পাঠাগারের আন্দোলন

গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের পাঠচক্র

লাবণী মণ্ডল

বৃহৎ মঙ্গলের জন্য সমষ্টিকে নিয়ে কোনো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার নামই আন্দোলন। বাংলার বেশিরভাগ মানুষের বাস গ্রামে। গ্রামের মানুষেরাই আমাদের উৎপাদক শ্রেণি। অথচ এই শ্রেণিটি অনেক ক্ষেত্রেই থাকে অবহেলিত। গ্রামের মানুষকে সচেতন ও আত্মনির্ভরশীল করার ক্ষেত্রে পাঠাগারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু শুধু দু-একটি গ্রামে পাঠাগার গড়ে তুলে তো এর সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি গ্রামে হোক একটি পাঠাগার। এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে প্রায় ১৬ বছর আগে আবদুস সাত্তার খানের উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন’।

কীভাবে এ যাত্রা শুরু করলেন- এ প্রসঙ্গে আবদুস সাত্তার খান বলেন, “২০০৬ সালে সাতজন মিলে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের অর্জুনা গ্রামে শুরু করি ‘অর্জুনা অন্বেষা পাঠাগারে’র কার্যক্রম। এরপর যোগ দেন আরও অনেকে। ২০০৭ সালে সিডর আঘাত হানে বিস্তীর্ণ দক্ষিণাঞ্চলে। পাঠাগারের পক্ষ থেকে আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিই। সদস্যরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ৩ হাজার টাকা ও ৫ মণ চাল ওঠান। কিন্তু সমস্যা হয় এগুলো আমরা পাঠাব কীভাবে। পরে উপজেলা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সরকারের ত্রাণ তহবিলে জমা দিই। তখন আমাদের মাথায় আসে যদি ওই এলাকায় আমাদের পাঠাগারের মতো একটা সংগঠন থাকত আর তাদের সঙ্গে যদি আমাদের যোগাযোগ থাকত, তাহলে এই সামান্য কয়েকটা জিনিসই এই বিপদের দিনে কত না কাজে আসত! আমাদের এই ভাবনা শেয়ার করি ঢাকার র‌্যামন পাবলিকেশন্সের রাজন ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি আমাদের আশ্বাস দেন। পরে আমরা লেগে যাই নানা জায়গায় পাঠাগার গড়ার কাজে। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, নাটোর, বদলগাছী, মধুপুর, সখিপুর, ভূঞাপুরসহ নানা জায়গায় আমাদের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠতে থাকে পাঠাগার। বিচ্ছিন্নভাবে যে পাঠাগারগুলো গড়ে উঠছে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকি। খাগড়াছড়ির অরং পাঠাগার এ রকম একটি পাঠাগার। আমরা যূথবদ্ধভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি নাম নিই ‘গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন’।”

পাঠাগারগুলো গড়ে উঠে স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে। এলাকার প্রয়োজন, চাহিদা, ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে স্থানীয়রাই সিদ্ধান্ত নেন কী হবে তাদের কর্ম পরিকল্পনা। কেমন হবে তাদের কার্যপদ্ধতি। যেমন জেলা ও থানা পর্যায়ে সাধারণ পাঠাগার থাকায় সেখানে পাঠাগারগুলো হয় বিশেষ ধরনের পাঠাগার। এ রকমই একটি পাঠাগার হলো ‘লাইসিয়াম গণিত ও বিজ্ঞান সংঘ’। যেখানে আয়োজন করা হয় বিজ্ঞানের নানা সেমিনার, কর্মশালা, ম্যাথ অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞানমেলা এমনই নানা ধরনের আয়োজন।

পাঠাগার দিতে পয়সা লাগে, জমি লাগে। কিন্তু তার চেয়েও যেটা বেশি লাগে সেটা হলো ইচ্ছাশক্তি আর আন্তরিকতা। একটা পাঠাগার স্থাপনে প্রথম যা দরকার তা হলো সমমনাদের যূথবদ্ধতা। তারপর নিজেদের কাছে যে বইগুলো আছে তা একত্র করা। সে ক্ষেত্রে বিদ্যালয় বা কারও বাড়ির পড়ার ঘরটাই হতে পারে পাঠাগার। এ প্রসঙ্গে আবদুস সাত্তার খান বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ১০০ জনের কাছে বই কেনার দাবি করলে ২০ জন অবশ্যই পাশে দাঁড়াবেন। পাঠাগার একটি চলমান প্রক্রিয়া। লেগে থাকলে কয়েক বছর পর দেখা যাবে ওই পাঠাগারটিই গ্রামে আলো ছড়াচ্ছে।’

গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের মূল দর্শন হলো ‘সমষ্টির মুক্তির ভেতরেই ব্যক্তির মুক্তি’। এতে যুক্ত হতে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন যেহেতু একটা চেতনার নাম, তাই এর নেই তেমন কোনো সাংগঠনিক কমিটি, নেই কোনো সংবিধান।

