বিসিএস মৌখিক পরীক্ষায় ফেলের কারণ

চলতি ডিসেম্বর মাস থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে ৪১তম বিসিএস মৌখিক পরীক্ষা। বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতাগুলো বিশ্লেষণ করে ভাইভায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কৌশল ও ফেলের কারণ সম্পর্কে জানাচ্ছেন ৩৫তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা

বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ ও চাকরিপ্রার্থীদের ধারণা, মৌখিক পরীক্ষার সব প্রশ্নের উত্তর করা মানেই সেরা ভাইভা, আর উত্তর না জানা মানেই ভাইভায় ফেল! এটি ভুল ধারণা। ভাইভায় মূলত দেখা হয় একজন প্রার্থী তার আবেদিত পদের জন্য কতটুকু উপযুক্ত, আর যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে কতটা স্মার্ট ও বুদ্ধির পরিচয় দিচ্ছে। এমন কিছু বিষয়ের ওপরই মূলত প্রার্থীর ভাইভার নম্বর নির্ভর করে।

সর্বাধিক নম্বর পাওয়ার উপায়

kalerkantho

বিসিএস এবং অন্যান্য চাকরির ভাইভায় তিন ক্যাটাগরির প্রার্থী ভালো নম্বর পেতে পারে—

১. প্রশ্নোত্তর ও আচরণে প্রার্থী স্মার্ট হলে ভাইভা বোর্ডের মন জয় করা খুব সহজ, যা প্রার্থীকে ভাইভায় একটি বিশেষ নম্বর (অন্যদের মতো গতানুগতিক নয়) পেতে সাহায্য করে।

আপনি কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানতেই পারেন, কিন্তু আপনি যে জানেন না, এটা যে বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করছেন বা কোন প্রশ্নের উত্তর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কিভাবে দিচ্ছেন, এর ওপর ভাইভার নম্বর নির্ভর করে। তবে সাধারণ ও কমন প্রশ্নের উত্তরগুলো আপনার জানতে হবে। এর বিপরীত হলে সেটি আপনার অযোগ্যতা।

২. প্রার্থীর খুব ভালো শিক্ষাগত সনদ বা বিদেশি ডিগ্রি থাকলে প্রার্থীর প্রতি ভাইভা বোর্ডের একটা আলাদা কৌতূহল তৈরি হয়, যা ভালো নম্বর তুলতে দারুণ কাজ করে। যেমন—আপনি সাধারণ প্রার্থী হলে আপনার ভাইভায় যেমন মোগল সাম্রাজ্য বা পছন্দের ক্যাডারের হায়ারারকি টাইপের গতানুগতিক প্রশ্ন হতে পারে, আবার আপনি অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট/মাস্টার্স হলে আপনার ভাইভার প্রশ্ন হতে পারে, অক্সফোর্ড এবং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়াশোনার মৌলিক পার্থক্য কী? যুক্তরাজ্য জীবন কেমন লাগে? সেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কেমন?

৩. আপনার কোনো ব্যতিক্রম ও বিশেষ যোগ্যতা আছে, যা সাধারণ প্রার্থীদের নেই (যেমন—বিশেষ খাতের কন্ট্রিবিউটর, সোশ্যাল ওয়ার্ক, গান, খেলাধুলায় পারদর্শী, ইংরেজি ব্রিটিশ উচ্চারণে কথা বলতে পারা), এমন অবস্থায় আপনার প্রতি ভাইভা বোর্ডের ইতিবাচক মনোভাব থাকবে, যা আপনাকে ভালো নম্বর পেতে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে। ৩৫তম বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের একজন সহকর্মীকে ভাইভা বোর্ডের শেষ প্রশ্ন ছিল, ‘তুমি হিসাববিজ্ঞানে পড়েও এত সুন্দর করে ইংরেজি বলতে পারো কিভাবে?’ প্রশ্ন শুনেই বোঝা যায়, ভাইভা বোর্ড প্রচণ্ড ইমপ্রেসড হয়েছিল এবং প্রার্থী ভাইভায় একটা ভালো নম্বর পেয়েছিল।

ভাইভা বোর্ডে ফেল করার কারণ

আপনি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেও যেসব কারণে ফেল করতে পারেন—

