মেডিকেল পরীক্ষার প্রস্তুতি: দ্বিতীয় প্রফে ভালো করার পরামর্শ

তুর্জয় কবীর

দ্বিতীয় প্রফ মানে দুইটি সাবজেক্ট-ফরেনসিক মেডিসিন ও কমিউনিটি মেডিসিন। সময়কাল এক বছর। প্রথম ফেইজে অ্যানাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি পড়তে গিয়ে এইচএসসির বেশ কিছু পড়াশোনা কাজে লাগানো যায়। কিন্তু দ্বিতীয় ফেইজ থেকে একদম নতুন ধাঁচের পড়াশোনা শুরু হয় এবং তাতে অনেকের সামাল দেওয়াটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। প্রচলিত একটি কথা হলো, মেডিকেলের যেকোনো ফেইজের পরীক্ষায় ভালো করতে হলে পড়াশোনাগুলো মনে রাখার পাশাপাশি সেগুলো বুঝে পড়াটা খুব জরুরি।

ধারণা পরিষ্কার থাকলে অনেক অজানা প্রশ্ন বুদ্ধি খাঁটিয়ে উত্তর করেও পার পেয়ে যাওয়া যায় এই দ্বিতীয় ফেইজে।

প্রথমে বলছি ফরেনসিক মেডিসিন নিয়ে। এ সাবজেক্টটির প্রচুর টেক্সট বই আছে। সেগুলো হলো: 

  • The Essentials of Forensic Medicine and Toxicology-by KSN Reddy
  • Nandys Principles Of Forensic Medicine
  • Gautam Biswas Forensic Medicine
  • Textbook of Forensic Medicine and Toxicology by Nagesh Kumar Rao
  • Forensic Medicine And Toxicology For MBBS by Anil Agarwal
  • Simpson’s Forensic Medicine, Jason Payn

এর মধ্যে Gautom Biswas ও Nandy পড়তে গিয়ে প্রচুর ভালো লেগেছে। এই বই দুটিতে পরীক্ষার খাতায় আঁকার মতো প্রচুর ছবি আছে এবং খুব সুন্দর করে গুছিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সহজ ভাষায় পাওয়া যায়। পরীক্ষার খাতায় যতটুকু সম্ভব প্রত্যেকটি উত্তরের সঙ্গে একটি করে রঙিন ছবি দেওয়া গেলে সেটি ভালো মার্ক পাওয়ার যোগ্যতা এনে দেয়। অপরদিকে একটি বোঝার মতো বিষয় হলো, মেডিকেল ইথিকস। এই বিষয়টি পড়তে গিয়ে শুধু একটু টেক্সট বই বা গাইড বইয়ের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। একের অধিক পাঠ্যবই থেকে একবার হলেও রিডিং পড়ে বিষয়গুলো নিয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখা উচিত। ফরেনসিক মেডিসিন-সম্পর্কিত কিছু ঐতিহাসিক ঘটনাবলি রয়েছে। সেগুলো জেনে রাখতে হবে। আমার মনে আছে, ফরেনসিক মেডিসিন-সম্পর্কিত অন্যতম একটি ঐতিহাসিক বিখ্যাত ঘটনা হলো ভাওয়াল রাজার কেইসটি।

এ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটিও দেখে রেখেছিলাম। এ ছাড়া Medicolegal issuesগুলো কীভাবে দখল নেওয়া যায়, কীভাবে বিভিন্ন রিপোর্ট ও মতামত লিখতে হয় ও ভিকটিম এক্সামিনেশন করা হয়, এগুলো নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখা জরুরি।

কমিউনিটি মেডিসিন

এবারে আসছি কমিউনিটি মেডিসিন নিয়ে। পুরো বিষয়টিতে সরাসরি মনে রাখতে হবে এ রকম তথ্য অনেক বেশি। কিন্তু পরীক্ষায় বিশেষ করে মৌখিকে Epidemiological Study ও Demography, এই দুটো ধারণাগত বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে জিজ্ঞেস করে থাকে। এই বিষয় দুটো আশ্বস্ত করে পড়ার জন্য ‘ABC of Research Methodology-Prof Md Mozammel Hoque’ বইটি অসাধারণ। এই দুটি বিষয়ে বেশ কিছু ফিগার, গ্রাফ, ইকুয়েশন রয়েছে যা আমরা ট্র্যাডিশনাল গাইড বইতে খুঁজে পাই না। কমিউনিটি মেডিসিনের রোগগুলো পড়তে গিয়ে সব তথ্য একসঙ্গে মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। রোগগুলোর মধ্যে ইপিআই ডিজিজ ও এন্ডেমিক ডিজিজগুলোই ঘুরেফিরে ধরে থাকে এবং ট্রিটমেন্ট বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধরে না। এ ছাড়া আরএফএসটি ট্যুর ও ডে ভিজিট থেকে ভাইভাতে প্রশ্ন করে থাকে। যেমন মহাখালীতে অবস্থিত সংক্রামক রোগ হাসপাতালের কয় তলায় কী দেখেছ? এ ছাড়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, হায়ারার্কি, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও। এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বছরের শেষের দিকে পড়ানো হয় এবং অবহেলায় ফেলে রাখি আমরা।

“পরীক্ষার খাতায় সময় ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও উপস্থাপন সুন্দর রাখার কোনো বিকল্প নেই। মৌখিকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গুছিয়ে উত্তর দিতে হবে। বিশেষ করে ফরেনসিক মেডিসিনের মৌখিকে অপ্রয়োজনীয় কোনো উত্তর দেওয়া যাবে না।”

পরিশেষে, পরীক্ষার খাতায় সময় ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও উপস্থাপন সুন্দর রাখার কোনো বিকল্প নেই। মৌখিক পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গুছিয়ে উত্তর দিতে হবে। বিশেষ করে ফরেনসিক মেডিসিনের মৌখিকে অপ্রয়োজনীয় কোনো উত্তর দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে মেডিকেলের পরের ফেইজগুলোর তুলনায় দ্বিতীয় ফেইজ অনেকটাই সহজ। অনেকেই এক বছরে মাত্র ২টি সাবজেক্ট ভেবে পড়াশোনায় গুরুত্ব দিয়ে থাকে না কিন্তু পরে গিয়ে সবকিছু মাথায় নিতে সময় লেগে যায়। অতঃপর কেউ যদি প্রথম থেকে ভালো করে প্রস্তুতি নিতে থাকে, তাহলে তার সাফল্য অনিবার্য। সবার জন্য শুভকামনা রইল।

লেখক: এমবিবিএস দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় দ্বিতীয়, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ

মেডিকেল পরীক্ষার প্রস্তুতি: দ্বিতীয় প্রফে ভালো করার পরামর্শ

তুর্জয় কবীর

দ্বিতীয় প্রফ মানে দুইটি সাবজেক্ট-ফরেনসিক মেডিসিন ও কমিউনিটি মেডিসিন। সময়কাল এক বছর। প্রথম ফেইজে অ্যানাটমি, ফিজিওলজি ও বায়োকেমিস্ট্রি পড়তে গিয়ে এইচএসসির বেশ কিছু পড়াশোনা কাজে লাগানো যায়। কিন্তু দ্বিতীয় ফেইজ থেকে একদম নতুন ধাঁচের পড়াশোনা শুরু হয় এবং তাতে অনেকের সামাল দেওয়াটা কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। প্রচলিত একটি কথা হলো, মেডিকেলের যেকোনো ফেইজের পরীক্ষায় ভালো করতে হলে পড়াশোনাগুলো মনে রাখার পাশাপাশি সেগুলো বুঝে পড়াটা খুব জরুরি।

ধারণা পরিষ্কার থাকলে অনেক অজানা প্রশ্ন বুদ্ধি খাঁটিয়ে উত্তর করেও পার পেয়ে যাওয়া যায় এই দ্বিতীয় ফেইজে।

প্রথমে বলছি ফরেনসিক মেডিসিন নিয়ে। এ সাবজেক্টটির প্রচুর টেক্সট বই আছে। সেগুলো হলো: 

  • The Essentials of Forensic Medicine and Toxicology-by KSN Reddy
  • Nandys Principles Of Forensic Medicine
  • Gautam Biswas Forensic Medicine
  • Textbook of Forensic Medicine and Toxicology by Nagesh Kumar Rao
  • Forensic Medicine And Toxicology For MBBS by Anil Agarwal
  • Simpson’s Forensic Medicine, Jason Payn

