বসুন্ধরা শিক্ষাবৃত্তি: নিশ্চিত হলো শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ময়নাল হোসেন চৌধুরী ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলনসহ শিক্ষকদের সঙ্গে বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের উজানচর কেএন উচ্চ বিদ্যালয় মিয়নায়তনে। ছবি : কালের কণ্ঠ

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতি ও নুসরাত। দুজন দুই বিদ্যালয়ে পড়লেও তাদের মধ্যে মিল রয়েছে। দুজনই অদম্য মেধাবী। অভাব তাদের মেধা ও পড়াশোনা কোনোটিই আটকে রাখতে পারেনি।

একজন পড়ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উজানচর কেএন উচ্চ বিদ্যালয়ে, আরেকজন আশরাফবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে। বাড়ি থেকে তাদের স্কুলের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। প্রতিদিন হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। কখনো আবার না খেয়েও স্কুলে যেতে হতো।আরেক মেধাবী রুপসদি বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া। ছয় মাস আগে সে বাবাকে হারায়। এরপর সুমাইয়াকে নিয়ে তার মা তাছলিমা আক্তার আশ্রয় নেন ভাইয়ের বাড়িতে। মেয়েকে পড়ালেখা করাতে চান তাছলিমা। কিন্তু তাঁর ভাইদের ইচ্ছা লেখাপড়ায় বাড়তি খরচ না করে বিয়ে দিয়ে দিতে। সুমাইয়ার একটাই কথা, ‘পড়াশোনা করবই। ’

শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা থেমে যায়নি, পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই অজানা আশঙ্কা গ্রাস করত, শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারবে তো? শুধু জান্নাতি, নুসরাত ও সুমাইয়া নয়, পুরো বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থীর এই আশঙ্কা দূর করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে শিক্ষাবৃত্তি। নিশ্চিত করা হয়েছে, যত দিন তারা পড়তে চায় তাদের পাশে থাকবে বসুন্ধরা গ্রুপ।

গতকাল মঙ্গলবার উজানচর কেএন উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের মাধ্যমে বাছাই করা শতাধিক শিক্ষার্থীর হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের শিক্ষাবৃত্তি তুলে দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার মহান ব্রত নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা দেশের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে শুভসংঘের তত্ত্বাবধানে বৃত্তি দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। তারই ধারাবাহিকতায় আজ (গতকাল) বাঞ্ছারামপুর উপজেলার শতাধিক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নির্বিঘ্ন করতে আমরা সব সময় পাশে থাকব। তাদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমাদের এই বৃত্তি চলমান থাকবে। ’

বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যারের মহানুভবতায় এই বাঞ্ছারামপুরের মানুষ আজ অনেক সুবিধা পাচ্ছে। সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ, মাদরাসা-এতিমখানায় মাসিক অনুদান, শতাধিক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এর অনন্য উদাহরণ। আপনারা বসুন্ধরা গ্রুপের সবার জন্য দোয়া করবেন, আরো বেশি করে যেন বসুন্ধরা গ্রুপ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। ’

বৃত্তির টাকা হাতে পেয়ে সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রূপকথা বলেছে, ‘বাবার উপার্জনে সংসার খাওয়াই ঠিকমতো চলে না, আমাকে লেখাপড়া করাবেন কিভাবে? তিন মাস আগেই একবার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। তখনই আমার পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘ। তিন মাস ধরে আমি শুভসংঘের মাধ্যমে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে বৃত্তি পাই। এখন আর আমাকে লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। ’

উজানচর কেএন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শুভসংঘের উপজেলা সভাপতি তপন চন্দ্র সূত্রধরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী জাদিদ আল রহমান জনি, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মাইমুন কবির, শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. চান মিয়া সরকার, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক মো. মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।

তিন মাস ধরে বাঞ্ছারামপুরের ৫০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। এই মাস থেকে নতুন করে যুক্ত হলো আরো ৫০ জন। বৃত্তি প্রদান শেষে উপস্থিত সবাইকে বই উপহার দেওয়া হয়।

বসুন্ধরা শিক্ষাবৃত্তি: নিশ্চিত হলো শতাধিক শিক্ষার্থীর পড়াশোনা

নিজস্ব প্রতিবেদক ও বাঞ্ছারামপুর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি

বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ময়নাল হোসেন চৌধুরী ও ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলনসহ শিক্ষকদের সঙ্গে বৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীরা। গতকাল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরের উজানচর কেএন উচ্চ বিদ্যালয় মিয়নায়তনে। ছবি : কালের কণ্ঠ

নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতি ও নুসরাত। দুজন দুই বিদ্যালয়ে পড়লেও তাদের মধ্যে মিল রয়েছে। দুজনই অদম্য মেধাবী। অভাব তাদের মেধা ও পড়াশোনা কোনোটিই আটকে রাখতে পারেনি।

একজন পড়ছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার উজানচর কেএন উচ্চ বিদ্যালয়ে, আরেকজন আশরাফবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে। বাড়ি থেকে তাদের স্কুলের দূরত্ব প্রায় দেড় কিলোমিটার। প্রতিদিন হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। কখনো আবার না খেয়েও স্কুলে যেতে হতো।আরেক মেধাবী রুপসদি বৃন্দাবন উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া। ছয় মাস আগে সে বাবাকে হারায়। এরপর সুমাইয়াকে নিয়ে তার মা তাছলিমা আক্তার আশ্রয় নেন ভাইয়ের বাড়িতে। মেয়েকে পড়ালেখা করাতে চান তাছলিমা। কিন্তু তাঁর ভাইদের ইচ্ছা লেখাপড়ায় বাড়তি খরচ না করে বিয়ে দিয়ে দিতে। সুমাইয়ার একটাই কথা, ‘পড়াশোনা করবই। ’

শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তারা থেমে যায়নি, পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মাঝেমধ্যেই অজানা আশঙ্কা গ্রাস করত, শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা করতে পারবে তো? শুধু জান্নাতি, নুসরাত ও সুমাইয়া নয়, পুরো বাঞ্ছারামপুর উপজেলার ১৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতাধিক শিক্ষার্থীর এই আশঙ্কা দূর করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে শিক্ষাবৃত্তি। নিশ্চিত করা হয়েছে, যত দিন তারা পড়তে চায় তাদের পাশে থাকবে বসুন্ধরা গ্রুপ।

গতকাল মঙ্গলবার উজানচর কেএন উচ্চ বিদ্যালয় মিলনায়তনে কালের কণ্ঠ শুভসংঘের মাধ্যমে বাছাই করা শতাধিক শিক্ষার্থীর হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের শিক্ষাবৃত্তি তুলে দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠানে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের পরিচালক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, ‘দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করার মহান ব্রত নিয়ে বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে যাচ্ছে। সারা দেশের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীকে শুভসংঘের তত্ত্বাবধানে বৃত্তি দেয় বসুন্ধরা গ্রুপ। তারই ধারাবাহিকতায় আজ (গতকাল) বাঞ্ছারামপুর উপজেলার শতাধিক শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা নির্বিঘ্ন করতে আমরা সব সময় পাশে থাকব। তাদের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমাদের এই বৃত্তি চলমান থাকবে। ’

বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা ময়নাল হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান স্যারের মহানুভবতায় এই বাঞ্ছারামপুরের মানুষ আজ অনেক সুবিধা পাচ্ছে। সুদ ও সার্ভিস চার্জমুক্ত ক্ষুদ্রঋণ, মাদরাসা-এতিমখানায় মাসিক অনুদান, শতাধিক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এর অনন্য উদাহরণ। আপনারা বসুন্ধরা গ্রুপের সবার জন্য দোয়া করবেন, আরো বেশি করে যেন বসুন্ধরা গ্রুপ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে। ’

বৃত্তির টাকা হাতে পেয়ে সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রূপকথা বলেছে, ‘বাবার উপার্জনে সংসার খাওয়াই ঠিকমতো চলে না, আমাকে লেখাপড়া করাবেন কিভাবে? তিন মাস আগেই একবার পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। তখনই আমার পাশে দাঁড়ায় বসুন্ধরা গ্রুপ ও শুভসংঘ। তিন মাস ধরে আমি শুভসংঘের মাধ্যমে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা করে বৃত্তি পাই। এখন আর আমাকে লেখাপড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে হয় না। ’

উজানচর কেএন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও শুভসংঘের উপজেলা সভাপতি তপন চন্দ্র সূত্রধরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কাজী জাদিদ আল রহমান জনি, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মাইমুন কবির, শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, বাঞ্ছারামপুর সরকারি কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. চান মিয়া সরকার, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক মো. মোশাররফ হোসেন প্রমুখ।

তিন মাস ধরে বাঞ্ছারামপুরের ৫০ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে। এই মাস থেকে নতুন করে যুক্ত হলো আরো ৫০ জন। বৃত্তি প্রদান শেষে উপস্থিত সবাইকে বই উপহার দেওয়া হয়।