কীভাবে চলে এর কার্যক্রম, এ প্রসঙ্গে সাত্তার খান জানান, ‘ফেসবুকে গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন নামের যে পেজ আছে, সেটাই আমাদের কার্যালয়। এখানেই আমরা যে কোনো সময় যে কোনো বিষয় নিয়ে করতে পারি মিটিং, করতে পারি আমাদের ভালো কাজের প্রচারণা। বিনে সুতায় আমরা যুক্ত হতে পারি একে অপরের সঙ্গে। দাঁড়াতে পারি একজন আরেকজনের আপদে-বিপদে।’

সাত্তার খান স্বপ্নালু মানুষ। প্রতিনিয়ত প্রতিকূলতাকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। কারও চোখে তিনি নায়ক, কারও চোখে হয়তো কিছুই নন। কিন্তু তিনি জানেন, তাঁর স্বপ্ন কী! কতদূর নিয়ে যাবেন এ যাত্রাকে। যে পথে এসেছে হাজারো বাধা। বহুবার হাসি-ঠাট্টার শিকার হয়েছেন। কেউবা ‘পাগল’ বলে উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়েছেন। সবকিছু উপেক্ষা করে শুরু করেছেন, পাশে পেয়েছেন তাঁরই মতো কিছু সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল মানুষ। এ প্রসঙ্গে সাত্তার খান বলেন, “বাইরে থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে আসছি, মেম্বার-চেয়ারম্যান নির্বাচনে দাঁড়ানোর মতলব করছি- অনেকে এমন কথাও প্রচার করেছেন একটা সময়ে। তখন আমাদের একটিই কথা ছিল- দাঁত কামড় দিয়ে পড়ে থাকা।”

১৬ বছর ধরে তা ধরে আছেন আবদুস সাত্তার খান। এখন গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের দর্শন বিশ্বাস করে এ রকম পাঠাগারের সংখ্যা ৭০টি। আরও শত শত পাঠাগারের সঙ্গে রয়েছে তাদের যোগাযোগ। প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি কলেজ ও দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামীণ পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করার জন্য অর্জুনাতে শুরু হয়েছে ‘গ্রামে ঘুড়ি’র কাজ। গত ৫ বছরে প্রায় শত শত পর্যটক ঘুরে গেছেন টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত গ্রাম অর্জুনায়। উপভোগ করেছেন যমুনা পাড়ের অর্জুনা গ্রামের সৌন্দর্য।

২০০৬ সাল থেকে টাঙ্গাইলের অর্জুনা গ্রামে হয়ে আসছে বইমেলা। গ্রামবাসী এখন চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় থাকেন কবে আসবে ফেব্রুয়ারি মাস, কবে শুরু হবে মেলা? যে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে তাঁরা এই সময়ই বাবার বাড়ি আসেন। ছেলেরা যাঁরা চাকরি করেন তাঁরা এই সময়ে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। ফলে এই বইমেলা যেন হয়ে ওঠে গ্রামবাসীর মিলনমেলা। সাত্তার খান বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা হলো- আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নের কোনো না কোনো গ্রামে একটি করে পাঠাগার স্থাপিত হবে।’

জ্ঞাননির্ভর ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণে ‘পাঠাগার হোক গণমানুষের বিশ্ববিদ্যালয়’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা পাঠাগারগুলোর সংগঠকদের পারস্পরিক ভাব বিনিময়, যোগাযোগ বৃদ্ধি, সাংগঠনিক নানা সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় এবং পাঠাগারগুলোর সঙ্গে চিন্তার ঐক্যসূত্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগামী ২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ভূঞাপুরের অর্জুনা গ্রামে তিন দিনব্যাপী আবাসিক পাঠাগার সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে। সম্মেলনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে যে সংগঠকরা আসবেন তাঁদের তিন দিনের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। অংশগ্রহণের জন্য সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট, টি-শার্ট এবং একটি প্রকাশনা থাকবে। সাত্তার খান আশা করছেন, এই সম্মেলনের পর সারাদেশে পাঠাগার সংগঠকদের মধ্যে একটা প্রাণের জোয়ার সৃষ্টি হবে।

পাঠাগারের আন্দোলন

গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের পাঠচক্র

লাবণী মণ্ডল

বৃহৎ মঙ্গলের জন্য সমষ্টিকে নিয়ে কোনো কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার নামই আন্দোলন। বাংলার বেশিরভাগ মানুষের বাস গ্রামে। গ্রামের মানুষেরাই আমাদের উৎপাদক শ্রেণি। অথচ এই শ্রেণিটি অনেক ক্ষেত্রেই থাকে অবহেলিত। গ্রামের মানুষকে সচেতন ও আত্মনির্ভরশীল করার ক্ষেত্রে পাঠাগারের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু শুধু দু-একটি গ্রামে পাঠাগার গড়ে তুলে তো এর সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। প্রতিটি গ্রামে হোক একটি পাঠাগার। এ বিষয়টিকে মাথায় রেখে প্রায় ১৬ বছর আগে আবদুস সাত্তার খানের উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন’।

