প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও এনালগ পবিপ্রবি, বাড়ছে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

আশিকুর রহমান
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

নাহিদ হাসান সোহান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের এম কেরামত আলী হলের বাসিন্দা। যে হলটি প্রশসনিক ভবন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরবর্তী। বিশ্ববিদ্যালয় ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে ভর্তির প্রজ্ঞাপন তথা এনরোলমেন্ট পূরণ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলে তাকে হল থেকে ব্যাংক ভবন, সেখান থেকে আবার হল, হল প্রভোস্টের স্বাক্ষরের জন্য একদিন অপেক্ষা করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার স্বাক্ষর নিয়ে শেষে অনুষদীয় ডিন অফিসে জমা দিতে হচ্ছে। একই সাথে নির্ধারিত সময়ের মাঝে একদিন অনলাইন ক্লাসের জন্য সবকিছু বন্ধ ঘোষণা থাকে। এর মাঝেই চলে ক্লাস ও ল্যাব। একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে হাতে এনরোলমেন্ট পূরণ করে এভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দৌঁড়াদৌঁড়ি জমা দেওয়াটা হতাশাজনক হিসেবে উল্লেখ করছেন এ শিক্ষার্থী।

নাহিদের মতো এমন অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ২৩ বছর অতিক্রম করলেও এখনো সেকেলে এনালগ পদ্ধতিতেই চলছে ভর্তিসহ অন্যান্য কার্যক্রম। এনরোলমেন্ট পূরণের সময় স্বভাবতই বিশাল লাইনের সমারোহ দেখা যায় ব্যাংকের ভেতর। মাঝে মাঝে লাইনের চাপে স্থান সংকুলান হয় না। সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। এরপর সেখান থেকে যেতে হয় হলের প্রভোস্ট অফিসে। প্রভোস্টগণ ক্লাসসহ অন্যান্য ব্যস্ততায় থাকেন বিধায় তাৎক্ষণিকভাবে স্বাক্ষর করতে পারেন না। ফলে অনেকক্ষেত্রেই একদিন অপেক্ষমান থাকা লাগে শিক্ষার্থীদের। সেখান থেকে ফরম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখায় গেলে শুরু হয় কর্মকর্তাদের ‘লাঞ্চের পর আসেন’ নামক বিড়ম্বনা। লাঞ্চের সময় শেষ হলেও কর্মকর্তাদের লাঞ্চ শেষ হয় না। তার উপর নির্ধারিত সময় শেষ হলেই গুণতে হয় অতিরিক্ত জরিমানা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অনলাইনে ফরম পূরণ ও টাকা জমা নেওয়া হয়। এতে একদিকে যেমন সময় সাশ্রয় হয় তেমনি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকাংশেই হ্রাস পায়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের ভর্তির সময় কোন কোন কোর্স নেওয়া হবে তা ওয়েবসাইটেই সিলেক্ট করা হয়। কোর্সের উপর সংক্রিয়ভাবে কত টাকা দিতে হবে ওয়েবসাইটেই বলে দেওয়া হয়। পরে অনলাইনেই টাকা জমা দিলে এপ্রুভের পর রেজিস্ট্রেশন কার্ড ডাউনলোড করতে হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তির এমন সুযোগ থাকলেও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরও কেন সে সুযোগ নেই সেটাই এখন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রায়হায় বলেন, একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে শিক্ষার্থীদের যেভাবে এনরোলমেন্ট জমা দেওয়ায় ভোগান্তির স্বীকার হতে হয় তা সত্যিই হতাশাজনক। অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় এ কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে সেটিই আমার প্রত্যাশা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে অবশ্যই আমাদের চলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন কাজে ডিপিপি তে অটোমেশনের বাজেট ধরা রয়েছে। এবং এই ডিপিপি’র অনুকূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখা যেমন- লাইব্রেরী, একাউন্টসসহ অন্যান্য শাখা অটোমেশন প্রক্রিয়ায় ভেতর নিয়ে আসা হবে”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টাকা জমা দেওয়ার এসব ভোগান্তি কমানোর জন্য আমি অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করছি, কিন্ত কিছু প্রতিকূলতার জন্য সে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বর্তমানে রূপালি ব্যাংকে যেভাবে টাকা জমা নেওয়া হয়, তার পরিবর্তে অনলাইন মাধ্যমের কথা আমি অনেক আগেই প্রস্তাব করেছি, কিন্তু যথাযথ কতৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না।

এ সময় তিনি আরও বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকলে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে টাকা জমা দেওয়া যেতে পারে, সেক্ষেত্রে লিখিতভাবে আবেদন জমা দিতে হবে। পরে তা যাচাই বাছাইয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হবে।

ইবিহো/এসএস

প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েও এনালগ পবিপ্রবি, বাড়ছে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি

আশিকুর রহমান
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

নাহিদ হাসান সোহান, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের এম কেরামত আলী হলের বাসিন্দা। যে হলটি প্রশসনিক ভবন থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরবর্তী। বিশ্ববিদ্যালয় ৬ষ্ঠ সেমিস্টারে ভর্তির প্রজ্ঞাপন তথা এনরোলমেন্ট পূরণ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হলে তাকে হল থেকে ব্যাংক ভবন, সেখান থেকে আবার হল, হল প্রভোস্টের স্বাক্ষরের জন্য একদিন অপেক্ষা করে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার স্বাক্ষর নিয়ে শেষে অনুষদীয় ডিন অফিসে জমা দিতে হচ্ছে। একই সাথে নির্ধারিত সময়ের মাঝে একদিন অনলাইন ক্লাসের জন্য সবকিছু বন্ধ ঘোষণা থাকে। এর মাঝেই চলে ক্লাস ও ল্যাব। একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে হাতে এনরোলমেন্ট পূরণ করে এভাবে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় দৌঁড়াদৌঁড়ি জমা দেওয়াটা হতাশাজনক হিসেবে উল্লেখ করছেন এ শিক্ষার্থী।

নাহিদের মতো এমন অভিযোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ২৩ বছর অতিক্রম করলেও এখনো সেকেলে এনালগ পদ্ধতিতেই চলছে ভর্তিসহ অন্যান্য কার্যক্রম। এনরোলমেন্ট পূরণের সময় স্বভাবতই বিশাল লাইনের সমারোহ দেখা যায় ব্যাংকের ভেতর। মাঝে মাঝে লাইনের চাপে স্থান সংকুলান হয় না। সৃষ্টি হয় বিশৃঙ্খলা। এরপর সেখান থেকে যেতে হয় হলের প্রভোস্ট অফিসে। প্রভোস্টগণ ক্লাসসহ অন্যান্য ব্যস্ততায় থাকেন বিধায় তাৎক্ষণিকভাবে স্বাক্ষর করতে পারেন না। ফলে অনেকক্ষেত্রেই একদিন অপেক্ষমান থাকা লাগে শিক্ষার্থীদের। সেখান থেকে ফরম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখায় গেলে শুরু হয় কর্মকর্তাদের ‘লাঞ্চের পর আসেন’ নামক বিড়ম্বনা। লাঞ্চের সময় শেষ হলেও কর্মকর্তাদের লাঞ্চ শেষ হয় না। তার উপর নির্ধারিত সময় শেষ হলেই গুণতে হয় অতিরিক্ত জরিমানা।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে অনলাইনে ফরম পূরণ ও টাকা জমা নেওয়া হয়। এতে একদিকে যেমন সময় সাশ্রয় হয় তেমনি শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকাংশেই হ্রাস পায়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের ভর্তির সময় কোন কোন কোর্স নেওয়া হবে তা ওয়েবসাইটেই সিলেক্ট করা হয়। কোর্সের উপর সংক্রিয়ভাবে কত টাকা দিতে হবে ওয়েবসাইটেই বলে দেওয়া হয়। পরে অনলাইনেই টাকা জমা দিলে এপ্রুভের পর রেজিস্ট্রেশন কার্ড ডাউনলোড করতে হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তির এমন সুযোগ থাকলেও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরও কেন সে সুযোগ নেই সেটাই এখন পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল রায়হায় বলেন, একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে শিক্ষার্থীদের যেভাবে এনরোলমেন্ট জমা দেওয়ায় ভোগান্তির স্বীকার হতে হয় তা সত্যিই হতাশাজনক। অন্যান্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেখানে অটোমেশন প্রক্রিয়ায় এ কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন হয়। সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ কার্যকর ব্যবস্থা নেবে সেটিই আমার প্রত্যাশা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. সন্তোষ কুমার বসু বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে অবশ্যই আমাদের চলতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান উন্নয়ন কাজে ডিপিপি তে অটোমেশনের বাজেট ধরা রয়েছে। এবং এই ডিপিপি’র অনুকূলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শাখা যেমন- লাইব্রেরী, একাউন্টসসহ অন্যান্য শাখা অটোমেশন প্রক্রিয়ায় ভেতর নিয়ে আসা হবে”

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টাকা জমা দেওয়ার এসব ভোগান্তি কমানোর জন্য আমি অনেক আগে থেকেই চেষ্টা করছি, কিন্ত কিছু প্রতিকূলতার জন্য সে সব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বর্তমানে রূপালি ব্যাংকে যেভাবে টাকা জমা নেওয়া হয়, তার পরিবর্তে অনলাইন মাধ্যমের কথা আমি অনেক আগেই প্রস্তাব করেছি, কিন্তু যথাযথ কতৃপক্ষ তা বাস্তবায়ন করতে পারছেন না।

এ সময় তিনি আরও বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকলে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে অনলাইনে টাকা জমা দেওয়া যেতে পারে, সেক্ষেত্রে লিখিতভাবে আবেদন জমা দিতে হবে। পরে তা যাচাই বাছাইয়ের জন্য কমিটি গঠন করা হবে।

ইবিহো/এসএস