ভারতে উচ্চশিক্ষা: বিনা খরচে পড়াশোনা

অয়ালিদ হাসান
অয়ালিদ হাসান

স্টাডি ইন ইন্ডিয়া প্রোগ্রামটি ভারত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনের একটি উদ্যোগ, যা ২০১৮ সাল থেকে চালু হয়। এটি মূলত একটি প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহজে বিদেশি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। আইআইটি, এনআইটি, আইআইএসইআরসহ আরও অনেক প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারে।

স্টাডি ইন ইন্ডিয়া প্রোগ্রামে দুইভাবে ফান্ডিং পাওয়া যায়-

 

  • টিউশন ফি ওয়েভার: আপনার পূর্ববর্তী একাডেমিক রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে ১০০ %-২৫% পর্যন্ত ফি ওয়েভার দেওয়া হয়। G1-100 %, G2-50 %, G3-25% এভাবে, এই ওয়েভার আপনার ডিগ্রি প্রোগ্রাম চলার পূর্ণকালীন পাবেন। তবে আবাসিক খরচ, খাওয়ার খরচ নিজেকে বহন করতে হবে।
  • এসআইআই স্কলারশিপ: এটা আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব খরচ করার জন্য ৩২০০ ডলার করে প্রতি বছর (সর্বোচ্চ ৩ বছর) দেবে। তবে আপনার হাতে কোনো টাকা আসবে না, সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যাবে এবং আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ যদি প্রতিবছরে উক্ত টাকার বেশি হয়, সেটা নিজেকে বহন করতে হবে। এই স্কলারশিপের জন্য PRAGATII Exam নামে একটি পরীক্ষা দিতে হয়, ওখানে ইংরেজি Verbal Reasoning, গণিত Quantitative Aptitude এবং অ্যানালেটিক দক্ষতার Logical Reasoning ওপর প্রশ্ন করা হয়, নমুনা প্রশ্ন ওয়েবসাইটে পাবেন। পরীক্ষাটি সাধারণত অনলাইনে হয়, ৯০ মিনিটের এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে। এ বছর জুলাই মাসের শেষের দিকে পরীক্ষাটি হয়েছিল।

আবেদন যেভাবে 
ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে আবেদন করতে হবে। তারপর নিজের বিস্তারিত তথ্য, শিক্ষাগত তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করতে হবে। আর এদের ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয় সার্চ করার অপশন থাকে, সেখান থেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত করা যায়, তবে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১ম, ২য় এভাবে দিতে হয়, ওরা এই অনুযায়ী আপনাকে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য নিজেরা আলাদাভাবে অনলাইন ইন্টারভিউ নেয়, সেখানে এইচএসসির টপিক থেকে বেসিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। ওটার ওপর ভিত্তি করে ওরা স্টুডেন্ট বাছাই করে। তবে এগুলো খুবই কম বিশ্ববিদ্যালয়ই করে, বেশির ভাগই এইচএসসির রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে ভর্তি নেয়।

 

প্রথম দুই বছর ওপরের সব বিষয়ের ওপর পড়তে হবে, তারপর তৃতীয় বছরে আপনার যেটা ভালো লাগে সেটাকে মেজর হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। আর পঞ্চম বছর শুধুই থিসিসের গবেষণা করার জন্য বরাদ্দ, কোনো কোর্স ওয়ার্ক থাকে না

আবেদনের সময়
আবেদন সাধারণত এপ্রিলের দিকে শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বরের দিকে ফলাফল ঘোষণা হয়। আর ক্লাস শুরু হয় নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে। প্যান্ডেমিকের কারণে এমন দেরি। সামনের বার থেকে আরও আগে আগে সব শেষ হবে আশা করা যায়।

দরকারি কাগজপত্র 
পাসপোর্ট, একাডেমিক সনদপত্র, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আইইএলটিএস/টোফেল, স্যাট ইত্যাদি অতিরিক্তভাবে চাহিদা থাকে।

