কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সিনিয়র পরিচয়ে ব্যাচমেটকে র‍্যাগিং, মারধরের অভিযোগ

একা তালুকদার
সিনিয়র পরিচয়ে ব্যাচমেটকে র‍্যাগিং ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। 

‘সিনিয়র পরিচয়ে র‍্যাগিং ও মারধরের’ শিকার হওয়ার অভিযোগ দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাজিদুর রহমান। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর এই অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

তিনি তার অভিযোগপত্রে বলেন, ‘গতকাল (১০, জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমি আমার বান্ধবীকে নিয়ে প্রকৌশল অনুষদের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতেছিলাম। এর কিছুক্ষণ পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম আবর্তন ও দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শাহীন (লোক প্রশাসন বিভাগ) এবং বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ওবায়দুল (লোক প্রশাসন বিভাগ) আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর নিজেরা সিনিয়র সেজে আমাকে র‍্যাগিং দেয়ার এক পর্যায়ে গালাগালি করে মারধর করার জন্য এগিয়ে আসে শাহীন। একসময় সিনিয়র-সুলভ আচরণের মাধ্যমে আমাকে হাসির পাত্র বানিয়ে নিজেরা হাসাহাসি করতে থাকে। শেষে তাঁরা বলে আমরা ১৬ আবর্তনের এবং তুই আমাদের সপ্তম শিকার। এভাবে হেনস্তার এক পর্যায়ে আমি চলে আসি। এর কিছুক্ষণ পর আমি আমার বন্ধু জিসানের খোঁজে এখানে আবার যাই। ওখানে জিসানকে খুঁজে না পেয়ে মসজিদের দিক দিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আসি। এসময় আমার পিছুপিছু এসে শাহিন ও ওবায়দুল রাস্তা আটকায়। ইতিমধ্যে সেখানে এসে উপস্থিত হয় দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইপেল ও জিসান। এসময় ইপেল আমাকে বলে, মেয়ে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করোস কোন সাহসে? এইখানে কি করস? এভাবে কথা বলার এক পর্যায়ে ইপেল ক্ষিপ্ত হয়ে আমার গায়ে আঘাত করে। একই সময় পাশে থাকা শাহীন ও ওবায়দুল সাথে সাথেই এলোপাতাড়ি কিল ঘুসি মারতে থাকে।’

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা জিসান (এমসিজে বিভাগ) ও সোহান (লোক প্রশাসন) ওদের থামাতে চেষ্টা করলেও, ওরা থামেনি। এভাবে প্রায় পাঁচ মিনিট আমার উপর কিলঘুষি চলতে থাকে। এরপর লোকজন জড়ো হলে তাঁরা স্থান ত্যাগ করে। তিন জনের এমন পশুর মতো আক্রমনে আমার পরিহিত শার্ট ছিঁড়ে যায় এবং শরীরের বেশ কিছু জায়গায় জখম (মাথা, কপাল, পিঠ) হয়। পরবর্তীতে আমি বন্ধুদের সহযোগিতায় ফার্মেসিতে যাই এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা রঙিন প্রাঙ্গণে এসে যেখানে আমরা স্বাধীন জীবন পরিচালনা করব, সেখানে এইরকম একটা অঘটনের সাক্ষী হবো তা ভাবতেই কেমন জানি খারাপ লাগছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রাক্কালে আমি জানতাম এই ক্যাম্পাস পুরোপুরি র‍্যাগিংমুক্ত এবং শতভাগ নিরাপদ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একই আবর্তনের কাছ থেকে এমন অপ্রীতিকর পরিবেশের সম্মুখীন হয়ে সত্যিই আমি ভীতসন্ত্রস্ত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই প্রশাসনের নিকট আমার আর্জি এই যে, ঘটনার সাথে অভিযুক্তদের চূড়ান্ত শাস্তি প্রদান ও আমার পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা প্রদান করে একটা সুস্থ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি আমার মতো আর কেউ যেন এমন হেনস্তার শিকার না হয়, তার সেটার নিশ্চয়তা প্রদান করে আমার মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবন দান করবেন।’

প্রত্যক্ষদর্শী সোহানুর রহমান বলেন, আমি ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সাজিদুরকে মারতে দেখি। তখন আমি ও জিসান মারামারি থামানোর চেষ্টা করি।

