ইউজিসির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি

বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবিদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন ডেস্ক
ইউজিসি’র সঙ্গে ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিএ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন প্রতিষ্ঠানভেদে আর্থিক প্রয়োজনীয়তা ও খরচের ধরন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবিদিহির মানদণ্ড সকল প্রতিষ্ঠানে একই হওয়া উচিত। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান আর্থিক অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে অর্থ সংক্রান্ত সকল বিতর্ক নিরসন করা সম্ভব হবে। তবে, আর্থিক বিষয় যারা দেখভাল করছেন তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করাও এক্ষেত্রে খুবই জরুরি বলে তিনি জানান।

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেজিস্ট্রারবৃন্দ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান । ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা বর্তমান সরকারের নেই। বরং বিশ্ববিদ্যালয়কে কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা নিয়ে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশে আছে বলে তিনি জানান। সরকারি বিধি বিধান অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যদের কাজকে এগিয়ে নিতে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আহবান জানান। তিনি বলেন, উপাচার্যরা নিয়োগ, ঠিকাদারীসহ বহুমুখি অযাচিত চাপে থাকেন। অনেক সময় সহকর্মীরাও তাঁদের অসহযোগিতা করে থাকেন। ফলে উপাচার্যদের পক্ষে কাজ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে ওঠে। ফলে সম্মানহানীর ভয়ে অনেকেই উপাচার্য হতে আগ্রহী হন না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই অনভিপ্রেত চর্চা থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করেন।

নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সংকটের বিষয় তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দ্বারা শিক্ষাপ্রদান নিশ্চিত করতে ইউজিসি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে একটি পুল গঠন করতে পারে। তারা সরাসরি বা ব্লেন্ডেড পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করতে পারেন। ফলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পাঠদান গ্রহণের সুযোগ পাবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলে শিক্ষার মান কমবে বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে তা যথার্থ নয়। শুরুতে কিছু সমস্যা থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় ঠিকই শিক্ষার মান অর্জিত হয়।

উচ্চশিক্ষা সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যার মেধা ও ইচ্ছা আছে এবং প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে পাশ করবে তার জন্য উচ্চশিক্ষা অধিকার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও ফিজিক্যাল মাস্টার প্লান প্রণয়ন, ঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন, উদ্যোক্তা তৈরি, রিসার্চ ও ইনোভেশনে গুরুত্বারোপ, দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরি, একক ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা, এনডাউনমেন্ট ফান্ড গঠন, রিসার্চ রেপোজিটরি গঠনের ওপর গুরত্বারোপ করেন।

ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যয়ে কোন ধরনের অনিয়ম যেন না হয় সেদিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যয় নিয়ে অনেক নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় যা প্রত্যাশিত নয়।

শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষায় প্রতি বছর প্রায় ২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয় যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে হলে বাজেট ৪ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনে আউটকাম বেইজড বাজেট প্রণয়নের কথা বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে কোন গবেষকের নিবন্ধ প্রকাশে ইউজিসি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে। আগামী বছর ১৫-২০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকর জন্য বিদেশ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করবে ইউজিসি। এছাড়া, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এনডাউমেন্ট ফান্ড গঠন এবং র‌্যাংকিংয়ে মর্দাদাপূর্ণ স্থান পেতে তিনি সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, উচ্চশিক্ষা বিশেষ ধরনের সুযোগ। উচ্চশিক্ষা সবার জন্য নয়, এটা অধিকার নয়। কিন্তু, উচ্চশিক্ষাকে সহজলভ্য করায় এর গুণগতমান কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উচ্চশিক্ষা হাতে কলমে শিক্ষা না হলে এটি টেকসই ও মানসম্পন্ন হবে না বলে তিনি জানান।

অধ্যাপক আলমগীর বলেন, উচ্চশিক্ষায় সক্ষমতা ও জাতির প্রত্যাশা পূরণে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি উপাচার্যদের চাপমুক্ত কাজের পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান। এছাড়া, চাকরিতে বৈষম্য কমাতে বিশ্ববিদ্যালয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সিনিয়র স্কেল দেওয়ার দাবি উত্থাপন করেন।

অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাকে মানসম্মত করা এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া প্লাটফর্ম তৈরির লক্ষ্যে ইউজিসি কাজ করছে। তিনি দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাজে লাগানো এবং ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুসারে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার আহবান জানান ।

অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নের গুরুত্ব অনেক। কারণ, এখানে বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দিষ্ট একটি স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অঙ্গীকার করা হয়। এজন্য লক্ষ্য অর্জনে সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বিগত বছরের লক্ষকে সামনে রেখে সময়বদ্ধ ও অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণের পরামর্শ দেন।

২০২১-২২ অর্থবছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এপিএ কাযক্রম বাস্তবায়নে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অর্জনকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও ফোকাল পয়েন্টদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে সার্টিফিকেট প্রদান করেন শিক্ষামন্ত্রী।

ইউজিসি’র উপপরিচালক ও এপিএ’র ফোকাল পয়েন্ট মো. গোলাম দস্তগীরের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ৫৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও এপিএ’র ফোকাল পয়েন্ট উপস্থিত ছিলেন।

ইবিহো/এসএস

ইউজিসির সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তি

বিশ্ববিদ্যালয়ে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবিদিহি নিশ্চিত করার আহ্বান শিক্ষামন্ত্রীর

শিক্ষা-শিক্ষাঙ্গন ডেস্ক
ইউজিসি’র সঙ্গে ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিএ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন প্রতিষ্ঠানভেদে আর্থিক প্রয়োজনীয়তা ও খরচের ধরন ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবিদিহির মানদণ্ড সকল প্রতিষ্ঠানে একই হওয়া উচিত। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সরকারের বিদ্যমান আর্থিক অনুশাসন যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে অর্থ সংক্রান্ত সকল বিতর্ক নিরসন করা সম্ভব হবে। তবে, আর্থিক বিষয় যারা দেখভাল করছেন তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করাও এক্ষেত্রে খুবই জরুরি বলে তিনি জানান।

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) ও দেশের ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি (এপিএ) স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রেজিস্ট্রারবৃন্দ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর, অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ, অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান । ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন।

শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, দেশের বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণের ইচ্ছা বর্তমান সরকারের নেই। বরং বিশ্ববিদ্যালয়কে কাঙ্ক্ষিত স্থানে পৌঁছাতে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা নিয়ে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশে আছে বলে তিনি জানান। সরকারি বিধি বিধান অনুসরণ করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান।

শিক্ষামন্ত্রী উপাচার্যদের কাজকে এগিয়ে নিতে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আহবান জানান। তিনি বলেন, উপাচার্যরা নিয়োগ, ঠিকাদারীসহ বহুমুখি অযাচিত চাপে থাকেন। অনেক সময় সহকর্মীরাও তাঁদের অসহযোগিতা করে থাকেন। ফলে উপাচার্যদের পক্ষে কাজ করা অনেক সময় কঠিন হয়ে ওঠে। ফলে সম্মানহানীর ভয়ে অনেকেই উপাচার্য হতে আগ্রহী হন না। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এই অনভিপ্রেত চর্চা থেকে বেরিয়ে আসার অনুরোধ করেন।

নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠ শিক্ষক সংকটের বিষয় তুলে ধরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের দ্বারা শিক্ষাপ্রদান নিশ্চিত করতে ইউজিসি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষকদের নিয়ে একটি পুল গঠন করতে পারে। তারা সরাসরি বা ব্লেন্ডেড পদ্ধতিতে শিক্ষাদান করতে পারেন। ফলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পাঠদান গ্রহণের সুযোগ পাবে।

তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন হলে শিক্ষার মান কমবে বলে যে ধারণা প্রচলিত আছে তা যথার্থ নয়। শুরুতে কিছু সমস্যা থাকলেও সময়ের পরিক্রমায় ঠিকই শিক্ষার মান অর্জিত হয়।

