২০টি বই দিয়ে শুরু করে আতিফ এখন ১৪ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা

আতিফ আসাদ

লেখাপড়ার পাশাপাশি কখনো ধানকাটা শ্রমিকের কাজ করেই সংসার সামলাচ্ছেন। তবে এরই মধ্যে গড়ে ফেলেছেন ১৪টি পাঠাগার। জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকপড়ুয়া আতিফ আসাদের গল্প বলছেন আশিকুর রহমান সৈকত

সাত ভাই-বোনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো দিনমজুর বাবার। প্রাইভেট পড়া তো দূরের কথা, নিয়মিত স্কুল যাওয়ারও সুযোগ মেলেনি আতিফের।

পরিবারে সবার ছোট তিনি। ভাইদের মধ্যে কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ রডমিস্ত্রি।

আতিফ তখন মাজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রতি বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে গল্পের বই পড়তে দিত। এক বেঞ্চে বসা তিনজনের জন্য বরাদ্দ একটি বই। এসব আউট বই পড়তে আবার অপেক্ষা এক সপ্তাহের, কবে আসবে বৃহস্পতিবার। যষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলেন বয়ড়া ইসরাইল আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে ব্র্যাকের পাঠাগার থেকে বই নিয়ে পড়তেন।

জেএসসির পর চলে আসেন হরখালী মুজিবর রহমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। অজপাড়াগাঁয়ের এই স্কুলে ছিল না কোনো পাঠাগার। তবে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে একটা তালাবদ্ধ শেলফ ছিল। সেখানে গল্প, উপন্যাসের বই থাকলেও ছাত্রদের পড়ার সুযোগ নেই। একবার স্কুলে রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে নবম শ্রেণির ছাত্রদের বেশ কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়। আতিফের দায়িত্ব ওই শেলফ ধুয়ে-মুছে সাফ করা। সেই সুযোগে কিছু বই বাসায় নিয়েছিলেন পড়তে। জানতে পেরে আতিফকে ভর্ত্সনা করেন শিক্ষকরা। এই ঘটনায় খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। মনে মনে ঠিক করেন একদিন পাঠাগার গড়বেন, যেখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারবে সবাই।

ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আউট বই পড়তে না পারার বিষয়টি তাকে পীড়া দিত। তার মতো গ্রামের অন্য তরুণদের কথাও ভাবলেন। একসময় বড় ভাইকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করে দিলেন পাঠাগারের কাজ। নিজের ঘরের বারান্দাটি প্রসারিত করে পাঠাগারের জন্য ছোট একটি ঘরের মতো তৈরি করলেন। এটা ২০১৮ সালের ঘটনা।

মাত্র ২০টি বই দিয়ে পাঠাগারটি শুরু করেছিলেন। বলছিলেন, ‘ঘর ভাড়া নেওয়ার টাকা ছিল না। আমাদের ঘরের বারান্দায় পাটশোলার বেড়া দিয়ে পাঠাগার শুরু করি। একটা বই রাখার তাক বানাই। পরে গ্যাসটন ব্যাটারিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক কে এইচ মালেক ১০০ বই পাঠালেন। স্টিলের একটি আলমারিও বানিয়ে দিলেন। ’

kalerkanthoপাঠাগারে বই গোছাচ্ছেন আতিফ আসাদ।  

এইচএসসির পর দিনাজপুরের বালুবাড়ীতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিলেন। প্রথম মাসে কাজ করে ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। সাত হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কলেজে। বাকি টাকায় পাঠাগারের জন্য বই কিনেছেন। এখন তিনি ১৪টি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশের প্রথম ইস্টিশন পাঠাগারও।

শুরুর দিকে পাঠক ছিল হাতে গোনা। বন্ধুরাই বেশি। সবুজ, তারেক, সুরমী, তার্জিনা, মিলন। তাদের দেখাদেখি আরো অনেকেই পাঠাগারে আসা শুরু করে। অল্প সময়েই বেশ ভালো সাড়া পেতে শুরু করেন। সরিষাবাড়ী মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী সুরমী আক্তার বলেন, ‘শুরু থেকেই আমি এই পাঠাগারের পাঠক। কখনো ভাবিনি পাঠাগারটি এত দূর যাবে। ’

পাঠাগার শুরুর এক মাসের মাথায় পারিবারিক বিরোধের জেরে আততায়ীর হাতে প্রাণ হারান আতিফের বড় ভাই। তার স্মৃতি ধরে রাখতে পাঠাগারের নামকরণ করেন ‘মিলন স্মৃতি পাঠাগার। ’ ২০টি বই দিয়ে শুরু করা পাঠাগারটিতে আজ ৭টি আলমিরাতে রয়েছে তিন হাজারের বেশি বই।

