মেধা বিকাশে বাঁধাগ্রস্থ নতুন প্রজন্ম

মো. মনির
মো. মনির।

সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে পত্রিকা হাতে চায়ের কাপে চুমুক দিতেই দু’চোখে ভেসে ওঠে নেতিবাচক বিভিন্ন মারাত্মক কর্মকাণ্ডের শিরোনাম। কিন্তু কেন?

এবার আসি মূল কথায়, বর্তমান প্রজন্মের কথায়, আজকাল ইলেকট্রনিক ডিভাইসের উপর যতোটা নির্ভরশীল ততোটাই আসক্ত প্রযুক্তির অপব্যবহারে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিনের শুরু থেকে রাতের আঁধার পর্যন্ত ব্যবহার করে মোবাইল, কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তিগত যন্ত্র। এতে ব্যাঘাত ঘটে ঘুমের, ফলে মানসিক অশান্তি অনুভব হয়। প্রবাদ আছে: সকাল সকাল ঘুমায় যারা, সকাল সকাল উঠে যারা ধনে জ্ঞানে স্বাস্থ্যে তারা হবেই হবে সবার সেরা।

আমাদের সমাজে অনেক সচেতন বাবা মায়েরাও আহ্লাদে সন্তানকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের দিকে। অল্প বয়সে মোবাইল ব্যবহার করতে দেওয়া যেটা তাদের পড়াশোনার জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। যে বয়সে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড চর্চা করার কথা সে বয়সে আসক্ত হয়ে পড়ছে ব্লু ফিল্মসহ মস্তিষ্ক বিকৃত করে দেওয়ার মতো কাজে।

এবার আসি আরেক এ প্রজন্মের আরেক মরণব্যাধী মাদকের কথায়। বর্তমানে মাদকের বিষ নিঃশ্বাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে।মাদকে আসক্ত হওয়ার কারণ মোটাদাগে হতাশা,দরিদ্রতা, চাকুরি না পাওয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, পারিবারিক ডিপ্রেশন ইত্যাদি। ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন, আফিম, বিয়ার, মারিজুয়ানা, ফেনসিডিল, প্যাথেডিনসহ নানা নেশা জাতীয় দ্রব্য। মাদকের বিষাক্ত ছোবল ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে। মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ সমাজ। নৈতিক শিক্ষা হারিয়ে যাচ্ছে তাদের। মস্তিষ্কের ভিতরে জায়গা করে নিচ্ছে ধীরে ধীরে মারাত্মক সব মাদকাদ্রব্য।

মাদক সেবনে সন্দেহ প্রবণতা, কলহ প্রবণতা এবং আক্রমণাত্মক মনোভাব পরীলক্ষিত হয়। যৌন শক্তি নষ্ট হয় ও বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। স্মরণশক্তি ও মনোযোগ দেওয়ার শক্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়। এছাড়াও রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় ও হার্ট এটাক হয়। কাজকর্মের আগ্রহ কমে যায়। ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় এবং মতিভ্রম হয়।

মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পরিবার সমাজ রাষ্ট্রেও বিপর্যয় নেমে আসছে। প্রবাদ আছে, নেশা তোমাকে তোমার বাস্তবতা সম্পর্কে সন্দিহান এবং অন্ধ বানিয়ে ফেলবে (ব্রেইনি রিডারস)।

এই প্রজন্মের আরেক অবক্ষয়ের নাম ইভটিজিং। ইভটিজিং বলতে নারীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাঁধা সৃষ্টি করাকে বোঝায়। নারীদের যেখানে সেখানে যেসব ধরনের ইভটিজিং শিকার হতে হয় তা হচ্ছে- অশ্লীল মন্তব্য, গা ঘেঁষে দাঁড়ানো, উস্কানিমূলক হাততালি, উদ্দেশ্যপূর্ণ যৌন আবেদনময়ী গান, অশ্লীল চিত্র প্রদর্শন, বিকৃতভাবে ডাক দেওয়া, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কু-প্রস্তাব, ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগে এমন মন্তব্য, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে নানাভাবে হুমকি দেওয়া। আর এর পিছনে প্রধান কারণ মাদক।মাদক মস্তিষ্কের সেরিব্রাম অংশকে বিকৃত করে তোলে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। এর ফলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

মাদক নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতি মাত্রায় মাদক সেবনের ফলে স্বাভাবিক অবস্থা পরিবর্তন হয়। অস্থিরতা অনুভব হতে পারে, হার্টের গতি বেড়ে অথবা কমে যেতে পারে, প্রচণ্ড ঘাম হতে পারে, ঝিমিয়ে পড়তে পারে, প্রেশার বেড়ে যেতে পারে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এবনরমাল মুভমেন্ট হতে পারে, মাসেল উইকনেস হতে পারে, খিচুনি হতে পারে, এমনকি কোমায়ও চলে যেতে পারে।

মাদকের নেশায় ছিনতাই, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় এমনকি খুনের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ভয়াবহ মাদক দ্রব্যের মতোই নিকোটিন আমাদের মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে এর অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টরগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।সুন্দর জীবনটাকে নিয়ে যায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আসুন আমরা মাদককে পরিহার করি।

  • মো. মনির, শিক্ষার্থী: ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

মেধা বিকাশে বাঁধাগ্রস্থ নতুন প্রজন্ম

মো. মনির
মো. মনির।

সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে পত্রিকা হাতে চায়ের কাপে চুমুক দিতেই দু’চোখে ভেসে ওঠে নেতিবাচক বিভিন্ন মারাত্মক কর্মকাণ্ডের শিরোনাম। কিন্তু কেন?

