বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা
নাঈম ইসলাম সংগ্রাম
![](https://shikkha-shikkhangan.com/wp-content/uploads/2023/04/IMG-20230421-WA0014-1.jpg)
রেহমান সোবহান, মো. সুমন আহমেদ, রাবেয়া বসরী আনিকা, আসিফ বিল্লাহ্, মো. হৃদয় আহম্মেদ এবং মো. শান্ত ইসলাম।
মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম একটি হলো পবিত্র ইদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পরে প্রতিটি মুসলমানের জীবনে আনন্দের বার্তা নিয়ে আগমন হয় পবিত্র ইদুল ফিতরের। নাড়ীর টানে, ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে সকলেই চলে যান তাদের নিজ নিজ এলাকায়। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও দীর্ঘদিন একাডেমিক ব্যস্ততার পরে এক দীর্ঘ ছুটি পায় পবিত্র ইদুল ফিতরে।সকলের ন্যায় তারাও পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করতে নিজ নিজ এলাকায় চলে যান ইদের বেশ কিছু দিন আগেই। পবিত্র ঈদুল ফিতর তাদের কাছে কীভাবে উপস্থিত হয় আর তারাই বা ঈদ নিয়ে কী ভাবেন তাই তুলে ধরবো আপনাদের মাঝে।
রেহমান সোহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: মানুষ পরিবর্তনশীল, পৃথিবী পরিবর্তনশীল, সেই পরিবর্তনের পরিক্রমায় আমাদের ইদও পরিবর্তনশীল! এটি একটি নির্মল এবং নিরেট সত্য, যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আজ থেকে ১০ বছর আগের ঈদের সাথে এখনকার ইদের যেমন অজস্র পার্থক্য, ঠিক তেমনই এখনকার ইদের সাথে আজ থেকে ১০ বছর পরের ইদেরও অজস্র পার্থক্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
তবে এসব পার্থক্যের পেছনে ধাবমান না হওয়াই আমাদের উচিত, আত্মোপলব্ধির জায়গা খুঁজে বের করা, নিজেকে চেনা, এবং খুশির আমেজ চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া, নিজে ধারণ করা।
ইদ মানে খুশি, ইদ মানে আনন্দ, এই আনন্দে ভরে উঠুক আমাদের ধরণী, মুছে যাক সকল বাঁধা। আশেপাশের সবাইকে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠে, নিজেদের জীবনকে নতুনভাবে সাজানোর বার্তা নিয়েই আসে ইদ। নিজের কাছে নিজের এটাই একমাত্র চাওয়া যেনো নিজের পরিবার, বন্ধু-স্বজন, আত্মীয়দের সাথে নিয়ে এই আনন্দে শরীক হতে পারি। সকল হতাশা, জীর্ণতা দূর করে, নতুন কর্মস্পৃহায় এগিয়ে যেতে পারি এবং এই বার্তা পৌঁছে দিতে পারি সবার কাছে। পরিশেষে সবাইকে জানাতে চাই অনেক অনেক মোবারকবাদ। ইদ মোবারক!
