যেভাবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড থেকে পশ্চিমা অক্সফোর্ডে

মার্শিয়া জামান।ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্ন নিয়ে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক মার্শিয়া জামান। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পিএইচডি করতে তিনি গেছেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। অক্সফোর্ডে আবেদনপ্রক্রিয়াগুলো কী ছিল, কোন বৃত্তির আওতায় আবেদন করা যায়, জেনে নিন তাঁর লেখা থেকে।

এখনো আমার ঠিক বিশ্বাস হয় না, আমি সত্যিই অক্সফোর্ডে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। বিখ্যাত একজন অধ্যাপকের অধীন নিজের খুব পছন্দের বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে পারব, কখনো কি ভেবেছিলাম! তবে এ পর্যন্ত আসার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। সত্যি বলতে, যতগুলো বাধার সম্মুখীন হব ভেবেছিলাম, বাস্তবতা তার থেকে আরও বেশি কঠিন ছিল। যেদিন অক্সফোর্ড থেকে ‘কংগ্র্যাচুলেশন’ লেখা ই–মেইলটা পেলাম, সেদিন সব কষ্ট সার্থক হয়ে গেছে।

পুরো প্রক্রিয়ায় সময় লেগেছে এক বছরের বেশি। তাই আপনি যদি আগামী বছর পিএইচডির পরিকল্পনা করে থাকেন, কাজকর্ম এখনই শুরু করা দরকার।

প্রথম দিকে অন্য সবার মতো আমারও পিএইচডি আবেদনের প্রক্রিয়াটা একটু বিভ্রান্তিকর আর গোলমেলে মনে হচ্ছিল। এত এত বিশ্ববিদ্যালয়, পিএইচডি প্রোগ্রাম আর অধ্যাপক পৃথিবীতে! এর মধ্যে কাকে মেইল দেব? কাকে বেছে নেব? আমাকেই–বা কে বেছে নেবে? প্রথম কয়েক দিন কম্পিউটারে ১০০টা ট্যাব খুলে দিন শেষে শূন্য মেইলের হিসাব নিয়ে ঘুমাতে যেতাম। তবে ঠান্ডা মাথায় ধীরে ধীরে প্রক্রিয়াটা গুছিয়ে আনলাম। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে পছন্দের অধ্যাপকদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য আলাদা করে রাখতাম। এ তথ্যগুলোর মধ্যে ছিল তাঁদের নাম, ই–মেইল, বর্তমান ও অতীতের গবেষণা প্রকল্প ও প্রকাশনার তালিকা। বিশ্ববিদ্যালয় ও অধ্যাপক নির্বাচনের প্রাথমিক ধাপটা পার করার পরই মেইল পাঠানো শুরু করি। আমার লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের রাইস ইউনিভার্সিটি ও যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ—দুটি থেকেই পিএইচডির অফার পাই। তবে অক্সফোর্ডে সুযোগ পাওয়ার পর অন্য কোনো বিকল্প নিয়ে ভাবতে হয়নি।

পিএইচডি ফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও কমনওয়েলথ স্কলারশিপ—দুই দিক থেকেই সাহায্য পাব। কমনওয়েলথ স্কলারশিপের জন্য শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য—দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোনয়ন পেতে হয়। বাংলাদেশের মনোনয়নটি একটি প্রাথমিক নিরীক্ষণের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। এ ধাপ পার না করলে স্কলারশিপের আবেদন করা যায় না। যদি ইচ্ছা থাকে কমনওয়েলথের মাধ্যমে অক্সফোর্ডেই আবেদন করবেন, তাহলে আগে থেকেই জেনে রাখুন, অনেক অনেক রচনা লিখতে হবে। আমার আবেদনের ক্ষেত্রে আমাকে একটি সংক্ষিপ্ত রচনার পাশাপাশি বিস্তারিত গবেষণার প্রস্তাবও লিখতে হয়েছিল। এর আগে গবেষণার অভিজ্ঞতা, সমাজে আপনার গবেষণার প্রভাব, নেতৃত্বের গুণাবলি—ঘুরেফিরে এ বিষয়গুলোই উঠে আসবে এসব রচনায়।

আবেদনপ্রক্রিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ‘স্টেটমেন্ট অব পারপাস’। এ লেখার জন্য যথেষ্ট সময় আগে থেকেই হাতে রাখবেন। কারণ, এটিই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন করা লাগবে। ভর্তিবিষয়ক কমিটি এ লেখার মাধ্যমেই আপনি কী ধরনের মানুষ, তা যাচাই করার চেষ্টা করবে। তাই নিজের যে ছবি সেখানে আঁকবেন, সেটা যেন স্বচ্ছ ও আত্মবিশ্বাসপূর্ণ হয়। অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, যাঁরা এ আবেদন দেখছেন, তাঁরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। প্রতিবছর লাখ লাখ আবেদন দেখে তাঁদের অভিজ্ঞ চোখ। তাই অন্য কারও লেখার সঙ্গে যেন মিল না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যের থেকে অনুপ্রেরণা অবশ্যই নেওয়া যাবে, কিন্তু তাতে যেন নিজস্বতা হারিয়ে না যায়।

পুরো প্রক্রিয়া চলাকালে বেশ কয়েকবার হতাশা পেয়ে বসতে পারে। যতবারই ব্যর্থ হোন না কেন, হাল না ছেড়ে লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকবেন। নিজের আশপাশে এমন মানুষ রাখুন, যারা আপনার কঠিন সময়গুলোয় পাশে থাকবে। নিজের ওপর সন্দেহ হলে সেই মানুষগুলোই যেন সাহস জোগাতে এগিয়ে আসে। আমার ক্ষেত্রে এই মানুষগুলো ছিল আমার জীবনসঙ্গী সাকিব, মা–বাবা ও বন্ধুরা।

যেভাবে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড থেকে পশ্চিমা অক্সফোর্ডে

মার্শিয়া জামান।ছবি: সংগৃহীত

স্বপ্ন নিয়ে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের প্রভাষক মার্শিয়া জামান। বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পিএইচডি করতে তিনি গেছেন যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। অক্সফোর্ডে আবেদনপ্রক্রিয়াগুলো কী ছিল, কোন বৃত্তির আওতায় আবেদন করা যায়, জেনে নিন তাঁর লেখা থেকে।

এখনো আমার ঠিক বিশ্বাস হয় না, আমি সত্যিই অক্সফোর্ডে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। বিখ্যাত একজন অধ্যাপকের অধীন নিজের খুব পছন্দের বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে পারব, কখনো কি ভেবেছিলাম! তবে এ পর্যন্ত আসার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। সত্যি বলতে, যতগুলো বাধার সম্মুখীন হব ভেবেছিলাম, বাস্তবতা তার থেকে আরও বেশি কঠিন ছিল। যেদিন অক্সফোর্ড থেকে ‘কংগ্র্যাচুলেশন’ লেখা ই–মেইলটা পেলাম, সেদিন সব কষ্ট সার্থক হয়ে গেছে।

পুরো প্রক্রিয়ায় সময় লেগেছে এক বছরের বেশি। তাই আপনি যদি আগামী বছর পিএইচডির পরিকল্পনা করে থাকেন, কাজকর্ম এখনই শুরু করা দরকার।