এবার আসি মূল কথায়, বর্তমান প্রজন্মের কথায়, আজকাল ইলেকট্রনিক ডিভাইসের উপর যতোটা নির্ভরশীল ততোটাই আসক্ত প্রযুক্তির অপব্যবহারে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিনের শুরু থেকে রাতের আঁধার পর্যন্ত ব্যবহার করে মোবাইল, কম্পিউটারসহ আধুনিক প্রযুক্তিগত যন্ত্র। এতে ব্যাঘাত ঘটে ঘুমের, ফলে মানসিক অশান্তি অনুভব হয়। প্রবাদ আছে: সকাল সকাল ঘুমায় যারা, সকাল সকাল উঠে যারা ধনে জ্ঞানে স্বাস্থ্যে তারা হবেই হবে সবার সেরা।

আমাদের সমাজে অনেক সচেতন বাবা মায়েরাও আহ্লাদে সন্তানকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের দিকে। অল্প বয়সে মোবাইল ব্যবহার করতে দেওয়া যেটা তাদের পড়াশোনার জন্য মারাত্মক হুমকি স্বরূপ। যে বয়সে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড চর্চা করার কথা সে বয়সে আসক্ত হয়ে পড়ছে ব্লু ফিল্মসহ মস্তিষ্ক বিকৃত করে দেওয়ার মতো কাজে।

এবার আসি আরেক এ প্রজন্মের আরেক মরণব্যাধী মাদকের কথায়। বর্তমানে মাদকের বিষ নিঃশ্বাসের মতো ছড়িয়ে পড়েছে চারপাশে।মাদকে আসক্ত হওয়ার কারণ মোটাদাগে হতাশা,দরিদ্রতা, চাকুরি না পাওয়া, প্রেমে ব্যর্থতা, পারিবারিক ডিপ্রেশন ইত্যাদি। ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে গাঁজা, ইয়াবা, হেরোইন, আফিম, বিয়ার, মারিজুয়ানা, ফেনসিডিল, প্যাথেডিনসহ নানা নেশা জাতীয় দ্রব্য। মাদকের বিষাক্ত ছোবল ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে তারুণ্যের শক্তি ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে। মানসিক এবং শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তরুণ সমাজ। নৈতিক শিক্ষা হারিয়ে যাচ্ছে তাদের। মস্তিষ্কের ভিতরে জায়গা করে নিচ্ছে ধীরে ধীরে মারাত্মক সব মাদকাদ্রব্য।

মাদক সেবনে সন্দেহ প্রবণতা, কলহ প্রবণতা এবং আক্রমণাত্মক মনোভাব পরীলক্ষিত হয়। যৌন শক্তি নষ্ট হয় ও বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়। আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়। স্মরণশক্তি ও মনোযোগ দেওয়ার শক্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়। এছাড়াও রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় ও হার্ট এটাক হয়। কাজকর্মের আগ্রহ কমে যায়। ক্ষুধামন্দা দেখা দেয় এবং মতিভ্রম হয়।

মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসনের কারণে ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে পরিবার সমাজ রাষ্ট্রেও বিপর্যয় নেমে আসছে। প্রবাদ আছে, নেশা তোমাকে তোমার বাস্তবতা সম্পর্কে সন্দিহান এবং অন্ধ বানিয়ে ফেলবে (ব্রেইনি রিডারস)।

এই প্রজন্মের আরেক অবক্ষয়ের নাম ইভটিজিং। ইভটিজিং বলতে নারীদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাঁধা সৃষ্টি করাকে বোঝায়। নারীদের যেখানে সেখানে যেসব ধরনের ইভটিজিং শিকার হতে হয় তা হচ্ছে- অশ্লীল মন্তব্য, গা ঘেঁষে দাঁড়ানো, উস্কানিমূলক হাততালি, উদ্দেশ্যপূর্ণ যৌন আবেদনময়ী গান, অশ্লীল চিত্র প্রদর্শন, বিকৃতভাবে ডাক দেওয়া, ইচ্ছার বিরুদ্ধে কু-প্রস্তাব, ব্যক্তিত্বে আঘাত লাগে এমন মন্তব্য, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, প্রেমের প্রস্তাবে সাড়া না দিলে নানাভাবে হুমকি দেওয়া। আর এর পিছনে প্রধান কারণ মাদক।মাদক মস্তিষ্কের সেরিব্রাম অংশকে বিকৃত করে তোলে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে যায়। এর ফলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।

মাদক নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন, অতি মাত্রায় মাদক সেবনের ফলে স্বাভাবিক অবস্থা পরিবর্তন হয়। অস্থিরতা অনুভব হতে পারে, হার্টের গতি বেড়ে অথবা কমে যেতে পারে, প্রচণ্ড ঘাম হতে পারে, ঝিমিয়ে পড়তে পারে, প্রেশার বেড়ে যেতে পারে, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ এবনরমাল মুভমেন্ট হতে পারে, মাসেল উইকনেস হতে পারে, খিচুনি হতে পারে, এমনকি কোমায়ও চলে যেতে পারে।

মাদকের নেশায় ছিনতাই, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায় এমনকি খুনের মতো জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ভয়াবহ মাদক দ্রব্যের মতোই নিকোটিন আমাদের মস্তিষ্ককে আক্রান্ত করে এর অ্যাসিটাইলকোলিন রিসেপ্টরগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।সুন্দর জীবনটাকে নিয়ে যায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আসুন আমরা মাদককে পরিহার করি।

  • মো. মনির, শিক্ষার্থী: ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।