মো. সুমন আহমেদ, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ইদ শব্দের অর্থ উৎসব, আনন্দ। আমার কাছেও ইদ মানে উৎসব, আনন্দ ও উল্লাসের সাথে সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া। আচ্ছা, ছোটবেলা থেকে আমি যেভাবে ইদ উদযাপন করি, সেইটা আগে আপনাদেরকে বলি, ইদের দিন ভোরবেলা আম্মুর ডাকে ঘুম থেকে উঠি। তারপর গোসল করে নতুন কাপড় পড়ে পরিবারের সবাই মিলে আম্মুর হাতে রান্না করা সেমাই, পায়েস বাহারি রকম খাবার খাই। খাবার খাওয়া শেষ করতে করতেই দেখব, ইদের নামাজে একসাথে যাওয়ার জন্য আমাদের বাসাতে আমার মামারা চলে এসেছেন। তারপর আম্মুর জড়াজড়িতে তারাও হালকা খাওয়া-দাওয়া করে নেয় এবং ইদের নামাজে যাওয়ার আগে আমাকে সালামি দেয়। সালামি পেতে কার না ভালো লাগে, আমারও খুব ভালো লাগে। তারপর আমি সবার সাথে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই আমাদের গ্রামের ছোট্ট একটা ইদগাহ মাঠে, ইদের নামাজ আদায় করতে।
নামাজ শেষে বন্ধু-বান্ধব সবার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, একজন আরেকজনের বাসায় গিয়ে আমরা গল্প করি, আড্ডা দেই, খাওয়া-দাওয়া করি। তারপর শেষ বেলার দিকে আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাই। এভাবে করে আনন্দ উল্লাসের সাথে কাটে আমার ইদের দিন। এখন আমি বড় হয়েছি চাইলেই নিজের মতো করে ইদ উদযাপন করতে পারবো। ৬ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা হেঁটে ছোট্ট ইদগা মাঠে না গিয়ে হয়তো বড় কোন ইদগা মাঠে গিয়ে ইদের নামাজ পড়তে পারবো, কিন্তু সেখানে আমার সেই আনন্দটা যে আমি কোনোদিনই পাবো না। তাইতো ইদের ঘণ্টা বাজার আগেই সবকিছু ছেড়ে, নাড়ির টানে চলে এসেছি বাড়িতে।
ছোটবেলার মতো করেই আমি আমার ইদটা এ বছর সবার সাথে উদযাপন করতে চাই। শুধু এবছর না, যত বড়ই হই না কেন, যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন আমি আমার ইদটা এই ভাবেই উদযাপন করতে চাই। কারণ, আমার কাছে ইদ মানে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন পোশাক পরা, আম্মুর হাতে রান্না করার সেমাই-পায়েস খাওয়া, সবার সাথে হেঁটে হেঁটে ইদগা মাঠে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে গল্প করা, আড্ডা দেওয়া, খুঁনসুটি করা, ঘুরতে যাওয়া!
রাবেয়া বসরী আনিকা, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর: ছোটবেলায় ইদ মানেই ছিল একটা ইমোশন! রমজান মাস আসলেই কবে জামা কিনবো, ম্যাচিং জুতা কিনবো, মেহেদী কে পড়িয়ে দিবে, কোথায় কোথায় ঘুরবো, কার থেকে সালামি নিবো, কে সবচেয়ে বেশি সালামি পেলো, এই সব নিয়ে উত্তেজনায় এ যেনো ঘুম-ই আসতো না
কত কত মিষ্টি মুহূর্ত ছিল ঠিক ইদের দিনের ডেজার্ট এর মত-ই মিষ্টি সেই স্মৃতিগুলো! হয়তো শুনতে খারাপ লাগবে কিন্তু আমরা যত বড় হচ্ছি, এই মিষ্টি স্মৃতিগুলো আমাদের থেকে তত দূরে চলে যাচ্ছে আর এর জন্য আমরা, আমাদের বড় হয়ে যাওয়া চিন্তা ভাবনাগুলোই দায়ী। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই এক মাস রমজানের পর এই দিন টা দিয়েছেন’ই আনন্দ করতে।
