যুক্তরাজ্যে শিক্ষা ভিসায় গিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

ফয়সল আহমদ বাবলু, সিলেট

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতেই পড়েছে বিরূপ প্রভাব। শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ যুক্তরাজ্যও এই পরিস্থিতিতে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। এতে শিক্ষা ভিসায় দেশটিতে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা পড়ছেন নানা সংকটে। পড়াশোনা ও খাবারের অর্থের পাশাপাশি বাসস্থানের ব্যবস্থা করতেও হিমশিম অবস্থা অনেকের। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে অবস্থান করা বাংলাদেশিরা বুঝেশুনে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক বাংলাদেশি দেওয়ান বেলাল আহমদ চৌধুরী সম্প্রতি তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সতর্ক করে জানান, বাংলাদেশ থেকে যাঁরা শিক্ষা ভিসায় বা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন বা এখনও চেষ্টা করছেন, তাঁরা যেন ভালোভাবে চিন্তা করে সেখানে যান। দেশটিতে যাওয়ার পর প্রথমেই একজনের সামনে আসে খাওয়া ও থাকার জায়গা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি নিশ্চিত করা। তবে এগুলো সহজেই পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, কাজ না থাকলে অর্থ আসবে কীভাবে? আবার আত্মীয়স্বজনের বাসায়ও বেশি দিন থাকা সম্ভব নয়। কারণ, যুক্তরাজ্যের ঘরগুলো বেশ ছোট। এখন অনেকেই পার্কে বা রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন। সামনে ঠান্ডা আরও বাড়বে। তাই সব ঠিক করে যুক্তরাজ্যে যান।

লন্ডন থেকে আরেক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে জানান, যুক্তরাজ্যের অথনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। উন্নত বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দায় ভোগে, তখন তারা উন্নয়নশীল দেশের দিকে চোখ দেয়। তারা দেশটিতে যাওয়ার জন্য পথ সহজ করে দেয়। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র রাষ্ট্রের লোকজনও হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতে উন্নত দেশগুলো লাভবান হয় এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বলবান হয়। এ কারণে বুঝেশুনে পা বাড়ানো উচিত।

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে যাঁরা যান, তাঁদের একটি বড় অংশই সিলেটের। দীর্ঘদিন ধরেই সিলেটের অনেকেই দেশটিতে বসবাস করছেন। এ কারণে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার চাহিদা সিলেটেই সবচেয়ে বেশি। এখান থেকে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম যাওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভাই বড় কষ্টে আছি। আমার সন্তানকে নিয়ে পার্কে থাকতে হচ্ছে। কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু এভাবে কতদিন চলব বলতে পারছি না।’ তিনি জানান, তাঁর লন্ডন যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তিনি যাঁর ওপর নির্ভর করে গিয়েছিলেন, তিনি কিছুদিন পরই চলে গেছেন।

সিলেটে শিক্ষা ভিসা প্রক্রিয়াবিষয়ক সংগঠন ‘ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে’র তথ্যমতে, ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে শিক্ষা ভিসার সুযোগ বাড়ে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনেক শিক্ষার্থী আবেদন করেন। মহামারি করোনার কারণে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দেওয়ার পর গত বছর থেকে ফের এ হার বেড়েছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী, ২০২১ সালে ১১ হাজার শিক্ষার্থী এবং ২০২২ সালের এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে গেছেন।

প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ফেরদৌস আলম বলেন, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়ালেখার জন্য শিক্ষা ভিসা অনেক সহজ করা হয়েছে। এ কারণে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে সিলেটের শিক্ষার্থীরাই দেশের বাইরে বেশি যাচ্ছেন। পারিবারিক কারণে সিলেটিদের ইংল্যান্ড যাওয়ার প্রবণতা বেশি, তাই এখানকার শিক্ষার্থীরা ওই দেশেই বেশি আবেদন করছেন।

সিলেট ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অ্যাসোসিয়েশনের (সেলটা) সভাপতি খালেদ চৌধুরী জানান, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বেশি ভিসা দিচ্ছে। এ কারণে ইংরেজি শিক্ষার জন্য আইইএলটিএস সেন্টারগুলোয় শিক্ষার্থীদের ভিড় বেড়েছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রতি সপ্তাহে একটি করে পরীক্ষা নিচ্ছে। মাসে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আইএলটিএস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।

