পথশিশুদের জন্য শিক্ষা উপকরণ

অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য খাতা, পেনসিল, কাটার, রাবার, স্কেল ও হোয়াইট বোর্ড ব্যবহারের জন্য একটি স্ট্যান্ড স্কুলটির শিক্ষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং শিশুদের জন্য নাশতার ব্যবস্থা করা হয়।

আব্দুল হান্নান মিল্টন

ব্যস্ত নগরী ঢাকায় হরহামেশাই দেখা মেলে অসংখ্য কোমলমতি শিশুর, যারা পথে ঘুমায়, পথেই যাদের বসবাস। অবহেলা আর বঞ্চনা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এভাবেই বেড়ে উঠতে অভ্যস্ত ওরা। একদিন যাত্রাবাড়ী হয়ে কাঁচপুর যাচ্ছিলাম।

শনির আখড়া পৌঁছতেই রাস্তার পাশ থেকে শিশুদের কোলাহলের শব্দ পাচ্ছিলাম। একটু এগোতেই চোখে পড়ল একটি মনোরম দৃশ্য। রাস্তার ঠিক ডান পাশে দনিয়া কলেজের ফুটপাতে বসে অর্ধশত শিক্ষার্থী মেতেছে পড়াশোনার আনন্দে। এরা সবাই পথশিশু। এটা আসলে পথশিশুদের স্কুল। দেখা গেল কেউ বা আঁকছে ছবি, কেউ বা বানাচ্ছে কাগজ দিয়ে হরেক রকম নৌকা, প্লেন, ফুল, পাখিসহ বিভিন্ন সুন্দর জিনিস। তাদের শিক্ষক কয়েকজন তরুণ। তারা আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। জানা গেল, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে শিশুদের দক্ষ করে তুলতেই এই স্কুলটির প্রতিষ্ঠা। হঠাৎ চোখে পড়ল তাদের মধ্যে রয়েছেন আমাদের যাত্রাবাড়ী শাখা শুভসংঘের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো. সোহেল রানা এবং শিশু ও নারী বিষয়ক সম্পাদক মাসবুহা আক্তার। তাঁদের দুজনের কাছে জানতে চাইলাম এ কার্যক্রম সম্পর্কে। সোহেল জানান, এই স্কুলের নাম ‘আমাদের বিদ্যানিকেতন’। ২০১৮ সালের শেষের দিকে তরুণ তুর্কি হৃদয় ভুঁইয়ার হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এই স্কুলটি। তিনি অনেক দিন ধরেই আর্তসেবা নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিচালনা করছেন।

শিশুদের সরব উপস্থিতি দেখে সম্প্রতি কালের কণ্ঠ শুভসংঘ যাত্রাবাড়ী থানা শাখার উদ্যোগে এই স্কুলটিতে শিক্ষা উপকরণ ও নাশতা বিতরণ করা হয়।   অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য খাতা, পেনসিল, কাটার, রাবার, স্কেল ও হোয়াইট বোর্ড ব্যবহারের জন্য একটি স্ট্যান্ড স্কুলটির শিক্ষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সোহেল বলেন, ‘রাস্তায় বের হলে অসংখ্য পথশিশুর দেখা মেলে। কেউ ভিক্ষা করছে, কেউ ফ্লাস্ক হাতে চা বিক্রি করছে, কেউ বা কারখানায় কাজ করছে, আবার কেউ  মিশে যাচ্ছে মাদক, চুরি, ডাকাতি, কিশোর গ্যাংসহ নানা রকম অপরাধে। এই শিশুদের যদি ন্যূনতম প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা যায়, তাহলে এরা সমাজের জন্য বোঝা বা ক্ষতির কারণ না হয়ে উপকারে আসবে। আজকের শিশু আগামী দিনের কাণ্ডারি। পরে তাদের কোনো এতিমখানা কিংবা মাদরাসায় ভর্তি করে দিতে পারলেই আমাদের কাজটুকু সফল। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজকে আপনারা শুভসংঘ থেকে শিক্ষা উপকরণ দিয়ে আমাদের অনেক উপকার করলেন। অনেকেই এই কোমলমতি শিশুদের দেখে তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। মাঝেমধ্যে ভালো খাবার দেন। আপনারাও খাবার দিলেন। এতে শিশুরা উৎসাহিত হয়। ’

প্রতিষ্ঠাতারা জানান, বর্তমানে এই স্কুলটির দুটি শাখা মিলে ১৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আছে। স্কুলটির দুটি শাখা রয়েছে—একটি  দনিয়া কলেজ গেট সংলগ্ন এবং অন্যটি কামরাঙ্গীর চর কুচারুঘাট শহীদ মিনার সংলগ্ন। শুভসংঘের বন্ধুরা জানান, বিভিন্ন সময়ে অনেকেই এই শিশুদের খাবার, শিক্ষা উপকরণ, বস্ত্র এবং খেলাধুলার সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমরাও আজকে তাদের সহযোগিতা করলাম। এই শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ এবং তাদের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষার চাহিদা পূরণে আমরা সর্বোচ্চটুকু করার চেষ্টা করব। পথশিশুদের এই স্কুলটি সর্বসাধারণের মনে জায়গা করে নিয়েছে।

শুভসংঘের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন যাত্রাবাড়ী শাখার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান মিলন, আবদুল রাকিব সাকলাইন, হাছানুজ্জামান মাসউদ, সাইফুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম বিপ্লব, ফাহিমা আক্তার প্রমুখ। ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ছোট ছোট ভালো কাজের মধ্যে অন্য রকম আনন্দ পাওয়া যায়। এক ধরনের তৃপ্তি আসে মনে। সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সমস্যাগুলো মোকাবেলা ও ভালো কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। ’

পথশিশুদের জন্য শিক্ষা উপকরণ

অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য খাতা, পেনসিল, কাটার, রাবার, স্কেল ও হোয়াইট বোর্ড ব্যবহারের জন্য একটি স্ট্যান্ড স্কুলটির শিক্ষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয় এবং শিশুদের জন্য নাশতার ব্যবস্থা করা হয়।

আব্দুল হান্নান মিল্টন

ব্যস্ত নগরী ঢাকায় হরহামেশাই দেখা মেলে অসংখ্য কোমলমতি শিশুর, যারা পথে ঘুমায়, পথেই যাদের বসবাস। অবহেলা আর বঞ্চনা তাদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এভাবেই বেড়ে উঠতে অভ্যস্ত ওরা। একদিন যাত্রাবাড়ী হয়ে কাঁচপুর যাচ্ছিলাম।

শনির আখড়া পৌঁছতেই রাস্তার পাশ থেকে শিশুদের কোলাহলের শব্দ পাচ্ছিলাম। একটু এগোতেই চোখে পড়ল একটি মনোরম দৃশ্য। রাস্তার ঠিক ডান পাশে দনিয়া কলেজের ফুটপাতে বসে অর্ধশত শিক্ষার্থী মেতেছে পড়াশোনার আনন্দে। এরা সবাই পথশিশু। এটা আসলে পথশিশুদের স্কুল। দেখা গেল কেউ বা আঁকছে ছবি, কেউ বা বানাচ্ছে কাগজ দিয়ে হরেক রকম নৌকা, প্লেন, ফুল, পাখিসহ বিভিন্ন সুন্দর জিনিস। তাদের শিক্ষক কয়েকজন তরুণ। তারা আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। জানা গেল, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে শিশুদের দক্ষ করে তুলতেই এই স্কুলটির প্রতিষ্ঠা। হঠাৎ চোখে পড়ল তাদের মধ্যে রয়েছেন আমাদের যাত্রাবাড়ী শাখা শুভসংঘের শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক মো. সোহেল রানা এবং শিশু ও নারী বিষয়ক সম্পাদক মাসবুহা আক্তার। তাঁদের দুজনের কাছে জানতে চাইলাম এ কার্যক্রম সম্পর্কে। সোহেল জানান, এই স্কুলের নাম ‘আমাদের বিদ্যানিকেতন’। ২০১৮ সালের শেষের দিকে তরুণ তুর্কি হৃদয় ভুঁইয়ার হাত ধরে প্রতিষ্ঠা লাভ করে এই স্কুলটি। তিনি অনেক দিন ধরেই আর্তসেবা নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন পরিচালনা করছেন।