কিন্তু আমরা এখন বলি যে, না আমার ইদে কোনো পরিকল্পনা নেই। সারাদিন ঘুমাবো ব্যাস! যেখানে আল্লাহ তা-আলা নিজে চেয়েছেন আমরা নতুন জামা পড়ি, পরিবারের সবার সাথে আনন্দ করি। সেখানে কেনো ঘুমিয়ে দিন টা নষ্ট করে দিচ্ছি আমরা! অথচ পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফার্স্ট নাইট, নিউ ইয়ার, ভ্যালেন্টাইন ডে, পহেলা ফাল্গুন নিয়ে আমাদের কত পরিকল্পনা।আমরাই বলি ইসস্ যদি আবার বাচ্চা কালে ফিরে যেতে পারতাম! অথচ আমাদেরই বড় হওয়ার কতো বেশি তাড়া! বাসার সবার সাথে এবারের ঈদ টা ছোট বেলার মতো করে উদযাপন করে দেখেন একবার সেই ছোটবেলার মিষ্টি স্মৃতিগুলো ঠিক উঁকি দিবে।
আগে যেমন মা হাতে মেহেদি পড়িয়ে দিতো, এবার নাহয় আমিই মাকে মেহেদী পড়িয়ে দিবো, ইকটু সাজিয়ে দিবো যেভাবে ছোট্টবেলায় মা লিপস্টিক দিয়ে দিত! বাবাকে সেমাই খাইয়ে হাত বাড়িয়ে বলবো, কই আমার সালামি দিলে না যে! এভাবেই সবার ঈদ অনেক বেশি মিষ্টি কাটুক। ইদ মুবারাক।
আসিফ বিল্লাহ্, মার্কেটিং বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: ইদ মানে আনন্দ, ইদ মানে উল্লাস। ইদ মানে একে অপরের সাথে সকল আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। ইদ শব্দ শুনলেই মনের মাঝে এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। সময়ের স্রোতে আমরা ছোট থেকে বড় হয়ে গেছি। এখন ইদ শব্দ শুনলে আর আগের মত আবেগতাড়িত হই না। সময়ের সাথে কমে গেছে ইদের আনন্দ। ছোট বেলার ইদ বলতে ছিল দুই হাত ভর্তি করে মেহেদী দেওয়া, বড়দের থেকে সালামি নেওয়া, বন্ধুদের বাড়িতে সবাই মিলে দল বেধে ঘুরতে যাওয়াসহ আরও কত কি। সত্যি বলতে ছোট বেলার সেই ইদ কে অনেক মিস করি। আমাদের সবার জীবনে সেই শৈশবের ইদ বার বার ফিরে আসুক।
মো. হৃদয় আহম্মেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ: ঈদ-উল-ফিতর আনন্দ এবং আনন্দের দিন, এটি আশীর্বাদ এবং সম্প্রীতির দিন, এটি চিন্তা করার এবং বিবেচনা করার একটি দিন, এটি পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে আনন্দ করার দিন। রমজানের শেষে খুশির বার্তা বহন করে নিয়ে আসে ইদ। ইদ প্রত্যেক মুসলিম পরিবারের জন্য একটি আনন্দ ও খুশির দিন।
ঈদুল ফিতর, ঈদের নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেমাই, পায়েশ, পিঠা, খুরমা, খেজুর, বিরিয়ানি আরও কত কি! আনন্দের এই উৎসবে অনেক মজা করা হয় এবং নানা আয়োজনও করা হয়। ছোট-বড়, ধনী-গরীব সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমরা সবাই ইদ আনন্দে মেতে উঠি। ইদের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ইদের নামাজ পড়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরতে বের হওয়া, একে অন্যের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, নানান রকম আনন্দ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আমরা ইদ উদযাপন করে থাকি। শত প্রতিকূলতার মাঝে সকলের জীবনে ইদ বয়ে আনুক নির্মূল আনন্দ। সকলের ইদ আনন্দের সাথে, সুস্থ অবস্থায়, সুন্দরভাবে কাটুক এই শুভকামনা করি।
মো. শান্ত ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: ভার্সিটিতেই সবকিছু করি, কখনো ইদটাই শুধু পালন করা হলোনা। ইচ্ছে হয়েছিলো একবার দল ধরে হলে থেকে যেতে।পরিবারের বাইরে একগাদা বন্ধু নিয়ে আমার ইদ মন্দ যেতো না, কিন্তু আমাকে ছাড়া পরিবারের ইদটাই যে হতোনা! আমার কাছে ইদ মানে খুব বেশি কিছু না। আমার কাছে ইদ মানে মায়ের পথচেয়ে বসে থাকা, ইদ মানে বাবার ছোট্ট একটা ফোনকল, কবে আসছি জানতে চাওয়ার আকুতি। আর পৃথিবী ছেড়ে যাওয়াদের জন্য কিছুটা মন খারাপ। ইদ আনন্দ মিশ্রিত শব্দ হলেও অনেক পরিবারে ইদ আসে দুঃস্বপ্নের মতো। নিরাপদ হোক আমাদের নীড়ে ফেরা, নিরাপদ হোক বাংলাদেশ, ভালো কাটুক সকলের ইদ। ইদ মোবারক।
