স্কুলে টানা বসে থাকা, ১৬.২% শিক্ষার্থী উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বসে থাকায় ১৬.২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ৮২৩ জন শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্ব শিশু দিবস-২০২২ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের আয়োজনে ‘শিশুস্বাস্থ্য, বিকাশ ও সুরক্ষা’ শীর্ষক আলোচনাসভায় শিশুদের নিয়ে বিভাগটির গত পাঁচ বছরের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

পাঁচটি বিষয়ের ওপর গবেষণাটি করা হয়।এর মধ্যে রয়েছে শিশু অধিকার ও সুরক্ষা, অনলাইনে শিশু নির্যাতন, শৈশবের বিরূপ অভিজ্ঞতা ও পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা, শিশু নির্যাতন বন্ধে মিডিয়ার ভূমিকা এবং অসংক্রামক রোগ শিশু বিকাশের অন্তরায়।

ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত ফল ও শাকসবজি খাচ্ছে না। ৮৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরী ইন্টারনেট ব্যবহার করছে আর অনলাইনে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ৫৬ শতাংশ কিশোর এবং ৬৪ শতাংশ কিশোরী।

দেশের গ্রামীণ এলাকায় এক হাজার ৪১৬ জন (১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী) কিশোর-কিশোরীর ওপর পরিচালিত গবেষণার অরেকটি অংশে দেখা গেছে, বাড়িতে, স্কুলে ও কর্মক্ষেত্রে ৯৯ শতাংশ শারীরিক নির্যাতন, ৯৭ শতাংশ মানসিক নির্যাতন এবং ৭৮ শতাংশ অবহেলার শিকার হয়েছে। ঢাকা শহরের বস্তি এলাকার ৩৮৪ জন মা-বাবার সাক্ষাৎকার নিয়ে গবেষণার অরেকটি অংশে দেখা গেছে, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের (সাত থেকে ১৭ বছর বয়সী) ৮৬.১ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৯৪.৭ শতাংশ আর অবহেলার শিকার হয়েছে ২৯.৯ শতাংশ।

সিরাজগঞ্জ জেলার চারটি বাজারে ৩৯৮ জন কর্মজীবী শিশুর ওপর পরিচালিত গবেষণার আরেকাংশে দেখা গেছে, ১০০ শতাংশ শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আর অবহেলার শিকার হয়েছে ৮২.৭ শতাংশ শিশু।

২০১৭ সালে পরিচালিত গবেষণার অন্য অংশে এক হাজার ৪১৮ জন মা-বাবার সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে, ৯২ শতাংশ শিশু গবেষণা-পূর্ববর্তী এক বছরে কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, আর ৯৪ শতাংশ শিশু তাদের শৈশবের যেকোনো সময় মা-বাবার কাছে নিয়ম-কানুন শিখতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

ঢাকা শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হওয়া অটিজমে আক্রান্ত ৪৫ জন শিশুর মায়েদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন থেকে ৯ বছর বয়েসী শিশুর প্রত্যেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৮.৯ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

অসংক্রামক রোগ শিশু বিকাশের অন্তরায় : আলোচনায় অংশ নিয়ে ডা. মো. মারুফ হক খান বলেন, ‘নির্যাতনের ফলে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি অসংক্রামক রোগের প্রবণতা এদের সুস্বাস্থ্যর বিষয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। আমাদের গবেষণার তথ্যানুসারে, ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়েসী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ ১৬.২ শতাংশ। ছেলেদের মধ্যে এই প্রকোপ বেশি। কারণ হিসেবে পাওয়া গেছে—টানা দীর্ঘ সময় বসে থাকা, স্থূলতা এবং শারীরিক পরিশ্রম না করা। ’

করোনাকালে ২০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন মাত্রার অনিদ্রায় আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ১৮ শতাংশ বিষণ্নতা, ১৪ শতাংশ উদ্বেগ এবং ১৬ শতাংশ দুশ্চিন্তায় ভুগেছে।

রাজধানীর শহরতলির ৮২৩ জন শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত গবেষণায় আরো দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র একজন পরিমাণমতো ফলমূল ও শাক-সবজি খায়।

অনলাইনে শিশু নির্যাতন : ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম ইবনে তৌহিদ বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় অংশ নেওয়া শহর ও গ্রামের ২৬৫ জন কিশোরী এবং ১৯১ জন কিশোরের মধ্যে ৮৮ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশ কিশোর এবং ৬৪ শতাংশ কিশোরী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। শহরের শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের ঘটনা গ্রামীণ শিশুদের চেয়ে দেড় গুণ বেশি। ’

গ্রামীণ এলাকায় ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৪৬০ শিশুর ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৩ শতাংশ শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এই শিশুরা তিন ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ উত্পীড়ন, ৩৮ শতাংশ উপহাস এবং ২৬ শতাংশ গুজবের শিকার হয়েছে। অনলাইনে যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুদের অর্ধেক এসংক্রান্ত আইন সম্পর্কে অবগত নয়।

শৈশবের বিরূপ অভিজ্ঞতা এবং পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা : ডা. নীলিমা বর্মণ বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, শৈশবকালীন বিরূপ অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে মানসিক, আচরণগত ও শারীরিক বিকাশজনিত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একই সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদের রোগ ও মৃত্যুহার বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের প্রতি ১০ জনে একজন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। ’

ঢাকার তিনটি উপজেলার অংশ নেওয়া ২৩৪ জন বিবাহিত নারীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যেসব নারী শৈশবকালে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন বা অবহেলার শিকার হয়েছিলেন, বৈবাহিক জীবনে তাঁরা স্বামীর কাছে বেশি সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

শিশু নির্যাতন বন্ধে মিডিয়ার ভূমিকা : শিশু নির্যাতন বন্ধে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে শাবনাম আযিম বলেন, শিশু নির্যাতনের ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পরও দেশের সংবাদপত্রগুলো শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো যেভাবে প্রকাশ করে, তা নৈতিকতা বিবর্জিত। প্রিন্ট মিডিয়া বিষয়ভিত্তিক প্রতিবেদনের চেয়ে এপিসোডিক প্রতিবেদন বেশি প্রকাশ করে শিশুর বিকাশ, সুরক্ষা ও সুস্থতা সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করার সুযোগ হাতছাড়া করছে।

শিশু অধিকার ও সুরক্ষা : ডা. মারিয়াম সালওয়া বলেন, শিশু নির্যাতনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অসচেতনতা, বাড়িতে, স্কুলে ও কর্মক্ষেত্রে শিশু নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইনের অভাব শিশু নির্যাতন নির্মূলে বড় বাধা। স্কুলগুলোয় শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করতে ২০১১ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায়কে আইনে রূপান্তর করা দরকার। বাংলাদেশি শিশুদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারকে অবশ্যই জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য কাজী জেবুন্নেছা বেগম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

স্কুলে টানা বসে থাকা, ১৬.২% শিক্ষার্থী উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক

টানা পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে বসে থাকায় ১৬.২ শতাংশ কিশোর-কিশোরী উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ৮২৩ জন শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।

বিশ্ব শিশু দিবস-২০২২ উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের আয়োজনে ‘শিশুস্বাস্থ্য, বিকাশ ও সুরক্ষা’ শীর্ষক আলোচনাসভায় শিশুদের নিয়ে বিভাগটির গত পাঁচ বছরের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

পাঁচটি বিষয়ের ওপর গবেষণাটি করা হয়।এর মধ্যে রয়েছে শিশু অধিকার ও সুরক্ষা, অনলাইনে শিশু নির্যাতন, শৈশবের বিরূপ অভিজ্ঞতা ও পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা, শিশু নির্যাতন বন্ধে মিডিয়ার ভূমিকা এবং অসংক্রামক রোগ শিশু বিকাশের অন্তরায়।

ওই গবেষণায় দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ শিক্ষার্থী পর্যাপ্ত ফল ও শাকসবজি খাচ্ছে না। ৮৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরী ইন্টারনেট ব্যবহার করছে আর অনলাইনে যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে ৫৬ শতাংশ কিশোর এবং ৬৪ শতাংশ কিশোরী।

দেশের গ্রামীণ এলাকায় এক হাজার ৪১৬ জন (১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী) কিশোর-কিশোরীর ওপর পরিচালিত গবেষণার অরেকটি অংশে দেখা গেছে, বাড়িতে, স্কুলে ও কর্মক্ষেত্রে ৯৯ শতাংশ শারীরিক নির্যাতন, ৯৭ শতাংশ মানসিক নির্যাতন এবং ৭৮ শতাংশ অবহেলার শিকার হয়েছে। ঢাকা শহরের বস্তি এলাকার ৩৮৪ জন মা-বাবার সাক্ষাৎকার নিয়ে গবেষণার অরেকটি অংশে দেখা গেছে, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের (সাত থেকে ১৭ বছর বয়সী) ৮৬.১ শতাংশ শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে, মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৯৪.৭ শতাংশ আর অবহেলার শিকার হয়েছে ২৯.৯ শতাংশ।

সিরাজগঞ্জ জেলার চারটি বাজারে ৩৯৮ জন কর্মজীবী শিশুর ওপর পরিচালিত গবেষণার আরেকাংশে দেখা গেছে, ১০০ শতাংশ শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আর অবহেলার শিকার হয়েছে ৮২.৭ শতাংশ শিশু।

২০১৭ সালে পরিচালিত গবেষণার অন্য অংশে এক হাজার ৪১৮ জন মা-বাবার সাক্ষাৎকারে দেখা গেছে, ৯২ শতাংশ শিশু গবেষণা-পূর্ববর্তী এক বছরে কোনো না কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে, আর ৯৪ শতাংশ শিশু তাদের শৈশবের যেকোনো সময় মা-বাবার কাছে নিয়ম-কানুন শিখতে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