১. আপনি যে চাকরির জন্য ভাইভা দিতে গিয়েছেন, ভাইভা বোর্ড আপনাকে তার অযোগ্য মনে করলে ভাইভায় ফেল করিয়ে দেওয়া হতে পারে। যেমন—আপনি বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডার পছন্দক্রমের প্রথমে রেখেছেন, কিন্তু আপনি ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না কিংবা আপনার আচরণ ও ব্যক্তিত্ব দেখে মনে হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। ভাইভা বোর্ডের কাছে এমনটা মনে হলে আপনাকে ফেল করানো হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে—আপনাকে অল্প নম্বর দিয়ে পাস করানো হলে আপনি লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর থাকার কারণে পররাষ্ট্র ক্যাডার পেয়ে যেতে পারেন। ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

২. সিভিল সার্ভিস বা আপনাকে যে পদে নিয়োগ দেওয়া হবে আপনার মধ্যে সেই কর্মকর্তার স্বরূপ অনুপস্থিত থাকলে (যেমন—আপনার পোশাক মানানসই না হলে বা বাচনভঙ্গি আঞ্চলিকতায় দুষ্ট হলে) বা যদি এমন মনে হয় প্রশিক্ষণ দিয়েও আপনাকে যোগ্য করা যাবে না, এমন অবস্থায় সঠিক কর্মকর্তা বেছে নেওয়ার অংশ হিসেবে আপনাকে ফেল করিয়ে দেওয়া হতে পারে।

৩. প্রশ্নোত্তরে বোর্ডের সঙ্গে অযথা তর্কে জড়াবেন না। বোর্ড সদস্য ইচ্ছা করেই কোনো ভুল তথ্য দিয়ে আপনাকে পরীক্ষা করতে পারেন। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে ঠাণ্ডা মাথায় বিনীত ও বুদ্ধিমানের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করুন।

৪. সব প্রশ্নের উত্তর না পারলেও নিজের পঠিত বিষয়, নিজ জেলা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব আপনার সম্পর্কে ভাইভা বোর্ডে নেতিবাচক বার্তা প্রকাশ পাবে। এটিও ভাইভায় ফেলের একটি কারণ হতে পারে।

৫. আপনার কোনো কথা বা আচরণে যদি মনে হয় আপনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন বা নিজের রাজনৈতিক পরিচয় বারবার প্রকাশ করলে রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় আপনাকে ফেল করানো হতে পারে। তাই রাজনৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে বিতর্কিত বিষয়গুলো কৌশলে এড়িয়ে যান।

৬. সিভিল সার্ভিসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ চাকরির গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন কর্মকর্তাকে অনেক ধরনের মানসিক প্রেশার সামলাতে হয়। তাই অহেতুক ভীতি, অল্পতে ঘাবড়ে যাওয়া, মারাত্মকভাবে নার্ভাস হয়ে যাওয়া একজন ভাবী কর্মকর্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একটি বিসিএসের ভাইভায় আমার পরের প্রার্থী আগের দুই বিসিএস ভাইভায় ফেল করেছিলেন। একটি ভাইভায় তাঁকে কয়েকবার বিসিএসের পূর্ণরূপ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি নার্ভাস হয়ে উত্তরে বারবার বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ কর্ম কমিশন। ’

৭. প্রশ্নের উত্তর বা তথ্য প্রদানে ছলনার আশ্রয় নেওয়া, কোনো বিষয়ে অজুহাত দাঁড় করানো, স্যরি বলতে কার্পণ্য করা, ইংরেজি প্রশ্নে বাংলা উত্তর দেওয়া, আত্মবিশ্বাসের অভাব, সিদ্ধান্তহীনতা, মুদ্রাদোষ (বারবার suppose, মনে করেন, ধরেন, বুঝলেন স্যার ইত্যাদি বলা), তোতলামি—এসব কারণে ভাইভা বোর্ডে আপনার নেতিবাচক ধারণা হতে পারে। এর প্রভাব পড়বে ভাইভার নম্বরে।