লেখক: বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ।
অনুলিখন: নাঈম ইসলাম সংগ্রাম, মার্কেটিং বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।
![](https://shikkha-shikkhangan.com/wp-content/uploads/2023/01/logo-removebg-preview-1.png)
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের ঈদ ভাবনা
নাঈম ইসলাম সংগ্রাম
![](https://shikkha-shikkhangan.com/wp-content/uploads/2023/04/IMG-20230421-WA0014-1.jpg)
রেহমান সোবহান, মো. সুমন আহমেদ, রাবেয়া বসরী আনিকা, আসিফ বিল্লাহ্, মো. হৃদয় আহম্মেদ এবং মো. শান্ত ইসলাম।
মুসলমানদের দুটি প্রধান ধর্মীয় উৎসবের অন্যতম একটি হলো পবিত্র ইদুল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখার পরে প্রতিটি মুসলমানের জীবনে আনন্দের বার্তা নিয়ে আগমন হয় পবিত্র ইদুল ফিতরের। নাড়ীর টানে, ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে সকলেই চলে যান তাদের নিজ নিজ এলাকায়। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও দীর্ঘদিন একাডেমিক ব্যস্ততার পরে এক দীর্ঘ ছুটি পায় পবিত্র ইদুল ফিতরে।সকলের ন্যায় তারাও পবিত্র ঈদুল ফিতর পালন করতে নিজ নিজ এলাকায় চলে যান ইদের বেশ কিছু দিন আগেই। পবিত্র ঈদুল ফিতর তাদের কাছে কীভাবে উপস্থিত হয় আর তারাই বা ঈদ নিয়ে কী ভাবেন তাই তুলে ধরবো আপনাদের মাঝে।
রেহমান সোহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: মানুষ পরিবর্তনশীল, পৃথিবী পরিবর্তনশীল, সেই পরিবর্তনের পরিক্রমায় আমাদের ইদও পরিবর্তনশীল! এটি একটি নির্মল এবং নিরেট সত্য, যা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আজ থেকে ১০ বছর আগের ঈদের সাথে এখনকার ইদের যেমন অজস্র পার্থক্য, ঠিক তেমনই এখনকার ইদের সাথে আজ থেকে ১০ বছর পরের ইদেরও অজস্র পার্থক্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
তবে এসব পার্থক্যের পেছনে ধাবমান না হওয়াই আমাদের উচিত, আত্মোপলব্ধির জায়গা খুঁজে বের করা, নিজেকে চেনা, এবং খুশির আমেজ চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া, নিজে ধারণ করা।
ইদ মানে খুশি, ইদ মানে আনন্দ, এই আনন্দে ভরে উঠুক আমাদের ধরণী, মুছে যাক সকল বাঁধা। আশেপাশের সবাইকে নিয়ে আনন্দে মেতে উঠে, নিজেদের জীবনকে নতুনভাবে সাজানোর বার্তা নিয়েই আসে ইদ। নিজের কাছে নিজের এটাই একমাত্র চাওয়া যেনো নিজের পরিবার, বন্ধু-স্বজন, আত্মীয়দের সাথে নিয়ে এই আনন্দে শরীক হতে পারি। সকল হতাশা, জীর্ণতা দূর করে, নতুন কর্মস্পৃহায় এগিয়ে যেতে পারি এবং এই বার্তা পৌঁছে দিতে পারি সবার কাছে। পরিশেষে সবাইকে জানাতে চাই অনেক অনেক মোবারকবাদ। ইদ মোবারক!