সুযোগ-সুবিধা 
নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ। ইঞ্জিনিয়ারিং, পিওর সায়েন্স, আর্টস, কৃষিসহ আরও অনেক ধরনের সাবজেক্ট থেকে নির্বাচন করা যায়। এ ছাড়া ইন্ডিয়াতে থাকা-খাওয়ার খরচও বেশ কম।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ হচ্ছে ভারতের প্রিমিয়ার বেসিক সায়েন্স রিসার্চ ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়। আইআইটি যেমন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য, আইআইএসইআর তেমনি বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার জন্য। এখানে ফিজিক্স, রসায়ন, বায়োলজি, গণিত, আর্থ সায়েন্স, ইকোনমিকসের ওপর পাঁচ বছর মেয়াদি ইন্টিগ্রেটেড বিএস-এমএস দ্বৈত ডিগ্রি দেওয়া হয়। সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হচ্ছে, আপনাকে প্রথম বর্ষে মেজর চয়েজ করা লাগবে না। প্রথম দুই বছর ওপরের সব বিষয়ের ওপর পড়তে হবে, তারপর তৃতীয় বছরে আপনার যেটা ভালো লাগে সেটাকে মেজর হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন।

আর পঞ্চম বছর শুধুই থিসিসের গবেষণা করার জন্য বরাদ্দ, কোনো কোর্স ওয়ার্ক থাকে না। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায় থেকেই গবেষণায় যুক্ত হওয়ার বেশ ভালো সুযোগ পাওয়া যায় এখানে। পাঁচ বছরের প্রোগ্রাম শেষ করেই বিশ্বের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যায় এখানকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা। যদি কারোর পিওর সায়েন্স পড়ার ইচ্ছা থাকে এবং বিজ্ঞান গবেষণায় ঝোঁক থাকে, তবে আপনি আবেদন করতে পারেন।

অয়ালিদ হাসান, বিএস-এমএস দ্বৈত ডিগ্রি প্রোগ্রাম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, কলকাতা।

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ

 

ভারতে উচ্চশিক্ষা: বিনা খরচে পড়াশোনা

অয়ালিদ হাসান
অয়ালিদ হাসান

স্টাডি ইন ইন্ডিয়া প্রোগ্রামটি ভারত সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনের একটি উদ্যোগ, যা ২০১৮ সাল থেকে চালু হয়। এটি মূলত একটি প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহজে বিদেশি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। আইআইটি, এনআইটি, আইআইএসইআরসহ আরও অনেক প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে বিদেশি শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারে।

স্টাডি ইন ইন্ডিয়া প্রোগ্রামে দুইভাবে ফান্ডিং পাওয়া যায়-

 

  • টিউশন ফি ওয়েভার: আপনার পূর্ববর্তী একাডেমিক রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে ১০০ %-২৫% পর্যন্ত ফি ওয়েভার দেওয়া হয়। G1-100 %, G2-50 %, G3-25% এভাবে, এই ওয়েভার আপনার ডিগ্রি প্রোগ্রাম চলার পূর্ণকালীন পাবেন। তবে আবাসিক খরচ, খাওয়ার খরচ নিজেকে বহন করতে হবে।
  • এসআইআই স্কলারশিপ: এটা আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব খরচ করার জন্য ৩২০০ ডলার করে প্রতি বছর (সর্বোচ্চ ৩ বছর) দেবে। তবে আপনার হাতে কোনো টাকা আসবে না, সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে যাবে এবং আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের খরচ যদি প্রতিবছরে উক্ত টাকার বেশি হয়, সেটা নিজেকে বহন করতে হবে। এই স্কলারশিপের জন্য PRAGATII Exam নামে একটি পরীক্ষা দিতে হয়, ওখানে ইংরেজি Verbal Reasoning, গণিত Quantitative Aptitude এবং অ্যানালেটিক দক্ষতার Logical Reasoning ওপর প্রশ্ন করা হয়, নমুনা প্রশ্ন ওয়েবসাইটে পাবেন। পরীক্ষাটি সাধারণত অনলাইনে হয়, ৯০ মিনিটের এমসিকিউ প্রশ্ন থাকে। এ বছর জুলাই মাসের শেষের দিকে পরীক্ষাটি হয়েছিল।