যুক্তরাজ্যে শিক্ষা ভিসায় গিয়ে বিপাকে শিক্ষার্থীরা

ফয়সল আহমদ বাবলু, সিলেট

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতেই পড়েছে বিরূপ প্রভাব। শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ যুক্তরাজ্যও এই পরিস্থিতিতে টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে। এতে শিক্ষা ভিসায় দেশটিতে পড়তে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা পড়ছেন নানা সংকটে। পড়াশোনা ও খাবারের অর্থের পাশাপাশি বাসস্থানের ব্যবস্থা করতেও হিমশিম অবস্থা অনেকের। এমন পরিস্থিতিতে দেশটিতে অবস্থান করা বাংলাদেশিরা বুঝেশুনে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যের সাংবাদিক বাংলাদেশি দেওয়ান বেলাল আহমদ চৌধুরী সম্প্রতি তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে সতর্ক করে জানান, বাংলাদেশ থেকে যাঁরা শিক্ষা ভিসায় বা ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন বা এখনও চেষ্টা করছেন, তাঁরা যেন ভালোভাবে চিন্তা করে সেখানে যান। দেশটিতে যাওয়ার পর প্রথমেই একজনের সামনে আসে খাওয়া ও থাকার জায়গা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি নিশ্চিত করা। তবে এগুলো সহজেই পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ, কাজ না থাকলে অর্থ আসবে কীভাবে? আবার আত্মীয়স্বজনের বাসায়ও বেশি দিন থাকা সম্ভব নয়। কারণ, যুক্তরাজ্যের ঘরগুলো বেশ ছোট। এখন অনেকেই পার্কে বা রাস্তায় ঘুমাচ্ছেন। সামনে ঠান্ডা আরও বাড়বে। তাই সব ঠিক করে যুক্তরাজ্যে যান।

লন্ডন থেকে আরেক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সমকালকে জানান, যুক্তরাজ্যের অথনৈতিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। কিছুদিন আগে অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। উন্নত বিশ্ব যখন অর্থনৈতিক মন্দায় ভোগে, তখন তারা উন্নয়নশীল দেশের দিকে চোখ দেয়। তারা দেশটিতে যাওয়ার জন্য পথ সহজ করে দেয়। অপেক্ষাকৃত দরিদ্র রাষ্ট্রের লোকজনও হুমড়ি খেয়ে পড়ে। এতে উন্নত দেশগুলো লাভবান হয় এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা বলবান হয়। এ কারণে বুঝেশুনে পা বাড়ানো উচিত।

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে যাঁরা যান, তাঁদের একটি বড় অংশই সিলেটের। দীর্ঘদিন ধরেই সিলেটের অনেকেই দেশটিতে বসবাস করছেন। এ কারণে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার চাহিদা সিলেটেই সবচেয়ে বেশি। এখান থেকে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম যাওয়া এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ভাই বড় কষ্টে আছি। আমার সন্তানকে নিয়ে পার্কে থাকতে হচ্ছে। কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি বিষয়টি দেখে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু এভাবে কতদিন চলব বলতে পারছি না।’ তিনি জানান, তাঁর লন্ডন যাওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তিনি যাঁর ওপর নির্ভর করে গিয়েছিলেন, তিনি কিছুদিন পরই চলে গেছেন।

সিলেটে শিক্ষা ভিসা প্রক্রিয়াবিষয়ক সংগঠন ‘ফরেন অ্যাডমিশন অ্যান্ড ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে’র তথ্যমতে, ২০১৯ সাল থেকে যুক্তরাজ্যে শিক্ষা ভিসার সুযোগ বাড়ে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় অনেক শিক্ষার্থী আবেদন করেন। মহামারি করোনার কারণে কিছুটা স্থবিরতা দেখা দেওয়ার পর গত বছর থেকে ফের এ হার বেড়েছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী, ২০২১ সালে ১১ হাজার শিক্ষার্থী এবং ২০২২ সালের এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে গেছেন।

প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ফেরদৌস আলম বলেন, যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় পড়ালেখার জন্য শিক্ষা ভিসা অনেক সহজ করা হয়েছে। এ কারণে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে যাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, এই মুহূর্তে সিলেটের শিক্ষার্থীরাই দেশের বাইরে বেশি যাচ্ছেন। পারিবারিক কারণে সিলেটিদের ইংল্যান্ড যাওয়ার প্রবণতা বেশি, তাই এখানকার শিক্ষার্থীরা ওই দেশেই বেশি আবেদন করছেন।

সিলেট ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ ট্রেনিং ইনস্টিটিউট অ্যাসোসিয়েশনের (সেলটা) সভাপতি খালেদ চৌধুরী জানান, অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বেশি ভিসা দিচ্ছে। এ কারণে ইংরেজি শিক্ষার জন্য আইইএলটিএস সেন্টারগুলোয় শিক্ষার্থীদের ভিড় বেড়েছে। ব্রিটিশ কাউন্সিল প্রতি সপ্তাহে একটি করে পরীক্ষা নিচ্ছে। মাসে দুই হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আইএলটিএস পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেন।