সিকৃবির উপাচার্য নিয়োগ

দুর্নীতিবাজ জামাল তালিকার শীর্ষে!

শিক্ষক-কর্মকর্তারা হতবাক * প্রভাব খাটিয়ে অধ্যাপক, জোট সরকারের আমলেও ছিলেন ক্ষমতাধর

যুগান্তর প্রতিবেদন

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) উপাচার্য নিয়োগ তালিকার শীর্ষে দুর্নীতিবাজ অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার নাম থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মকর্তারা হতবাক হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সিকৃবির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিয়োগ বাণিজ্যের মূল হোতা অধ্যাপক জামাল ভূঁইয়া। জোট সরকারের আমলে দল পালটিয়ে ও নিয়ম ভেঙে তিনি অধ্যাপক হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪ জন অধ্যাপকের মধ্যে শুধু তারই পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রি নেই। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার থাকাকালে তার সীমাহীন দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে মাত্র দেড় বছরের মধ্যে উপাচার্য ড. আবদুল আওয়াল পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। জামাল ভূঁইয়ার ব্যক্তিজীবনও নানা স্ক্যান্ডালে ভরা। ২৫ বছরের সংসার ভেঙে সম্প্রতি তিনি আবার বিয়ে করেছেন। তার ছেলে-মেয়েরা প্রথম স্ত্রীর কাছে রয়েছেন।

জানা গেছে, এ বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর উপাচার্য হিসাবে প্রফেসর ড. মতিয়ার রহমান হাওলাদারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। অধ্যাপক ড. মেহেদি হাসান খান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তিনজনের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে পাঠিয়েছে। এ খবরে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে নানা সমালোচনা। ছাত্রজীবনে ছাত্রফ্রন্টের রাজনীতি করা জামাল ভূঁইয়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯৪ সালে ভেটেরিনারি সার্জন হিসাব উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে তিনি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজের প্রভাষক হন। দুই বছর ১০ মাস ছয় দিন শিক্ষকতার পর ১৯৯৯ সালে তিনি আবারও উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে ফিরে যান।

২০০০ সালের ৯ অক্টোবর সহকারী অধ্যাপক হিসাবে তিনি সিলেট ভেটেরিনারি কলেজে যোগ দেন। তেলবাজি করে জোট সরকারের আমলে মাত্র দুই বছর ছয় মাস পাঁচ দিনের মধ্যে তিনি সহযোগী অধ্যাপক এবং এর এক বছর দুই মাস পর অধ্যাপক বনে যান। যদিও চাকরি বিধি অনুযায়ী প্রতিটি পদোন্নতিতেই ছয় বছর করে প্রয়োজন ছিল। ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর থেকে সিকৃবির অধ্যাপক হিসাবে জামাল ভূঁইয়া শিক্ষকতা শুরু করেন।

সিকৃবির প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইকবাল হোসেনের প্রিয়পাত্র ছিলেন জামাল ভূঁইয়া। এ কারণে তাকে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ড. আবদুল আওয়াল উপাচার্য হিসাবে যোগ দেওয়ার পর জামাল ভূঁইয়ার ভাগ্য ফিরে যায়। একাধারে তিনি সিন্ডিকেট সদস্য, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক, আবার বিভাগীয় পরিচালকের দায়িত্ব হাতিয়ে নেন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বড় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। ২০১০ সালে কোনো রকম নীতিমালা ছাড়াই ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে ১০৭ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ড করেন তিনি। এ নিয়ে দৈনিক যুগান্তরসহ একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় দুর্নীতির খবর ছাপা হয়। জামাল ভূঁইয়ার দুর্নীতি ঠেকাতে না পেরে মাত্র দেড় বছরের মাথায় ২০১০ সালে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন উপাচার্য ড. আওয়াল। একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নতুন উপাচার্য হিসাবে যোগ দেন অধ্যাপক ড. শহিদুল্লাহ তালুকদার। নতুন উপাচার্যেরও প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন জামাল ভূঁইয়া। এ কারণে তার অবৈধ নিয়োগ-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে কোনো সমস্যা হয়নি। গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কোটি টাকার নিয়োগ-বাণিজ্যের খবর প্রকাশিত হয়। এ অবৈধ নিয়োগ বন্ধে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী সেই নিয়োগ বোর্ডই বাতিল করেন। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ জামাল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ অনাকাঙ্ক্ষিত অনভিপ্রেত’ লেখা লিফলেট বিতরণের অভিযোগও ওঠে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নৈতিক স্থলনের অভিযোগ তাকে উপাচার্য করা হলে ইমেজ সংকটে পড়বে সিকৃবি। তিনি বলেন, শুভবোধ ও শুভ চর্চার সর্বোচ্চ কেন্দ্র হলো বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সেটির মাথায় পচন ধরলে সিকৃবির ভবিষ্যৎ বলে কিছু থাকবে না। আমি চাই-ভালো গুণের অধিকারীকে উপাচার্য পদে দায়িত্ব দেওয়া হোক। অন্যথায় মূল্যবোধের পরাজয় ঘটবে।

এ সব অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া যুগান্তরকে জানান, সে সময় নিয়োগ-বাণিজ্যের যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল-তাতে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ ছাড়া জোট সরকারের আমলে নিয়ম ভেঙে অধ্যাপক হওয়ার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।

সিকৃবির উপাচার্য নিয়োগ

দুর্নীতিবাজ জামাল তালিকার শীর্ষে!

শিক্ষক-কর্মকর্তারা হতবাক * প্রভাব খাটিয়ে অধ্যাপক, জোট সরকারের আমলেও ছিলেন ক্ষমতাধর

যুগান্তর প্রতিবেদন

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিকৃবি) উপাচার্য নিয়োগ তালিকার শীর্ষে দুর্নীতিবাজ অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ভূঁইয়ার নাম থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মকর্তারা হতবাক হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, সিকৃবির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নিয়োগ বাণিজ্যের মূল হোতা অধ্যাপক জামাল ভূঁইয়া। জোট সরকারের আমলে দল পালটিয়ে ও নিয়ম ভেঙে তিনি অধ্যাপক হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৪ জন অধ্যাপকের মধ্যে শুধু তারই পিএইচডি ও পোস্ট ডক্টরেট ডিগ্রি নেই। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার থাকাকালে তার সীমাহীন দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ হয়ে মাত্র দেড় বছরের মধ্যে উপাচার্য ড. আবদুল আওয়াল পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। জামাল ভূঁইয়ার ব্যক্তিজীবনও নানা স্ক্যান্ডালে ভরা। ২৫ বছরের সংসার ভেঙে সম্প্রতি তিনি আবার বিয়ে করেছেন। তার ছেলে-মেয়েরা প্রথম স্ত্রীর কাছে রয়েছেন।

জানা গেছে, এ বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর উপাচার্য হিসাবে প্রফেসর ড. মতিয়ার রহমান হাওলাদারের মেয়াদ শেষ হয়েছে। অধ্যাপক ড. মেহেদি হাসান খান ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। নতুন উপাচার্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তিনজনের নাম প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে পাঠিয়েছে। এ খবরে শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে নানা সমালোচনা। ছাত্রজীবনে ছাত্রফ্রন্টের রাজনীতি করা জামাল ভূঁইয়া বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯৪ সালে ভেটেরিনারি সার্জন হিসাব উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের শেষ দিকে তিনি চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি কলেজের প্রভাষক হন। দুই বছর ১০ মাস ছয় দিন শিক্ষকতার পর ১৯৯৯ সালে তিনি আবারও উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে ফিরে যান।

২০০০ সালের ৯ অক্টোবর সহকারী অধ্যাপক হিসাবে তিনি সিলেট ভেটেরিনারি কলেজে যোগ দেন। তেলবাজি করে জোট সরকারের আমলে মাত্র দুই বছর ছয় মাস পাঁচ দিনের মধ্যে তিনি সহযোগী অধ্যাপক এবং এর এক বছর দুই মাস পর অধ্যাপক বনে যান। যদিও চাকরি বিধি অনুযায়ী প্রতিটি পদোন্নতিতেই ছয় বছর করে প্রয়োজন ছিল। ২০০৬ সালের ২ নভেম্বর থেকে সিকৃবির অধ্যাপক হিসাবে জামাল ভূঁইয়া শিক্ষকতা শুরু করেন।

সিকৃবির প্রথম উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইকবাল হোসেনের প্রিয়পাত্র ছিলেন জামাল ভূঁইয়া। এ কারণে তাকে ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০০৯ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ড. আবদুল আওয়াল উপাচার্য হিসাবে যোগ দেওয়ার পর জামাল ভূঁইয়ার ভাগ্য ফিরে যায়। একাধারে তিনি সিন্ডিকেট সদস্য, ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা পরিচালক, আবার বিভাগীয় পরিচালকের দায়িত্ব হাতিয়ে নেন। ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের দায়িত্বে থাকা অবস্থায় বড় নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। ২০১০ সালে কোনো রকম নীতিমালা ছাড়াই ঘুস বাণিজ্যের মাধ্যমে ১০৭ জনের নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ড করেন তিনি। এ নিয়ে দৈনিক যুগান্তরসহ একাধিক জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় দুর্নীতির খবর ছাপা হয়। জামাল ভূঁইয়ার দুর্নীতি ঠেকাতে না পেরে মাত্র দেড় বছরের মাথায় ২০১০ সালে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন উপাচার্য ড. আওয়াল। একই বছরের ৯ সেপ্টেম্বর নতুন উপাচার্য হিসাবে যোগ দেন অধ্যাপক ড. শহিদুল্লাহ তালুকদার। নতুন উপাচার্যেরও প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন জামাল ভূঁইয়া। এ কারণে তার অবৈধ নিয়োগ-বাণিজ্য চালিয়ে যেতে কোনো সমস্যা হয়নি। গণমাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কোটি টাকার নিয়োগ-বাণিজ্যের খবর প্রকাশিত হয়। এ অবৈধ নিয়োগ বন্ধে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী সেই নিয়োগ বোর্ডই বাতিল করেন। এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ জামাল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ অনাকাঙ্ক্ষিত অনভিপ্রেত’ লেখা লিফলেট বিতরণের অভিযোগও ওঠে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, নৈতিক স্থলনের অভিযোগ তাকে উপাচার্য করা হলে ইমেজ সংকটে পড়বে সিকৃবি। তিনি বলেন, শুভবোধ ও শুভ চর্চার সর্বোচ্চ কেন্দ্র হলো বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সেটির মাথায় পচন ধরলে সিকৃবির ভবিষ্যৎ বলে কিছু থাকবে না। আমি চাই-ভালো গুণের অধিকারীকে উপাচার্য পদে দায়িত্ব দেওয়া হোক। অন্যথায় মূল্যবোধের পরাজয় ঘটবে।

এ সব অভিযোগের বিষয়ে অধ্যাপক জামাল উদ্দিন ভূঁইয়া যুগান্তরকে জানান, সে সময় নিয়োগ-বাণিজ্যের যে অভিযোগ তোলা হয়েছিল-তাতে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ ছাড়া জোট সরকারের আমলে নিয়ম ভেঙে অধ্যাপক হওয়ার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।