স্নাতক থেকেই শুরু হোক চাকরির প্রস্তুতি

স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যেন হুট করেই বড় হয়। তারুণ্যের উদ্যমে সঙ্গে যোগ হয় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দায়িত্ব এবং আসন্ন ক্যারিয়ার ভাবনা। কী করা যেতে পারে এ সময়, কেমন হতে পারে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বা কী করে সমৃদ্ধ করা যায় নিজেকে? এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা (ইংরেজি) ক্যাডারে প্রথম নূর ইসরাত জাহান তাজিন

বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই স্নাতক পর্যায়ে নিজের পছন্দসই বিষয়ে ভর্তি হতে পারে না। এটা অনেকের মাঝেই হতাশা তৈরি করে। ফলে বিভাগের পড়াশোনায় অমনোযোগী থাকে এবং ফলাফল খারাপ করে। তাই হতাশা ঝেড়ে ফেলতে হবে, ভালোবাসতে হবে নিজের পঠিত বিষয়কে। প্রতিটি বিষয়ে অসাধারণ কিছু আছে, যেটা ধারণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায়। এ জন্য বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। বিষয়সংশ্লিষ্ট রেফারেন্স বই, লেখা ও গবেষণাপত্র পড়তে হবে। স্নাতক পর্যায়ের ভালো ফলাফল সামনের চলার পথ সহজ করবে। অন্যথায় স্নাতকের পর পথ আরও বেশি বন্ধুর হয়ে যাবে।

সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ
গন্তব্য নির্ধারিত না থাকলে কোন পথে হাঁটতে হবে—তা জানা যায় না। তাই ভবিষ্যৎ কর্মজীবন কেমন হবে বা কোন বিভাগে কাজ করবে, তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা না থাকলে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছা, সামর্থ্য, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ চিন্তা করে লক্ষ্য নির্ধারণ করলে তা অর্জন করা সহজ হয়। এ জন্য পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে।

বেসিক বিষয়ে দক্ষতা চাই
অনেক শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করলেও দেখা যায় তাদের বিষয়ভিত্তিক বেসিক ভালো থাকে না; বিশেষ করে গণিত ও ইংরেজিতে। এ দুটি বিষয়ে দুর্বলতা থাকার কারণে কাঙ্ক্ষিত চাকরিও পায় না। এ জন্য অন্তত গণিত ও ইংরেজির বেসিক ভালো করতে হবে।

কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে নিজেকেও করতে হবে আধুনিক। কম্পিউটারে দক্ষতা থাকা আজকাল চাকরিপ্রার্থীদের বিশেষ গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এ জন্য স্নাতক পর্যায় থেকেই কম্পিউটারের বেসিক বিষয়গুলো, যেমন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্ট জানা এবং বাংলা ও ইংরেজি টাইপিংয়ে দক্ষতা বাড়ানো উচিত। কারও যদি কম্পিউটার গেমিং, ভিডিও কনটেন্ট তৈরিতে আগ্রহ থাকে, তারা বড় আসরের যেসব প্রতিযোগিতা হয়, সেখানে অংশ নিতে পারে।

বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
স্নাতক পর্যায়ের শুরু থেকেই একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই, বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত উপন্যাস, জীবনীগ্রন্থ, ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই এ সময়েই পড়ে ফেলা উচিত। অন্যান্য ভাষার বিখ্যাত বইয়ের ইংরেজি অনুবাদও পড়া যেতে পারে।

সঠিক সার্কেল তৈরি করুন
ক্যাম্পাস লাইফে আমাদের অনেক বন্ধুই থাকে। তাদের মধ্যে একেকজনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একেক রকম। আড্ডার ক্ষেত্রে যদি একই ধরনের ক্যারিয়ার গড়বে এমন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া যায়, তবে ক্যারিয়ার প্রস্তুতি অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

বড়দের থেকে দিকনির্দেশনা নেওয়া
আপনি যে বিভাগে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান, সেই বিভাগের অন্তত ১০ জন সফল লোকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের অনুসরণ করুন।

সহশিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয়তা চাই
আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ও নিজেকে অন্যের সামনে উপস্থাপন করতে সহশিক্ষা কার্যক্রম বেশ কাজে দেয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ জরুরি। যারা নাচ, গান, আবৃত্তি ও অভিনয়ে পারদর্শী নয়, তারা যেন অন্তত বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা কিংবা রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তা ছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনেও কাজ করতে পারে, যা নেতৃত্বগুণ বাড়ানোর জন্য বেশ সহায়ক।

