রাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগে চোখ ধাঁধানো সব প্রাণীর সমাহার

মনির হোসেন মাহিন , বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি

সংরক্ষণ করা হয়েছে বিভিন্নি প্রজাতির প্রাণী

আলো-ছায়ায় ঘেরা থমথমে পরিবেশ। ভেতরে প্রবেশ করতেই সমানে বিশাল এক অজগর, মনে হচ্ছে গাছ থেকে নেমে এসে এখনই গিলে খাবে দর্শনার্থীদের। পেখম মেলা রঙিন পাখার ময়ূর, সামনেই ফণা তোলা পেঁচানো এক বিষধর সাপ। তার পাশেই বিশাল দেহের এক কুমির। পাশাপাশি রয়েছে বনের রাজা সিংহ। এছাড়া নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, কোরালের সঙ্গে শঙ্খ, ঝিনুক, শামুখসহ চোখ ধাঁধানো সব প্রাণীর সমাহার। দেখে মনে হবে এ যেন এক বৈচিত্র্যময় প্রাণীর রহস্যপুরী।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক বিশাল কক্ষজুড়ে জাদুঘরটি। ১৯৭২ সালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রয়াত শিক্ষক মুস্তাফিজুর রহমানের উদ্যোগে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। তার নামানুসারেই এটির নাম রাখা হয়েছে ‘অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান মেমোরিয়াল মিউজিয়াম’।

এ জাদুঘরে একইসঙ্গে দেখা মিলবে নানা প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায়সহ এক হাজার ৫৪৩টি প্রাণীর প্রক্রিয়াজাত দেহ। এসব প্রাণীর পাশাপাশি ১৪২টি ফসিলও রয়েছে এ জাদুঘরে, যা বর্তমানে দুর্লভ। সরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণীর পাশাপাশি রয়েছে নানা জাতের সামুদ্রিক মাছ, বিরল প্রজাতির জীবন্ত ফসিল, পেট্রোমাইজন ও মেক্রিনসহ ১৯ প্রজাতির ৩৩টি কোরাল এবং ৪৫ প্রকার মলাস্কার সেল।

শুধু বন্য ও গৃহপালিত পশু নয়, দুটি মানবকঙ্কালও রয়েছে এখানে। একটি পুরুষের আর অপরটি নারীর। আরও আছে হাতি, ঘোড়া, কুমিরের কঙ্কাল, শুশুক ও ডলফিনের মমি। ছোট ছোট কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে সজারু, বনরুই, বিভিন্ন প্রজাতির বিড়াল, মাছরাঙা, মিঠাপানির মাছ, সামুদ্রিক মাছ, কোরাল (প্রবাল) এমনকি মানবভ্রুণও। মলাস্কা, পরিফেরা, নিডারিয়া, কর্ডাটা, আর্থ্রোপোডা, নেমাটোডাসহ প্রায় সব পর্বের বিচিত্র রকমের প্রাণীর সমাহার জাদুঘরটিতে। শুধু বাংলাদেশেরই নয়, দেশের বাইর থেকেও নিয়ে আসা হয়েছে কিছু দুর্লভ প্রাণী।

এসব প্রাণীকে খুব সযত্নেই সংরক্ষণ করা হয়েছে জাদুঘরে। এখানে কিছু প্রাণীকে শুকনো অবস্থায় মমি করে আবার কোনোটিকে ফরমালিনে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। স্বচ্ছ কাঁচের বাক্স ও জারে সারিভাবে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে তাদের। জাদুঘরের দেয়ালে ফ্রেমে বাঁধা রয়েছে বিভাগের শিক্ষকের তোলা বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ছবি। এছাড়াও শুধু রাজশাহী নগর ও সংলগ্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত ৯৬ প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে।

জাদুঘর হলেও কক্ষটির একদিকে টেবিল-চেয়ার ও রাসায়নিক পরীক্ষার সামগ্রীও রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি বিভাগের ব্যবহারিক ও গবেষণার কাজ করা হয় এখানে।