চাকরির ভাইভায় ভালো নম্বর পাওয়া মানেই মেধাতালিকায় থাকা নয়। চাকরির লিখিত ও ভাইভার নম্বর যোগ করে মেধাতালিকা তৈরি করা হয়, যেখানে লিখিত পরীক্ষায়ই পুরো নম্বরের বড় অংশ। তবু প্রতিটি ধাপের মতো ভাইভায়ও ভালো করার চেষ্টা আপনার মেধাতালিকায় থাকার সম্ভাবনাকে এগিয়ে রাখবে। আর আপনি ভাইভায় ফেল মানে তীরে এসে তরি ডুবে গেল।

মৌখিক পরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতা

♦ বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা পিএসসির যেকোনো কেন্দ্র (প্রতিটি বিভাগ একেকটি কেন্দ্র) থেকে অংশ নেওয়া গেলেও ভাইভার বেলায় নির্ধারিত দিনে পিএসসির প্রধান কার্যালয়ে (আগারগাঁও, ঢাকা) প্রার্থীদের উপস্থিত থাকতে হয়।

♦ পিএসসি কর্তৃক প্রদত্ত সাক্ষাৎকারপত্র ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র নিয়ে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ অনুযায়ী পিএসসিতে সকাল ৯টায় উপস্থিত থাকতে হয়।

♦ ভাইভার আগে প্রার্থীদের লাইন ধরে সুশৃঙ্খলভাবে পিএসসির নিচতলার ওয়েটিংরুমে প্রবেশ করানো হয়।

♦ লটারির মাধ্যমে প্রতিটি রেঞ্জের (এক রেঞ্জে ১২ থেকে ১৫ জন) প্রার্থীদের ভাইভা বোর্ড নির্ধারণ করা হয় এবং একজন কর্মকর্তা প্রার্থীদের ভাইভা বোর্ডে (পিএসসির সদস্য/চেয়ারম্যানের কক্ষ) নিয়ে যান। এরপর প্রার্থীদের সিরিয়াল অনুযায়ী কাগজপত্র চেক করে ভাইভারুমে প্রবেশ করানো হয়।

♦ পিএসসিতে প্রবেশের আগে নিচতলার রিসেপশনে প্রার্থীদের মোবাইল ও অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেখে যেতে হয়। ফলে একজন প্রার্থী কোন বোর্ডের অধীনে ভাইভা দিতে যাচ্ছে, তা বাইরের কাউকে জানানো সম্ভব হয় না এবং পিএসসির স্বচ্ছতা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত হয়।

♦ পিএসসিতে চেয়ারম্যান বা সদস্যদের একজন একেকটি বোর্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া দুজন এক্সটার্নাল সদস্য ভাইভারুমে উপস্থিত থাকেন।

♦ পিএসসির চেয়ারম্যান এবং সদস্যের মোট সংখ্যা ১৫ হলে সাধারণত ১০-১২টি বোর্ড গঠন করা হয় (দু-তিনজন সদস্য রিজার্ভ বা অন্য দায়িত্বে ব্যস্ত থাকেন)। প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ জন প্রার্থী বিসিএস ভাইভায় অংশ নেয় (প্রতি বোর্ডে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ জন প্রার্থী)।

♦ প্রতি বিসিএসে ভাইভা শুরুর প্রথম এক-দুই দিন ভাইভা প্রশ্নের ধরন এবং নম্বর প্রদানের সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করার জন্য চেয়ারম্যান ও সব সদস্যের সমন্বয়ে শুধু একটি বোর্ড (প্রেসিডেনশিয়াল ভাইভা বোর্ড) গঠন করা হয়।

♦ শুধু একটি বোর্ড হওয়ার কারণে প্রথম এক-দুই দিন শুধু ১২ থেকে ১৫ জন প্রার্থী ভাইভা দেওয়ার সুযোগ পায়।

বিসিএস মৌখিক পরীক্ষায় ফেলের কারণ

চলতি ডিসেম্বর মাস থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে ৪১তম বিসিএস মৌখিক পরীক্ষা। বিসিএস ও অন্যান্য সরকারি চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতাগুলো বিশ্লেষণ করে ভাইভায় সর্বোচ্চ নম্বর পাওয়ার কৌশল ও ফেলের কারণ সম্পর্কে জানাচ্ছেন ৩৫তম বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা রবিউল আলম লুইপা