এর মধ্যে Gautom Biswas ও Nandy পড়তে গিয়ে প্রচুর ভালো লেগেছে। এই বই দুটিতে পরীক্ষার খাতায় আঁকার মতো প্রচুর ছবি আছে এবং খুব সুন্দর করে গুছিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সহজ ভাষায় পাওয়া যায়। পরীক্ষার খাতায় যতটুকু সম্ভব প্রত্যেকটি উত্তরের সঙ্গে একটি করে রঙিন ছবি দেওয়া গেলে সেটি ভালো মার্ক পাওয়ার যোগ্যতা এনে দেয়। অপরদিকে একটি বোঝার মতো বিষয় হলো, মেডিকেল ইথিকস। এই বিষয়টি পড়তে গিয়ে শুধু একটু টেক্সট বই বা গাইড বইয়ের ওপর নির্ভর করলে চলবে না। একের অধিক পাঠ্যবই থেকে একবার হলেও রিডিং পড়ে বিষয়গুলো নিয়ে পরিষ্কার ধারণা রাখা উচিত। ফরেনসিক মেডিসিন-সম্পর্কিত কিছু ঐতিহাসিক ঘটনাবলি রয়েছে। সেগুলো জেনে রাখতে হবে। আমার মনে আছে, ফরেনসিক মেডিসিন-সম্পর্কিত অন্যতম একটি ঐতিহাসিক বিখ্যাত ঘটনা হলো ভাওয়াল রাজার কেইসটি।

এ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটিও দেখে রেখেছিলাম। এ ছাড়া Medicolegal issuesগুলো কীভাবে দখল নেওয়া যায়, কীভাবে বিভিন্ন রিপোর্ট ও মতামত লিখতে হয় ও ভিকটিম এক্সামিনেশন করা হয়, এগুলো নিয়ে স্বচ্ছ ধারণা রাখা জরুরি।

কমিউনিটি মেডিসিন

এবারে আসছি কমিউনিটি মেডিসিন নিয়ে। পুরো বিষয়টিতে সরাসরি মনে রাখতে হবে এ রকম তথ্য অনেক বেশি। কিন্তু পরীক্ষায় বিশেষ করে মৌখিকে Epidemiological Study ও Demography, এই দুটো ধারণাগত বিষয়ের ওপর বিশেষভাবে জিজ্ঞেস করে থাকে। এই বিষয় দুটো আশ্বস্ত করে পড়ার জন্য ‘ABC of Research Methodology-Prof Md Mozammel Hoque’ বইটি অসাধারণ। এই দুটি বিষয়ে বেশ কিছু ফিগার, গ্রাফ, ইকুয়েশন রয়েছে যা আমরা ট্র্যাডিশনাল গাইড বইতে খুঁজে পাই না। কমিউনিটি মেডিসিনের রোগগুলো পড়তে গিয়ে সব তথ্য একসঙ্গে মনে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে। রোগগুলোর মধ্যে ইপিআই ডিজিজ ও এন্ডেমিক ডিজিজগুলোই ঘুরেফিরে ধরে থাকে এবং ট্রিটমেন্ট বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ধরে না। এ ছাড়া আরএফএসটি ট্যুর ও ডে ভিজিট থেকে ভাইভাতে প্রশ্ন করে থাকে। যেমন মহাখালীতে অবস্থিত সংক্রামক রোগ হাসপাতালের কয় তলায় কী দেখেছ? এ ছাড়া অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো হেলথ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন, হায়ারার্কি, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এনজিও। এগুলো অনেক ক্ষেত্রেই বছরের শেষের দিকে পড়ানো হয় এবং অবহেলায় ফেলে রাখি আমরা।

“পরীক্ষার খাতায় সময় ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও উপস্থাপন সুন্দর রাখার কোনো বিকল্প নেই। মৌখিকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গুছিয়ে উত্তর দিতে হবে। বিশেষ করে ফরেনসিক মেডিসিনের মৌখিকে অপ্রয়োজনীয় কোনো উত্তর দেওয়া যাবে না।”

পরিশেষে, পরীক্ষার খাতায় সময় ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও উপস্থাপন সুন্দর রাখার কোনো বিকল্প নেই। মৌখিক পরীক্ষায় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে গুছিয়ে উত্তর দিতে হবে। বিশেষ করে ফরেনসিক মেডিসিনের মৌখিকে অপ্রয়োজনীয় কোনো উত্তর দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে মেডিকেলের পরের ফেইজগুলোর তুলনায় দ্বিতীয় ফেইজ অনেকটাই সহজ। অনেকেই এক বছরে মাত্র ২টি সাবজেক্ট ভেবে পড়াশোনায় গুরুত্ব দিয়ে থাকে না কিন্তু পরে গিয়ে সবকিছু মাথায় নিতে সময় লেগে যায়। অতঃপর কেউ যদি প্রথম থেকে ভালো করে প্রস্তুতি নিতে থাকে, তাহলে তার সাফল্য অনিবার্য। সবার জন্য শুভকামনা রইল।

লেখক: এমবিবিএস দ্বিতীয় প্রফেশনাল পরীক্ষায় দ্বিতীয়, শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