মিউজিয়াম অ্যাটেনডেন্ট কেতাব আলী জাগো নিউজকে বলেন, দেখে জীবন্ত মনে হলেও এই প্রাণীগুলোকে মূলত রাসায়নিক দিয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে জাদুঘরটিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষিত আছে। যা বাংলাদেশের অন্য কোনো প্রাণিবিদ্যা জাদুঘরে নেই। জাদুঘরটি এতটাই সমৃদ্ধ যে এটিকে বাংলাদেশে প্রাণিবিদ্যার ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় জাদুঘর বলা হয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, বিচিত্র প্রজাতির প্রাণীর দেহ সংরক্ষণের জন্য মিলছে না পর্যাপ্ত ফরমালিন। এছাড়া প্রাণী সংরক্ষণের জন্য নেই কোনো দক্ষ ট্যাক্সিডার্মিস্ট। পাশাপাশি এ বিচিত্র প্রজাতির প্রাণীগুলো প্রদর্শনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এ জাদুঘর শুক্র ও শনিবার ছাড়া বাকি পাঁচদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকে। জাদুঘরে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু সমৃদ্ধ এই জাদুঘরটি রয়ে গেছে লোক চক্ষুর অন্তরালে। জাদুঘরটি সম্পর্কে দেশের অনেক গবেষকই জানেন না। শুধু তাই নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছেও এটি রয়েছে অজানা।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুব হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিভাগের এ মিউজিয়ামের দেশব্যাপী খ্যাতি আছে। বিভিন্ন সময় অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা এ মিউজিয়াম দেখতে আসেন। একাডেমিক কার্যক্রম চলাকালে শিক্ষার্থীরা এসে দেখতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরই মিউজিয়ামে নির্দিষ্ট বাজেট আসে। সেখান থেকে মিউজিয়াম সংক্রান্ত নানা উপাদান কেনা হয়। তবে আমাদের জায়গার সংকট রয়েছে।

রাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগে চোখ ধাঁধানো সব প্রাণীর সমাহার

মনির হোসেন মাহিন , বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক, রাবি

সংরক্ষণ করা হয়েছে বিভিন্নি প্রজাতির প্রাণী

আলো-ছায়ায় ঘেরা থমথমে পরিবেশ। ভেতরে প্রবেশ করতেই সমানে বিশাল এক অজগর, মনে হচ্ছে গাছ থেকে নেমে এসে এখনই গিলে খাবে দর্শনার্থীদের। পেখম মেলা রঙিন পাখার ময়ূর, সামনেই ফণা তোলা পেঁচানো এক বিষধর সাপ। তার পাশেই বিশাল দেহের এক কুমির। পাশাপাশি রয়েছে বনের রাজা সিংহ। এছাড়া নানা প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, কোরালের সঙ্গে শঙ্খ, ঝিনুক, শামুখসহ চোখ ধাঁধানো সব প্রাণীর সমাহার। দেখে মনে হবে এ যেন এক বৈচিত্র্যময় প্রাণীর রহস্যপুরী।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলায় প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এক বিশাল কক্ষজুড়ে জাদুঘরটি। ১৯৭২ সালে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রয়াত শিক্ষক মুস্তাফিজুর রহমানের উদ্যোগে জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়। তার নামানুসারেই এটির নাম রাখা হয়েছে ‘অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান মেমোরিয়াল মিউজিয়াম’।

এ জাদুঘরে একইসঙ্গে দেখা মিলবে নানা প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায়সহ এক হাজার ৫৪৩টি প্রাণীর প্রক্রিয়াজাত দেহ। এসব প্রাণীর পাশাপাশি ১৪২টি ফসিলও রয়েছে এ জাদুঘরে, যা বর্তমানে দুর্লভ। সরীসৃপ, পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণীর পাশাপাশি রয়েছে নানা জাতের সামুদ্রিক মাছ, বিরল প্রজাতির জীবন্ত ফসিল, পেট্রোমাইজন ও মেক্রিনসহ ১৯ প্রজাতির ৩৩টি কোরাল এবং ৪৫ প্রকার মলাস্কার সেল।

