে সাম্প্রতিক বিষয়াবলি, সাধারণ গণিত, আইসিটি থেকে বর্তমানে বেশি প্রশ্ন আসে। অল্প এবং কৌশলী প্রস্তুতিতে এই ইউনিটে খুব ভালো করা সম্ভব।

নিজস্বতা বজায় রাখা
নিজের কাজে ও কৌশলে ফ্লেক্সিবিলিটি থাকা ভালো। পরীক্ষার আগে নিজেকে সুস্থ রাখতে হবে। পরীক্ষার দিনে যথেষ্ট সময় হাতে নিয়ে পরীক্ষার হলে রওনা দিতে হবে। কঠিন পরিস্থিতিতেও যারা নিজের নিজস্বতা বজায় রাখতে পারে, নিজেকে শান্ত রাখতে পারে, তারা ঠিকই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে। সবার জন্য শুভকামনা।

আরাফাত সামির আবির, ফিন্যান্স বিভাগ, ১ম স্থান, গ ইউনিট (২০২০-২১), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়