আবেদন যেভাবে 
ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলে আবেদন করতে হবে। তারপর নিজের বিস্তারিত তথ্য, শিক্ষাগত তথ্য দিয়ে ফরম পূরণ করতে হবে। আর এদের ওয়েবসাইটে বিশ্ববিদ্যালয় সার্চ করার অপশন থাকে, সেখান থেকে নিজের পছন্দ অনুযায়ী একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় যুক্ত করা যায়, তবে নিজের পছন্দ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ১ম, ২য় এভাবে দিতে হয়, ওরা এই অনুযায়ী আপনাকে ভর্তির সুযোগ দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় অবশ্য নিজেরা আলাদাভাবে অনলাইন ইন্টারভিউ নেয়, সেখানে এইচএসসির টপিক থেকে বেসিক প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। ওটার ওপর ভিত্তি করে ওরা স্টুডেন্ট বাছাই করে। তবে এগুলো খুবই কম বিশ্ববিদ্যালয়ই করে, বেশির ভাগই এইচএসসির রেজাল্টের ওপর ভিত্তি করে ভর্তি নেয়।

 

প্রথম দুই বছর ওপরের সব বিষয়ের ওপর পড়তে হবে, তারপর তৃতীয় বছরে আপনার যেটা ভালো লাগে সেটাকে মেজর হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন। আর পঞ্চম বছর শুধুই থিসিসের গবেষণা করার জন্য বরাদ্দ, কোনো কোর্স ওয়ার্ক থাকে না

আবেদনের সময়
আবেদন সাধারণত এপ্রিলের দিকে শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বরের দিকে ফলাফল ঘোষণা হয়। আর ক্লাস শুরু হয় নভেম্বর-ডিসেম্বরের দিকে। প্যান্ডেমিকের কারণে এমন দেরি। সামনের বার থেকে আরও আগে আগে সব শেষ হবে আশা করা যায়।

দরকারি কাগজপত্র 
পাসপোর্ট, একাডেমিক সনদপত্র, কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আইইএলটিএস/টোফেল, স্যাট ইত্যাদি অতিরিক্তভাবে চাহিদা থাকে।

সুযোগ-সুবিধা 
নিজের পছন্দের বিষয়ে পড়ার সুযোগ। ইঞ্জিনিয়ারিং, পিওর সায়েন্স, আর্টস, কৃষিসহ আরও অনেক ধরনের সাবজেক্ট থেকে নির্বাচন করা যায়। এ ছাড়া ইন্ডিয়াতে থাকা-খাওয়ার খরচও বেশ কম।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ হচ্ছে ভারতের প্রিমিয়ার বেসিক সায়েন্স রিসার্চ ভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়। আইআইটি যেমন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য, আইআইএসইআর তেমনি বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার জন্য। এখানে ফিজিক্স, রসায়ন, বায়োলজি, গণিত, আর্থ সায়েন্স, ইকোনমিকসের ওপর পাঁচ বছর মেয়াদি ইন্টিগ্রেটেড বিএস-এমএস দ্বৈত ডিগ্রি দেওয়া হয়। সবচেয়ে চমকপ্রদ দিক হচ্ছে, আপনাকে প্রথম বর্ষে মেজর চয়েজ করা লাগবে না। প্রথম দুই বছর ওপরের সব বিষয়ের ওপর পড়তে হবে, তারপর তৃতীয় বছরে আপনার যেটা ভালো লাগে সেটাকে মেজর হিসেবে নির্বাচন করতে পারবেন।

আর পঞ্চম বছর শুধুই থিসিসের গবেষণা করার জন্য বরাদ্দ, কোনো কোর্স ওয়ার্ক থাকে না। আন্ডারগ্র্যাজুয়েট পর্যায় থেকেই গবেষণায় যুক্ত হওয়ার বেশ ভালো সুযোগ পাওয়া যায় এখানে। পাঁচ বছরের প্রোগ্রাম শেষ করেই বিশ্বের নামকরা সব বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করতে যায় এখানকার বেশির ভাগ শিক্ষার্থীরা। যদি কারোর পিওর সায়েন্স পড়ার ইচ্ছা থাকে এবং বিজ্ঞান গবেষণায় ঝোঁক থাকে, তবে আপনি আবেদন করতে পারেন।

অয়ালিদ হাসান, বিএস-এমএস দ্বৈত ডিগ্রি প্রোগ্রাম ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, কলকাতা।

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