উচ্চশিক্ষা সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যার মেধা ও ইচ্ছা আছে এবং প্রতিযোগিতামূলক ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে পাশ করবে তার জন্য উচ্চশিক্ষা অধিকার। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও ফিজিক্যাল মাস্টার প্লান প্রণয়ন, ঠিক সময়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন, উদ্যোক্তা তৈরি, রিসার্চ ও ইনোভেশনে গুরুত্বারোপ, দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরি, একক ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণ, ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া সহযোগিতা, এনডাউনমেন্ট ফান্ড গঠন, রিসার্চ রেপোজিটরি গঠনের ওপর গুরত্বারোপ করেন।

ইউজিসি চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যয়ে কোন ধরনের অনিয়ম যেন না হয় সেদিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ব্যয় নিয়ে অনেক নেতিবাচক পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় যা প্রত্যাশিত নয়।

শিক্ষায় বাজেট বরাদ্দ বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শিক্ষায় প্রতি বছর প্রায় ২ শতাংশ বরাদ্দ দেওয়া হয় যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে হলে বাজেট ৪ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি বরাদ্দ দিতে হবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনে আউটকাম বেইজড বাজেট প্রণয়নের কথা বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, মানসম্পন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে কোন গবেষকের নিবন্ধ প্রকাশে ইউজিসি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে। আগামী বছর ১৫-২০ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকর জন্য বিদেশ উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করবে ইউজিসি। এছাড়া, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এনডাউমেন্ট ফান্ড গঠন এবং র‌্যাংকিংয়ে মর্দাদাপূর্ণ স্থান পেতে তিনি সকলের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, উচ্চশিক্ষা বিশেষ ধরনের সুযোগ। উচ্চশিক্ষা সবার জন্য নয়, এটা অধিকার নয়। কিন্তু, উচ্চশিক্ষাকে সহজলভ্য করায় এর গুণগতমান কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। উচ্চশিক্ষা হাতে কলমে শিক্ষা না হলে এটি টেকসই ও মানসম্পন্ন হবে না বলে তিনি জানান।

অধ্যাপক আলমগীর বলেন, উচ্চশিক্ষায় সক্ষমতা ও জাতির প্রত্যাশা পূরণে একযোগে কাজ করতে হবে। তিনি উপাচার্যদের চাপমুক্ত কাজের পরিবেশ তৈরির আহ্বান জানান। এছাড়া, চাকরিতে বৈষম্য কমাতে বিশ্ববিদ্যালয় জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের সিনিয়র স্কেল দেওয়ার দাবি উত্থাপন করেন।

অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, উচ্চশিক্ষা ও গবেষণাকে মানসম্মত করা এবং ইন্ডাস্ট্রি-একাডেমিয়া প্লাটফর্ম তৈরির লক্ষ্যে ইউজিসি কাজ করছে। তিনি দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট কাজে লাগানো এবং ইন্ডাস্ট্রির চাহিদা অনুসারে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার আহবান জানান ।

অধ্যাপক আবু তাহের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি বাস্তবায়নের গুরুত্ব অনেক। কারণ, এখানে বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দিষ্ট একটি স্থানে নিয়ে যাওয়ার জন্য অঙ্গীকার করা হয়। এজন্য লক্ষ্য অর্জনে সকলকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। বিগত বছরের লক্ষকে সামনে রেখে সময়বদ্ধ ও অর্জনযোগ্য লক্ষ্য নির্ধারণের পরামর্শ দেন।

২০২১-২২ অর্থবছরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এপিএ কাযক্রম বাস্তবায়নে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় অর্জনকারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার ও ফোকাল পয়েন্টদের মাঝে পুরস্কার হিসেবে সার্টিফিকেট প্রদান করেন শিক্ষামন্ত্রী।

ইউজিসি’র উপপরিচালক ও এপিএ’র ফোকাল পয়েন্ট মো. গোলাম দস্তগীরের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি’র জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ৫৪টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও এপিএ’র ফোকাল পয়েন্ট উপস্থিত ছিলেন।

ইবিহো/এসএস