গাছ কেটে অধিকতর উন্নয়ন!

ফারুক হোসাইন, জাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলছে। খাতা-কলমে যে প্রকল্পের নাম ‘অধিকতর উন্নয়ন’। ২০১৮ সালে শুরুর পর থেকে এই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার গাছ কাটা পড়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আরও কয়েকশ’ গাছ কাটা পড়বে বলে জানা গেছে। যদিও এই কাজের শুরু থেকেই গাছ কেটে পরিবেশ বিনষ্টের প্রতিবাদে আন্দোলন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পরের বছর প্রকল্পের প্রথম ধাপে ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের তিনটি হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তখন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব ও নকশা অনুযায়ী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের তিনদিকে তিনটি হল নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। কিন্তু সেখানে সাতশ’র বেশি গাছ থাকায় এর বিরোধিতা করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এরপরেও ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট সকালে ওই এলাকার অর্ধশতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গিয়ে বাধা দিলে গাছ কাটা বন্ধ হয়। এরপর বাধ্য হয়ে স্থান পরিবর্তন করে হল তিনটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সেসব হলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। আর মেয়েদের তিনটি হল নির্মাণের নির্ধারিত স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির ২০৭টি গাছ ছিল। প্রতিবাদ সত্ত্বেও সেগুলো কেটে সেখানে হল নির্মাণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ জুন উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে ১৪টি স্থাপনা নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়। এরপর সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের আনুভূমিক সম্প্রসারণের জন্য ২০০টি গাছ কেটে ফেলা হয়। স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য কাটা হয় শতাধিক গাছ। এছাড়া অতিথি ভবন নির্মাণের জন্য আরও শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার টারজান পয়েন্ট এলাকায় ছাত্রীদের খেলার মাঠ নির্মাণের জন্য প্রায় দেড়শ’ গাছ কাটা হয়েছে।

এ ছাড়া জয় বাংলা ফটক সংলগ্ন আবাসিক এলাকায় তিনটি ১০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির ৫০টি গাছ কাটা হয়েছে। সব মিলিয়ে শুধু অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্যই প্রায় এক হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে আইবিএ এবং আইআইটি ভবন নির্মাণের জন্য ৩৫-৪০টি গাছ কেটে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে আইবিএ’র ভবন নির্মাণের স্থান পরিবর্তন হয়।

উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আগেরগুলো ছাড়াও জীববিজ্ঞান অনুষদের আনুভূমিক সম্প্রসারণের জন্য নির্ধারণ করা স্থানে শতাধিক গাছ আছে। আর কলা ও মানবিক অনুষদের আনুভূমিক সম্প্রসারণের জন্য নির্ধারিত জায়গায়ও রয়েছে শতাধিক গাছ। সবমিলিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে আরও কয়েকশ’ গাছ কাটা পড়বে।

গাছ কেটে ভবন নির্মাণ বন্ধ এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা পুনর্নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’। প্ল্যাটফর্মটির সমন্বয়ক দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে কাজ চলছে। যে কারণে নির্বিচারে হাজার হাজার গাছ কাটা হয়েছে। অথচ এ নিয়ে কারও ভ্রƒক্ষেপ নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে প্রাণ-প্রকৃতির তথা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সামনে আরও বিনষ্ট হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় তো কোনো বনভূমি নয়। প্রথম দিকে জায়গা খালি থাকায় সবখানে গাছ লাগানো হয়েছিল। এখন ভবন নির্মাণের জন্য কিছু জায়গার গাছ তো কাটতেই হচ্ছে।’

গাছ কেটে অধিকতর উন্নয়ন!

