৩২ বছর বন্ধ নির্বাচন, রাকসু এখন গান বাজনার আড্ডাখানা

রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ধোঁয়াশায় রয়ে গেল। রাকসু ভবনে এখন চলে গান বাজনার জমজমাট আসর। প্রতিবছরই নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল অবস্থায় আছে নির্বাচন। রাকসু সচল করার কোনো আন্তরিকতা চোখে মেলে না। এমনকি নির্ধারিত ভবনে রাকসু নামটাও মুছে গিয়েছে, খসে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ১৯৯০ সালের পর থেকে সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

রাকসু নির্বাচন না হওয়ার পিছনের রহস্যে ছাত্র সংগঠনগুলো ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একে অপরের বিপক্ষে অবস্থান করছে। ছাত্র সংগঠনগুলো সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাবকে দায়ী করলেও প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংগঠনগুলোর একাত্মতার অভাবকে দায়ী করছে। শিক্ষার্থীরা চাইলে যেকোনো সময় রাকসু নির্বাচন দিতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তাহলে দায় কার? এ যেন শুভঙ্করের ফাঁকি।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন রাকসু নির্বাচন না হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িয়ে পড়েছেন হলের সিট বাণিজ্য, হল দখল, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে।এতে একদিকে যেমন সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ নেই, অন্যদিকে ভালো নেতৃত্বও তৈরি হচ্ছেনা।

জানা যায়, ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। ওই সময় এর নাম ছিল রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাসু)। মাঝখানে আইয়ুব খানের শাসনামলে এর কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর ১৯৬২ সালে এটি যাত্রা শুরু করে রাকসু নামে। এখন পর্যন্ত ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের জন্য। এর মধ্যে ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে সামরিক শাসনামলে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল রাকসু।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মহব্বত হোসেন মিলন মানবজমিনকে বলেন, ক্ষমতাসীন কোন সরকারই রাকসু নির্বাচন চায় না। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাকসু নির্বাচনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আছে। ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য হারানোর ভয়ে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় ছাত্র সংসদ নির্বাচন না দেওয়ার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাণচঞ্চল ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণ করার জন্য রাকসু নির্বাচন অতি জরুরি। তাই সকল শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আমরা আবারও আন্দোলনে যাবো।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর মানবজমিনকে বলেন, রাকসু কার্যকর না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকারের কথা বলতে পারছে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। সত্যিকার অর্থে প্রশাসন রাকসু চায় না। কারণ এখন তারা যেভাবে সব সিদ্ধান্ত এককভাবে নিতে পারছে, রাকসু সচল থাকলে তা আর পারবে না। তাই মূলত রাকসু হচ্ছে না। নির্বাচনের দাবিতে আমরা আবারও আন্দোলন শুরু করেছি। ইতোমধ্যেই ১৪ দফা দাবি জানিয়েছি। আশা করি এবার রাকসু সচল করতে প্রশাসন সদিচ্ছার কোনো অভাব দেখাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকা রাকসুকে যদি সচল করতে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে পরামর্শের মাধ্যমে একটা পর্যায়ে আসতে হবে। রাকসু কার্যকর করার জন্য প্রশাসন সবসময় সচেষ্ট আছে। আমরাও চাই যে রাকসু নির্বাচনটা হোক। রাকসু নির্বাচন না হওয়ায় যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ এখান থেকেই তো দেশনেতৃত্বের কারিগররা বের হবে।

৩২ বছর বন্ধ নির্বাচন, রাকসু এখন গান বাজনার আড্ডাখানা

রাবি প্রতিনিধি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন ধোঁয়াশায় রয়ে গেল। রাকসু ভবনে এখন চলে গান বাজনার জমজমাট আসর। প্রতিবছরই নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে স্থিতিশীল অবস্থায় আছে নির্বাচন। রাকসু সচল করার কোনো আন্তরিকতা চোখে মেলে না। এমনকি নির্ধারিত ভবনে রাকসু নামটাও মুছে গিয়েছে, খসে খসে পড়ছে পলেস্তারা। ১৯৯০ সালের পর থেকে সংগঠনটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

রাকসু নির্বাচন না হওয়ার পিছনের রহস্যে ছাত্র সংগঠনগুলো ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একে অপরের বিপক্ষে অবস্থান করছে। ছাত্র সংগঠনগুলো সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার অভাবকে দায়ী করলেও প্রশাসন বলছে ভিন্ন কথা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্র সংগঠনগুলোর একাত্মতার অভাবকে দায়ী করছে। শিক্ষার্থীরা চাইলে যেকোনো সময় রাকসু নির্বাচন দিতে প্রস্তুত রয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রশাসন। তাহলে দায় কার? এ যেন শুভঙ্করের ফাঁকি।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, দীর্ঘদিন রাকসু নির্বাচন না হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থাকা দলগুলোর ছাত্রসংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়িয়ে পড়েছেন হলের সিট বাণিজ্য, হল দখল, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে।এতে একদিকে যেমন সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার কেউ নেই, অন্যদিকে ভালো নেতৃত্বও তৈরি হচ্ছেনা।

জানা যায়, ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর প্রথম রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৫৬-৫৭ মেয়াদে। ওই সময় এর নাম ছিল রাজশাহী ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (রাসু)। মাঝখানে আইয়ুব খানের শাসনামলে এর কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর ১৯৬২ সালে এটি যাত্রা শুরু করে রাকসু নামে। এখন পর্যন্ত ১৪ বার রাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের জন্য। এর মধ্যে ১৯৭০ থেকে ১৯৭২ সাল কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। পরে সামরিক শাসনামলে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৮১ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল রাকসু।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাবি শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি মহব্বত হোসেন মিলন মানবজমিনকে বলেন, ক্ষমতাসীন কোন সরকারই রাকসু নির্বাচন চায় না। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাকসু নির্বাচনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে আছে। ফ্যাসিবাদী শাসন টিকিয়ে রাখতে ও ক্যাম্পাসে আধিপত্য হারানোর ভয়ে সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় ছাত্র সংসদ নির্বাচন না দেওয়ার চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রাণচঞ্চল ও গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস বিনির্মাণ করার জন্য রাকসু নির্বাচন অতি জরুরি। তাই সকল শিক্ষার্থীদের সাথে নিয়ে আমরা আবারও আন্দোলনে যাবো।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের আহ্বায়ক আব্দুল মজিদ অন্তর মানবজমিনকে বলেন, রাকসু কার্যকর না থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকারের কথা বলতে পারছে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাকসু নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। সত্যিকার অর্থে প্রশাসন রাকসু চায় না। কারণ এখন তারা যেভাবে সব সিদ্ধান্ত এককভাবে নিতে পারছে, রাকসু সচল থাকলে তা আর পারবে না। তাই মূলত রাকসু হচ্ছে না। নির্বাচনের দাবিতে আমরা আবারও আন্দোলন শুরু করেছি। ইতোমধ্যেই ১৪ দফা দাবি জানিয়েছি। আশা করি এবার রাকসু সচল করতে প্রশাসন সদিচ্ছার কোনো অভাব দেখাবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সুলতান-উল-ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অচল থাকা রাকসুকে যদি সচল করতে হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে পরামর্শের মাধ্যমে একটা পর্যায়ে আসতে হবে। রাকসু কার্যকর করার জন্য প্রশাসন সবসময় সচেষ্ট আছে। আমরাও চাই যে রাকসু নির্বাচনটা হোক। রাকসু নির্বাচন না হওয়ায় যেমন বিশ্ববিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ এখান থেকেই তো দেশনেতৃত্বের কারিগররা বের হবে।