কুষ্টিয়ায় শয়নকক্ষে ঢুকে শিক্ষিকাকে খুন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে জিলা স্কুলের এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাউজিং ডি ব্লকের ২৮৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের ছয়তলা বাড়ির দ্বিতীয়তলায় নিজের কক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার হয়।

নিহত রোকশানা খানম (৫২) কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ইংরেজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মধ্যবাজার এলাকার বাসিন্দা মৃত রওশন আলীর মেয়ে এবং একই উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মানিক খুনকারের ছেলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ যশোরের হিসাবরক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান শিশিরের স্ত্রী।

এই দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন। রোকশানার স্বামী শিশির চাকরির কারণে যশোরেই থাকেন। সপ্তাহে একবার কুষ্টিয়ার বাসায় আসেন। হাউজিংয়ের ছয়তলা ভবনটি রোকশানা খানম ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে করেছিলেন, সেই ঋণের কিস্তি তিনিই প্রতি মাসে পরিশোধ করতেন বলে পরিবার জানিয়েছে। ভবনটির ছয়তলায় রোকশানার ভাইয়ের পরিবার ভাড়া থাকে।

নিহত রোকশানার ভায়ের ছেলে নিশাদ (২২) সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে ফুফুর বাসায় দরজা ভেতর থেকে আটকানো দেখে ডাকাডাকি করি। কোনো সাড়া না পেয়ে পরে আশপাশের প্রতিবেশীর সাহায্যে ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ফুফুকে শয়নকক্ষে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। পরে পুলিশে সংবাদ দিলে তারা এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।’

রোকশানার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান শিশির জানান, হত্যাকাণ্ডের কথা জেনে তিনি যশোর থেকে কুষ্টিয়ায় ছুটে আসেন। স্কুলের কাজে গতকাল সকালে রোকশানার যশোর শিক্ষা বোর্ডে যাওয়ার কথা ছিল।

পূর্বপরিকল্পিতভাবে রোকশানাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে শিশির বলেন, ‘খুনিরা বাসায় ঢুকে কেবলমাত্র একটা পিসি ভাঙচুর করেছে। আর কোনো কিছুই নিতে পারেনি। কোনো টাকা-পয়সা বা মূল্যবান গহনা খোয়া যায়নি। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

রোকশানা কর্মপাগল মানুষ ছিলেন এবং নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করতেন বলে জানান কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. এফতে খায়রুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্রের কাজে আজ (গতকাল) সকালে উনার (রোকশানা) যশোর বোর্ডে যাওয়ার কথা ছিল। দাম্পত্য জীবনে কোনো কলহ ছিল বলে কখনো শুনিনি। তবে বাড়িটা এককভাবে করতে গিয়ে তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন। নিঃসন্তান হওয়ায় তার সম্পত্তিগত কোনো বিষয়কেন্দ্রিক কিছু থাকলেও থাকতে পারে। নাহলে শুধু শুধু তো আর একটা মানুষকে হত্যা করার কথা না।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কুষ্টিয়ার  অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু রাসেল বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারা কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাসা থেকে মূল্যবান কিছু খোয়া যায়নি। এ ছাড়া সম্ভাব্য একাধিক বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’

স্বজনরা জানান, রোকশানা ভেড়ামারা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে তিনি ভেড়ামারা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

শিক্ষাজীবন শেষে রোকশানা প্রথমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে মোস্তাফিজুর রহমান শিশিরের সঙ্গে পারিবারিকভাবেই তার বিয়ে হয়।

কুষ্টিয়ায় শয়নকক্ষে ঢুকে শিক্ষিকাকে খুন

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

কুষ্টিয়া শহরের হাউজিং এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে জিলা স্কুলের এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে হাউজিং ডি ব্লকের ২৮৫ নম্বর হোল্ডিংয়ের ছয়তলা বাড়ির দ্বিতীয়তলায় নিজের কক্ষ থেকে ওই শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার হয়।

নিহত রোকশানা খানম (৫২) কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের ইংরেজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন। তিনি কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মধ্যবাজার এলাকার বাসিন্দা মৃত রওশন আলীর মেয়ে এবং একই উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা মানিক খুনকারের ছেলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ যশোরের হিসাবরক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান শিশিরের স্ত্রী।

এই দম্পতি নিঃসন্তান ছিলেন। রোকশানার স্বামী শিশির চাকরির কারণে যশোরেই থাকেন। সপ্তাহে একবার কুষ্টিয়ার বাসায় আসেন। হাউজিংয়ের ছয়তলা ভবনটি রোকশানা খানম ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে করেছিলেন, সেই ঋণের কিস্তি তিনিই প্রতি মাসে পরিশোধ করতেন বলে পরিবার জানিয়েছে। ভবনটির ছয়তলায় রোকশানার ভাইয়ের পরিবার ভাড়া থাকে।

নিহত রোকশানার ভায়ের ছেলে নিশাদ (২২) সাংবাদিকদের বলেন, ‘সকাল ১০টার দিকে ফুফুর বাসায় দরজা ভেতর থেকে আটকানো দেখে ডাকাডাকি করি। কোনো সাড়া না পেয়ে পরে আশপাশের প্রতিবেশীর সাহায্যে ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে ফুফুকে শয়নকক্ষে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি। পরে পুলিশে সংবাদ দিলে তারা এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠায়।’

রোকশানার স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান শিশির জানান, হত্যাকাণ্ডের কথা জেনে তিনি যশোর থেকে কুষ্টিয়ায় ছুটে আসেন। স্কুলের কাজে গতকাল সকালে রোকশানার যশোর শিক্ষা বোর্ডে যাওয়ার কথা ছিল।

পূর্বপরিকল্পিতভাবে রোকশানাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে শিশির বলেন, ‘খুনিরা বাসায় ঢুকে কেবলমাত্র একটা পিসি ভাঙচুর করেছে। আর কোনো কিছুই নিতে পারেনি। কোনো টাকা-পয়সা বা মূল্যবান গহনা খোয়া যায়নি। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

রোকশানা কর্মপাগল মানুষ ছিলেন এবং নিজেকে কাজের মধ্যে ব্যস্ত রাখতে পছন্দ করতেন বলে জানান কুষ্টিয়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. এফতে খায়রুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘প্রশ্নপত্রের কাজে আজ (গতকাল) সকালে উনার (রোকশানা) যশোর বোর্ডে যাওয়ার কথা ছিল। দাম্পত্য জীবনে কোনো কলহ ছিল বলে কখনো শুনিনি। তবে বাড়িটা এককভাবে করতে গিয়ে তিনি ঋণগ্রস্ত ছিলেন। নিঃসন্তান হওয়ায় তার সম্পত্তিগত কোনো বিষয়কেন্দ্রিক কিছু থাকলেও থাকতে পারে। নাহলে শুধু শুধু তো আর একটা মানুষকে হত্যা করার কথা না।’

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে কুষ্টিয়ার  অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবু রাসেল বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। কারা কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে সে বিষয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘বাসা থেকে মূল্যবান কিছু খোয়া যায়নি। এ ছাড়া সম্ভাব্য একাধিক বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।’

স্বজনরা জানান, রোকশানা ভেড়ামারা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ১৯৮৫ সালে এসএসসি পাস করেন। পরে তিনি ভেড়ামারা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি এবং কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। পরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।

শিক্ষাজীবন শেষে রোকশানা প্রথমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দেন। ১৯৯৭ সালে মোস্তাফিজুর রহমান শিশিরের সঙ্গে পারিবারিকভাবেই তার বিয়ে হয়।