শিশুতোষ বই, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ রয়েছে। পাঠকের সুবিধার্থে সপ্তাহে তিন দিন সাইকেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই পৌঁছে দেন। সপ্তাহ শেষে আবার ফেরত নিয়ে আসেন। কাজটি করেন বিনা পারিশ্রমিকে। কাজটি সহজে করার জন্য আমেরিকাপ্রবাসী একজন নতুন একটি সাইকেল কিনে দিয়েছেন। আরেকজন দিয়েছেন স্মার্টফোন।

এ ছাড়া অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন ও বিকাশ লিমিটেড বই দিয়েছে। সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এমদাদুল হক খোকন মাজালিয়া গণপাঠাগার, সাবেক নারী ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথি গ্রামনিখাই গণপাঠাগার, রামিসা চৌধুরী দোলভিটি গণপাঠাগার তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন।

আতিফ বলেন, ‘বই নিয়ে একেক সপ্তাহে একেক এলাকায় যাই। এখন বিভিন্ন গ্রামে পাঠাগার করে দিয়েছি। সেখান থেকেও সহজেই পাঠক বই নিয়ে পড়তে পারে। ’ ২০২০ সালে সরিষাবাড়ীতে তিন দিনব্যাপী বইমেলারও আয়োজন করেছিলেন আতিফ।

পাঠাগার করেন বলে একটা সময় অনেকে ‘পাগল’ বলত তাকে। কিন্তু আতিফ দমে যাননি। উপজেলার ছয়টি গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন পাঠাগার। মাজালিয়া, হাসড়া, গ্রামনিখাই, হরখালী, রামানন্দপুর, দোলভিটি গ্রামে গণপাঠাগার করা হয়েছে। সেগুলো একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির অধীনে বা একটা টিমের অধীনে চলছে। পাঠাগারগুলোয় তিন হাজারের বেশি বই আছে।

আতিফের উপজেলায় রয়েছে রেলওয়ে স্টেশন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। এই প্ল্যাটফরমকে ঘিরে বই পড়া আন্দোলনের জাগরণ ঘটাতেই তার মাথায় আসে স্টেশন পাঠাগারের ভাবনা। স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা যাতে অবসর সময়ে বই পড়তে পারে। ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশে প্রথম রেলওয়ে স্টেশনভিত্তিক ‘ইস্টিশন পাঠাগার’-এর যাত্রা শুরু করলেন। নিজ উপজেলার তিনটি স্টেশনে আন্তনগর ট্রেন থামে।

সরিষাবাড়ী, তারাকান্দি ও অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদার নামক তিনটি স্টেশনে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন পাঠাগার। স্টেশনের একটি নির্দিষ্ট দোকানে একটি বুকশেলফে বই থাকে। সেখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারে যাত্রীরা। সামনে ময়মনসিংহ, জামালপুর, জয়দেবপুর, ভৈরব, লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধায় ‘ইস্টিশন পাঠাগার’ উদ্বোধন করা হবে।

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থেকে সীমানা নদী ঝিনাই পার হয়ে জামালপুরের তারাকান্দি যেতে হয় সরু পিচঢালা রাস্তা দিয়ে। কয়েকটি গ্রামকে সংযুক্ত করেছে রাস্তাটি। সেখানকার চারটি গ্রাম হাসড়া, মাজালিয়া, দোলভিটি ও চাপারকোনায় মিলন স্মৃতি পাঠাগারের রয়েছে চারটি পথ লাইব্রেরি। উদ্বোধনের দিন গ্রো ইওর রিডার ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা সব গ্রামকে রাঙিয়ে দিয়েছেন ছবি এঁকে, বিশেষ করে শিশুদের জানানোর জন্য, যাতে তাদের বই পড়ার আগ্রহ বাড়ে।

মিলন স্মৃতি পাঠাগারে এখনো একসঙ্গে অনেকে বসে পড়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। স্থায়ী একটি ভবন হলে বসে পড়া ও পাঠচক্র করতে সুবিধা হয় বলে জানালেন আতিফ। সামনে দেশের ১০০টি রেলওয়ে স্টেশনে ইস্টিশন পাঠাগার স্থাপন করতে চান তিনি। বললেন, ‘আমার স্বপ্ন দেশের প্রতিটি গ্রামে একটি করে পাঠাগার হবে। সবাই সেখানে বই পড়বে। আমাদের মধ্যে বই দেওয়া-নেওয়ার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। ’

২০টি বই দিয়ে শুরু করে আতিফ এখন ১৪ পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা

আতিফ আসাদ

লেখাপড়ার পাশাপাশি কখনো ধানকাটা শ্রমিকের কাজ করেই সংসার সামলাচ্ছেন। তবে এরই মধ্যে গড়ে ফেলেছেন ১৪টি পাঠাগার। জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকপড়ুয়া আতিফ আসাদের গল্প বলছেন আশিকুর রহমান সৈকত