প্রথম দিকে অন্য সবার মতো আমারও পিএইচডি আবেদনের প্রক্রিয়াটা একটু বিভ্রান্তিকর আর গোলমেলে মনে হচ্ছিল। এত এত বিশ্ববিদ্যালয়, পিএইচডি প্রোগ্রাম আর অধ্যাপক পৃথিবীতে! এর মধ্যে কাকে মেইল দেব? কাকে বেছে নেব? আমাকেই–বা কে বেছে নেবে? প্রথম কয়েক দিন কম্পিউটারে ১০০টা ট্যাব খুলে দিন শেষে শূন্য মেইলের হিসাব নিয়ে ঘুমাতে যেতাম। তবে ঠান্ডা মাথায় ধীরে ধীরে প্রক্রিয়াটা গুছিয়ে আনলাম। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে পছন্দের অধ্যাপকদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় তথ্য আলাদা করে রাখতাম। এ তথ্যগুলোর মধ্যে ছিল তাঁদের নাম, ই–মেইল, বর্তমান ও অতীতের গবেষণা প্রকল্প ও প্রকাশনার তালিকা। বিশ্ববিদ্যালয় ও অধ্যাপক নির্বাচনের প্রাথমিক ধাপটা পার করার পরই মেইল পাঠানো শুরু করি। আমার লক্ষ্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। যুক্তরাষ্ট্রের রাইস ইউনিভার্সিটি ও যুক্তরাজ্যের কিংস কলেজ—দুটি থেকেই পিএইচডির অফার পাই। তবে অক্সফোর্ডে সুযোগ পাওয়ার পর অন্য কোনো বিকল্প নিয়ে ভাবতে হয়নি।

পিএইচডি ফান্ডিংয়ের ক্ষেত্রে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও কমনওয়েলথ স্কলারশিপ—দুই দিক থেকেই সাহায্য পাব। কমনওয়েলথ স্কলারশিপের জন্য শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য—দুই দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোনয়ন পেতে হয়। বাংলাদেশের মনোনয়নটি একটি প্রাথমিক নিরীক্ষণের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। এ ধাপ পার না করলে স্কলারশিপের আবেদন করা যায় না। যদি ইচ্ছা থাকে কমনওয়েলথের মাধ্যমে অক্সফোর্ডেই আবেদন করবেন, তাহলে আগে থেকেই জেনে রাখুন, অনেক অনেক রচনা লিখতে হবে। আমার আবেদনের ক্ষেত্রে আমাকে একটি সংক্ষিপ্ত রচনার পাশাপাশি বিস্তারিত গবেষণার প্রস্তাবও লিখতে হয়েছিল। এর আগে গবেষণার অভিজ্ঞতা, সমাজে আপনার গবেষণার প্রভাব, নেতৃত্বের গুণাবলি—ঘুরেফিরে এ বিষয়গুলোই উঠে আসবে এসব রচনায়।

আবেদনপ্রক্রিয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ‘স্টেটমেন্ট অব পারপাস’। এ লেখার জন্য যথেষ্ট সময় আগে থেকেই হাতে রাখবেন। কারণ, এটিই সম্ভবত সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন করা লাগবে। ভর্তিবিষয়ক কমিটি এ লেখার মাধ্যমেই আপনি কী ধরনের মানুষ, তা যাচাই করার চেষ্টা করবে। তাই নিজের যে ছবি সেখানে আঁকবেন, সেটা যেন স্বচ্ছ ও আত্মবিশ্বাসপূর্ণ হয়। অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে, যাঁরা এ আবেদন দেখছেন, তাঁরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। প্রতিবছর লাখ লাখ আবেদন দেখে তাঁদের অভিজ্ঞ চোখ। তাই অন্য কারও লেখার সঙ্গে যেন মিল না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। অন্যের থেকে অনুপ্রেরণা অবশ্যই নেওয়া যাবে, কিন্তু তাতে যেন নিজস্বতা হারিয়ে না যায়।

পুরো প্রক্রিয়া চলাকালে বেশ কয়েকবার হতাশা পেয়ে বসতে পারে। যতবারই ব্যর্থ হোন না কেন, হাল না ছেড়ে লক্ষ্যের দিকে এগোতে থাকবেন। নিজের আশপাশে এমন মানুষ রাখুন, যারা আপনার কঠিন সময়গুলোয় পাশে থাকবে। নিজের ওপর সন্দেহ হলে সেই মানুষগুলোই যেন সাহস জোগাতে এগিয়ে আসে। আমার ক্ষেত্রে এই মানুষগুলো ছিল আমার জীবনসঙ্গী সাকিব, মা–বাবা ও বন্ধুরা।