কীভাবে এ যাত্রা শুরু করলেন- এ প্রসঙ্গে আবদুস সাত্তার খান বলেন, “২০০৬ সালে সাতজন মিলে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরের অর্জুনা গ্রামে শুরু করি ‘অর্জুনা অন্বেষা পাঠাগারে’র কার্যক্রম। এরপর যোগ দেন আরও অনেকে। ২০০৭ সালে সিডর আঘাত হানে বিস্তীর্ণ দক্ষিণাঞ্চলে। পাঠাগারের পক্ষ থেকে আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিই। সদস্যরা গ্রামের বাড়ি বাড়ি ঘুরে ৩ হাজার টাকা ও ৫ মণ চাল ওঠান। কিন্তু সমস্যা হয় এগুলো আমরা পাঠাব কীভাবে। পরে উপজেলা কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে সরকারের ত্রাণ তহবিলে জমা দিই। তখন আমাদের মাথায় আসে যদি ওই এলাকায় আমাদের পাঠাগারের মতো একটা সংগঠন থাকত আর তাদের সঙ্গে যদি আমাদের যোগাযোগ থাকত, তাহলে এই সামান্য কয়েকটা জিনিসই এই বিপদের দিনে কত না কাজে আসত! আমাদের এই ভাবনা শেয়ার করি ঢাকার র‌্যামন পাবলিকেশন্সের রাজন ভাইয়ের সঙ্গে। তিনি আমাদের আশ্বাস দেন। পরে আমরা লেগে যাই নানা জায়গায় পাঠাগার গড়ার কাজে। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, চাঁদপুর, নাটোর, বদলগাছী, মধুপুর, সখিপুর, ভূঞাপুরসহ নানা জায়গায় আমাদের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠতে থাকে পাঠাগার। বিচ্ছিন্নভাবে যে পাঠাগারগুলো গড়ে উঠছে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে থাকি। খাগড়াছড়ির অরং পাঠাগার এ রকম একটি পাঠাগার। আমরা যূথবদ্ধভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি নাম নিই ‘গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন’।”

পাঠাগারগুলো গড়ে উঠে স্বাধীন ও স্বতন্ত্রভাবে। এলাকার প্রয়োজন, চাহিদা, ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে স্থানীয়রাই সিদ্ধান্ত নেন কী হবে তাদের কর্ম পরিকল্পনা। কেমন হবে তাদের কার্যপদ্ধতি। যেমন জেলা ও থানা পর্যায়ে সাধারণ পাঠাগার থাকায় সেখানে পাঠাগারগুলো হয় বিশেষ ধরনের পাঠাগার। এ রকমই একটি পাঠাগার হলো ‘লাইসিয়াম গণিত ও বিজ্ঞান সংঘ’। যেখানে আয়োজন করা হয় বিজ্ঞানের নানা সেমিনার, কর্মশালা, ম্যাথ অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞানমেলা এমনই নানা ধরনের আয়োজন।

পাঠাগার দিতে পয়সা লাগে, জমি লাগে। কিন্তু তার চেয়েও যেটা বেশি লাগে সেটা হলো ইচ্ছাশক্তি আর আন্তরিকতা। একটা পাঠাগার স্থাপনে প্রথম যা দরকার তা হলো সমমনাদের যূথবদ্ধতা। তারপর নিজেদের কাছে যে বইগুলো আছে তা একত্র করা। সে ক্ষেত্রে বিদ্যালয় বা কারও বাড়ির পড়ার ঘরটাই হতে পারে পাঠাগার। এ প্রসঙ্গে আবদুস সাত্তার খান বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, ১০০ জনের কাছে বই কেনার দাবি করলে ২০ জন অবশ্যই পাশে দাঁড়াবেন। পাঠাগার একটি চলমান প্রক্রিয়া। লেগে থাকলে কয়েক বছর পর দেখা যাবে ওই পাঠাগারটিই গ্রামে আলো ছড়াচ্ছে।’

গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের মূল দর্শন হলো ‘সমষ্টির মুক্তির ভেতরেই ব্যক্তির মুক্তি’। এতে যুক্ত হতে ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম নেই। গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন যেহেতু একটা চেতনার নাম, তাই এর নেই তেমন কোনো সাংগঠনিক কমিটি, নেই কোনো সংবিধান।