নিয়মিত পত্রিকা পড়া ও সংবাদ শোনা
বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মাঝে সংবাদপত্র পাঠের খুব একটা আগ্রহ দেখা যায় না। এর মাঝে আবার বেশির ভাগেরই আগ্রহ কেবল খেলাধুলা আর বিনোদনের পাতায়। তাই পড়তে বিরক্ত লাগলেও এসব পাতার পাশাপাশি নিয়মিত সম্পাদকীয় কলাম, চলমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়তে হবে। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি পত্রিকাও পড়তে হবে। যাদের ইংরেজি পত্রিকা পড়ে বুঝতে সমস্যা হয়, তাদের প্রথমে বাংলা প্রবন্ধটি পড়ে একই বিষয়ের ইংরেজি প্রবন্ধটি পড়লে সহজেই বুঝতে পারবে।

সংবাদপত্র পাঠের পাশাপাশি নিয়মিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবর শুনতে অন্তত বিটিভির দুপুরের সংবাদ, রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদ এবং যেকোনো চ্যানেলের একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ শুনতে হবে। এ ছাড়া বিবিসি, সিএনএনর খবরও শোনা যেতে পারে। পত্রিকা পড়া, সংবাদ শোনা আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করে, যা ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

শুদ্ধভাবে কথা বলা
আমি মনে করি একজন স্নাতক হিসেবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রমিত বাংলায় বা শুদ্ধভাবে (উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি) কথা বলার দক্ষতা থাকা উচিত। পাশাপাশি ইংরেজিতেও কথা বলতে পারা উচিত। এ জন্য প্রথমে সচেতনভাবে কথা বলা শুরু করলেই পরে তা অভ্যাসে পরিণত হবে।

করা যেতে পারে টিউশনি
গণিত ও ইংরেজির চর্চা অব্যাহত রাখতে দুই-একটি টিউশনি করা যেতে পারে। তবে খুব বেশি নয়। অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষার্থীরা টিউশনিতে এতটাই সময় দেয়, যা তাদের নিজেদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায়।

অবসর সময় কাজে লাগানো
অবসর সময়ে কেবল অহেতুক আড্ডা বা খোশগল্পে মেতে না থেকে গঠনমূলক বিনোদন গ্রহণ করা যেতে পারে। যথেচ্ছভাবে মুভি না দেখে ইতিহাস-ঐতিহ্য-মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র, বিভিন্ন ভাষার পুরস্কারপ্রাপ্ত ও জনপ্রিয় ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্র, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টারি দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া ইউটিউব থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিদের বক্তব্য শোনা যেতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভ্রমণসহ বিস্তারিত জানতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন জাদুঘর, স্মৃতিসৌধ এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোও পরিদর্শন করতে পারে।

চাই শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা
নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ, পরিমিত ঘুম, অল্প হলেও খেলাধুলা ও ব্যায়াম করা। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার, ইতিবাচক চিন্তা, ধর্মীয় আচার পালন এবং অবশ্যই সব ধরনের নেশাদ্রব্য থেকে বিরত থাকতে হবে।

পরিশেষে
চাকরি পাওয়া নয়; বরং নিজেকে দক্ষ করে তোলাই মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এ জন্য উপর্যুক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। এ বিষয়গুলো দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেকটা এগিয়ে রাখবে। চাকরির পরীক্ষায় লিখিত ও ভাইভাতে ভালো করতে শুধু একাডেমিক নয়, সামগ্রিক জ্ঞান থাকা জরুরি। যেকোনো ভালো গুণই অর্জন করা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। তাই কষ্ট হলেও লেগে থাকতে হবে।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

লেখক: নূর ইসরাত জাহান তাজিন, ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা (ইংরেজি) ক্যাডারে প্রথম

স্নাতক থেকেই শুরু হোক চাকরির প্রস্তুতি

স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা যেন হুট করেই বড় হয়। তারুণ্যের উদ্যমে সঙ্গে যোগ হয় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দায়িত্ব এবং আসন্ন ক্যারিয়ার ভাবনা। কী করা যেতে পারে এ সময়, কেমন হতে পারে ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বা কী করে সমৃদ্ধ করা যায় নিজেকে? এসব বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা (ইংরেজি) ক্যাডারে প্রথম নূর ইসরাত জাহান তাজিন

বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই স্নাতক পর্যায়ে নিজের পছন্দসই বিষয়ে ভর্তি হতে পারে না। এটা অনেকের মাঝেই হতাশা তৈরি করে। ফলে বিভাগের পড়াশোনায় অমনোযোগী থাকে এবং ফলাফল খারাপ করে। তাই হতাশা ঝেড়ে ফেলতে হবে, ভালোবাসতে হবে নিজের পঠিত বিষয়কে। প্রতিটি বিষয়ে অসাধারণ কিছু আছে, যেটা ধারণ করে নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায়। এ জন্য বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত ক্লাস ও পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। বিষয়সংশ্লিষ্ট রেফারেন্স বই, লেখা ও গবেষণাপত্র পড়তে হবে। স্নাতক পর্যায়ের ভালো ফলাফল সামনের চলার পথ সহজ করবে। অন্যথায় স্নাতকের পর পথ আরও বেশি বন্ধুর হয়ে যাবে।

সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ
গন্তব্য নির্ধারিত না থাকলে কোন পথে হাঁটতে হবে—তা জানা যায় না। তাই ভবিষ্যৎ কর্মজীবন কেমন হবে বা কোন বিভাগে কাজ করবে, তা আগে থেকেই নির্ধারণ করা না থাকলে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয় না। এ ক্ষেত্রে নিজের ইচ্ছা, সামর্থ্য, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ চিন্তা করে লক্ষ্য নির্ধারণ করলে তা অর্জন করা সহজ হয়। এ জন্য পরিবারের সদস্য ও বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আলোচনা করা যেতে পারে।

বেসিক বিষয়ে দক্ষতা চাই
অনেক শিক্ষার্থী উচ্চমাধ্যমিকে ভালো ফলাফল করলেও দেখা যায় তাদের বিষয়ভিত্তিক বেসিক ভালো থাকে না; বিশেষ করে গণিত ও ইংরেজিতে। এ দুটি বিষয়ে দুর্বলতা থাকার কারণে কাঙ্ক্ষিত চাকরিও পায় না। এ জন্য অন্তত গণিত ও ইংরেজির বেসিক ভালো করতে হবে।

কম্পিউটার সম্পর্কে ধারণা
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হলে নিজেকেও করতে হবে আধুনিক। কম্পিউটারে দক্ষতা থাকা আজকাল চাকরিপ্রার্থীদের বিশেষ গুণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

এ জন্য স্নাতক পর্যায় থেকেই কম্পিউটারের বেসিক বিষয়গুলো, যেমন মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল ও পাওয়ারপয়েন্ট জানা এবং বাংলা ও ইংরেজি টাইপিংয়ে দক্ষতা বাড়ানো উচিত। কারও যদি কম্পিউটার গেমিং, ভিডিও কনটেন্ট তৈরিতে আগ্রহ থাকে, তারা বড় আসরের যেসব প্রতিযোগিতা হয়, সেখানে অংশ নিতে পারে।

বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা
স্নাতক পর্যায়ের শুরু থেকেই একাডেমিক বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই, বিশেষ করে বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত উপন্যাস, জীবনীগ্রন্থ, ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বই এ সময়েই পড়ে ফেলা উচিত। অন্যান্য ভাষার বিখ্যাত বইয়ের ইংরেজি অনুবাদও পড়া যেতে পারে।

সঠিক সার্কেল তৈরি করুন
ক্যাম্পাস লাইফে আমাদের অনেক বন্ধুই থাকে। তাদের মধ্যে একেকজনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা একেক রকম। আড্ডার ক্ষেত্রে যদি একই ধরনের ক্যারিয়ার গড়বে এমন বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া যায়, তবে ক্যারিয়ার প্রস্তুতি অনেকটাই সহজ হয়ে যায়।

বড়দের থেকে দিকনির্দেশনা নেওয়া
আপনি যে বিভাগে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চান, সেই বিভাগের অন্তত ১০ জন সফল লোকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এবং তাদের অনুসরণ করুন।

সহশিক্ষা কার্যক্রমে সক্রিয়তা চাই
আত্মবিশ্বাস বাড়াতে ও নিজেকে অন্যের সামনে উপস্থাপন করতে সহশিক্ষা কার্যক্রম বেশ কাজে দেয়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ জরুরি। যারা নাচ, গান, আবৃত্তি ও অভিনয়ে পারদর্শী নয়, তারা যেন অন্তত বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা কিংবা রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। তা ছাড়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনেও কাজ করতে পারে, যা নেতৃত্বগুণ বাড়ানোর জন্য বেশ সহায়ক।