বেশির ভাগ সাধারণ মানুষ ও চাকরিপ্রার্থীদের ধারণা, মৌখিক পরীক্ষার সব প্রশ্নের উত্তর করা মানেই সেরা ভাইভা, আর উত্তর না জানা মানেই ভাইভায় ফেল! এটি ভুল ধারণা। ভাইভায় মূলত দেখা হয় একজন প্রার্থী তার আবেদিত পদের জন্য কতটুকু উপযুক্ত, আর যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষেত্রে কতটা স্মার্ট ও বুদ্ধির পরিচয় দিচ্ছে। এমন কিছু বিষয়ের ওপরই মূলত প্রার্থীর ভাইভার নম্বর নির্ভর করে।

সর্বাধিক নম্বর পাওয়ার উপায়

kalerkantho

বিসিএস এবং অন্যান্য চাকরির ভাইভায় তিন ক্যাটাগরির প্রার্থী ভালো নম্বর পেতে পারে—

১. প্রশ্নোত্তর ও আচরণে প্রার্থী স্মার্ট হলে ভাইভা বোর্ডের মন জয় করা খুব সহজ, যা প্রার্থীকে ভাইভায় একটি বিশেষ নম্বর (অন্যদের মতো গতানুগতিক নয়) পেতে সাহায্য করে।

আপনি কিছু প্রশ্নের উত্তর না জানতেই পারেন, কিন্তু আপনি যে জানেন না, এটা যে বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করছেন বা কোন প্রশ্নের উত্তর বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কিভাবে দিচ্ছেন, এর ওপর ভাইভার নম্বর নির্ভর করে। তবে সাধারণ ও কমন প্রশ্নের উত্তরগুলো আপনার জানতে হবে। এর বিপরীত হলে সেটি আপনার অযোগ্যতা।

২. প্রার্থীর খুব ভালো শিক্ষাগত সনদ বা বিদেশি ডিগ্রি থাকলে প্রার্থীর প্রতি ভাইভা বোর্ডের একটা আলাদা কৌতূহল তৈরি হয়, যা ভালো নম্বর তুলতে দারুণ কাজ করে। যেমন—আপনি সাধারণ প্রার্থী হলে আপনার ভাইভায় যেমন মোগল সাম্রাজ্য বা পছন্দের ক্যাডারের হায়ারারকি টাইপের গতানুগতিক প্রশ্ন হতে পারে, আবার আপনি অক্সফোর্ড গ্র্যাজুয়েট/মাস্টার্স হলে আপনার ভাইভার প্রশ্ন হতে পারে, অক্সফোর্ড এবং বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়াশোনার মৌলিক পার্থক্য কী? যুক্তরাজ্য জীবন কেমন লাগে? সেখানে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীর সংখ্যা কেমন?

৩. আপনার কোনো ব্যতিক্রম ও বিশেষ যোগ্যতা আছে, যা সাধারণ প্রার্থীদের নেই (যেমন—বিশেষ খাতের কন্ট্রিবিউটর, সোশ্যাল ওয়ার্ক, গান, খেলাধুলায় পারদর্শী, ইংরেজি ব্রিটিশ উচ্চারণে কথা বলতে পারা), এমন অবস্থায় আপনার প্রতি ভাইভা বোর্ডের ইতিবাচক মনোভাব থাকবে, যা আপনাকে ভালো নম্বর পেতে অনেকটাই এগিয়ে রাখবে। ৩৫তম বিসিএস ইকোনমিক ক্যাডারের একজন সহকর্মীকে ভাইভা বোর্ডের শেষ প্রশ্ন ছিল, ‘তুমি হিসাববিজ্ঞানে পড়েও এত সুন্দর করে ইংরেজি বলতে পারো কিভাবে?’ প্রশ্ন শুনেই বোঝা যায়, ভাইভা বোর্ড প্রচণ্ড ইমপ্রেসড হয়েছিল এবং প্রার্থী ভাইভায় একটা ভালো নম্বর পেয়েছিল।

ভাইভা বোর্ডে ফেল করার কারণ

আপনি সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলেও যেসব কারণে ফেল করতে পারেন—

১. আপনি যে চাকরির জন্য ভাইভা দিতে গিয়েছেন, ভাইভা বোর্ড আপনাকে তার অযোগ্য মনে করলে ভাইভায় ফেল করিয়ে দেওয়া হতে পারে। যেমন—আপনি বিসিএসে পররাষ্ট্র ক্যাডার পছন্দক্রমের প্রথমে রেখেছেন, কিন্তু আপনি ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন না কিংবা আপনার আচরণ ও ব্যক্তিত্ব দেখে মনে হচ্ছে, আপনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে পারবেন না। ভাইভা বোর্ডের কাছে এমনটা মনে হলে আপনাকে ফেল করানো হতে পারে। এর কারণ হচ্ছে—আপনাকে অল্প নম্বর দিয়ে পাস করানো হলে আপনি লিখিত পরীক্ষায় ভালো নম্বর থাকার কারণে পররাষ্ট্র ক্যাডার পেয়ে যেতে পারেন। ফলে রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

২. সিভিল সার্ভিস বা আপনাকে যে পদে নিয়োগ দেওয়া হবে আপনার মধ্যে সেই কর্মকর্তার স্বরূপ অনুপস্থিত থাকলে (যেমন—আপনার পোশাক মানানসই না হলে বা বাচনভঙ্গি আঞ্চলিকতায় দুষ্ট হলে) বা যদি এমন মনে হয় প্রশিক্ষণ দিয়েও আপনাকে যোগ্য করা যাবে না, এমন অবস্থায় সঠিক কর্মকর্তা বেছে নেওয়ার অংশ হিসেবে আপনাকে ফেল করিয়ে দেওয়া হতে পারে।

৩. প্রশ্নোত্তরে বোর্ডের সঙ্গে অযথা তর্কে জড়াবেন না। বোর্ড সদস্য ইচ্ছা করেই কোনো ভুল তথ্য দিয়ে আপনাকে পরীক্ষা করতে পারেন। তাই যেকোনো পরিস্থিতিতে ঠাণ্ডা মাথায় বিনীত ও বুদ্ধিমানের পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করুন।

৪. সব প্রশ্নের উত্তর না পারলেও নিজের পঠিত বিষয়, নিজ জেলা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব আপনার সম্পর্কে ভাইভা বোর্ডে নেতিবাচক বার্তা প্রকাশ পাবে। এটিও ভাইভায় ফেলের একটি কারণ হতে পারে।

৫. আপনার কোনো কথা বা আচরণে যদি মনে হয় আপনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নন বা নিজের রাজনৈতিক পরিচয় বারবার প্রকাশ করলে রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় আপনাকে ফেল করানো হতে পারে। তাই রাজনৈতিক ও ধর্মীয়ভাবে বিতর্কিত বিষয়গুলো কৌশলে এড়িয়ে যান।

৬. সিভিল সার্ভিসের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ চাকরির গুরুত্বপূর্ণ পদে একজন কর্মকর্তাকে অনেক ধরনের মানসিক প্রেশার সামলাতে হয়। তাই অহেতুক ভীতি, অল্পতে ঘাবড়ে যাওয়া, মারাত্মকভাবে নার্ভাস হয়ে যাওয়া একজন ভাবী কর্মকর্তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একটি বিসিএসের ভাইভায় আমার পরের প্রার্থী আগের দুই বিসিএস ভাইভায় ফেল করেছিলেন। একটি ভাইভায় তাঁকে কয়েকবার বিসিএসের পূর্ণরূপ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি নার্ভাস হয়ে উত্তরে বারবার বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ কর্ম কমিশন। ’

৭. প্রশ্নের উত্তর বা তথ্য প্রদানে ছলনার আশ্রয় নেওয়া, কোনো বিষয়ে অজুহাত দাঁড় করানো, স্যরি বলতে কার্পণ্য করা, ইংরেজি প্রশ্নে বাংলা উত্তর দেওয়া, আত্মবিশ্বাসের অভাব, সিদ্ধান্তহীনতা, মুদ্রাদোষ (বারবার suppose, মনে করেন, ধরেন, বুঝলেন স্যার ইত্যাদি বলা), তোতলামি—এসব কারণে ভাইভা বোর্ডে আপনার নেতিবাচক ধারণা হতে পারে। এর প্রভাব পড়বে ভাইভার নম্বরে।