কীভাবে চলে এর কার্যক্রম, এ প্রসঙ্গে সাত্তার খান জানান, ‘ফেসবুকে গ্রাম পাঠাগার আন্দোলন নামের যে পেজ আছে, সেটাই আমাদের কার্যালয়। এখানেই আমরা যে কোনো সময় যে কোনো বিষয় নিয়ে করতে পারি মিটিং, করতে পারি আমাদের ভালো কাজের প্রচারণা। বিনে সুতায় আমরা যুক্ত হতে পারি একে অপরের সঙ্গে। দাঁড়াতে পারি একজন আরেকজনের আপদে-বিপদে।’

সাত্তার খান স্বপ্নালু মানুষ। প্রতিনিয়ত প্রতিকূলতাকে সঙ্গে নিয়ে পথচলা। কারও চোখে তিনি নায়ক, কারও চোখে হয়তো কিছুই নন। কিন্তু তিনি জানেন, তাঁর স্বপ্ন কী! কতদূর নিয়ে যাবেন এ যাত্রাকে। যে পথে এসেছে হাজারো বাধা। বহুবার হাসি-ঠাট্টার শিকার হয়েছেন। কেউবা ‘পাগল’ বলে উল্লেখ করেছেন। আবার অনেকে ঈর্ষান্বিত হয়েছেন। সবকিছু উপেক্ষা করে শুরু করেছেন, পাশে পেয়েছেন তাঁরই মতো কিছু সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল মানুষ। এ প্রসঙ্গে সাত্তার খান বলেন, “বাইরে থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা নিয়ে আসছি, মেম্বার-চেয়ারম্যান নির্বাচনে দাঁড়ানোর মতলব করছি- অনেকে এমন কথাও প্রচার করেছেন একটা সময়ে। তখন আমাদের একটিই কথা ছিল- দাঁত কামড় দিয়ে পড়ে থাকা।”

১৬ বছর ধরে তা ধরে আছেন আবদুস সাত্তার খান। এখন গ্রাম পাঠাগার আন্দোলনের দর্শন বিশ্বাস করে এ রকম পাঠাগারের সংখ্যা ৭০টি। আরও শত শত পাঠাগারের সঙ্গে রয়েছে তাদের যোগাযোগ। প্রতিষ্ঠা করেছেন একটি কলেজ ও দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। গ্রামীণ পর্যটন শিল্পকে বিকশিত করার জন্য অর্জুনাতে শুরু হয়েছে ‘গ্রামে ঘুড়ি’র কাজ। গত ৫ বছরে প্রায় শত শত পর্যটক ঘুরে গেছেন টাঙ্গাইলের প্রত্যন্ত গ্রাম অর্জুনায়। উপভোগ করেছেন যমুনা পাড়ের অর্জুনা গ্রামের সৌন্দর্য।

২০০৬ সাল থেকে টাঙ্গাইলের অর্জুনা গ্রামে হয়ে আসছে বইমেলা। গ্রামবাসী এখন চাতক পাখির মতো অপেক্ষায় থাকেন কবে আসবে ফেব্রুয়ারি মাস, কবে শুরু হবে মেলা? যে মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে তাঁরা এই সময়ই বাবার বাড়ি আসেন। ছেলেরা যাঁরা চাকরি করেন তাঁরা এই সময়ে ছুটি নিয়ে বাড়িতে আসেন। ফলে এই বইমেলা যেন হয়ে ওঠে গ্রামবাসীর মিলনমেলা। সাত্তার খান বলেন, ‘আমাদের পরিকল্পনা হলো- আগামী ২০৪০ সালের মধ্যে প্রতিটি ইউনিয়নের কোনো না কোনো গ্রামে একটি করে পাঠাগার স্থাপিত হবে।’

জ্ঞাননির্ভর ন্যায়ভিত্তিক সমাজ নির্মাণে ‘পাঠাগার হোক গণমানুষের বিশ্ববিদ্যালয়’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে সারাদেশে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা পাঠাগারগুলোর সংগঠকদের পারস্পরিক ভাব বিনিময়, যোগাযোগ বৃদ্ধি, সাংগঠনিক নানা সমস্যা নিয়ে মতবিনিময় এবং পাঠাগারগুলোর সঙ্গে চিন্তার ঐক্যসূত্র গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগামী ২২ থেকে ২৪ ডিসেম্বর ভূঞাপুরের অর্জুনা গ্রামে তিন দিনব্যাপী আবাসিক পাঠাগার সম্মেলন আয়োজন করা হচ্ছে। সম্মেলনে দেশের নানা প্রান্ত থেকে যে সংগঠকরা আসবেন তাঁদের তিন দিনের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। অংশগ্রহণের জন্য সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট, টি-শার্ট এবং একটি প্রকাশনা থাকবে। সাত্তার খান আশা করছেন, এই সম্মেলনের পর সারাদেশে পাঠাগার সংগঠকদের মধ্যে একটা প্রাণের জোয়ার সৃষ্টি হবে।