শুধু বন্য ও গৃহপালিত পশু নয়, দুটি মানবকঙ্কালও রয়েছে এখানে। একটি পুরুষের আর অপরটি নারীর। আরও আছে হাতি, ঘোড়া, কুমিরের কঙ্কাল, শুশুক ও ডলফিনের মমি। ছোট ছোট কীটপতঙ্গ থেকে শুরু করে সজারু, বনরুই, বিভিন্ন প্রজাতির বিড়াল, মাছরাঙা, মিঠাপানির মাছ, সামুদ্রিক মাছ, কোরাল (প্রবাল) এমনকি মানবভ্রুণও। মলাস্কা, পরিফেরা, নিডারিয়া, কর্ডাটা, আর্থ্রোপোডা, নেমাটোডাসহ প্রায় সব পর্বের বিচিত্র রকমের প্রাণীর সমাহার জাদুঘরটিতে। শুধু বাংলাদেশেরই নয়, দেশের বাইর থেকেও নিয়ে আসা হয়েছে কিছু দুর্লভ প্রাণী।

এসব প্রাণীকে খুব সযত্নেই সংরক্ষণ করা হয়েছে জাদুঘরে। এখানে কিছু প্রাণীকে শুকনো অবস্থায় মমি করে আবার কোনোটিকে ফরমালিনে ডুবিয়ে সংরক্ষণ করা হয়েছে। স্বচ্ছ কাঁচের বাক্স ও জারে সারিভাবে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে তাদের। জাদুঘরের দেয়ালে ফ্রেমে বাঁধা রয়েছে বিভাগের শিক্ষকের তোলা বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ছবি। এছাড়াও শুধু রাজশাহী নগর ও সংলগ্ন এলাকা থেকে এ পর্যন্ত ৯৬ প্রজাতির মাছ সংগ্রহ করা হয়েছে।

জাদুঘর হলেও কক্ষটির একদিকে টেবিল-চেয়ার ও রাসায়নিক পরীক্ষার সামগ্রীও রয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি বিভাগের ব্যবহারিক ও গবেষণার কাজ করা হয় এখানে।

মিউজিয়াম অ্যাটেনডেন্ট কেতাব আলী জাগো নিউজকে বলেন, দেখে জীবন্ত মনে হলেও এই প্রাণীগুলোকে মূলত রাসায়নিক দিয়ে রাখা হয়েছে। বর্তমানে জাদুঘরটিতে প্রায় পাঁচ শতাধিক প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষিত আছে। যা বাংলাদেশের অন্য কোনো প্রাণিবিদ্যা জাদুঘরে নেই। জাদুঘরটি এতটাই সমৃদ্ধ যে এটিকে বাংলাদেশে প্রাণিবিদ্যার ক্ষেত্রে অদ্বিতীয় জাদুঘর বলা হয়ে থাকে।

তিনি আরও বলেন, বিচিত্র প্রজাতির প্রাণীর দেহ সংরক্ষণের জন্য মিলছে না পর্যাপ্ত ফরমালিন। এছাড়া প্রাণী সংরক্ষণের জন্য নেই কোনো দক্ষ ট্যাক্সিডার্মিস্ট। পাশাপাশি এ বিচিত্র প্রজাতির প্রাণীগুলো প্রদর্শনের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা নেই।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের এ জাদুঘর শুক্র ও শনিবার ছাড়া বাকি পাঁচদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত খোলা থাকে। জাদুঘরে দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। কিন্তু সমৃদ্ধ এই জাদুঘরটি রয়ে গেছে লোক চক্ষুর অন্তরালে। জাদুঘরটি সম্পর্কে দেশের অনেক গবেষকই জানেন না। শুধু তাই নয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছেও এটি রয়েছে অজানা।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মাহবুব হাসান জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিভাগের এ মিউজিয়ামের দেশব্যাপী খ্যাতি আছে। বিভিন্ন সময় অন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীরা এ মিউজিয়াম দেখতে আসেন। একাডেমিক কার্যক্রম চলাকালে শিক্ষার্থীরা এসে দেখতে পারেন।

তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরই মিউজিয়ামে নির্দিষ্ট বাজেট আসে। সেখান থেকে মিউজিয়াম সংক্রান্ত নানা উপাদান কেনা হয়। তবে আমাদের জায়গার সংকট রয়েছে।