হলে উঠলেন ফুলপরী

ফুলপরীকে নির্যাতন: ৫ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার

ফরহাদ খাদেম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী হলে রাতভর নির্যাতনের শিকার ফুলপরীকে তিনদিনের মধ্যে তার পছন্দ মতো হলে
উঠানোর জন্য হাইকোর্ট থেকে বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার ৪ মার্চ তিনি তার পছন্দমতো বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ওঠেন বলে জানা যায়। সেইসাথে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

গত বুধবার ১ মার্চ ইবি ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় হাইকোর্ট থেকে রায় দেওয়া হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার, দোষীদের সময়িক বহিষ্কার, ফুলপরীর নিরাপত্তা প্রদান ও তিন দিনের মধ্যে তার পছন্দ মতো হলে সিট প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।

ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামছুল আলমকে প্রত্যাহার করেছে। ফুলপরীর সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য রেজিস্ট্রার অফিস থেকে ছাত্র উপদেষ্টা ও
প্রক্টরিয়াল বডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ ৪ মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ফুলপরিকে তার পছন্দ অনুযায়ী হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সিট প্রদান করা হয়েছে। বেলা ১২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের নেতৃত্বে শৃঙ্খলা কমিটির সভায় দোষী পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে৷ সেই সাথে দোষীদের আগামী সাত দিনের মধ্যে তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার না করার কারন দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে।

সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান মীম, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মী ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোয়াবিয়া জাহান।

অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ফুলপরীর সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রক্টরিয়াল বডি সর্বদা কাজ করে যাবে। আজকে তাকে আমরা নিরাপত্তা দিয়ে ক্লাস করার জন্য নিয়ে এসেছি। তার কাছে প্রক্টর এবং প্রক্টরিয়াল বডির নম্বর দেওয়া আছে। তিনি যে কোনো সমস্যায় পরলে আমাদের জানাতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করা, তার নিরাপত্তার জন্য কুষ্টিয়া, পাবনা ও ইবি থানায় চিঠি প্রেরণ করা।

ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পছন্দমতো হলে উঠানোর জন্য আমাকে বলা হয়েছে। তার সাথে আমার কথা হয়েছে, তিনি বলেছেন, আমি যেহেতু শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তাই আমি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠতে চাচ্ছি। তার ইচ্ছানুযায়ী-ই, আমরা তাকে তার পছন্দমতো হলে উঠানোর জন্য সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। আমরা তাকে ৫০১ নম্বর কক্ষে সিট দিয়েছি।

এ ব্যাপারে ফুলপরী বলেন, আমি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম। তাই আমি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠতে চাচ্ছি। যেহেতু এই হল অন্য দুই হলের মাঝে রয়েছে, তাই আমি এই হলকে নিরাপদ মনে করছি। সেইসাথে আমি দোষীদের স্থায়ী বহিষ্কার চাই।

গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে দুই দফায় এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাচ্ছুম ও মোয়াবিয়া, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভুগীর লিখিত অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ এবং হাইকোর্ট কতৃক পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এদিকে এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট হয়, ফলে হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। পরে এ ঘটনায় প্রতিটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফুলপরির নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়। এর প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের হল এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এমবিএইচ/এসএস

হলে উঠলেন ফুলপরী

ফুলপরীকে নির্যাতন: ৫ ছাত্রীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার

ফরহাদ খাদেম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্রী হলে রাতভর নির্যাতনের শিকার ফুলপরীকে তিনদিনের মধ্যে তার পছন্দ মতো হলে
উঠানোর জন্য হাইকোর্ট থেকে বিশ্বিবদ্যালয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার ৪ মার্চ তিনি তার পছন্দমতো বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে ওঠেন বলে জানা যায়। সেইসাথে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

গত বুধবার ১ মার্চ ইবি ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় হাইকোর্ট থেকে রায় দেওয়া হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্টকে প্রত্যাহার, দোষীদের সময়িক বহিষ্কার, ফুলপরীর নিরাপত্তা প্রদান ও তিন দিনের মধ্যে তার পছন্দ মতো হলে সিট প্রদান করার কথা বলা হয়েছে।

ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সংশ্লিষ্ট হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামছুল আলমকে প্রত্যাহার করেছে। ফুলপরীর সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য রেজিস্ট্রার অফিস থেকে ছাত্র উপদেষ্টা ও
প্রক্টরিয়াল বডিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ ৪ মার্চ হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ফুলপরিকে তার পছন্দ অনুযায়ী হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে সিট প্রদান করা হয়েছে। বেলা ১২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের নেতৃত্বে শৃঙ্খলা কমিটির সভায় দোষী পাঁচ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে৷ সেই সাথে দোষীদের আগামী সাত দিনের মধ্যে তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার না করার কারন দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে।

সাময়িক বহিষ্কৃতরা হলেন পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাবাসসুম ইসলাম, আইন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ইসরাত জাহান মীম, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার উর্মী ও ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোয়াবিয়া জাহান।

অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ফুলপরীর সার্বিক নিরাপত্তার জন্য প্রক্টরিয়াল বডি সর্বদা কাজ করে যাবে। আজকে তাকে আমরা নিরাপত্তা দিয়ে ক্লাস করার জন্য নিয়ে এসেছি। তার কাছে প্রক্টর এবং প্রক্টরিয়াল বডির নম্বর দেওয়া আছে। তিনি যে কোনো সমস্যায় পরলে আমাদের জানাতে পারবেন।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন করা, তার নিরাপত্তার জন্য কুষ্টিয়া, পাবনা ও ইবি থানায় চিঠি প্রেরণ করা।

ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলীনা নাসরিন বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পছন্দমতো হলে উঠানোর জন্য আমাকে বলা হয়েছে। তার সাথে আমার কথা হয়েছে, তিনি বলেছেন, আমি যেহেতু শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তাই আমি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠতে চাচ্ছি। তার ইচ্ছানুযায়ী-ই, আমরা তাকে তার পছন্দমতো হলে উঠানোর জন্য সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছি। আমরা তাকে ৫০১ নম্বর কক্ষে সিট দিয়েছি।

এ ব্যাপারে ফুলপরী বলেন, আমি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের শিকার হয়েছিলাম। তাই আমি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে উঠতে চাচ্ছি। যেহেতু এই হল অন্য দুই হলের মাঝে রয়েছে, তাই আমি এই হলকে নিরাপদ মনে করছি। সেইসাথে আমি দোষীদের স্থায়ী বহিষ্কার চাই।

গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে দুই দফায় এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ও বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণের অভিযোগ উঠে শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাচ্ছুম ও মোয়াবিয়া, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান মীম ও ফাইন আর্টস বিভাগের হালিমা খাতুন উর্মীর বিরুদ্ধে। ভুক্তভুগীর লিখিত অভিযোগের পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, হল প্রশাসন ও শাখা ছাত্রলীগ এবং হাইকোর্ট কতৃক পৃথক পৃথকভাবে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এদিকে এ ঘটনায় হাইকোর্টে রিট হয়, ফলে হাইকোর্টের নির্দেশে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসন। পরে এ ঘটনায় প্রতিটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ফুলপরির নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়। এর প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে অভিযুক্তদের হল এবং শাখা ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এমবিএইচ/এসএস