ফারুক হোসাইন, জাবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন অবকাঠামোর নির্মাণকাজ চলছে। খাতা-কলমে যে প্রকল্পের নাম ‘অধিকতর উন্নয়ন’। ২০১৮ সালে শুরুর পর থেকে এই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত প্রায় এক হাজার গাছ কাটা পড়েছে। পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে আরও কয়েকশ’ গাছ কাটা পড়বে বলে জানা গেছে। যদিও এই কাজের শুরু থেকেই গাছ কেটে পরিবেশ বিনষ্টের প্রতিবাদে আন্দোলন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর অধিকতর উন্নয়নের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। পরের বছর প্রকল্পের প্রথম ধাপে ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের তিনটি হল নির্মাণের কাজ শুরু হয়। তখন উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব ও নকশা অনুযায়ী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের তিনদিকে তিনটি হল নির্মাণের পরিকল্পনা হয়। কিন্তু সেখানে সাতশ’র বেশি গাছ থাকায় এর বিরোধিতা করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। এরপরেও ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট সকালে ওই এলাকার অর্ধশতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা গিয়ে বাধা দিলে গাছ কাটা বন্ধ হয়। এরপর বাধ্য হয়ে স্থান পরিবর্তন করে হল তিনটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সেসব হলের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। আর মেয়েদের তিনটি হল নির্মাণের নির্ধারিত স্থানে বিভিন্ন প্রজাতির ২০৭টি গাছ ছিল। প্রতিবাদ সত্ত্বেও সেগুলো কেটে সেখানে হল নির্মাণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের ৮ জুন উন্নয়ন প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে ১৪টি স্থাপনা নির্মাণকাজের উদ্বোধন হয়। এরপর সমাজবিজ্ঞান অনুষদ ভবনের আনুভূমিক সম্প্রসারণের জন্য ২০০টি গাছ কেটে ফেলা হয়। স্পোর্টস কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য কাটা হয় শতাধিক গাছ। এছাড়া অতিথি ভবন নির্মাণের জন্য আরও শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। সর্বশেষ গত শুক্রবার টারজান পয়েন্ট এলাকায় ছাত্রীদের খেলার মাঠ নির্মাণের জন্য প্রায় দেড়শ’ গাছ কাটা হয়েছে।

এ ছাড়া জয় বাংলা ফটক সংলগ্ন আবাসিক এলাকায় তিনটি ১০ তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির ৫০টি গাছ কাটা হয়েছে। সব মিলিয়ে শুধু অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের জন্যই প্রায় এক হাজার গাছ কাটা হয়েছে। এর আগে ২০১৭ সালে আইবিএ এবং আইআইটি ভবন নির্মাণের জন্য ৩৫-৪০টি গাছ কেটে ফেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে আইবিএ’র ভবন নির্মাণের স্থান পরিবর্তন হয়।

উন্নয়ন প্রকল্প কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আগেরগুলো ছাড়াও জীববিজ্ঞান অনুষদের আনুভূমিক সম্প্রসারণের জন্য নির্ধারণ করা স্থানে শতাধিক গাছ আছে। আর কলা ও মানবিক অনুষদের আনুভূমিক সম্প্রসারণের জন্য নির্ধারিত জায়গায়ও রয়েছে শতাধিক গাছ। সবমিলিয়ে উন্নয়ন প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করতে আরও কয়েকশ’ গাছ কাটা পড়বে।

গাছ কেটে ভবন নির্মাণ বন্ধ এবং চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের মহাপরিকল্পনা পুনর্নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্লাটফর্ম ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’। প্ল্যাটফর্মটির সমন্বয়ক দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে কাজ চলছে। যে কারণে নির্বিচারে হাজার হাজার গাছ কাটা হয়েছে। অথচ এ নিয়ে কারও ভ্রƒক্ষেপ নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু বলেন, ‘অপরিকল্পিতভাবে পরিবেশ ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে প্রাণ-প্রকৃতির তথা জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সামনে আরও বিনষ্ট হবে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় তো কোনো বনভূমি নয়। প্রথম দিকে জায়গা খালি থাকায় সবখানে গাছ লাগানো হয়েছিল। এখন ভবন নির্মাণের জন্য কিছু জায়গার গাছ তো কাটতেই হচ্ছে।’