মাউশির মহাপরিচালককে আদালত অবমাননার নোটিশ

অধ্যাপক নেহাল আহমেদ

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের মহাপরিচলক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে আদালত অবমানার নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আবুবকর সিদ্দিক (রাজন)। উচ্চ আদালতের রায় ও আদালত অবমাননার মামলার নির্দেশ অমান্য করা এবং অসৎ উদ্দেশ্যে রায়ের অপব্যাখ্যা করায় এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

নোটিশে তিন দিনের মধ্যে মহাপরিচলককে রায় বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। না হলে আদালতের কর্তৃত্বকে ক্ষুণ্ণ করার কারণে নতুন করে মামলা দায়ের করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নোটিশে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব এবং মাউশির মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে মূলতবি থাকা দায়ের করা অবমাননার মামলাটি চালু করার কথাও জানিয়েছেন আইনজীবী।রবিবার (৩০ অক্টোবর) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে এই নোটিশ পাঠানো হয়।মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া মহাপরিচালকের গত ২ অক্টোবরের চিঠিতে আদালতের নির্দেশনা না মেনে ইচ্ছাকৃতভাবে রায় অমান্য করে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব, মর্যাদা ও মহিমাকে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘জনসাধারণের বিশ্বাসে সুপ্রিম কোর্টকে অবনমিত করা হচ্ছে এবং বিবাদির আচরণ আদলত অবমানার জন্য চরমভাবে দায়ী। আইন অনুযায়ী এর মোকাবিলা করতে হবে, যা শাস্তিযোগ্য।’

নোটিশে জানানো হয়, আদালতের রায়ে বলা হয়েছে— আবেদনকারীরা এখনও কোনও এমপিও পাচ্ছেন না। তাই আমরা বিবাদীদের ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে এমপিও ছাড়ের নির্দেশ দিচ্ছি। কারণ এটি আইন অনুসারে এটি তাদের প্রাপ্য। অথচ  গত ২ অক্টোবরের অবমাননাকর চিঠিতে ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে রায়কে ভিন্নপথে পরিচালনা করতে রায়ের অপব্যাখ্যা করেছেন যে ‘অর্থাৎ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ কিন্তু আদালত ২০১৭ সালের ৩১ মে’র রায় ও আদেশে এমপিও ঠিক করার ক্ষমতা কর্তৃপক্ষকে দেননি। বরং আদালত মহাপরিচালককে ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর মডেল কলেজের এমপিও ছাড় করার নির্দেশ দিয়েছেন।

মহাপরিচালকের এই বক্তব্যকেও আদালত অবমাননা হিসেবে উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, মাউশির মহাপরিচালক চিঠিতে বলেছেন—শিক্ষকদের এমপিও ছাড় করা হলে হাজার হাজার মামলা হবে।

নোটিশে বলা হয়, যখন সুপ্রিম কোর্ট কোনও রায় দেন, তখন সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষ সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম কোর্টকে সাহায্য করতে বাধ্য। আদালতের এই রায়ের পর তা না মানা চরম অবমানকর। এই বিষয়ে আপনার সামগ্রিক আচরণ আদালতের আদেশের অবমাননাকর এবং আদালতের চরম অবমাননার জন্য আপনি আইন অনুসারে তা মোকাবিলা করতে বাধ্য।

আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আবুবকর সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক রায়ের এমপিও না দিয়ে রায় অমান্য করেছেন। উচ্চ আদালতের ২০১৭ সালের ৩১ মে’র রায়ে ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১১ বছর সাত মাস ১৯ দিনের এমপিও ছাড় করতে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ ২০২০ সাল থেকে এমপিও চালু করেছেন এবং এতে বকেয়া তৈরি হয়েছে। আর এখন তা না দেওয়ার জন্য আইনের অপব্যাখ্যা করছেন চিঠিতে। আদালতের রায় বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে দুই দফা চিঠি দিয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের আইন উপদেষ্টাও রায় বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছেন। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের গত ৭ জুলাইয়ের এমপিও বৈঠকেও বয়েকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু মহাপরিচলক রায়কে অসৎ উদ্দেশ্যে ভিন্ন পথে পরিচালিত করতে রায়ের অপব্যাখা করে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন, যা রায় পরিপন্থী। রায়ে মন্ত্রণালয় বা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের আইন অনুযায়ী এমপিও ছাড়ের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়নি। রায়ে এমপিও ছাড়ের সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

নোটিশে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ উল্লেখ করে বলা হয়, আদালত অবমাননা পিটিশন এখনও মুলতবি রয়েছে। অথচ আপনি আদালতের আদেশের প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও রায় বাস্তবায়ন আপনার আইনগত এবং সাংবিধানিকভাবে বাধ্যতামূলক কর্তব্য ছিল।

এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ২০১৭ সালের ৩১ মে’র রায় ও আদেশ মেনে চলার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে পিটিশনারদের ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১১ বছর সাত মাস ১৯ দিনের এমপিও ছাড় করতে ব্যর্থ হলে আমার মক্কেল আদালতে আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য সমস্ত খরচ এবং ক্ষতির জন্য আপনি দায়ী থাকবেন।

