পবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতির চাঁদা আদায়ের ভিডিও ফাঁস!

আশিকুর রহমান

আরাফাত ইসলাম সাগর।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরের বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা ও শেখ রাসেল হলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের গোপন ভিডিও ফাঁস হয়েছে। যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য জায়গায় সমালোচনার ঝড় তুলেছে।

এর আগে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরের বিরুদ্ধে চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না পেয়ে নির্মাণ প্রকল্পের রড ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বাধা দিলে তাদের মারধর করা হয়।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পাসের নির্মাণাধীন শেখ রাসেল হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে বুধবার রাতে দুমকী থানা ও উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমির ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক এনামুল হক।

এতে তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সাগরের নেতৃত্বে সাবেক সহসভাপতি গোলাম রব্বানী সুহৃদ, মো. ইমরান, বসির খানসহ ৯-১০ জন নির্মাণকাজের জন্য রাখা রড ভ্যানে তুলে নিয়ে যেতে থাকেন। বাধা দিলে গোলাম রব্বানী জানান, এটি তাদের ক্যাম্পাস, এখানে নির্মাণকাজ করতে হলে টাকা দিতে হবে। আগে বলা হলেও টাকা দেওয়া হয়নি। এ জন্য সভাপতির নির্দেশে রড নেওয়া হচ্ছে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে গোলাম রব্বানী রড দিয়ে এনামুল হককে মেরে জখম করেন ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। প্রাণনাশেরও হুমকি দেন।

এ ঘটনার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক এনামুল হক ২৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতারা মঙ্গলবার রাতে তার কাছে চাঁদা দাবি করেন। এর আগেও তারা চাঁদা নিয়েছেন। এখন আরও চাঁদা দাবি করছেন। চাঁদা না দিলে নির্মাণ কাজ বন্ধসহ শ্রমিকদের ওপর হামলা করার হুমকি দিয়েছেন।’

এ সংবাদ সম্মেলনের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে সাগরের অনুসারীরা। সেখানে সাগরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ও চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত গোলাম রাব্বানী সুহৃদ দাবি করেন ‘এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ির অবৈধ নম্বর প্লেট, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, মেয়েদেরকে উত্যক্ত করাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে গেলে ম্যানেজার এনামুল আমাদের মারতে উদ্যত হন। আত্মরক্ষার জন্য অন্যদের ফোন করা হলে তারা পালিয়ে যান।’

এরপরই সাগরের চাঁদা আদায়ের গোপন ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, আরাফাত ইসলাম খান সাগর এনামুল হককে চাঁদা দেওয়ার ব্যাপারে হুমকি দিচ্ছেন ও অশ্লীলভাবে গালমন্দ করছেন, একই সাথে চাঁদা নেওয়ার কথোপকথনও রয়েছে গোপন ভিডিওতে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগে ছাত্রলীগের এ নেতাকে মোট ৩০ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরকে প্রশ্ন করা হলে আলোচিত ভিডিওয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিওতে উল্লিখিত ৩ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা এক ব্যক্তির নিকট থেকে ঠিকাদারের ব্যবস্থাপক এনামুল হক ঋণ নিয়েছিল। আমি তাদেরকে সে ব্যক্তির পাওনা টাকা ফিরিয়ে দিতে বলেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আলোচিত ভিডিও এর বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমার কিছু জানা নেই, তবে এরকম কোনো কিছু ঘটলে আমরা তদন্ত করে দেখব। আর তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও বিতর্কিত এই ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন অবরুদ্ধ করা, টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় বিবাদ, নারী শিক্ষার্থীকে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকের রুমে তালা দেওয়া, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাত, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে দূর্ব্যবহারসহ একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছেন।

ইবিহো/এসএস

পবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতির চাঁদা আদায়ের ভিডিও ফাঁস!

আশিকুর রহমান

আরাফাত ইসলাম সাগর।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরের বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা ও শেখ রাসেল হলের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের গোপন ভিডিও ফাঁস হয়েছে। যা ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ অন্যান্য জায়গায় সমালোচনার ঝড় তুলেছে।

এর আগে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরের বিরুদ্ধে চাহিদা অনুযায়ী চাঁদা না পেয়ে নির্মাণ প্রকল্পের রড ভ্যানে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বাধা দিলে তাদের মারধর করা হয়।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর (মঙ্গলবার) রাত ৯টার দিকে ক্যাম্পাসের নির্মাণাধীন শেখ রাসেল হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে। পরে বুধবার রাতে দুমকী থানা ও উপাচার্য বরাবর অভিযোগ দেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আমির ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক এনামুল হক।

এতে তিনি জানান, মঙ্গলবার রাতে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সাগরের নেতৃত্বে সাবেক সহসভাপতি গোলাম রব্বানী সুহৃদ, মো. ইমরান, বসির খানসহ ৯-১০ জন নির্মাণকাজের জন্য রাখা রড ভ্যানে তুলে নিয়ে যেতে থাকেন। বাধা দিলে গোলাম রব্বানী জানান, এটি তাদের ক্যাম্পাস, এখানে নির্মাণকাজ করতে হলে টাকা দিতে হবে। আগে বলা হলেও টাকা দেওয়া হয়নি। এ জন্য সভাপতির নির্দেশে রড নেওয়া হচ্ছে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে গোলাম রব্বানী রড দিয়ে এনামুল হককে মেরে জখম করেন ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। প্রাণনাশেরও হুমকি দেন।

এ ঘটনার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক এনামুল হক ২৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) রাতে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ছাত্রলীগ নেতারা মঙ্গলবার রাতে তার কাছে চাঁদা দাবি করেন। এর আগেও তারা চাঁদা নিয়েছেন। এখন আরও চাঁদা দাবি করছেন। চাঁদা না দিলে নির্মাণ কাজ বন্ধসহ শ্রমিকদের ওপর হামলা করার হুমকি দিয়েছেন।’

এ সংবাদ সম্মেলনের পরপরই বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে সাগরের অনুসারীরা। সেখানে সাগরের অনুসারী হিসেবে পরিচিত ও চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত গোলাম রাব্বানী সুহৃদ দাবি করেন ‘এই অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ির অবৈধ নম্বর প্লেট, বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো, মেয়েদেরকে উত্যক্ত করাসহ নানা অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে গেলে ম্যানেজার এনামুল আমাদের মারতে উদ্যত হন। আত্মরক্ষার জন্য অন্যদের ফোন করা হলে তারা পালিয়ে যান।’

এরপরই সাগরের চাঁদা আদায়ের গোপন ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, আরাফাত ইসলাম খান সাগর এনামুল হককে চাঁদা দেওয়ার ব্যাপারে হুমকি দিচ্ছেন ও অশ্লীলভাবে গালমন্দ করছেন, একই সাথে চাঁদা নেওয়ার কথোপকথনও রয়েছে গোপন ভিডিওতে।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর লিখিত অভিযোগে ছাত্রলীগের এ নেতাকে মোট ৩০ লক্ষ ৫৭ হাজার টাকা চাঁদা দেওয়ার কথা স্বীকার করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ সভাপতি আরাফাত ইসলাম খান সাগরকে প্রশ্ন করা হলে আলোচিত ভিডিওয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ভিডিওতে উল্লিখিত ৩ লক্ষ ৬২ হাজার টাকা এক ব্যক্তির নিকট থেকে ঠিকাদারের ব্যবস্থাপক এনামুল হক ঋণ নিয়েছিল। আমি তাদেরকে সে ব্যক্তির পাওনা টাকা ফিরিয়ে দিতে বলেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আলোচিত ভিডিও এর বিষয়ে এখন পর্যন্ত আমার কিছু জানা নেই, তবে এরকম কোনো কিছু ঘটলে আমরা তদন্ত করে দেখব। আর তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে এবারই প্রথম নয়, এর আগেও বিতর্কিত এই ছাত্রলীগ নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবন অবরুদ্ধ করা, টিএসসি ক্যাফেটেরিয়ায় বিবাদ, নারী শিক্ষার্থীকে পাশ করিয়ে দেওয়ার জন্য শিক্ষকের রুমে তালা দেওয়া, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাত, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সাথে দূর্ব্যবহারসহ একাধিক ঘটনা ঘটিয়েছেন।

ইবিহো/এসএস