অভিযুক্ত ওবায়দুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা যেভাবে প্রকৌশল অনুষদের সামনে দাঁড়িয়েছিলো, সেটি মানানসই নয়। তাই আমরা তাকে ডাক দিয়ে সামনে কথা বলি। র‍্যাগিংয়ের মতো কিছু ঘটে নি, কারণ আমরা তাকে দিয়ে কিছু করাইনি। উচ্চস্বরে কথা বলাটা র‍্যাগ দেওয়া না।

মারামারির অভিযোগের বিষয় তিনি বলেন, আমরা পরবর্তীতে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আবার তার সাথে কথা বলি। তখন আমাদের সাথে ইপেল ছিল। ইপেলের সাথে সাজিদের কথা কাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে কলার ধরা থেকে হাতাহাতি হয়েছে।

মেহেদী হাসান শাহিন এই বিষয়ে বলেন, আমরা (শাহিন ও ওবায়দুল্লাহ) তাদের দুজনকেই অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখি ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির দিকে। তাদের এসব করতে মানা করে আমরা চলে যাই। পরে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সাজিদের সাথে আমাদের দেখা হলে আমরা সাজিদ এই বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে কথাবার্তা বলে৷ একপর্যায়ে জিসান ও ইপেল আসলে ইপেলের জামার কলা ধরে ও মুখে ঘুষি দেয়।’

মারামারির বিষয়ে মোহাম্মদ ইপেল জানান, ‘আমি আর জিসান পরে ক্যাফটেরিয়ার সামনে গেলে সে (সাজিদ) আমার সাথে উচ্চবাচ্য করে৷ আমাকে ঘুষিও দেয়৷ এই সময় শাহিনসহ বাকিরা আমাদের আলাদা করে নেয়। যেহেতু নিজেদের ব্যাচের মধ্যেই ভুল বোঝাবুঝি ছিল তাই মারামারির বিষয়ে কাউকে অভিযোগ করিনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের একটি মিটিং ডেকে আমরা দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।’

ইবিহো/এসএস

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

সিনিয়র পরিচয়ে ব্যাচমেটকে র‍্যাগিং, মারধরের অভিযোগ

একা তালুকদার
সিনিয়র পরিচয়ে ব্যাচমেটকে র‍্যাগিং ও মারধরের ঘটনা ঘটেছে। 

‘সিনিয়র পরিচয়ে র‍্যাগিং ও মারধরের’ শিকার হওয়ার অভিযোগ দিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাজিদুর রহমান। মঙ্গলবার (১১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর এই অভিযোগ দেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

তিনি তার অভিযোগপত্রে বলেন, ‘গতকাল (১০, জুলাই) সন্ধ্যা ৬টার দিকে আমি আমার বান্ধবীকে নিয়ে প্রকৌশল অনুষদের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে কথা বলতেছিলাম। এর কিছুক্ষণ পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম আবর্তন ও দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শাহীন (লোক প্রশাসন বিভাগ) এবং বঙ্গবন্ধু হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ওবায়দুল (লোক প্রশাসন বিভাগ) আমাকে ডেকে নিয়ে যায়। এরপর নিজেরা সিনিয়র সেজে আমাকে র‍্যাগিং দেয়ার এক পর্যায়ে গালাগালি করে মারধর করার জন্য এগিয়ে আসে শাহীন। একসময় সিনিয়র-সুলভ আচরণের মাধ্যমে আমাকে হাসির পাত্র বানিয়ে নিজেরা হাসাহাসি করতে থাকে। শেষে তাঁরা বলে আমরা ১৬ আবর্তনের এবং তুই আমাদের সপ্তম শিকার। এভাবে হেনস্তার এক পর্যায়ে আমি চলে আসি। এর কিছুক্ষণ পর আমি আমার বন্ধু জিসানের খোঁজে এখানে আবার যাই। ওখানে জিসানকে খুঁজে না পেয়ে মসজিদের দিক দিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আসি। এসময় আমার পিছুপিছু এসে শাহিন ও ওবায়দুল রাস্তা আটকায়। ইতিমধ্যে সেখানে এসে উপস্থিত হয় দত্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইপেল ও জিসান। এসময় ইপেল আমাকে বলে, মেয়ে নিয়ে ক্যাম্পাসে ঘুরাঘুরি করোস কোন সাহসে? এইখানে কি করস? এভাবে কথা বলার এক পর্যায়ে ইপেল ক্ষিপ্ত হয়ে আমার গায়ে আঘাত করে। একই সময় পাশে থাকা শাহীন ও ওবায়দুল সাথে সাথেই এলোপাতাড়ি কিল ঘুসি মারতে থাকে।’

