যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা: স্টুডেন্ট ভিসায় কাজের সুযোগ আছে কি?

হাবিবুর রহমান রাব্বি

হাবিবুর রহমান রাব্বি

যাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসায় আসবেন, তাঁরা কি কাজ করার অনুমতি পাবেন! প্রথমে সেমিস্টার ফি, টিউশন ফি দিয়ে এলেও পরবর্তী সময়ের খরচ কাজ করে তোলা সম্ভব! এসব নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পবেলসভিল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান রাব্বি।

বিদেশে পড়তে যাওয়া একজন শিক্ষার্থীর টিউশন ফি এবং অন্যান্য খরচ চালানোর মতো সক্ষমতা আছে কি না তার জন্য যথাযথ ফিন্যান্সিয়াল ডকুমেন্টস ইউনিভার্সিটিতে জমা দিতে হয় (মূলত ব্যাংক স্টেটমেন্ট)। দূতাবাসে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় প্রায়ই এর সত্যতা যাচাই করে থাকেন ভিসা অফিসার। প্রথমত, আপনি স্টুডেন্ট ভিসায় এসেই এখানে কাজ করতে পারবেন না। তাহলে যাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসায় আসবেন, তাঁরা কি কাজ করার অনুমতি পাবেন? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ কাজ করতে পারবেন, তবে  আসামাত্রই এখানে অনুমতি ছাড়া কাজ করতে পারবেন না। কাজ করতে চাইলে আপনাকে আপনার ইউনিভার্সিটি থেকে সিপিটি এবং পরবর্তী সময়ে ওপিটি অনুমতি নিতে হবে।

কারিকুলাম প্র্যাকটিক্যাল ট্রেইনিং
সিপিটি মানে হচ্ছে কারিকুলাম প্র্যাকটিক্যাল ট্রেইনিং, অর্থাৎ আপনি যেই প্রোগ্রামে পড়ালেখা করতে এসেছেন সেই প্রোগ্রাম রিলেটেড জব করার জন্য ইউনিভার্সিটি থেকে অনুমতি। সিপিটি অনুমোদন নেওয়ার জন্য ইউনিভার্সিটির কিছু নিয়মকানুন থাকে। প্রথমত, সব ইউনিভার্সিটি আপনাকে সিপিটি অনুমোদন দেবে না। আপনাকে ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করার সময় মাথায় রাখতে হবে উক্ত ইউনিভার্সিটি সিপিটির অনুমোদন দেয় কি না। দ্বিতীয়ত, আপনি আমেরিকা এসেই সঙ্গে সঙ্গে সিপিটির জন্য আবেদন করতে পারবেন না। আপনাকে এক সেমিস্টার থেকে এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তৃতীয়ত, আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সিজিপিএ ধরে রাখতে হবে এই সিপিটি অনুমোদন বহাল রাখার জন্য। আপনার প্রতি সেমিস্টারের রেজাল্ট খারাপ হতে থাকলে সিপিটি বাতিল হবে। সর্বশেষ, অবশ্যই আপনাকে কোনো একটি কোম্পানি থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেতে হবে সিপিটির জন্য আবেদন করতে। যদি কোনো কোম্পানি আপনাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার না দেয় তাহলে আপনার বাকি সব ঠিক থাকলেও আপনার ইউনিভার্সিটি আপনাকে সিপিটি অনুমতি দেবে না। অবশ্যই উক্ত চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটি আপনার প্রোগ্রামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কম্পিউটার সায়েন্সে আসেন তাহলে কম্পিউটার সায়েন্সের জবগুলো, যেমন ডেটা অ্যানালাইসিস, প্রোগ্রামার, জাভা ডেভেলপার, ওয়েব ডেভেলপার—এ রকম পদের জন্য অফার লেটার পেতে হবে। অন্যথায় অনুমতি মিলবে না। মনে রাখতে হবে, সিপিটি হচ্ছে আপনার ডিগ্রি চলাকালে কাজ করতে পারার অনুমতি। ডিগ্রির পর কাজ করতে চাইলে আপনাকে নিতে হবে ওপিটি পারমিশন।

অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেইনিং 
ওপিটি মানে হচ্ছে অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেইনিং, অর্থাৎ আপনার প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর কাজ করতে পারার অনুমতি। আপনি যদি স্টেমের অধীনের কোনো প্রোগ্রামে আসেন তাহলে আপনি আপনার ডিগ্রি শেষ হলে তিন বছরের জন্য কাজ করার অনুমতি পাবেন ইউএসএতে, অন্যথায় পাবেন এক বছরের জন্য কাজ করার অনুমতি। স্টেম প্রোগ্রাম হচ্ছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতসম্পর্কিত প্রোগ্রাম। এই তিন অথবা এক বছরের ওপিটি অনুমতি আপনি চাইলে যেকোনো জব করতে পারবেন। ইউনিভার্সিটিতে ডিগ্রি শেষ হওয়ার মাসখানেক আগে করে ওপিটির জন্য আবেদন করতে হয়। এরপর ইউনিভার্সিটি আপনাকে ডিগ্রি শেষ হওয়ার পরপরই ওপিটি অনুমোদন দিয়ে দেবে। ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি শেষ করার আগে মূলত আপনি ওপিটির অধীনে কাজ করতে পারবেন না।