মো. সুমন আহমেদ, আইন বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: ইদ শব্দের অর্থ উৎসব, আনন্দ। আমার কাছেও ইদ মানে উৎসব, আনন্দ ও উল্লাসের সাথে সারাদিন কাটিয়ে দেওয়া। আচ্ছা, ছোটবেলা থেকে আমি যেভাবে ইদ উদযাপন করি, সেইটা আগে আপনাদেরকে বলি, ইদের দিন ভোরবেলা আম্মুর ডাকে ঘুম থেকে উঠি। তারপর গোসল করে নতুন কাপড় পড়ে পরিবারের সবাই মিলে আম্মুর হাতে রান্না করা সেমাই, পায়েস বাহারি রকম খাবার খাই। খাবার খাওয়া শেষ করতে করতেই দেখব, ইদের নামাজে একসাথে যাওয়ার জন্য আমাদের বাসাতে আমার মামারা চলে এসেছেন। তারপর আম্মুর জড়াজড়িতে তারাও হালকা খাওয়া-দাওয়া করে নেয় এবং ইদের নামাজে যাওয়ার আগে আমাকে সালামি দেয়। সালামি পেতে কার না ভালো লাগে, আমারও খুব ভালো লাগে। তারপর আমি সবার সাথে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই আমাদের গ্রামের ছোট্ট একটা ইদগাহ মাঠে, ইদের নামাজ আদায় করতে।
নামাজ শেষে বন্ধু-বান্ধব সবার সাথে দেখা-সাক্ষাৎ হয়, একজন আরেকজনের বাসায় গিয়ে আমরা গল্প করি, আড্ডা দেই, খাওয়া-দাওয়া করি। তারপর শেষ বেলার দিকে আমরা সবাই মিলে ঘুরতে যাই। এভাবে করে আনন্দ উল্লাসের সাথে কাটে আমার ইদের দিন। এখন আমি বড় হয়েছি চাইলেই নিজের মতো করে ইদ উদযাপন করতে পারবো। ৬ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা হেঁটে ছোট্ট ইদগা মাঠে না গিয়ে হয়তো বড় কোন ইদগা মাঠে গিয়ে ইদের নামাজ পড়তে পারবো, কিন্তু সেখানে আমার সেই আনন্দটা যে আমি কোনোদিনই পাবো না। তাইতো ইদের ঘণ্টা বাজার আগেই সবকিছু ছেড়ে, নাড়ির টানে চলে এসেছি বাড়িতে।
ছোটবেলার মতো করেই আমি আমার ইদটা এ বছর সবার সাথে উদযাপন করতে চাই। শুধু এবছর না, যত বড়ই হই না কেন, যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন আমি আমার ইদটা এই ভাবেই উদযাপন করতে চাই। কারণ, আমার কাছে ইদ মানে ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে গোসল করে নতুন পোশাক পরা, আম্মুর হাতে রান্না করার সেমাই-পায়েস খাওয়া, সবার সাথে হেঁটে হেঁটে ইদগা মাঠে যাওয়া, বন্ধুদের সাথে গল্প করা, আড্ডা দেওয়া, খুঁনসুটি করা, ঘুরতে যাওয়া!
রাবেয়া বসরী আনিকা, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর: ছোটবেলায় ইদ মানেই ছিল একটা ইমোশন! রমজান মাস আসলেই কবে জামা কিনবো, ম্যাচিং জুতা কিনবো, মেহেদী কে পড়িয়ে দিবে, কোথায় কোথায় ঘুরবো, কার থেকে সালামি নিবো, কে সবচেয়ে বেশি সালামি পেলো, এই সব নিয়ে উত্তেজনায় এ যেনো ঘুম-ই আসতো না
কত কত মিষ্টি মুহূর্ত ছিল ঠিক ইদের দিনের ডেজার্ট এর মত-ই মিষ্টি সেই স্মৃতিগুলো! হয়তো শুনতে খারাপ লাগবে কিন্তু আমরা যত বড় হচ্ছি, এই মিষ্টি স্মৃতিগুলো আমাদের থেকে তত দূরে চলে যাচ্ছে আর এর জন্য আমরা, আমাদের বড় হয়ে যাওয়া চিন্তা ভাবনাগুলোই দায়ী। আল্লাহ তায়ালা আমাদের এই এক মাস রমজানের পর এই দিন টা দিয়েছেন’ই আনন্দ করতে।
কিন্তু আমরা এখন বলি যে, না আমার ইদে কোনো পরিকল্পনা নেই। সারাদিন ঘুমাবো ব্যাস! যেখানে আল্লাহ তা-আলা নিজে চেয়েছেন আমরা নতুন জামা পড়ি, পরিবারের সবার সাথে আনন্দ করি। সেখানে কেনো ঘুমিয়ে দিন টা নষ্ট করে দিচ্ছি আমরা! অথচ পহেলা বৈশাখ, থার্টি ফার্স্ট নাইট, নিউ ইয়ার, ভ্যালেন্টাইন ডে, পহেলা ফাল্গুন নিয়ে আমাদের কত পরিকল্পনা।আমরাই বলি ইসস্ যদি আবার বাচ্চা কালে ফিরে যেতে পারতাম! অথচ আমাদেরই বড় হওয়ার কতো বেশি তাড়া! বাসার সবার সাথে এবারের ঈদ টা ছোট বেলার মতো করে উদযাপন করে দেখেন একবার সেই ছোটবেলার মিষ্টি স্মৃতিগুলো ঠিক উঁকি দিবে।