অভিযোগপত্রে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা জিসান (এমসিজে বিভাগ) ও সোহান (লোক প্রশাসন) ওদের থামাতে চেষ্টা করলেও, ওরা থামেনি। এভাবে প্রায় পাঁচ মিনিট আমার উপর কিলঘুষি চলতে থাকে। এরপর লোকজন জড়ো হলে তাঁরা স্থান ত্যাগ করে। তিন জনের এমন পশুর মতো আক্রমনে আমার পরিহিত শার্ট ছিঁড়ে যায় এবং শরীরের বেশ কিছু জায়গায় জখম (মাথা, কপাল, পিঠ) হয়। পরবর্তীতে আমি বন্ধুদের সহযোগিতায় ফার্মেসিতে যাই এবং প্রাথমিক চিকিৎসা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা রঙিন প্রাঙ্গণে এসে যেখানে আমরা স্বাধীন জীবন পরিচালনা করব, সেখানে এইরকম একটা অঘটনের সাক্ষী হবো তা ভাবতেই কেমন জানি খারাপ লাগছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রাক্কালে আমি জানতাম এই ক্যাম্পাস পুরোপুরি র‍্যাগিংমুক্ত এবং শতভাগ নিরাপদ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের একই আবর্তনের কাছ থেকে এমন অপ্রীতিকর পরিবেশের সম্মুখীন হয়ে সত্যিই আমি ভীতসন্ত্রস্ত ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। তাই প্রশাসনের নিকট আমার আর্জি এই যে, ঘটনার সাথে অভিযুক্তদের চূড়ান্ত শাস্তি প্রদান ও আমার পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তা প্রদান করে একটা সুস্থ বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি আমার মতো আর কেউ যেন এমন হেনস্তার শিকার না হয়, তার সেটার নিশ্চয়তা প্রদান করে আমার মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক জীবন দান করবেন।’

প্রত্যক্ষদর্শী সোহানুর রহমান বলেন, আমি ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সাজিদুরকে মারতে দেখি। তখন আমি ও জিসান মারামারি থামানোর চেষ্টা করি।

অভিযুক্ত ওবায়দুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী তারা যেভাবে প্রকৌশল অনুষদের সামনে দাঁড়িয়েছিলো, সেটি মানানসই নয়। তাই আমরা তাকে ডাক দিয়ে সামনে কথা বলি। র‍্যাগিংয়ের মতো কিছু ঘটে নি, কারণ আমরা তাকে দিয়ে কিছু করাইনি। উচ্চস্বরে কথা বলাটা র‍্যাগ দেওয়া না।

মারামারির অভিযোগের বিষয় তিনি বলেন, আমরা পরবর্তীতে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আবার তার সাথে কথা বলি। তখন আমাদের সাথে ইপেল ছিল। ইপেলের সাথে সাজিদের কথা কাটাকাটি হয় এবং এক পর্যায়ে কলার ধরা থেকে হাতাহাতি হয়েছে।

মেহেদী হাসান শাহিন এই বিষয়ে বলেন, আমরা (শাহিন ও ওবায়দুল্লাহ) তাদের দুজনকেই অন্তরঙ্গ অবস্থায় দেখি ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির দিকে। তাদের এসব করতে মানা করে আমরা চলে যাই। পরে ক্যাফেটেরিয়ার সামনে সাজিদের সাথে আমাদের দেখা হলে আমরা সাজিদ এই বিষয় নিয়ে আমাদের সাথে কথাবার্তা বলে৷ একপর্যায়ে জিসান ও ইপেল আসলে ইপেলের জামার কলা ধরে ও মুখে ঘুষি দেয়।’

মারামারির বিষয়ে মোহাম্মদ ইপেল জানান, ‘আমি আর জিসান পরে ক্যাফটেরিয়ার সামনে গেলে সে (সাজিদ) আমার সাথে উচ্চবাচ্য করে৷ আমাকে ঘুষিও দেয়৷ এই সময় শাহিনসহ বাকিরা আমাদের আলাদা করে নেয়। যেহেতু নিজেদের ব্যাচের মধ্যেই ভুল বোঝাবুঝি ছিল তাই মারামারির বিষয়ে কাউকে অভিযোগ করিনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের একটি মিটিং ডেকে আমরা দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।’

ইবিহো/এসএস