৬৭ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন আবুল কালাম

প্রতিনিধি, শেরপুর

এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৯৭৮ সালে। অসচ্ছল পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে শেষ পর্যন্ত আর সে পরীক্ষা দেয়া হয়নি। এরপর কেটে গেছে আরও ৪৪ বছর। বয়স গড়িয়েছে পঁয়ষট্টির কোঠায়। এর মধ্যে তিন সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু মনের মধ্যে পড়ালেখা করার ইচ্ছাটা পুষে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৬৭ বছর বয়সে এসে বসলেন এসএসসি পরীক্ষায়। নাতি-নাতনিদের বয়সীদের পাশে পরীক্ষায় বসে শেষ পর্যন্ত পাসও করেছেন।

অদম্য মানসিকতা নিয়ে বয়সকে নিছক সংখ্যায় পরিণত করে এমন সাফল্য দেখিয়েছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার আবুল কালাম আজাদ। এ বছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার রাহিলা কাদির উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।

সোমবার দুপুরে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, তিনি জিপিএ ২.৯৫ পেয়ে মাধ্যমিকের গণ্ডি উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আবুল কালাম আজাদের বাড়ি শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের লঙ্গরপাড়া গ্রামে। মৃত আব্দুল রশিদ মণ্ডলের ছেলে তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তার জন্ম তারিখ ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ।

আবুল কালাম আজাদ জানালেন, ১৯৭৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা না দিয়ে সংসারের খরচ জোগাতে ঢাকা চলে আসেন তিনি। ২২ বছর ঢাকায় কাটে তার। এর মধ্যে বিয়ে করেন। সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাড়ি দেন সৌদি আরবে। ১৮ বছরের প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরেন। সন্তানদের পড়ালেখা করান। তার বড় ছেলে ইংরেজির শিক্ষক, মেজো ছেলে কামিল পাস করেছেন, ছোট ছেলে পেশায় প্রকৌশলী। সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেও নিজে আর পড়ালেখা করতে পারেননি কালাম।

তবে এই সময়ে লেখালেখি শুরু করেন তিনি। দুটি কবিতার বই প্রকাশ করেছেন তিনি। লিখেছেন গল্প, উপন্যাস, গান। সেগুলোর পাণ্ডুলিপি যত্ন করে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। এলাকাতেও তিনি ‘কবি কালাম’ নামেই পরিচিত।

পড়ালেখার প্রতি দুর্বলতা থেকেই শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালে বকশীগঞ্জের চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হন আবুল কালাম। ২০২১ সালে প্রথম সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হন। এরপর গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলেন তিনি।

পরীক্ষায় পাসের পর কেমন লাগছে- জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ছোট ছেলে আরিফুলের কাছ থেকে পরীক্ষায় পাসের খবরটি পাই। খুব ভালো লাগছে। এলাকার অনেকেই প্রথম হাসাহাসি করলেও এখন আমি পাস করায় সবাই রেজাল্ট শুনতে আসছে। আর শিক্ষার কোনো বয়স নেই। তাই আমি আমার ইচ্ছাটা শেষ বয়সে হলেও পূরণ করতে চেয়েছিলাম। আমার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।’

তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘আমাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। ছেলেরা যেহেতু পড়ালেখার জন্য সহযোগিতা করতাছে, তাই আমি উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।’

আবুল কালামের মেজো ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের তিন ভাইকে পড়ালেখা করিয়ে ভালো চাকরির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। তার নিজের ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। এখন তার ইচ্ছাপূরণ হয়েছে। বাবা আরও পড়ালেখা করতে চাইলে আমরাও তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করব।’

এদিকে শেষ বয়সের এমন সাফল্যে এলাকায় বেশ প্রশংসিত হচ্ছেন আবুল কালাম। খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া।

আবুল কালাম আজাদ অবশ্য আরেকটি ইচ্ছার কথাও জানালেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ২৭টি এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৫টি কবিতা লিখেছেন তিনি। নিজের লেখা কবিতাগুলো প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দিতে চান তিনি।

৬৭ বছর বয়সে এসএসসি পাস করলেন আবুল কালাম

প্রতিনিধি, শেরপুর

এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৯৭৮ সালে। অসচ্ছল পরিবারের আর্থিক অনটনের কারণে শেষ পর্যন্ত আর সে পরীক্ষা দেয়া হয়নি। এরপর কেটে গেছে আরও ৪৪ বছর। বয়স গড়িয়েছে পঁয়ষট্টির কোঠায়। এর মধ্যে তিন সন্তানকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। কিন্তু মনের মধ্যে পড়ালেখা করার ইচ্ছাটা পুষে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ৬৭ বছর বয়সে এসে বসলেন এসএসসি পরীক্ষায়। নাতি-নাতনিদের বয়সীদের পাশে পরীক্ষায় বসে শেষ পর্যন্ত পাসও করেছেন।

অদম্য মানসিকতা নিয়ে বয়সকে নিছক সংখ্যায় পরিণত করে এমন সাফল্য দেখিয়েছেন শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার আবুল কালাম আজাদ। এ বছর উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার রাহিলা কাদির উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি।

সোমবার দুপুরে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, তিনি জিপিএ ২.৯৫ পেয়ে মাধ্যমিকের গণ্ডি উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আবুল কালাম আজাদের বাড়ি শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়নের লঙ্গরপাড়া গ্রামে। মৃত আব্দুল রশিদ মণ্ডলের ছেলে তিনি। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, তার জন্ম তারিখ ১৯৫৫ সালের ১ মার্চ।

আবুল কালাম আজাদ জানালেন, ১৯৭৮ সালে এসএসসি পরীক্ষা না দিয়ে সংসারের খরচ জোগাতে ঢাকা চলে আসেন তিনি। ২২ বছর ঢাকায় কাটে তার। এর মধ্যে বিয়ে করেন। সংসারের খরচ বেড়ে যাওয়ায় পাড়ি দেন সৌদি আরবে। ১৮ বছরের প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরেন। সন্তানদের পড়ালেখা করান। তার বড় ছেলে ইংরেজির শিক্ষক, মেজো ছেলে কামিল পাস করেছেন, ছোট ছেলে পেশায় প্রকৌশলী। সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারলেও নিজে আর পড়ালেখা করতে পারেননি কালাম।

তবে এই সময়ে লেখালেখি শুরু করেন তিনি। দুটি কবিতার বই প্রকাশ করেছেন তিনি। লিখেছেন গল্প, উপন্যাস, গান। সেগুলোর পাণ্ডুলিপি যত্ন করে সংরক্ষণ করে রেখেছেন। এলাকাতেও তিনি ‘কবি কালাম’ নামেই পরিচিত।

পড়ালেখার প্রতি দুর্বলতা থেকেই শেষ পর্যন্ত ২০২০ সালে বকশীগঞ্জের চন্দ্রাবাজ রশিদা বেগম হাইস্কুলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হন আবুল কালাম। ২০২১ সালে প্রথম সেমিস্টারে উত্তীর্ণ হন। এরপর গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হলেন তিনি।

পরীক্ষায় পাসের পর কেমন লাগছে- জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘ছোট ছেলে আরিফুলের কাছ থেকে পরীক্ষায় পাসের খবরটি পাই। খুব ভালো লাগছে। এলাকার অনেকেই প্রথম হাসাহাসি করলেও এখন আমি পাস করায় সবাই রেজাল্ট শুনতে আসছে। আর শিক্ষার কোনো বয়স নেই। তাই আমি আমার ইচ্ছাটা শেষ বয়সে হলেও পূরণ করতে চেয়েছিলাম। আমার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে।’

তবে এখানেই থেমে থাকতে চান না আবুল কালাম। তিনি বলেন, ‘আমাকে আরও অনেক দূর যেতে হবে। ছেলেরা যেহেতু পড়ালেখার জন্য সহযোগিতা করতাছে, তাই আমি উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাব।’

আবুল কালামের মেজো ছেলে আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘বাবা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। আমাদের তিন ভাইকে পড়ালেখা করিয়ে ভালো চাকরির ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। তার নিজের ইচ্ছা ছিল পড়ালেখা করার। এখন তার ইচ্ছাপূরণ হয়েছে। বাবা আরও পড়ালেখা করতে চাইলে আমরাও তাকে যথাসাধ্য সহযোগিতা করব।’

এদিকে শেষ বয়সের এমন সাফল্যে এলাকায় বেশ প্রশংসিত হচ্ছেন আবুল কালাম। খড়িয়াকাজীরচর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাকে সংবর্ধনা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া।

আবুল কালাম আজাদ অবশ্য আরেকটি ইচ্ছার কথাও জানালেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ২৭টি এবং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৫টি কবিতা লিখেছেন তিনি। নিজের লেখা কবিতাগুলো প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌঁছে দিতে চান তিনি।