যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা: নিখরচায় নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ

সিরাজুস সালেহীন

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যতম প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়টি বেসরকারি হওয়ায় এখানে পড়তে প্রতিবছর আপনাকে গুনতে হবে প্রায় ৫৮ হাজার ১৬৮ ডলার। কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণে খরচ যাতে বাধা না হয়, সে জন্য নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর ফিন্যান্সিয়াল এইড দিয়ে থাকে। তা নিয়েই বিস্তারিত জানিয়েছেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিরাজুস সালেহীন

১৮৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত পড়াশোনা, গবেষণা, বৈচিত্র্যপূর্ণ ক্যাম্পাস জীবন উপভোগ্যের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ পছন্দনীয়। নিউইয়র্ক শহর ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টির চীনের সাংহাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে আরও দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে। এখানে আপনি ২৭০টির বেশি বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন। আরও আছে স্যাট ছাড়াই অধ্যয়নের সুযোগ।

ফিন্যান্সিয়াল এইড ভিত্তিক স্কলারশিপ
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটিগুলোতে আলাদা আলাদা স্কলারশিপের ব্যবস্থা থাকলেও তার বাইরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য থাকে ফিন্যান্সিয়াল এইডের ব্যবস্থা। ঠিক তেমনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর সারা বিশ্বের কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এই ফিন্যান্সিয়াল এইড দিয়ে থাকে। সাধারণত নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০ লাখের মতো লেগে যায় শুধু টিউশন ফিতেই। এর বাইরে তো থাকা-খাওয়ার খরচ আছেই। অনেকের পক্ষে তা বহন করা প্রায় অসম্ভব। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা করতে ফিন্যান্সিয়াল এইড স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। আর এই ফিন্যান্সিয়াল এইড স্কলারশিপ দ্বারা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে আপনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন।

সুযোগ-সুবিধা 
ফিন্যান্সিয়াল এইড ভিত্তিক স্কলারশিপে বছরে গড়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৫ লাখ এবং ৪ বছরে প্রায় ৩ কোটির মতো টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। যার মধ্যে টিউশন ফি, ফুড অ্যান্ড হাউজিং, বই এবং স্বাস্থ্যবিমা অন্তর্ভুক্ত। এই স্কলারশিপের টাকা প্রতি শিক্ষাবর্ষে দেওয়া হয়। এ ছাড়া নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি বিশেষ সুবিধা আছে তা হলো, নিজস্ব ক্যাম্পাস ব্যতীত তাদের আওতাভুক্ত অন্য আরেকটি ক্যাম্পাসে একটি টার্মের জন্য পড়াশোনার সুযোগ, যাকে বলা হয় ‘study away term’ আর এর বাইরের টার্মের পুরো খরচ তারা বহন করে থাকে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • কমন অ্যাপ পার্সোনাল এসে
  • নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্পেসিফিক এসে তিনটি রিকমেন্ডেশন লেটার
  • কাউন্সিলর রিকমেন্ডেশন লেটার
  • এসএসসি ও এইচএসসি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বিগত ৩ বছরের একাডেমিক রেকর্ড
  • কলেজ স্কলারশিপ সার্ভিস প্রোফাইল
  • ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট

আবেদন প্রক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন-প্রক্রিয়া সাধারণত কমন অ্যাপের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। পছন্দসই বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা বাছাই করে কমন অ্যাপের ফরমটি পূরণ করে জমা দিতে হবে। অনেক সময় স্কলারশিপের জন্য আলাদা রচনা লেখার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু ফিন্যান্সিয়াল এইড ভিত্তিক স্কলারশিপের জন্য কোনো আলাদা রচনা লিখতে হয় না; বরং এর জন্য শুধু কলেজ স্কলারশিপ সার্ভিস প্রোফাইল (সিএসএস প্রোফাইল) ফরমটি পূরণ করতে হয়। প্রোফাইলটি তৈরি করে ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। এই সিএসএস প্রোফাইলে একজন আবেদনকারীর যাবতীয় সব সঠিক অর্থনৈতিক অবস্থানের তথ্য আপলোড করতে হয়। তারপর সেই তথ্য অনুযায়ী একজন আবেদনকারী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে যায়, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার জন্য ওই সিএসএস প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী তাকে ফিন্যান্সিয়াল এইড ভিত্তিক স্কলারশিপ প্রদান করা হয়।

যেভাবে এগিয়ে থাকবেন
বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে প্রথম পরামর্শই হবে এখন থেকেই রিসার্চ করে এবং তা নিয়ে কাজ শুরু করা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের রিকোয়ারমেন্টগুলো নোট করে ফেলুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস, কমন অ্যাপ এসে, ফিন্যান্সিয়াল এইড ও কী ধরনের স্কলারশিপের সুযোগ আছে তা জেনে নিলে এই যাত্রায় এগিয়ে থাকবেন। কমন অ্যাপ এসের ধরন আগে বোঝার জন্য ‘50 Successful Ivy League Application Essays’ বইটি খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। ফিন্যান্সিয়াল এইড পাওয়ার ক্ষেত্রে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস খুব বড় ভূমিকা রেখে থাকে। তাই আপনি যে বিষয়ে আগ্রহী এবং বিষয়টায় আপনি একটু হলেও পটু সে বিষয়টায় সময় দিন। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাপ্লিকেশনে আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করবে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় আবু ধাবি’সহ অন্য আরও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন সাধারণত শুরু হয় আগস্টের দিকে এবং ডেডলাইন থাকে জানুয়ারি পর্যন্ত। আপনি চাইলে এর যেকোনো সময় তাদের নির্দিষ্ট ডেডলাইন অনুযায়ী আবেদন করতে পারবেন এবং স্কলারশিপ গ্রহণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে পারবেন।

অফিশিয়াল ওয়েবসাইট:

অনুলিখন: সাদিয়া আফরিন হীরা

যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা: নিখরচায় নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ

সিরাজুস সালেহীন

নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যতম প্রসিদ্ধ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়টি বেসরকারি হওয়ায় এখানে পড়তে প্রতিবছর আপনাকে গুনতে হবে প্রায় ৫৮ হাজার ১৬৮ ডলার। কিন্তু মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণে খরচ যাতে বাধা না হয়, সে জন্য নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর ফিন্যান্সিয়াল এইড দিয়ে থাকে। তা নিয়েই বিস্তারিত জানিয়েছেন নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিরাজুস সালেহীন

১৮৩১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণগত পড়াশোনা, গবেষণা, বৈচিত্র্যপূর্ণ ক্যাম্পাস জীবন উপভোগ্যের জন্য আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ পছন্দনীয়। নিউইয়র্ক শহর ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টির চীনের সাংহাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবিতে আরও দুটি ক্যাম্পাস রয়েছে। এখানে আপনি ২৭০টির বেশি বিষয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাবেন। আরও আছে স্যাট ছাড়াই অধ্যয়নের সুযোগ।

ফিন্যান্সিয়াল এইড ভিত্তিক স্কলারশিপ
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটিগুলোতে আলাদা আলাদা স্কলারশিপের ব্যবস্থা থাকলেও তার বাইরে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য থাকে ফিন্যান্সিয়াল এইডের ব্যবস্থা। ঠিক তেমনি নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর সারা বিশ্বের কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য তাদের প্রয়োজন অনুযায়ী এই ফিন্যান্সিয়াল এইড দিয়ে থাকে। সাধারণত নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছর বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০ লাখের মতো লেগে যায় শুধু টিউশন ফিতেই। এর বাইরে তো থাকা-খাওয়ার খরচ আছেই। অনেকের পক্ষে তা বহন করা প্রায় অসম্ভব। এ কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের আর্থিক সহায়তা করতে ফিন্যান্সিয়াল এইড স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। আর এই ফিন্যান্সিয়াল এইড স্কলারশিপ দ্বারা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে আপনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করতে পারবেন।

সুযোগ-সুবিধা 
ফিন্যান্সিয়াল এইড ভিত্তিক স্কলারশিপে বছরে গড়ে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৭৫ লাখ এবং ৪ বছরে প্রায় ৩ কোটির মতো টাকা দেওয়া হয়ে থাকে। যার মধ্যে টিউশন ফি, ফুড অ্যান্ড হাউজিং, বই এবং স্বাস্থ্যবিমা অন্তর্ভুক্ত। এই স্কলারশিপের টাকা প্রতি শিক্ষাবর্ষে দেওয়া হয়। এ ছাড়া নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি বিশেষ সুবিধা আছে তা হলো, নিজস্ব ক্যাম্পাস ব্যতীত তাদের আওতাভুক্ত অন্য আরেকটি ক্যাম্পাসে একটি টার্মের জন্য পড়াশোনার সুযোগ, যাকে বলা হয় ‘study away term’ আর এর বাইরের টার্মের পুরো খরচ তারা বহন করে থাকে।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র

  • কমন অ্যাপ পার্সোনাল এসে
  • নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্পেসিফিক এসে তিনটি রিকমেন্ডেশন লেটার
  • কাউন্সিলর রিকমেন্ডেশন লেটার
  • এসএসসি ও এইচএসসি সার্টিফিকেট ও মার্কশিট বিগত ৩ বছরের একাডেমিক রেকর্ড
  • কলেজ স্কলারশিপ সার্ভিস প্রোফাইল
  • ইংরেজি ভাষা দক্ষতার সার্টিফিকেট

আবেদন প্রক্রিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদন-প্রক্রিয়া সাধারণত কমন অ্যাপের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে হয়। পছন্দসই বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা বাছাই করে কমন অ্যাপের ফরমটি পূরণ করে জমা দিতে হবে। অনেক সময় স্কলারশিপের জন্য আলাদা রচনা লেখার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু ফিন্যান্সিয়াল এইড ভিত্তিক স্কলারশিপের জন্য কোনো আলাদা রচনা লিখতে হয় না; বরং এর জন্য শুধু কলেজ স্কলারশিপ সার্ভিস প্রোফাইল (সিএসএস প্রোফাইল) ফরমটি পূরণ করতে হয়। প্রোফাইলটি তৈরি করে ওয়েবসাইটে আপলোড করতে হবে। এই সিএসএস প্রোফাইলে একজন আবেদনকারীর যাবতীয় সব সঠিক অর্থনৈতিক অবস্থানের তথ্য আপলোড করতে হয়। তারপর সেই তথ্য অনুযায়ী একজন আবেদনকারী যদি বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেয়ে যায়, তারপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তার জন্য ওই সিএসএস প্রোফাইলের তথ্য অনুযায়ী তাকে ফিন্যান্সিয়াল এইড ভিত্তিক স্কলারশিপ প্রদান করা হয়।

যেভাবে এগিয়ে থাকবেন
বাংলাদেশ থেকে দেশের বাইরে পড়াশোনা করতে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে প্রথম পরামর্শই হবে এখন থেকেই রিসার্চ করে এবং তা নিয়ে কাজ শুরু করা। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও তাদের রিকোয়ারমেন্টগুলো নোট করে ফেলুন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ্লিকেশন প্রসেস, কমন অ্যাপ এসে, ফিন্যান্সিয়াল এইড ও কী ধরনের স্কলারশিপের সুযোগ আছে তা জেনে নিলে এই যাত্রায় এগিয়ে থাকবেন। কমন অ্যাপ এসের ধরন আগে বোঝার জন্য ‘50 Successful Ivy League Application Essays’ বইটি খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। ফিন্যান্সিয়াল এইড পাওয়ার ক্ষেত্রে এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাকটিভিটিস খুব বড় ভূমিকা রেখে থাকে। তাই আপনি যে বিষয়ে আগ্রহী এবং বিষয়টায় আপনি একটু হলেও পটু সে বিষয়টায় সময় দিন। এভাবেই বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাপ্লিকেশনে আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করবে। নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় আবু ধাবি’সহ অন্য আরও অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন সাধারণত শুরু হয় আগস্টের দিকে এবং ডেডলাইন থাকে জানুয়ারি পর্যন্ত। আপনি চাইলে এর যেকোনো সময় তাদের নির্দিষ্ট ডেডলাইন অনুযায়ী আবেদন করতে পারবেন এবং স্কলারশিপ গ্রহণের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে পারবেন।

অফিশিয়াল ওয়েবসাইট:

অনুলিখন: সাদিয়া আফরিন হীরা