বিদ্যালয়ের খাতায় নাম পরীক্ষার হলে নেই

আরিফুর রহমান মিঠু, শাজাহানপুর (বগুড়া)

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বড়পাথার সরকারি প্রাথিমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে তৃতীয় শ্রেণির আটজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সালেহা খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়ার শাজাহানপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী ও পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যায় বিস্তর ফারাক দেখা গেছে। বিদ্যালয়ে আটজন শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষা অফিসকে দেখানো হচ্ছে ২৪ জন।

উপজেলার মোট ১২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে এই চিত্র। এতে সরকারের কাছে ভুল তথ্য যাচ্ছে। আর বেশি শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপবৃত্তির যে টাকা আসে তা কোথায় যায় সেটি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সম্প্রতি সরেজমিনে চুপিনগর ইউনিয়নের বড়পাথার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, একটি কক্ষে তৃতীয় শ্রেণির আট শিক্ষার্থীর বিজ্ঞান পরীক্ষা নিচ্ছেন সহকারী শিক্ষক নুরুল আলম। আরেকটি কক্ষে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৩৫ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা একত্রে নিচ্ছেন আরেক শিক্ষক।

কিন্তু বিদ্যালয়ের রেজিস্টার খাতা দেখে জানা যায়, তৃতীয় শ্রেণিতে আটজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও মোট ২৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণিতে ৩৫ জন অংশ নিলেও মোট ৫০ জন শিক্ষার্থী আছে। পঞ্চম শ্রেণিতে ২২ জন এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ২৮ জন। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেনে গেছে। তাই শিক্ষার্থী কম।’

এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুছ আলীর কাছে বেশি শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা আসলে তা কি করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব টাকা শিক্ষার্থীদেরই দিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের কাছে কিছু থাকে না।’  উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ন্যূনতম ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য থাকবে একজন করে শিক্ষক। তবে বাস্তবে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৪-৫ জন করে শিক্ষক পাওয়া গেছে।

একই অবস্থা দেখা গেছে, খোট্রাপাড়া ইউনিয়নের দুরুলিয়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাত আরা আজকের পত্রিকাকে জানান, বিদ্যালয়ে মোট ৪৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন চারজন শিক্ষক। পঞ্চম শ্রেণির নয়জন, চতুর্থ শ্রেণিতে সাতজন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে আটজন ও প্রথম শ্রেণিতে ১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্য অনেকেই আবার পরীক্ষা দিচ্ছে না।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহবুব আলম বলেন, ‘অক্টোবর মাসে দুরুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বড়পাথার প্রাথমিক বিদ্যালয় সার্বিক বিষয় পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। শিক্ষার্থী কমের বিষয়টি জানা নেই।’

শাজাহানপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসান জানান, কিছু স্কুলে শিক্ষার্থী কম আছে। তবে এটা সব স্কুলে না। করোনার কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে। সহকারী শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। আর কাগজে-কলমে ও বাস্তবে শিক্ষার্থী সংখ্যার পার্থক্যর বিষয়ে আমার জানা ছিল না। তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিদ্যালয়ের খাতায় নাম পরীক্ষার হলে নেই

আরিফুর রহমান মিঠু, শাজাহানপুর (বগুড়া)

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার বড়পাথার সরকারি প্রাথিমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে তৃতীয় শ্রেণির আটজন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা নিচ্ছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সালেহা খাতুন। ছবি: আজকের পত্রিকা

বগুড়ার শাজাহানপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কাগজে-কলমে শিক্ষার্থী ও পরীক্ষায় অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যায় বিস্তর ফারাক দেখা গেছে। বিদ্যালয়ে আটজন শিক্ষার্থী থাকলেও শিক্ষা অফিসকে দেখানো হচ্ছে ২৪ জন।

উপজেলার মোট ১২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অধিকাংশ বিদ্যালয়ে এই চিত্র। এতে সরকারের কাছে ভুল তথ্য যাচ্ছে। আর বেশি শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপবৃত্তির যে টাকা আসে তা কোথায় যায় সেটি নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। সম্প্রতি সরেজমিনে চুপিনগর ইউনিয়নের বড়পাথার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, একটি কক্ষে তৃতীয় শ্রেণির আট শিক্ষার্থীর বিজ্ঞান পরীক্ষা নিচ্ছেন সহকারী শিক্ষক নুরুল আলম। আরেকটি কক্ষে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৩৫ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষা একত্রে নিচ্ছেন আরেক শিক্ষক।

কিন্তু বিদ্যালয়ের রেজিস্টার খাতা দেখে জানা যায়, তৃতীয় শ্রেণিতে আটজন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও মোট ২৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। পঞ্চম ও চতুর্থ শ্রেণিতে ৩৫ জন অংশ নিলেও মোট ৫০ জন শিক্ষার্থী আছে। পঞ্চম শ্রেণিতে ২২ জন এবং চতুর্থ শ্রেণিতে ২৮ জন। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। কিছু শিক্ষার্থী কিন্ডারগার্টেনে গেছে। তাই শিক্ষার্থী কম।’

এ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইউনুছ আলীর কাছে বেশি শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা আসলে তা কি করা হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সব টাকা শিক্ষার্থীদেরই দিয়ে দেওয়া হয়। আমাদের কাছে কিছু থাকে না।’  উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ন্যূনতম ৫০ জন শিক্ষার্থী থাকতে হবে। প্রতি ৩০ জন শিক্ষার্থীর জন্য থাকবে একজন করে শিক্ষক। তবে বাস্তবে অধিকাংশ বিদ্যালয়ে ৫০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে ৪-৫ জন করে শিক্ষক পাওয়া গেছে।

একই অবস্থা দেখা গেছে, খোট্রাপাড়া ইউনিয়নের দুরুলিয়া বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান্নাত আরা আজকের পত্রিকাকে জানান, বিদ্যালয়ে মোট ৪৭ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে রয়েছেন চারজন শিক্ষক। পঞ্চম শ্রেণির নয়জন, চতুর্থ শ্রেণিতে সাতজন, তৃতীয় শ্রেণিতে ১০ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে আটজন ও প্রথম শ্রেণিতে ১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের মধ্য অনেকেই আবার পরীক্ষা দিচ্ছে না।

উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মাহবুব আলম বলেন, ‘অক্টোবর মাসে দুরুলিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং বড়পাথার প্রাথমিক বিদ্যালয় সার্বিক বিষয় পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। শিক্ষার্থী কমের বিষয়টি জানা নেই।’

শাজাহানপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার কামরুল হাসান জানান, কিছু স্কুলে শিক্ষার্থী কম আছে। তবে এটা সব স্কুলে না। করোনার কারণে এ সংকট তৈরি হয়েছে। সহকারী শিক্ষা অফিসারদের মাধ্যমে নিয়মিত মনিটরিং করা হয়। আর কাগজে-কলমে ও বাস্তবে শিক্ষার্থী সংখ্যার পার্থক্যর বিষয়ে আমার জানা ছিল না। তদন্ত করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।