আসার পরপরই যাঁরা কাজ করেন
মূলত তাঁরা অবৈধভাবে ক্যাশ জব করেন। ক্যাশ জব করার জন্য কোনো পারমিশন বা ডকুমেন্টস লাগে না যেহেতু এটি এমনিতেই অবৈধ। ক্যাশ জব করে অনেকেই নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ তুলে থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিউশন ফিও তুলে থাকেন অনেকে। তবে ক্যাশ জবের ওপর ভরসা করে আমেরিকা আসা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আপনি যেই স্টেটে, অর্থাৎ যেই শহরে আসবেন সেই শহরের ক্যাশ জবের সহজলভ্যতা কেমন তা সম্পর্কে আপনি অবগত নাও থাকতে পারেন। আপনি আসামাত্র ক্যাশ জব নাও পেতে পারেন। আপনার শহরে ক্যাশ জবে প্রতি ঘণ্টার রেট অনেক কম হতে পারে যেটি দিয়ে আপনার থাকা-খাওয়ার খরচ তুলতেও কষ্ট হয়ে যেতে পারে। বেশির ভাগ জায়গায় শিক্ষার্থীদের প্রতি ঘণ্টায় ১০ ডলারের ওপর দিতে চায় না (যদিও এটি স্থানভেদে কমবেশি হতে পারে)। পরিশেষে, আপনি অনেক বেশি ক্যাশ জব করতে থাকলে আপনার স্বাস্থ্যের ও পড়ালেখার ক্ষতি হতে পারে।

অনুলিখন: জাহিদুল ইসলাম

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা: স্টুডেন্ট ভিসায় কাজের সুযোগ আছে কি?

হাবিবুর রহমান রাব্বি

হাবিবুর রহমান রাব্বি

যাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসায় আসবেন, তাঁরা কি কাজ করার অনুমতি পাবেন! প্রথমে সেমিস্টার ফি, টিউশন ফি দিয়ে এলেও পরবর্তী সময়ের খরচ কাজ করে তোলা সম্ভব! এসব নিয়ে বিস্তারিত জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পবেলসভিল ইউনিভার্সিটির কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান রাব্বি।

বিদেশে পড়তে যাওয়া একজন শিক্ষার্থীর টিউশন ফি এবং অন্যান্য খরচ চালানোর মতো সক্ষমতা আছে কি না তার জন্য যথাযথ ফিন্যান্সিয়াল ডকুমেন্টস ইউনিভার্সিটিতে জমা দিতে হয় (মূলত ব্যাংক স্টেটমেন্ট)। দূতাবাসে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় প্রায়ই এর সত্যতা যাচাই করে থাকেন ভিসা অফিসার। প্রথমত, আপনি স্টুডেন্ট ভিসায় এসেই এখানে কাজ করতে পারবেন না। তাহলে যাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্টুডেন্ট ভিসায় আসবেন, তাঁরা কি কাজ করার অনুমতি পাবেন? উত্তর হচ্ছে, হ্যাঁ কাজ করতে পারবেন, তবে  আসামাত্রই এখানে অনুমতি ছাড়া কাজ করতে পারবেন না। কাজ করতে চাইলে আপনাকে আপনার ইউনিভার্সিটি থেকে সিপিটি এবং পরবর্তী সময়ে ওপিটি অনুমতি নিতে হবে।

কারিকুলাম প্র্যাকটিক্যাল ট্রেইনিং
সিপিটি মানে হচ্ছে কারিকুলাম প্র্যাকটিক্যাল ট্রেইনিং, অর্থাৎ আপনি যেই প্রোগ্রামে পড়ালেখা করতে এসেছেন সেই প্রোগ্রাম রিলেটেড জব করার জন্য ইউনিভার্সিটি থেকে অনুমতি। সিপিটি অনুমোদন নেওয়ার জন্য ইউনিভার্সিটির কিছু নিয়মকানুন থাকে। প্রথমত, সব ইউনিভার্সিটি আপনাকে সিপিটি অনুমোদন দেবে না। আপনাকে ইউনিভার্সিটিতে আবেদন করার সময় মাথায় রাখতে হবে উক্ত ইউনিভার্সিটি সিপিটির অনুমোদন দেয় কি না। দ্বিতীয়ত, আপনি আমেরিকা এসেই সঙ্গে সঙ্গে সিপিটির জন্য আবেদন করতে পারবেন না। আপনাকে এক সেমিস্টার থেকে এক বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। তৃতীয়ত, আপনাকে একটি নির্দিষ্ট সিজিপিএ ধরে রাখতে হবে এই সিপিটি অনুমোদন বহাল রাখার জন্য। আপনার প্রতি সেমিস্টারের রেজাল্ট খারাপ হতে থাকলে সিপিটি বাতিল হবে। সর্বশেষ, অবশ্যই আপনাকে কোনো একটি কোম্পানি থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার পেতে হবে সিপিটির জন্য আবেদন করতে। যদি কোনো কোম্পানি আপনাকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার না দেয় তাহলে আপনার বাকি সব ঠিক থাকলেও আপনার ইউনিভার্সিটি আপনাকে সিপিটি অনুমতি দেবে না। অবশ্যই উক্ত চাকরির অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটি আপনার প্রোগ্রামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি কম্পিউটার সায়েন্সে আসেন তাহলে কম্পিউটার সায়েন্সের জবগুলো, যেমন ডেটা অ্যানালাইসিস, প্রোগ্রামার, জাভা ডেভেলপার, ওয়েব ডেভেলপার—এ রকম পদের জন্য অফার লেটার পেতে হবে। অন্যথায় অনুমতি মিলবে না। মনে রাখতে হবে, সিপিটি হচ্ছে আপনার ডিগ্রি চলাকালে কাজ করতে পারার অনুমতি। ডিগ্রির পর কাজ করতে চাইলে আপনাকে নিতে হবে ওপিটি পারমিশন।

অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেইনিং 
ওপিটি মানে হচ্ছে অপশনাল প্র্যাকটিক্যাল ট্রেইনিং, অর্থাৎ আপনার প্রোগ্রাম শেষ হওয়ার পর কাজ করতে পারার অনুমতি। আপনি যদি স্টেমের অধীনের কোনো প্রোগ্রামে আসেন তাহলে আপনি আপনার ডিগ্রি শেষ হলে তিন বছরের জন্য কাজ করার অনুমতি পাবেন ইউএসএতে, অন্যথায় পাবেন এক বছরের জন্য কাজ করার অনুমতি। স্টেম প্রোগ্রাম হচ্ছে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল এবং গণিতসম্পর্কিত প্রোগ্রাম। এই তিন অথবা এক বছরের ওপিটি অনুমতি আপনি চাইলে যেকোনো জব করতে পারবেন। ইউনিভার্সিটিতে ডিগ্রি শেষ হওয়ার মাসখানেক আগে করে ওপিটির জন্য আবেদন করতে হয়। এরপর ইউনিভার্সিটি আপনাকে ডিগ্রি শেষ হওয়ার পরপরই ওপিটি অনুমোদন দিয়ে দেবে। ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি শেষ করার আগে মূলত আপনি ওপিটির অধীনে কাজ করতে পারবেন না।

আসার পরপরই যাঁরা কাজ করেন
মূলত তাঁরা অবৈধভাবে ক্যাশ জব করেন। ক্যাশ জব করার জন্য কোনো পারমিশন বা ডকুমেন্টস লাগে না যেহেতু এটি এমনিতেই অবৈধ। ক্যাশ জব করে অনেকেই নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ তুলে থাকেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে টিউশন ফিও তুলে থাকেন অনেকে। তবে ক্যাশ জবের ওপর ভরসা করে আমেরিকা আসা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। আপনি যেই স্টেটে, অর্থাৎ যেই শহরে আসবেন সেই শহরের ক্যাশ জবের সহজলভ্যতা কেমন তা সম্পর্কে আপনি অবগত নাও থাকতে পারেন। আপনি আসামাত্র ক্যাশ জব নাও পেতে পারেন। আপনার শহরে ক্যাশ জবে প্রতি ঘণ্টার রেট অনেক কম হতে পারে যেটি দিয়ে আপনার থাকা-খাওয়ার খরচ তুলতেও কষ্ট হয়ে যেতে পারে। বেশির ভাগ জায়গায় শিক্ষার্থীদের প্রতি ঘণ্টায় ১০ ডলারের ওপর দিতে চায় না (যদিও এটি স্থানভেদে কমবেশি হতে পারে)। পরিশেষে, আপনি অনেক বেশি ক্যাশ জব করতে থাকলে আপনার স্বাস্থ্যের ও পড়ালেখার ক্ষতি হতে পারে।

অনুলিখন: জাহিদুল ইসলাম