তুরস্কে উচ্চশিক্ষা: বুর্সলারি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করবেন যেভাবে

মো. অলি উল্লাহ

তুরস্ক বুর্সলারি স্কলারশিপ তুরস্ক সরকারের দেওয়া বৃত্তি, যা সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য। দুই দশক ধরে শিক্ষা খাতে ব্যাপক আধুনিকায়নের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বের প্রায় ১৭২টি দেশ থেকে ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এই বৃত্তির আবেদন ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে; যা চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আবেদন করার সুযোগ রয়েছে অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডিতে।

এটি তুরস্ক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রজেক্ট। তারা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে ২০১২ সাল থেকে বৃহৎ আকারে পুরো পৃথিবী থেকে ছাত্র আনা শুরু করে। সে বছরই বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপে তুরস্কতে আসা শুরু করেন। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডিতে সর্বসাকল্যে ৭০-৮০ জনকে এই স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। গত বছর মোট আবেদন করেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার।

তুরস্কের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়
তুরস্কতে বর্তমানে ২০৯টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যার মধ্যে ৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিংয়ে ওপরের সারিতে। এর মধ্যে কয়েকটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে—মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, বোয়াজিসি ইউনিভার্সিটি, ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা-ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটি, হাজেতেপে ইউনিভার্সিটি, এগে ইউনিভার্সিটি, ডকুজ এইলুল ইউনিভার্সিটি।

সুযোগ-সুবিধা

  • হোস্টেল: অনার্সের ছাত্রদের জন্য থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রি। মাস্টার্স ও পিএইচডির ছাত্ররা প্রথম বছর এই সুবিধা পাবেন। দ্বিতীয় বছর থেকে তাঁদের জন্য প্রতি মাসে থাকা-খাওয়া বাবদ নগদ দেবে। কেউ চাইলে ফ্যামিলিসহ থাকতে পারবেন।
  • সরকারি হেলথ ইনস্যুরেন্স
  • ইউনিভার্সিটি টিউশন ফি
  • মাসিক বৃত্তি বাবদ অনার্সে ১ হাজার ৫০০ লিরা, মাস্টার্সে ২ হাজার লিরা ও পিএইচডিতে ২ হাজার ৫০০ লিরা।
  • প্রথমবার তুরস্কতে আসার সময় এবং কোর্স শেষে দেশে যাওয়ার সময় মোট দুইবার বিমানের টিকিট দেওয়া হয়।
  • প্রথম এক বছর (৯ মাস) ফ্রি তুর্কি ভাষা শিক্ষা কোর্স।
  • ইউনিভার্সিটির মূল কোর্সে ভালো রেজাল্ট থাকলে ইরাসমুসসহ বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে ইউরোপের যেকোনো দেশে এক সেমিস্টার/ইয়ার পড়ার সুযোগ।

আবেদনের সময়কাল 
প্রতিবছর জানুয়ারির মাঝামাঝি শুরু হয়ে প্রায় এক মাস চলে। এ বছর ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় শেষ হবে। এই সময়ের মধ্যে যেকোনো দিন আবেদন করা যাবে। একসঙ্গে পুরো আবেদন শেষ করতে হবে এ রকম কোনো শর্ত নেই। প্রথম দিন শুরু করে শেষ দিনও কমপ্লিট করতে পারেন।

যা যা লাগবে

  • অনার্সের জন্য আবেদন করতে আপনার এসএসসি/দাখিল এবং এইচএসসি/আলিম পরীক্ষায় ন্যূনতম ৭০ শতাংশ মার্কস থাকতে হবে। শুধু মেডিকেলে আবেদনের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ মার্কস থাকতে হবে।
  • মাস্টার্সের জন্য অনার্সের রেজাল্টে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ এবং এইচএসসির ৭০ শতাংশ মার্কস থাকতে হবে।
  • পিএইচডির জন্য আবেদন করতে অনার্স ও মাস্টার্সে ৭৫ শতাংশ মার্কস থাকা লাগবে, পাশাপাশি অনার্সের ৭৫ শতাংশ।

বি.দ্র.: অনার্সের জন্য: এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ মার্কস সমান বাংলাদেশের জিপিএ-৩.৪০।

মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে ৭৫ শতাংশ মার্কস সমান বাংলাদেশের জিপিএ-৩.৬৭ এবং অনার্সে সিজিপিএ-২.৯৩ (মাস্টার্সের জন্যও প্রযোজ্য)। মেডিকেলের জন্য ৯০ শতাংশ মার্কস সমান জিপিএ-৪.৪৫। আবেদনের বিস্তারিত জানতে ব্রাউজ করুন

বয়সসীমা 
১০ জানুয়ারি ২০২৩ অনুযায়ী বয়সের হিসাব করতে হবে। অনার্সের জন্য আবেদন করতে সর্বোচ্চ বয়স ২১ বছর বা তার কম হতে হবে। মাস্টার্সের জন্য সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর বা তার কম হতে হবে। পিএইচডির জন্য আবেদন করতে সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর বা তার কম হতে হবে। রিসার্চ/পোস্ট ডক্টরেট প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে সর্বোচ্চ বয়স ৪৫ বছর বা তার কম হতে হবে।

পরামর্শ 
যেহেতু তুরস্ক বুর্সলারি স্কলারশিপে আবেদনের জন্য প্রফেসর বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে আবেদন করতে হয় না, স্কলারশিপের ওয়েবসাইটে গিয়ে একবার আবেদন করলেই হয়। সুতরাং সততা ও দক্ষতার সঙ্গে নিজের শিক্ষা জীবন, আপনার যোগ্যতা, তীব্র আগ্রহ ও কেন তুরস্ক আসতে চান, সবকিছুর সমন্বয়ে একটা সৃজনশীল উপস্থাপনা স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি) থাকাটা খুব জরুরি। একই সঙ্গে প্রপোজালটাও সুস্পষ্ট এবং একাডেমিকেলি খুবই চমৎকার হওয়া জরুরি। যেহেতু এই স্কলারশিপ খুবই প্রতিযোগিতামূলক, তাই আপনার সব অর্জন ও এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটির প্রমাণপত্র বা সার্টিফিকেট আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে, এগুলো দিতেও ভুলবেন না।

মো. অলি উল্লাহ, পিএইচডি গবেষক, ইস্তাম্বুল মেদেনিয়েত ইউনিভার্সিটি, তুরস্ক।
অনুলিখন: মো. আশিকুর রহমান

তুরস্কে উচ্চশিক্ষা: বুর্সলারি স্কলারশিপের জন্য আবেদন করবেন যেভাবে

মো. অলি উল্লাহ

তুরস্ক বুর্সলারি স্কলারশিপ তুরস্ক সরকারের দেওয়া বৃত্তি, যা সব দেশের জন্যই প্রযোজ্য। দুই দশক ধরে শিক্ষা খাতে ব্যাপক আধুনিকায়নের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষার জন্য বিশ্বের প্রায় ১৭২টি দেশ থেকে ৫ হাজার শিক্ষার্থীকে এই স্কলারশিপ দেওয়া হয়। এই বৃত্তির আবেদন ১০ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে; যা চলবে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আবেদন করার সুযোগ রয়েছে অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডিতে।

এটি তুরস্ক সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রজেক্ট। তারা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে ২০১২ সাল থেকে বৃহৎ আকারে পুরো পৃথিবী থেকে ছাত্র আনা শুরু করে। সে বছরই বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা এই স্কলারশিপে তুরস্কতে আসা শুরু করেন। প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অনার্স, মাস্টার্স ও পিএইচডিতে সর্বসাকল্যে ৭০-৮০ জনকে এই স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। গত বছর মোট আবেদন করেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার।

তুরস্কের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়
তুরস্কতে বর্তমানে ২০৯টি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, যার মধ্যে ৫০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় ওয়ার্ল্ড র‍্যাঙ্কিংয়ে ওপরের সারিতে। এর মধ্যে কয়েকটি সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে—মিডল ইস্ট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, বোয়াজিসি ইউনিভার্সিটি, ইস্তাম্বুল টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা-ইস্তাম্বুল ইউনিভার্সিটি, হাজেতেপে ইউনিভার্সিটি, এগে ইউনিভার্সিটি, ডকুজ এইলুল ইউনিভার্সিটি।

সুযোগ-সুবিধা

  • হোস্টেল: অনার্সের ছাত্রদের জন্য থাকা-খাওয়া সম্পূর্ণ ফ্রি। মাস্টার্স ও পিএইচডির ছাত্ররা প্রথম বছর এই সুবিধা পাবেন। দ্বিতীয় বছর থেকে তাঁদের জন্য প্রতি মাসে থাকা-খাওয়া বাবদ নগদ দেবে। কেউ চাইলে ফ্যামিলিসহ থাকতে পারবেন।
  • সরকারি হেলথ ইনস্যুরেন্স
  • ইউনিভার্সিটি টিউশন ফি
  • মাসিক বৃত্তি বাবদ অনার্সে ১ হাজার ৫০০ লিরা, মাস্টার্সে ২ হাজার লিরা ও পিএইচডিতে ২ হাজার ৫০০ লিরা।
  • প্রথমবার তুরস্কতে আসার সময় এবং কোর্স শেষে দেশে যাওয়ার সময় মোট দুইবার বিমানের টিকিট দেওয়া হয়।
  • প্রথম এক বছর (৯ মাস) ফ্রি তুর্কি ভাষা শিক্ষা কোর্স।
  • ইউনিভার্সিটির মূল কোর্সে ভালো রেজাল্ট থাকলে ইরাসমুসসহ বিভিন্ন এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামে ইউরোপের যেকোনো দেশে এক সেমিস্টার/ইয়ার পড়ার সুযোগ।

আবেদনের সময়কাল 
প্রতিবছর জানুয়ারির মাঝামাঝি শুরু হয়ে প্রায় এক মাস চলে। এ বছর ২০২৩ সালের ১০ জানুয়ারি আবেদনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ২০ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সময় রাত ৩টায় শেষ হবে। এই সময়ের মধ্যে যেকোনো দিন আবেদন করা যাবে। একসঙ্গে পুরো আবেদন শেষ করতে হবে এ রকম কোনো শর্ত নেই। প্রথম দিন শুরু করে শেষ দিনও কমপ্লিট করতে পারেন।

যা যা লাগবে

  • অনার্সের জন্য আবেদন করতে আপনার এসএসসি/দাখিল এবং এইচএসসি/আলিম পরীক্ষায় ন্যূনতম ৭০ শতাংশ মার্কস থাকতে হবে। শুধু মেডিকেলে আবেদনের ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ মার্কস থাকতে হবে।
  • মাস্টার্সের জন্য অনার্সের রেজাল্টে ন্যূনতম ৭৫ শতাংশ এবং এইচএসসির ৭০ শতাংশ মার্কস থাকতে হবে।
  • পিএইচডির জন্য আবেদন করতে অনার্স ও মাস্টার্সে ৭৫ শতাংশ মার্কস থাকা লাগবে, পাশাপাশি অনার্সের ৭৫ শতাংশ।

বি.দ্র.: অনার্সের জন্য: এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ৭০ শতাংশ মার্কস সমান বাংলাদেশের জিপিএ-৩.৪০।

মাস্টার্স ও পিএইচডির জন্য এসএসসি ও এইচএসসিতে ৭৫ শতাংশ মার্কস সমান বাংলাদেশের জিপিএ-৩.৬৭ এবং অনার্সে সিজিপিএ-২.৯৩ (মাস্টার্সের জন্যও প্রযোজ্য)। মেডিকেলের জন্য ৯০ শতাংশ মার্কস সমান জিপিএ-৪.৪৫। আবেদনের বিস্তারিত জানতে ব্রাউজ করুন

বয়সসীমা 
১০ জানুয়ারি ২০২৩ অনুযায়ী বয়সের হিসাব করতে হবে। অনার্সের জন্য আবেদন করতে সর্বোচ্চ বয়স ২১ বছর বা তার কম হতে হবে। মাস্টার্সের জন্য সর্বোচ্চ বয়স ৩০ বছর বা তার কম হতে হবে। পিএইচডির জন্য আবেদন করতে সর্বোচ্চ বয়স ৩৫ বছর বা তার কম হতে হবে। রিসার্চ/পোস্ট ডক্টরেট প্রোগ্রামের জন্য আবেদন করতে সর্বোচ্চ বয়স ৪৫ বছর বা তার কম হতে হবে।

পরামর্শ 
যেহেতু তুরস্ক বুর্সলারি স্কলারশিপে আবেদনের জন্য প্রফেসর বা বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে আবেদন করতে হয় না, স্কলারশিপের ওয়েবসাইটে গিয়ে একবার আবেদন করলেই হয়। সুতরাং সততা ও দক্ষতার সঙ্গে নিজের শিক্ষা জীবন, আপনার যোগ্যতা, তীব্র আগ্রহ ও কেন তুরস্ক আসতে চান, সবকিছুর সমন্বয়ে একটা সৃজনশীল উপস্থাপনা স্টেটমেন্ট অব পারপাস (এসওপি) থাকাটা খুব জরুরি। একই সঙ্গে প্রপোজালটাও সুস্পষ্ট এবং একাডেমিকেলি খুবই চমৎকার হওয়া জরুরি। যেহেতু এই স্কলারশিপ খুবই প্রতিযোগিতামূলক, তাই আপনার সব অর্জন ও এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটির প্রমাণপত্র বা সার্টিফিকেট আপনাকে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে রাখবে, এগুলো দিতেও ভুলবেন না।

মো. অলি উল্লাহ, পিএইচডি গবেষক, ইস্তাম্বুল মেদেনিয়েত ইউনিভার্সিটি, তুরস্ক।
অনুলিখন: মো. আশিকুর রহমান