সাত ভাই-বোনের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হতো দিনমজুর বাবার। প্রাইভেট পড়া তো দূরের কথা, নিয়মিত স্কুল যাওয়ারও সুযোগ মেলেনি আতিফের।

পরিবারে সবার ছোট তিনি। ভাইদের মধ্যে কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ রডমিস্ত্রি।

আতিফ তখন মাজালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। প্রতি বৃহস্পতিবার স্কুল থেকে গল্পের বই পড়তে দিত। এক বেঞ্চে বসা তিনজনের জন্য বরাদ্দ একটি বই। এসব আউট বই পড়তে আবার অপেক্ষা এক সপ্তাহের, কবে আসবে বৃহস্পতিবার। যষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হলেন বয়ড়া ইসরাইল আহম্মেদ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে ব্র্যাকের পাঠাগার থেকে বই নিয়ে পড়তেন।

জেএসসির পর চলে আসেন হরখালী মুজিবর রহমান আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে। অজপাড়াগাঁয়ের এই স্কুলে ছিল না কোনো পাঠাগার। তবে প্রধান শিক্ষকের কক্ষে একটা তালাবদ্ধ শেলফ ছিল। সেখানে গল্প, উপন্যাসের বই থাকলেও ছাত্রদের পড়ার সুযোগ নেই। একবার স্কুলে রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে নবম শ্রেণির ছাত্রদের বেশ কিছু দায়িত্ব দেওয়া হয়। আতিফের দায়িত্ব ওই শেলফ ধুয়ে-মুছে সাফ করা। সেই সুযোগে কিছু বই বাসায় নিয়েছিলেন পড়তে। জানতে পেরে আতিফকে ভর্ত্সনা করেন শিক্ষকরা। এই ঘটনায় খুব কষ্ট পেয়েছিলেন। মনে মনে ঠিক করেন একদিন পাঠাগার গড়বেন, যেখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারবে সবাই।

ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আউট বই পড়তে না পারার বিষয়টি তাকে পীড়া দিত। তার মতো গ্রামের অন্য তরুণদের কথাও ভাবলেন। একসময় বড় ভাইকে সঙ্গে নিয়ে শুরু করে দিলেন পাঠাগারের কাজ। নিজের ঘরের বারান্দাটি প্রসারিত করে পাঠাগারের জন্য ছোট একটি ঘরের মতো তৈরি করলেন। এটা ২০১৮ সালের ঘটনা।

মাত্র ২০টি বই দিয়ে পাঠাগারটি শুরু করেছিলেন। বলছিলেন, ‘ঘর ভাড়া নেওয়ার টাকা ছিল না। আমাদের ঘরের বারান্দায় পাটশোলার বেড়া দিয়ে পাঠাগার শুরু করি। একটা বই রাখার তাক বানাই। পরে গ্যাসটন ব্যাটারিজ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক কে এইচ মালেক ১০০ বই পাঠালেন। স্টিলের একটি আলমারিও বানিয়ে দিলেন। ’

kalerkanthoপাঠাগারে বই গোছাচ্ছেন আতিফ আসাদ।  

এইচএসসির পর দিনাজপুরের বালুবাড়ীতে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে গিয়েছিলেন। প্রথম মাসে কাজ করে ১০ হাজার টাকা পেয়েছিলেন। সাত হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কলেজে। বাকি টাকায় পাঠাগারের জন্য বই কিনেছেন। এখন তিনি ১৪টি পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠা করেছেন দেশের প্রথম ইস্টিশন পাঠাগারও।

শুরুর দিকে পাঠক ছিল হাতে গোনা। বন্ধুরাই বেশি। সবুজ, তারেক, সুরমী, তার্জিনা, মিলন। তাদের দেখাদেখি আরো অনেকেই পাঠাগারে আসা শুরু করে। অল্প সময়েই বেশ ভালো সাড়া পেতে শুরু করেন। সরিষাবাড়ী মাহমুদা সালাম মহিলা কলেজের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী সুরমী আক্তার বলেন, ‘শুরু থেকেই আমি এই পাঠাগারের পাঠক। কখনো ভাবিনি পাঠাগারটি এত দূর যাবে। ’

পাঠাগার শুরুর এক মাসের মাথায় পারিবারিক বিরোধের জেরে আততায়ীর হাতে প্রাণ হারান আতিফের বড় ভাই। তার স্মৃতি ধরে রাখতে পাঠাগারের নামকরণ করেন ‘মিলন স্মৃতি পাঠাগার। ’ ২০টি বই দিয়ে শুরু করা পাঠাগারটিতে আজ ৭টি আলমিরাতে রয়েছে তিন হাজারের বেশি বই।

শিশুতোষ বই, কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, আত্মজীবনীসহ বিভিন্ন ধরনের গ্রন্থ রয়েছে। পাঠকের সুবিধার্থে সপ্তাহে তিন দিন সাইকেলে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই পৌঁছে দেন। সপ্তাহ শেষে আবার ফেরত নিয়ে আসেন। কাজটি করেন বিনা পারিশ্রমিকে। কাজটি সহজে করার জন্য আমেরিকাপ্রবাসী একজন নতুন একটি সাইকেল কিনে দিয়েছেন। আরেকজন দিয়েছেন স্মার্টফোন।

এ ছাড়া অভিযাত্রিক ফাউন্ডেশন ও বিকাশ লিমিটেড বই দিয়েছে। সাবেক সরকারি কর্মকর্তা এমদাদুল হক খোকন মাজালিয়া গণপাঠাগার, সাবেক নারী ক্রিকেটার আরিফা জাহান বিথি গ্রামনিখাই গণপাঠাগার, রামিসা চৌধুরী দোলভিটি গণপাঠাগার তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন।

আতিফ বলেন, ‘বই নিয়ে একেক সপ্তাহে একেক এলাকায় যাই। এখন বিভিন্ন গ্রামে পাঠাগার করে দিয়েছি। সেখান থেকেও সহজেই পাঠক বই নিয়ে পড়তে পারে। ’ ২০২০ সালে সরিষাবাড়ীতে তিন দিনব্যাপী বইমেলারও আয়োজন করেছিলেন আতিফ।

পাঠাগার করেন বলে একটা সময় অনেকে ‘পাগল’ বলত তাকে। কিন্তু আতিফ দমে যাননি। উপজেলার ছয়টি গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন পাঠাগার। মাজালিয়া, হাসড়া, গ্রামনিখাই, হরখালী, রামানন্দপুর, দোলভিটি গ্রামে গণপাঠাগার করা হয়েছে। সেগুলো একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির অধীনে বা একটা টিমের অধীনে চলছে। পাঠাগারগুলোয় তিন হাজারের বেশি বই আছে।

আতিফের উপজেলায় রয়েছে রেলওয়ে স্টেশন। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের যাতায়াত। এই প্ল্যাটফরমকে ঘিরে বই পড়া আন্দোলনের জাগরণ ঘটাতেই তার মাথায় আসে স্টেশন পাঠাগারের ভাবনা। স্টেশনে অপেক্ষমাণ যাত্রীরা যাতে অবসর সময়ে বই পড়তে পারে। ২০২০ সালের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশে প্রথম রেলওয়ে স্টেশনভিত্তিক ‘ইস্টিশন পাঠাগার’-এর যাত্রা শুরু করলেন। নিজ উপজেলার তিনটি স্টেশনে আন্তনগর ট্রেন থামে।

সরিষাবাড়ী, তারাকান্দি ও অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান তালুকদার নামক তিনটি স্টেশনে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠা করেছেন পাঠাগার। স্টেশনের একটি নির্দিষ্ট দোকানে একটি বুকশেলফে বই থাকে। সেখান থেকে বই নিয়ে পড়তে পারে যাত্রীরা। সামনে ময়মনসিংহ, জামালপুর, জয়দেবপুর, ভৈরব, লালমনিরহাট, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধায় ‘ইস্টিশন পাঠাগার’ উদ্বোধন করা হবে।

টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থেকে সীমানা নদী ঝিনাই পার হয়ে জামালপুরের তারাকান্দি যেতে হয় সরু পিচঢালা রাস্তা দিয়ে। কয়েকটি গ্রামকে সংযুক্ত করেছে রাস্তাটি। সেখানকার চারটি গ্রাম হাসড়া, মাজালিয়া, দোলভিটি ও চাপারকোনায় মিলন স্মৃতি পাঠাগারের রয়েছে চারটি পথ লাইব্রেরি। উদ্বোধনের দিন গ্রো ইওর রিডার ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা সব গ্রামকে রাঙিয়ে দিয়েছেন ছবি এঁকে, বিশেষ করে শিশুদের জানানোর জন্য, যাতে তাদের বই পড়ার আগ্রহ বাড়ে।

মিলন স্মৃতি পাঠাগারে এখনো একসঙ্গে অনেকে বসে পড়ার মতো পর্যাপ্ত জায়গা নেই। স্থায়ী একটি ভবন হলে বসে পড়া ও পাঠচক্র করতে সুবিধা হয় বলে জানালেন আতিফ। সামনে দেশের ১০০টি রেলওয়ে স্টেশনে ইস্টিশন পাঠাগার স্থাপন করতে চান তিনি। বললেন, ‘আমার স্বপ্ন দেশের প্রতিটি গ্রামে একটি করে পাঠাগার হবে। সবাই সেখানে বই পড়বে। আমাদের মধ্যে বই দেওয়া-নেওয়ার একটি সংস্কৃতি গড়ে উঠবে। ’