আগে যেমন মা হাতে মেহেদি পড়িয়ে দিতো, এবার নাহয় আমিই মাকে মেহেদী পড়িয়ে দিবো, ইকটু সাজিয়ে দিবো যেভাবে ছোট্টবেলায় মা লিপস্টিক দিয়ে দিত! বাবাকে সেমাই খাইয়ে হাত বাড়িয়ে বলবো, কই আমার সালামি দিলে না যে! এভাবেই সবার ঈদ অনেক বেশি মিষ্টি কাটুক। ইদ মুবারাক।
আসিফ বিল্লাহ্, মার্কেটিং বিভাগ, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: ইদ মানে আনন্দ, ইদ মানে উল্লাস। ইদ মানে একে অপরের সাথে সকল আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া। ইদ শব্দ শুনলেই মনের মাঝে এক অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করে। সময়ের স্রোতে আমরা ছোট থেকে বড় হয়ে গেছি। এখন ইদ শব্দ শুনলে আর আগের মত আবেগতাড়িত হই না। সময়ের সাথে কমে গেছে ইদের আনন্দ। ছোট বেলার ইদ বলতে ছিল দুই হাত ভর্তি করে মেহেদী দেওয়া, বড়দের থেকে সালামি নেওয়া, বন্ধুদের বাড়িতে সবাই মিলে দল বেধে ঘুরতে যাওয়াসহ আরও কত কি। সত্যি বলতে ছোট বেলার সেই ইদ কে অনেক মিস করি। আমাদের সবার জীবনে সেই শৈশবের ইদ বার বার ফিরে আসুক।
মো. হৃদয় আহম্মেদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ: ঈদ-উল-ফিতর আনন্দ এবং আনন্দের দিন, এটি আশীর্বাদ এবং সম্প্রীতির দিন, এটি চিন্তা করার এবং বিবেচনা করার একটি দিন, এটি পরিবার এবং বন্ধুদের সাথে আনন্দ করার দিন। রমজানের শেষে খুশির বার্তা বহন করে নিয়ে আসে ইদ। ইদ প্রত্যেক মুসলিম পরিবারের জন্য একটি আনন্দ ও খুশির দিন।
ঈদুল ফিতর, ঈদের নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেমাই, পায়েশ, পিঠা, খুরমা, খেজুর, বিরিয়ানি আরও কত কি! আনন্দের এই উৎসবে অনেক মজা করা হয় এবং নানা আয়োজনও করা হয়। ছোট-বড়, ধনী-গরীব সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে আমরা সবাই ইদ আনন্দে মেতে উঠি। ইদের দিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ইদের নামাজ পড়ে বন্ধু-বান্ধবদের সাথে ঘুরতে বের হওয়া, একে অন্যের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া, নানান রকম আনন্দ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আমরা ইদ উদযাপন করে থাকি। শত প্রতিকূলতার মাঝে সকলের জীবনে ইদ বয়ে আনুক নির্মূল আনন্দ। সকলের ইদ আনন্দের সাথে, সুস্থ অবস্থায়, সুন্দরভাবে কাটুক এই শুভকামনা করি।
মো. শান্ত ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়: ভার্সিটিতেই সবকিছু করি, কখনো ইদটাই শুধু পালন করা হলোনা। ইচ্ছে হয়েছিলো একবার দল ধরে হলে থেকে যেতে।পরিবারের বাইরে একগাদা বন্ধু নিয়ে আমার ইদ মন্দ যেতো না, কিন্তু আমাকে ছাড়া পরিবারের ইদটাই যে হতোনা! আমার কাছে ইদ মানে খুব বেশি কিছু না। আমার কাছে ইদ মানে মায়ের পথচেয়ে বসে থাকা, ইদ মানে বাবার ছোট্ট একটা ফোনকল, কবে আসছি জানতে চাওয়ার আকুতি। আর পৃথিবী ছেড়ে যাওয়াদের জন্য কিছুটা মন খারাপ। ইদ আনন্দ মিশ্রিত শব্দ হলেও অনেক পরিবারে ইদ আসে দুঃস্বপ্নের মতো। নিরাপদ হোক আমাদের নীড়ে ফেরা, নিরাপদ হোক বাংলাদেশ, ভালো কাটুক সকলের ইদ। ইদ মোবারক।
লেখক: বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ।
অনুলিখন: নাঈম ইসলাম সংগ্রাম, মার্কেটিং বিভাগ, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর।