কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা

সম্পদের হিসাব জমা বাধ্যতামূলক হচ্ছে

সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম চালু হবে * আয়কর রিটার্ন স্লিপ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক

আমিরুল ইসলাম

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সরকারি কাজে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের অর্জিত সম্পদের বিবরণ দাখিল বাধ্যতামূলক হচ্ছে।

বছর শেষে যে রিটার্ন দেওয়া হয় তাই সম্পদ বিবরণী হিসাবে বিবেচিত হবে। সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে হিসাব নেওয়া হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমানে প্রতিবছর যে আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন, তার স্লিপ সম্পদ বিবরণীতে যুক্ত হচ্ছে।

এদিকে ১৯৭৯ সালের গণকর্মচারী আচরণ বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে।

এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা সম্পদ বিবরণী বা আয়কর রিটার্নের স্লিপ নিজ নিজ মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর-পরিদপ্তরে জমা দেবেন।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিবরণী দাখিলে দুটি পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা ও তদন্ত) ড. মো. ফরিদ উদ্দিন আহমদ সোমবার নিজ দপ্তরে যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে দুই পদ্ধতিতে কাজ করছি।

একটি হচ্ছে সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম। এ পদ্ধতির কাজ কী হবে তা নির্ধারণে দশ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি করেছি। কমিটি কাজ করছে।

অপরটি হচ্ছে গণকর্মচারী আচরণ বিধিমালা সংশোধন। সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ আলোকে আমরা একটি আচরণ বিধিমালা তৈরির কাজ করছি।

যা সংশোধিত সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ২০২২ নামে চূড়ান্ত হবে। সেখানে বার্ষিক আয়কর রিটার্ন সম্পদের হিসাব বিবরণী হিসাবে গণ্য হবে বা আরও নতুন কিছু বিধিবিধান যুক্ত হবে।

তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সরকারি কাজে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের সম্পদের হিসাব জমার বিষয়টি এর আওতায় আনা হবে।

অপরদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে বিধিমালাটি কিছু সংশোধন সাপেক্ষে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।

বিধিমালায় কোনো অসংগতি আছে কি-না, তা যাচাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে আসার পরই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে।

সূত্র জানায়, গত ৯ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগের সভা হয়।

সেখানে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বলা হয়, সরকারি চাকরিতে যোগদানের সময় এবং প্রতি পাঁচ বছর অন্তর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে।

কিন্তু নিয়মিত এ বিধানাবলি অনুসরণ করে হিসাব দাখিলের প্রশাসনিক চর্চা নেই। সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করেছে।

এ অচল অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ২০২২-এ আয়কর রিটার্ন স্লিপ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

অর্থাৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়কর রিটার্ন স্লিপ নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগে জমা নেবে। ওই সব মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ অধিদপ্তর, পরিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্র্তৃপক্ষের কাছে স্লিপ জমা দেবেন।

যখন যার সম্পদ যাচাই করা দরকার তখন আয়কর রিটার্নের স্লিপ দেখিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে বিস্তারিত সম্পদ বিবরণী সংগ্রহ করা হবে।

এছাড়া সরকারি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে। অর্থাৎ ঠিকাদার, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, নির্মাতা, পরিবহণ ব্যবসায়ী, প্রযুক্তি ব্যবসায়ী এবং জনবল সরবরাহকারীসহ (আউটসোর্সিং) সব ব্যবসায়ীকে সম্পদের হিসাবে জমা দিতে হবে। সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের মাধ্যমেই কাজটি হবে।

সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা চালুর বিষয়ে প্রথম পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী সিস্টেম বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বিআরটিএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

পরে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শুধু যুক্ত নয়, বরং সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম নেতৃত্ব দিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসনের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে। এতে সদস্য হিসাবে আছেন, অতিরিক্ত সচিব ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও প্রশিক্ষণ, অতিরিক্ত সচিব বিধি, অতিরিক্ত সচিব শৃঙ্খলা ও তদন্ত, যুগ্মসচিব পিএসিসি, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিআরটিএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, সিস্টেম এনালিস্ট পিএসিসি। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে উপসচিব শৃঙ্খলা-৪কে। কমিটির সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনার সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ। তিনি আরও বলেন, আগে কমিটি সিস্টেম ডেভেলপ করুক, তারপর এ বিষয়ে কথা বলব।

কমিটির অপর এক সদস্য জানান, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ প্রায় ৪৩ বছর আগের বিধান। এটি এখন অনুপযোগী। সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা হবে ডিজিটালি। আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি। আমরা নতুন কিছু করতে পারলে ১৯৭৯ আচরণ বিধিমালা বাতিলের সুপারিশ করব।

তিনি আরও বলেন, সম্পদ হিসাব বিবরণীর এমন একটি কাঠামো দাঁড় করাতে চাই যা সম্পূর্ণ ডিজিটালি নিয়ন্ত্রিত হবে। সরকারের যখন দরকার হবে তখনই যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যবসায়ীর প্রোফাইলে ঢুকে তার সম্পদ বিবরণী যাচাই করতে পারবেন। যে কারণে আমরা অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে কাজে সম্পৃক্ত করেছি। প্রয়োজনে আরও মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ কাজে যুক্ত হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছেন। আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ অনুসারে ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী জমা দেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু বিধানাবলির আলোকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে প্রশাসনিক চর্চা হয়নি। বর্তমান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, বিষয়টি আমি দেখব। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে তিনবার চিঠি দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে সম্পদের হিসাব চাইতে বলা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা

সম্পদের হিসাব জমা বাধ্যতামূলক হচ্ছে

সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম চালু হবে * আয়কর রিটার্ন স্লিপ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক

আমিরুল ইসলাম

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেওয়ার বিষয়ে নড়েচড়ে বসেছে সরকার। সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সরকারি কাজে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের অর্জিত সম্পদের বিবরণ দাখিল বাধ্যতামূলক হচ্ছে।

বছর শেষে যে রিটার্ন দেওয়া হয় তাই সম্পদ বিবরণী হিসাবে বিবেচিত হবে। সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে হিসাব নেওয়া হবে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বর্তমানে প্রতিবছর যে আয়কর রিটার্ন জমা দিচ্ছেন, তার স্লিপ সম্পদ বিবরণীতে যুক্ত হচ্ছে।

এদিকে ১৯৭৯ সালের গণকর্মচারী আচরণ বিধিমালা সংশোধনের কাজ চলছে। সংশোধিত বিধিমালা অনুযায়ী প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে।

এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তা এবং তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা সম্পদ বিবরণী বা আয়কর রিটার্নের স্লিপ নিজ নিজ মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর-পরিদপ্তরে জমা দেবেন।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিবরণী দাখিলে দুটি পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (শৃঙ্খলা ও তদন্ত) ড. মো. ফরিদ উদ্দিন আহমদ সোমবার নিজ দপ্তরে যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে দুই পদ্ধতিতে কাজ করছি।

একটি হচ্ছে সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম। এ পদ্ধতির কাজ কী হবে তা নির্ধারণে দশ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি করেছি। কমিটি কাজ করছে।

অপরটি হচ্ছে গণকর্মচারী আচরণ বিধিমালা সংশোধন। সরকারি চাকরি আইন ২০১৮ আলোকে আমরা একটি আচরণ বিধিমালা তৈরির কাজ করছি।

যা সংশোধিত সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ২০২২ নামে চূড়ান্ত হবে। সেখানে বার্ষিক আয়কর রিটার্ন সম্পদের হিসাব বিবরণী হিসাবে গণ্য হবে বা আরও নতুন কিছু বিধিবিধান যুক্ত হবে।

তিনি বলেন, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সরকারি কাজে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের সম্পদের হিসাব জমার বিষয়টি এর আওতায় আনা হবে।

অপরদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগের উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা জানান, ইতোমধ্যে বিধিমালাটি কিছু সংশোধন সাপেক্ষে প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি অনুমোদন দিয়েছে।

বিধিমালায় কোনো অসংগতি আছে কি-না, তা যাচাইয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় থেকে ভেটিং হয়ে আসার পরই এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হবে।

সূত্র জানায়, গত ৯ নভেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শৃঙ্খলা ও তদন্ত অনুবিভাগের সভা হয়।

সেখানে সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ নিয়ে আলোচনা হয়। এ সময় বলা হয়, সরকারি চাকরিতে যোগদানের সময় এবং প্রতি পাঁচ বছর অন্তর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধির হিসাব দাখিলের বাধ্যবাধকতা আছে।

কিন্তু নিয়মিত এ বিধানাবলি অনুসরণ করে হিসাব দাখিলের প্রশাসনিক চর্চা নেই। সভায় উপস্থিত এক কর্মকর্তা বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে অনুধাবন করেছে।

এ অচল অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ২০২২-এ আয়কর রিটার্ন স্লিপ জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে।

অর্থাৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আয়কর রিটার্ন স্লিপ নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয় ও বিভাগে জমা নেবে। ওই সব মন্ত্রণালয় এবং অধীনস্থ অধিদপ্তর, পরিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্র্তৃপক্ষের কাছে স্লিপ জমা দেবেন।

যখন যার সম্পদ যাচাই করা দরকার তখন আয়কর রিটার্নের স্লিপ দেখিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে বিস্তারিত সম্পদ বিবরণী সংগ্রহ করা হবে।

এছাড়া সরকারি কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছোট-বড় সব ব্যবসায়ীকে সম্পদের হিসাব দিতে হবে। অর্থাৎ ঠিকাদার, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, নির্মাতা, পরিবহণ ব্যবসায়ী, প্রযুক্তি ব্যবসায়ী এবং জনবল সরবরাহকারীসহ (আউটসোর্সিং) সব ব্যবসায়ীকে সম্পদের হিসাবে জমা দিতে হবে। সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের মাধ্যমেই কাজটি হবে।

সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা চালুর বিষয়ে প্রথম পরিকল্পনা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী সিস্টেম বাস্তবায়নে কাজ শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বিআরটিএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।

পরে এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। শুধু যুক্ত নয়, বরং সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা সিস্টেম নেতৃত্ব দিচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব প্রশাসনের নেতৃত্বে কমিটি করা হয়েছে। এতে সদস্য হিসাবে আছেন, অতিরিক্ত সচিব ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও প্রশিক্ষণ, অতিরিক্ত সচিব বিধি, অতিরিক্ত সচিব শৃঙ্খলা ও তদন্ত, যুগ্মসচিব পিএসিসি, দুর্নীতি দমন কমিশন, বিআরটিএ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, আইসিটি বিভাগ, আইন ও বিচার বিভাগ, সিস্টেম এনালিস্ট পিএসিসি। কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে উপসচিব শৃঙ্খলা-৪কে। কমিটির সেন্ট্রাল সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনার সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে বলে জানান অতিরিক্ত সচিব ড. ফরিদ উদ্দিন আহমদ। তিনি আরও বলেন, আগে কমিটি সিস্টেম ডেভেলপ করুক, তারপর এ বিষয়ে কথা বলব।

কমিটির অপর এক সদস্য জানান, সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ প্রায় ৪৩ বছর আগের বিধান। এটি এখন অনুপযোগী। সম্পদ বিবরণী ব্যবস্থাপনা হবে ডিজিটালি। আমরা সেটি নিয়ে কাজ করছি। আমরা নতুন কিছু করতে পারলে ১৯৭৯ আচরণ বিধিমালা বাতিলের সুপারিশ করব।

তিনি আরও বলেন, সম্পদ হিসাব বিবরণীর এমন একটি কাঠামো দাঁড় করাতে চাই যা সম্পূর্ণ ডিজিটালি নিয়ন্ত্রিত হবে। সরকারের যখন দরকার হবে তখনই যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ব্যবসায়ীর প্রোফাইলে ঢুকে তার সম্পদ বিবরণী যাচাই করতে পারবেন। যে কারণে আমরা অনেকগুলো মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে কাজে সম্পৃক্ত করেছি। প্রয়োজনে আরও মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এ কাজে যুক্ত হবে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজ নিজ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে সম্পদের হিসাব বিবরণী জমা দিয়েছেন। আচরণ বিধিমালা ১৯৭৯ অনুসারে ২০১৩ এবং ২০১৮ সালে সম্পদ হ্রাস-বৃদ্ধির বিবরণী জমা দেওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু বিধানাবলির আলোকে সম্পদ বিবরণী দাখিলে প্রশাসনিক চর্চা হয়নি। বর্তমান জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের সময় সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, বিষয়টি আমি দেখব। ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে তিনবার চিঠি দিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে সম্পদের হিসাব চাইতে বলা হয়েছে।