ঢাকা শহরের সরকারি হাসপাতালগুলোয় ভর্তি হওয়া অটিজমে আক্রান্ত ৪৫ জন শিশুর মায়েদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তিন থেকে ৯ বছর বয়েসী শিশুর প্রত্যেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এদের মধ্যে ৮.৯ শতাংশ শিশু কোনো না কোনো সময় যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

অসংক্রামক রোগ শিশু বিকাশের অন্তরায় : আলোচনায় অংশ নিয়ে ডা. মো. মারুফ হক খান বলেন, ‘নির্যাতনের ফলে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ার পাশাপাশি অসংক্রামক রোগের প্রবণতা এদের সুস্বাস্থ্যর বিষয়ে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। আমাদের গবেষণার তথ্যানুসারে, ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়েসী কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ ১৬.২ শতাংশ। ছেলেদের মধ্যে এই প্রকোপ বেশি। কারণ হিসেবে পাওয়া গেছে—টানা দীর্ঘ সময় বসে থাকা, স্থূলতা এবং শারীরিক পরিশ্রম না করা। ’

করোনাকালে ২০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন মাত্রার অনিদ্রায় আক্রান্ত হয়েছিল। এর মধ্যে ১৮ শতাংশ বিষণ্নতা, ১৪ শতাংশ উদ্বেগ এবং ১৬ শতাংশ দুশ্চিন্তায় ভুগেছে।

রাজধানীর শহরতলির ৮২৩ জন শিক্ষার্থীর ওপর পরিচালিত গবেষণায় আরো দেখা গেছে, প্রতি পাঁচজন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র একজন পরিমাণমতো ফলমূল ও শাক-সবজি খায়।

অনলাইনে শিশু নির্যাতন : ডা. মুহাম্মদ ইব্রাহীম ইবনে তৌহিদ বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় অংশ নেওয়া শহর ও গ্রামের ২৬৫ জন কিশোরী এবং ১৯১ জন কিশোরের মধ্যে ৮৮ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশ কিশোর এবং ৬৪ শতাংশ কিশোরী ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। শহরের শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেটে যৌন নিপীড়নের ঘটনা গ্রামীণ শিশুদের চেয়ে দেড় গুণ বেশি। ’

গ্রামীণ এলাকায় ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সী ৪৬০ শিশুর ওপর পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৩ শতাংশ শিশু ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এই শিশুরা তিন ধরনের সাইবার অপরাধের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ উত্পীড়ন, ৩৮ শতাংশ উপহাস এবং ২৬ শতাংশ গুজবের শিকার হয়েছে। অনলাইনে যৌন নির্যাতনের শিকার শিশুদের অর্ধেক এসংক্রান্ত আইন সম্পর্কে অবগত নয়।

শৈশবের বিরূপ অভিজ্ঞতা এবং পরবর্তী স্বাস্থ্য সমস্যা : ডা. নীলিমা বর্মণ বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, শৈশবকালীন বিরূপ অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনে মানসিক, আচরণগত ও শারীরিক বিকাশজনিত ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। একই সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্কদের রোগ ও মৃত্যুহার বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বের প্রতি ১০ জনে একজন ডায়াবেটিস রোগে আক্রান্ত। ’

ঢাকার তিনটি উপজেলার অংশ নেওয়া ২৩৪ জন বিবাহিত নারীর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, যেসব নারী শৈশবকালে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতন বা অবহেলার শিকার হয়েছিলেন, বৈবাহিক জীবনে তাঁরা স্বামীর কাছে বেশি সহিংসতার শিকার হয়েছেন।

শিশু নির্যাতন বন্ধে মিডিয়ার ভূমিকা : শিশু নির্যাতন বন্ধে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে শাবনাম আযিম বলেন, শিশু নির্যাতনের ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার পরও দেশের সংবাদপত্রগুলো শিশুর ওপর যৌন নির্যাতনের ঘটনাগুলো যেভাবে প্রকাশ করে, তা নৈতিকতা বিবর্জিত। প্রিন্ট মিডিয়া বিষয়ভিত্তিক প্রতিবেদনের চেয়ে এপিসোডিক প্রতিবেদন বেশি প্রকাশ করে শিশুর বিকাশ, সুরক্ষা ও সুস্থতা সম্পর্কে পাঠকদের অবহিত করার সুযোগ হাতছাড়া করছে।

শিশু অধিকার ও সুরক্ষা : ডা. মারিয়াম সালওয়া বলেন, শিশু নির্যাতনের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে অসচেতনতা, বাড়িতে, স্কুলে ও কর্মক্ষেত্রে শিশু নির্যাতন বন্ধে কঠোর আইনের অভাব শিশু নির্যাতন নির্মূলে বড় বাধা। স্কুলগুলোয় শারীরিক শাস্তি নিষিদ্ধ করতে ২০১১ সালের সুপ্রিম কোর্টের রায়কে আইনে রূপান্তর করা দরকার। বাংলাদেশি শিশুদের নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করতে সরকারকে অবশ্যই জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ। এ ছাড়া সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার অধ্যাপক গোলাম রহমান, বিশ্ববিদ্যালয়টির উপ-উপাচার্য কাজী জেবুন্নেছা বেগম, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।