স্বপ্ন তার বাংলা ক্যালিগ্রাফি ঘিরে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

নাইমা সুলতানা। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পরই নাইমা সুলতানা ভেবেছিলেন পাস করে নিশ্চিত ছুটতে হবে চাকরির পেছনে। কিন্তু সৃজনশীলতা তাকে আটকে দেয়নি বেড়াজালে। তার যাবতীয় স্বপ্ন এখন ক্যালিগ্রাফি ঘিরে। দেখছেন বাংলা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে একাডেমি গড়ার স্বপ্ন। তাকে নিয়ে লিখেছেন কালবেলার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রেদওয়ান আহমদ

নাইমার ছোটবেলার আঁকিবুঁকিগুলোই যেন এখন ক্যালিগ্রাফি হরফের ভাঁজে ভাঁজে। ইতোমধ্যেই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পাচ্ছেন ক্রেতা, অংশ নিয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীতে, পেয়েছেন সম্মাননা। শুরু করেছেন ক্যালিগ্রাফির পাঠশালাও।

নাইমার জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে এসএসসি ও ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

নাইমা বলেন, ‘করোনার অবসরেই ক্যালিগ্রাফিতে হাতেখড়ি। আঁকাআঁকির প্রতি ভালোলাগা ছিল, তাই খোঁজখবর নিয়ে ঢাকায় শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ স্যারের কর্মশালায় ভর্তি হলাম। বেশ ভালোভাবেই কোর্স শেষ করি।’

নাইমা সুলতানার ক্যালিগ্রাফি ।
নাইমা সুলতানার ক্যালিগ্রাফি । ছবি : কালবেলা

এরপর নিজের কিছু ক্যালিগ্রাফি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন নাইমা। সেখানেই পান অনুপ্রেরণা। এর মাঝে টুকটাক বিক্রিও হতে থাকল। এখন পড়ার পাশাপাশি সময় দিচ্ছেন ক্যালিগ্রাফি আঁকায়।

নাইমা বলছিলেন, ‘শেখার শুরুটা কষ্টের। তবে এখন বেশ লাগে। প্রশংসা পাচ্ছি। প্রথম যখন কাজের অর্ডার পেলাম তখন কী যে খুশি লেগেছিল, বলে বোঝানো যাবে না। প্রথম ইনকাম ছিল ৭০০ টাকা। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটা বিক্রি করেছি। মূল্য ছিল আটশো থেকে হাজার টাকা। এটি একটি ভালো আয়ের উৎস।’

নাইমা সম্পর্কে কথা হয় নামকরা ক্যালিগ্রাফি শিল্পী ও প্রশিক্ষক মাহবুব মুর্শিদের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমার ভালো কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে নাইমা একজন। তার শেখার আকাঙ্ক্ষা প্রবল। আমার বিশ্বাস, যদি চর্চা অব্যাহত রাখে, সে ক্যালিগ্রাফিতে খুব ভালো করবে।’

বাংলা ক্যালিগ্রাফির সম্ভাবনা নিয়ে মাহবুব মুর্শিদ বলেন, ‘ক্যালিগ্রাফির আরেক অর্থ সুন্দর হাতের লেখা। তবে এর চর্চা হচ্ছে আরবি ও চায়নিজ ভাষায়। বাংলায় চর্চাটা একটু কঠিন। তারপরও বাংলা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। আমরা মুখে ভাষা নিয়ে এটা-সেটা যতই বলি না কেন, আন্তরিকভাবে কাজ করার মানুষ খুব কম।’

নাইমা বললেন, ‘আমি বাংলা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে একটি একাডেমি গড়তে চাই। বাংলা ক্যালিগ্রাফিকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাই। সে লক্ষ্যে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছি।’

তার ক্যালিগ্রাফির চাহিদা নিয়ে বললেন, ‘এখন বাংলা ক্যালিগ্রাফির চাহিদা বাড়ছে। শুদ্ধ ভাষার চর্চা ও বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মর্যাদার পাশাপাশি, বাংলা ক্যালিগ্রাফিও বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে একদিন। অন্দরমহলের সৌন্দর্যবর্ধনে বিশ্বে ক্যালিগ্রাফি বেশ সম্ভাবনাময় শিল্প।’

নাইমা শুধু ক্যালিগ্রাফি শিল্পীই নন, তিনি একাধারে একজন বাচিককর্মী, লেখক ও সংগঠক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং এক্সিলেন্স বাংলাদেশের ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডরের দায়িত্বও পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চবি শাখার একজন সক্রিয় সদস্য।

স্বপ্ন তার বাংলা ক্যালিগ্রাফি ঘিরে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি

নাইমা সুলতানা। ছবি : কালবেলা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে ভর্তি হওয়ার পরই নাইমা সুলতানা ভেবেছিলেন পাস করে নিশ্চিত ছুটতে হবে চাকরির পেছনে। কিন্তু সৃজনশীলতা তাকে আটকে দেয়নি বেড়াজালে। তার যাবতীয় স্বপ্ন এখন ক্যালিগ্রাফি ঘিরে। দেখছেন বাংলা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে একাডেমি গড়ার স্বপ্ন। তাকে নিয়ে লিখেছেন কালবেলার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রেদওয়ান আহমদ

নাইমার ছোটবেলার আঁকিবুঁকিগুলোই যেন এখন ক্যালিগ্রাফি হরফের ভাঁজে ভাঁজে। ইতোমধ্যেই কাজের স্বীকৃতি হিসেবে পাচ্ছেন ক্রেতা, অংশ নিয়েছেন জাতীয় পর্যায়ের প্রদর্শনীতে, পেয়েছেন সম্মাননা। শুরু করেছেন ক্যালিগ্রাফির পাঠশালাও।

নাইমার জন্ম ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। বাংলাদেশ মহিলা সমিতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৬ সালে এসএসসি ও ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এখন স্নাতক চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

নাইমা বলেন, ‘করোনার অবসরেই ক্যালিগ্রাফিতে হাতেখড়ি। আঁকাআঁকির প্রতি ভালোলাগা ছিল, তাই খোঁজখবর নিয়ে ঢাকায় শিল্পী মাহবুব মুর্শিদ স্যারের কর্মশালায় ভর্তি হলাম। বেশ ভালোভাবেই কোর্স শেষ করি।’

নাইমা সুলতানার ক্যালিগ্রাফি ।
নাইমা সুলতানার ক্যালিগ্রাফি । ছবি : কালবেলা

এরপর নিজের কিছু ক্যালিগ্রাফি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করেন নাইমা। সেখানেই পান অনুপ্রেরণা। এর মাঝে টুকটাক বিক্রিও হতে থাকল। এখন পড়ার পাশাপাশি সময় দিচ্ছেন ক্যালিগ্রাফি আঁকায়।

নাইমা বলছিলেন, ‘শেখার শুরুটা কষ্টের। তবে এখন বেশ লাগে। প্রশংসা পাচ্ছি। প্রথম যখন কাজের অর্ডার পেলাম তখন কী যে খুশি লেগেছিল, বলে বোঝানো যাবে না। প্রথম ইনকাম ছিল ৭০০ টাকা। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটা বিক্রি করেছি। মূল্য ছিল আটশো থেকে হাজার টাকা। এটি একটি ভালো আয়ের উৎস।’

নাইমা সম্পর্কে কথা হয় নামকরা ক্যালিগ্রাফি শিল্পী ও প্রশিক্ষক মাহবুব মুর্শিদের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘আমার ভালো কয়েকজন শিক্ষার্থীর মধ্যে নাইমা একজন। তার শেখার আকাঙ্ক্ষা প্রবল। আমার বিশ্বাস, যদি চর্চা অব্যাহত রাখে, সে ক্যালিগ্রাফিতে খুব ভালো করবে।’

বাংলা ক্যালিগ্রাফির সম্ভাবনা নিয়ে মাহবুব মুর্শিদ বলেন, ‘ক্যালিগ্রাফির আরেক অর্থ সুন্দর হাতের লেখা। তবে এর চর্চা হচ্ছে আরবি ও চায়নিজ ভাষায়। বাংলায় চর্চাটা একটু কঠিন। তারপরও বাংলা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে কাজ করার চেষ্টা করছি। আমরা মুখে ভাষা নিয়ে এটা-সেটা যতই বলি না কেন, আন্তরিকভাবে কাজ করার মানুষ খুব কম।’

নাইমা বললেন, ‘আমি বাংলা ক্যালিগ্রাফি নিয়ে একটি একাডেমি গড়তে চাই। বাংলা ক্যালিগ্রাফিকে একটা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে চাই। সে লক্ষ্যে নিজেকে আরও সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করছি।’

তার ক্যালিগ্রাফির চাহিদা নিয়ে বললেন, ‘এখন বাংলা ক্যালিগ্রাফির চাহিদা বাড়ছে। শুদ্ধ ভাষার চর্চা ও বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মর্যাদার পাশাপাশি, বাংলা ক্যালিগ্রাফিও বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে একদিন। অন্দরমহলের সৌন্দর্যবর্ধনে বিশ্বে ক্যালিগ্রাফি বেশ সম্ভাবনাময় শিল্প।’

নাইমা শুধু ক্যালিগ্রাফি শিল্পীই নন, তিনি একাধারে একজন বাচিককর্মী, লেখক ও সংগঠক। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আবৃত্তি মঞ্চের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং এক্সিলেন্স বাংলাদেশের ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসাডরের দায়িত্বও পালন করছেন। এ ছাড়া তিনি বাংলাদেশ তরুণ কলাম লেখক ফোরাম, চবি শাখার একজন সক্রিয় সদস্য।