শিশুদের সরব উপস্থিতি দেখে সম্প্রতি কালের কণ্ঠ শুভসংঘ যাত্রাবাড়ী থানা শাখার উদ্যোগে এই স্কুলটিতে শিক্ষা উপকরণ ও নাশতা বিতরণ করা হয়।   অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য খাতা, পেনসিল, কাটার, রাবার, স্কেল ও হোয়াইট বোর্ড ব্যবহারের জন্য একটি স্ট্যান্ড স্কুলটির শিক্ষকদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

সোহেল বলেন, ‘রাস্তায় বের হলে অসংখ্য পথশিশুর দেখা মেলে। কেউ ভিক্ষা করছে, কেউ ফ্লাস্ক হাতে চা বিক্রি করছে, কেউ বা কারখানায় কাজ করছে, আবার কেউ  মিশে যাচ্ছে মাদক, চুরি, ডাকাতি, কিশোর গ্যাংসহ নানা রকম অপরাধে। এই শিশুদের যদি ন্যূনতম প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা যায়, তাহলে এরা সমাজের জন্য বোঝা বা ক্ষতির কারণ না হয়ে উপকারে আসবে। আজকের শিশু আগামী দিনের কাণ্ডারি। পরে তাদের কোনো এতিমখানা কিংবা মাদরাসায় ভর্তি করে দিতে পারলেই আমাদের কাজটুকু সফল। সে লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আজকে আপনারা শুভসংঘ থেকে শিক্ষা উপকরণ দিয়ে আমাদের অনেক উপকার করলেন। অনেকেই এই কোমলমতি শিশুদের দেখে তাদের সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। মাঝেমধ্যে ভালো খাবার দেন। আপনারাও খাবার দিলেন। এতে শিশুরা উৎসাহিত হয়। ’

প্রতিষ্ঠাতারা জানান, বর্তমানে এই স্কুলটির দুটি শাখা মিলে ১৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আছে। স্কুলটির দুটি শাখা রয়েছে—একটি  দনিয়া কলেজ গেট সংলগ্ন এবং অন্যটি কামরাঙ্গীর চর কুচারুঘাট শহীদ মিনার সংলগ্ন। শুভসংঘের বন্ধুরা জানান, বিভিন্ন সময়ে অনেকেই এই শিশুদের খাবার, শিক্ষা উপকরণ, বস্ত্র এবং খেলাধুলার সামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। আমরাও আজকে তাদের সহযোগিতা করলাম। এই শিশুদের স্বাভাবিক বিকাশ এবং তাদের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষার চাহিদা পূরণে আমরা সর্বোচ্চটুকু করার চেষ্টা করব। পথশিশুদের এই স্কুলটি সর্বসাধারণের মনে জায়গা করে নিয়েছে।

শুভসংঘের আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন যাত্রাবাড়ী শাখার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ওবায়দুর রহমান মিলন, আবদুল রাকিব সাকলাইন, হাছানুজ্জামান মাসউদ, সাইফুল ইসলাম, শফিকুল ইসলাম বিপ্লব, ফাহিমা আক্তার প্রমুখ। ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘ছোট ছোট ভালো কাজের মধ্যে অন্য রকম আনন্দ পাওয়া যায়। এক ধরনের তৃপ্তি আসে মনে। সমাজের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সমস্যাগুলো মোকাবেলা ও ভালো কাজ করে যাওয়ার চেষ্টা করছি আমরা। ’