/এসএমএ/এফএস/

মাউশির মহাপরিচালককে আদালত অবমাননার নোটিশ

অধ্যাপক নেহাল আহমেদ

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতরের মহাপরিচলক অধ্যাপক নেহাল আহমেদকে আদালত অবমানার নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আবুবকর সিদ্দিক (রাজন)। উচ্চ আদালতের রায় ও আদালত অবমাননার মামলার নির্দেশ অমান্য করা এবং অসৎ উদ্দেশ্যে রায়ের অপব্যাখ্যা করায় এই নোটিশ দেওয়া হয়েছে।

নোটিশে তিন দিনের মধ্যে মহাপরিচলককে রায় বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। না হলে আদালতের কর্তৃত্বকে ক্ষুণ্ণ করার কারণে নতুন করে মামলা দায়ের করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে নোটিশে। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব এবং মাউশির মহাপরিচালকের বিরুদ্ধে মূলতবি থাকা দায়ের করা অবমাননার মামলাটি চালু করার কথাও জানিয়েছেন আইনজীবী।রবিবার (৩০ অক্টোবর) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালককে এই নোটিশ পাঠানো হয়।মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া মহাপরিচালকের গত ২ অক্টোবরের চিঠিতে আদালতের নির্দেশনা না মেনে ইচ্ছাকৃতভাবে রায় অমান্য করে সুপ্রিম কোর্টের কর্তৃত্ব, মর্যাদা ও মহিমাকে ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়। এতে বলা হয়, ‘জনসাধারণের বিশ্বাসে সুপ্রিম কোর্টকে অবনমিত করা হচ্ছে এবং বিবাদির আচরণ আদলত অবমানার জন্য চরমভাবে দায়ী। আইন অনুযায়ী এর মোকাবিলা করতে হবে, যা শাস্তিযোগ্য।’

নোটিশে জানানো হয়, আদালতের রায়ে বলা হয়েছে— আবেদনকারীরা এখনও কোনও এমপিও পাচ্ছেন না। তাই আমরা বিবাদীদের ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে এমপিও ছাড়ের নির্দেশ দিচ্ছি। কারণ এটি আইন অনুসারে এটি তাদের প্রাপ্য। অথচ  গত ২ অক্টোবরের অবমাননাকর চিঠিতে ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে রায়কে ভিন্নপথে পরিচালনা করতে রায়ের অপব্যাখ্যা করেছেন যে ‘অর্থাৎ জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’ কিন্তু আদালত ২০১৭ সালের ৩১ মে’র রায় ও আদেশে এমপিও ঠিক করার ক্ষমতা কর্তৃপক্ষকে দেননি। বরং আদালত মহাপরিচালককে ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর মডেল কলেজের এমপিও ছাড় করার নির্দেশ দিয়েছেন।

মহাপরিচালকের এই বক্তব্যকেও আদালত অবমাননা হিসেবে উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়, মাউশির মহাপরিচালক চিঠিতে বলেছেন—শিক্ষকদের এমপিও ছাড় করা হলে হাজার হাজার মামলা হবে।

নোটিশে বলা হয়, যখন সুপ্রিম কোর্ট কোনও রায় দেন, তখন সব নির্বাহী কর্তৃপক্ষ সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম কোর্টকে সাহায্য করতে বাধ্য। আদালতের এই রায়ের পর তা না মানা চরম অবমানকর। এই বিষয়ে আপনার সামগ্রিক আচরণ আদালতের আদেশের অবমাননাকর এবং আদালতের চরম অবমাননার জন্য আপনি আইন অনুসারে তা মোকাবিলা করতে বাধ্য।

আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. আবুবকর সিদ্দিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক রায়ের এমপিও না দিয়ে রায় অমান্য করেছেন। উচ্চ আদালতের ২০১৭ সালের ৩১ মে’র রায়ে ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১১ বছর সাত মাস ১৯ দিনের এমপিও ছাড় করতে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছেন। অথচ ২০২০ সাল থেকে এমপিও চালু করেছেন এবং এতে বকেয়া তৈরি হয়েছে। আর এখন তা না দেওয়ার জন্য আইনের অপব্যাখ্যা করছেন চিঠিতে। আদালতের রায় বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরকে দুই দফা চিঠি দিয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের আইন উপদেষ্টাও রায় বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছেন। এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের গত ৭ জুলাইয়ের এমপিও বৈঠকেও বয়েকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু মহাপরিচলক রায়কে অসৎ উদ্দেশ্যে ভিন্ন পথে পরিচালিত করতে রায়ের অপব্যাখা করে জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন, যা রায় পরিপন্থী। রায়ে মন্ত্রণালয় বা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের আইন অনুযায়ী এমপিও ছাড়ের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়নি। রায়ে এমপিও ছাড়ের সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।

নোটিশে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ উল্লেখ করে বলা হয়, আদালত অবমাননা পিটিশন এখনও মুলতবি রয়েছে। অথচ আপনি আদালতের আদেশের প্রতি সম্পূর্ণ সম্মান প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। যদিও রায় বাস্তবায়ন আপনার আইনগত এবং সাংবিধানিকভাবে বাধ্যতামূলক কর্তব্য ছিল।

এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ২০১৭ সালের ৩১ মে’র রায় ও আদেশ মেনে চলার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। নোটিশ পাওয়ার তিন দিনের মধ্যে পিটিশনারদের ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ১১ বছর সাত মাস ১৯ দিনের এমপিও ছাড় করতে ব্যর্থ হলে আমার মক্কেল আদালতে আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য সমস্ত খরচ এবং ক্ষতির জন্য আপনি দায়ী থাকবেন।

/এসএমএ/এফএস/