নিয়মিত পত্রিকা পড়া ও সংবাদ শোনা
বেশির ভাগ শিক্ষার্থীর মাঝে সংবাদপত্র পাঠের খুব একটা আগ্রহ দেখা যায় না। এর মাঝে আবার বেশির ভাগেরই আগ্রহ কেবল খেলাধুলা আর বিনোদনের পাতায়। তাই পড়তে বিরক্ত লাগলেও এসব পাতার পাশাপাশি নিয়মিত সম্পাদকীয় কলাম, চলমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়তে হবে। বাংলার পাশাপাশি ইংরেজি পত্রিকাও পড়তে হবে। যাদের ইংরেজি পত্রিকা পড়ে বুঝতে সমস্যা হয়, তাদের প্রথমে বাংলা প্রবন্ধটি পড়ে একই বিষয়ের ইংরেজি প্রবন্ধটি পড়লে সহজেই বুঝতে পারবে।

সংবাদপত্র পাঠের পাশাপাশি নিয়মিত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক খবর শুনতে অন্তত বিটিভির দুপুরের সংবাদ, রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদ এবং যেকোনো চ্যানেলের একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ শুনতে হবে। এ ছাড়া বিবিসি, সিএনএনর খবরও শোনা যেতে পারে। পত্রিকা পড়া, সংবাদ শোনা আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধি করে, যা ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।

শুদ্ধভাবে কথা বলা
আমি মনে করি একজন স্নাতক হিসেবে প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রমিত বাংলায় বা শুদ্ধভাবে (উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি) কথা বলার দক্ষতা থাকা উচিত। পাশাপাশি ইংরেজিতেও কথা বলতে পারা উচিত। এ জন্য প্রথমে সচেতনভাবে কথা বলা শুরু করলেই পরে তা অভ্যাসে পরিণত হবে।

করা যেতে পারে টিউশনি
গণিত ও ইংরেজির চর্চা অব্যাহত রাখতে দুই-একটি টিউশনি করা যেতে পারে। তবে খুব বেশি নয়। অনেক সময় দেখা যায় শিক্ষার্থীরা টিউশনিতে এতটাই সময় দেয়, যা তাদের নিজেদের পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটায়।

অবসর সময় কাজে লাগানো
অবসর সময়ে কেবল অহেতুক আড্ডা বা খোশগল্পে মেতে না থেকে গঠনমূলক বিনোদন গ্রহণ করা যেতে পারে। যথেচ্ছভাবে মুভি না দেখে ইতিহাস-ঐতিহ্য-মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র, বিভিন্ন ভাষার পুরস্কারপ্রাপ্ত ও জনপ্রিয় ক্ল্যাসিক চলচ্চিত্র, গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টারি দেখা যেতে পারে। এ ছাড়া ইউটিউব থেকে বিখ্যাত ব্যক্তিদের বক্তব্য শোনা যেতে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে শিক্ষার্থীরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থান ভ্রমণসহ বিস্তারিত জানতে পারে। এ ছাড়া বিভিন্ন জাদুঘর, স্মৃতিসৌধ এবং আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোও পরিদর্শন করতে পারে।

চাই শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা
নিয়মিত স্বাস্থ্যসম্মত খাবার গ্রহণ, পরিমিত ঘুম, অল্প হলেও খেলাধুলা ও ব্যায়াম করা। সবার সঙ্গে ভালো ব্যবহার, ইতিবাচক চিন্তা, ধর্মীয় আচার পালন এবং অবশ্যই সব ধরনের নেশাদ্রব্য থেকে বিরত থাকতে হবে।

পরিশেষে
চাকরি পাওয়া নয়; বরং নিজেকে দক্ষ করে তোলাই মূল উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। এ জন্য উপর্যুক্ত বিষয়গুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। এ বিষয়গুলো দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেকটা এগিয়ে রাখবে। চাকরির পরীক্ষায় লিখিত ও ভাইভাতে ভালো করতে শুধু একাডেমিক নয়, সামগ্রিক জ্ঞান থাকা জরুরি। যেকোনো ভালো গুণই অর্জন করা কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। তাই কষ্ট হলেও লেগে থাকতে হবে।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

লেখক: নূর ইসরাত জাহান তাজিন, ৪০তম বিসিএসে শিক্ষা (ইংরেজি) ক্যাডারে প্রথম