চাকরির ভাইভায় ভালো নম্বর পাওয়া মানেই মেধাতালিকায় থাকা নয়। চাকরির লিখিত ও ভাইভার নম্বর যোগ করে মেধাতালিকা তৈরি করা হয়, যেখানে লিখিত পরীক্ষায়ই পুরো নম্বরের বড় অংশ। তবু প্রতিটি ধাপের মতো ভাইভায়ও ভালো করার চেষ্টা আপনার মেধাতালিকায় থাকার সম্ভাবনাকে এগিয়ে রাখবে। আর আপনি ভাইভায় ফেল মানে তীরে এসে তরি ডুবে গেল।

মৌখিক পরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতা

♦ বিসিএস প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা পিএসসির যেকোনো কেন্দ্র (প্রতিটি বিভাগ একেকটি কেন্দ্র) থেকে অংশ নেওয়া গেলেও ভাইভার বেলায় নির্ধারিত দিনে পিএসসির প্রধান কার্যালয়ে (আগারগাঁও, ঢাকা) প্রার্থীদের উপস্থিত থাকতে হয়।

♦ পিএসসি কর্তৃক প্রদত্ত সাক্ষাৎকারপত্র ও আনুষঙ্গিক কাগজপত্র নিয়ে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ অনুযায়ী পিএসসিতে সকাল ৯টায় উপস্থিত থাকতে হয়।

♦ ভাইভার আগে প্রার্থীদের লাইন ধরে সুশৃঙ্খলভাবে পিএসসির নিচতলার ওয়েটিংরুমে প্রবেশ করানো হয়।

♦ লটারির মাধ্যমে প্রতিটি রেঞ্জের (এক রেঞ্জে ১২ থেকে ১৫ জন) প্রার্থীদের ভাইভা বোর্ড নির্ধারণ করা হয় এবং একজন কর্মকর্তা প্রার্থীদের ভাইভা বোর্ডে (পিএসসির সদস্য/চেয়ারম্যানের কক্ষ) নিয়ে যান। এরপর প্রার্থীদের সিরিয়াল অনুযায়ী কাগজপত্র চেক করে ভাইভারুমে প্রবেশ করানো হয়।

♦ পিএসসিতে প্রবেশের আগে নিচতলার রিসেপশনে প্রার্থীদের মোবাইল ও অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র রেখে যেতে হয়। ফলে একজন প্রার্থী কোন বোর্ডের অধীনে ভাইভা দিতে যাচ্ছে, তা বাইরের কাউকে জানানো সম্ভব হয় না এবং পিএসসির স্বচ্ছতা ও গোপনীয়তা নিশ্চিত হয়।

♦ পিএসসিতে চেয়ারম্যান বা সদস্যদের একজন একেকটি বোর্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া দুজন এক্সটার্নাল সদস্য ভাইভারুমে উপস্থিত থাকেন।

♦ পিএসসির চেয়ারম্যান এবং সদস্যের মোট সংখ্যা ১৫ হলে সাধারণত ১০-১২টি বোর্ড গঠন করা হয় (দু-তিনজন সদস্য রিজার্ভ বা অন্য দায়িত্বে ব্যস্ত থাকেন)। প্রতিদিন ১২০ থেকে ১৫০ জন প্রার্থী বিসিএস ভাইভায় অংশ নেয় (প্রতি বোর্ডে আনুমানিক ১০ থেকে ১৫ জন প্রার্থী)।

♦ প্রতি বিসিএসে ভাইভা শুরুর প্রথম এক-দুই দিন ভাইভা প্রশ্নের ধরন এবং নম্বর প্রদানের সামঞ্জস্যতা নিশ্চিত করার জন্য চেয়ারম্যান ও সব সদস্যের সমন্বয়ে শুধু একটি বোর্ড (প্রেসিডেনশিয়াল ভাইভা বোর্ড) গঠন করা হয়।

♦ শুধু একটি বোর্ড হওয়ার কারণে প্রথম এক-দুই দিন শুধু ১২ থেকে ১৫ জন প্রার্থী ভাইভা দেওয়ার সুযোগ পায়।