ডাকসুর ‘তালা’ আবার কবে খুলবে

তানভীর হাসান

দীর্ঘ ২৯ বছর পর ২০১৯ সালের মার্চ মাসে সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন এই নির্বাচনকে ‘ক্যালেন্ডার ইভেন্ট’ হিসেবে চালু রাখার কথা বলা হয়েছিল। ওই নির্বাচনের পর তিন বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু নতুন নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। ছাত্রনেতাদের ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা আবারও হয়তো দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হবে ডাকসু নির্বাচন।

সর্বশেষ নির্বাচনে ডাকসুর ২৫ পদের ২৩টিতেই জয় পায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। শুধু ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয় পায় ছাত্র অধিকার পরিষদ। ২০২০ সালের ২২ মার্চ নির্ধারিত এক বছরের মেয়াদ পূর্ণ করার পর ২২ জুন গঠনতন্ত্রে থাকা অতিরিক্ত ৯০ দিন অতিক্রম করে ডাকসুর কমিটি। ২৩ জুন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভেঙে যায় ডাকসু। ওই সময় করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পরই ডাকসু নির্বাচন দেওয়া হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমসহ সব কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এখনো ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিভিন্ন সময়ে ডাকসু নির্বাচনের দাবি তুলেছে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠন। ছাত্র সংগঠনের নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ডাকসু। সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ছাত্রদের দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করতে পারে। করোনাপরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগ সব সময় ডাকসু নির্বাচন চায়। নির্বাচন করার জন্য ইতিমধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত আবারও ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করবে বিশ্ববিদ্যালয়।’

ডাকসু নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে ও হলে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান দাবি করেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল সব সময় ডাকসু নির্বাচন দাবি করে। তার আগে চাই ক্যাম্পাসে ও হলে সবার সহাবস্থান। আমাদের তো ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না। সুষ্ঠু ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা করতে হবে।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘আমরা সর্বশেষ পরিবেশ পরিষদের মিটিংয়ে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে আমাদের দাবি অব্যাহত আছে। তবে গত ডাকসু নির্বাচনের মতো নির্বাচন চাই না।’

ডাকসু নির্বাচন না হলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদ বাবদ ১৬০ টাকা ফি নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৩৭ হাজার। সেই হিসাবে প্রতি বছর ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা ডাকসু ও হল সংসদের ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়। এই অর্থ কোথায় যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন বলেন, ‘ডাকসু ও হল সংসদ না থাকায় এই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে খরচ করা হচ্ছে।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর নির্বাচনের বিষয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম ধারাবাহিকভাবে ডাকসু নির্বাচন হবে। কিন্তু সেই রকম কিছু দেখছি না। নির্বাচন না হওয়ার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে। আমাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আমি নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছিলাম। প্রশাসন উদ্যোগ নেয়নি। আমার দাবি, দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হোক।’

ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের জন্য একটা প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। আমরা সুন্দর পরিবেশে সময়মতো ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করব। তার আগে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উন্নতি করা দরকার।’

ডাকসুর ‘তালা’ আবার কবে খুলবে

তানভীর হাসান

দীর্ঘ ২৯ বছর পর ২০১৯ সালের মার্চ মাসে সর্বশেষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তখন এই নির্বাচনকে ‘ক্যালেন্ডার ইভেন্ট’ হিসেবে চালু রাখার কথা বলা হয়েছিল। ওই নির্বাচনের পর তিন বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু নতুন নির্বাচনের উদ্যোগ নিতে দেখা যাচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে। ছাত্রনেতাদের ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা আবারও হয়তো দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ রাখা হবে ডাকসু নির্বাচন।

সর্বশেষ নির্বাচনে ডাকসুর ২৫ পদের ২৩টিতেই জয় পায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। শুধু ভিপি ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে জয় পায় ছাত্র অধিকার পরিষদ। ২০২০ সালের ২২ মার্চ নির্ধারিত এক বছরের মেয়াদ পূর্ণ করার পর ২২ জুন গঠনতন্ত্রে থাকা অতিরিক্ত ৯০ দিন অতিক্রম করে ডাকসুর কমিটি। ২৩ জুন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই ভেঙে যায় ডাকসু। ওই সময় করোনা মহামারীর কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে বিশ্ববিদ্যালয় চালুর পরই ডাকসু নির্বাচন দেওয়া হবে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমসহ সব কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এখনো ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিভিন্ন সময়ে ডাকসু নির্বাচনের দাবি তুলেছে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠন এবং অন্যান্য ছাত্র সংগঠন। ছাত্র সংগঠনের নেতারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে ডাকসু। সংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা ছাত্রদের দাবি আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে চাপ প্রয়োগ করতে পারে। করোনাপরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও ডাকসু নির্বাচন না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করার দাবি জানিয়েছেন তারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘ছাত্রলীগ সব সময় ডাকসু নির্বাচন চায়। নির্বাচন করার জন্য ইতিমধ্যে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছি। আশা করি দ্রুত আবারও ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করবে বিশ্ববিদ্যালয়।’

ডাকসু নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে ও হলে সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান দাবি করেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল সব সময় ডাকসু নির্বাচন দাবি করে। তার আগে চাই ক্যাম্পাসে ও হলে সবার সহাবস্থান। আমাদের তো ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দেওয়া হচ্ছে না। সুষ্ঠু ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে মূল্যায়ন করার ব্যবস্থা করতে হবে।’

বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ‘আমরা সর্বশেষ পরিবেশ পরিষদের মিটিংয়ে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছি। ডাকসু নির্বাচনের পক্ষে আমাদের দাবি অব্যাহত আছে। তবে গত ডাকসু নির্বাচনের মতো নির্বাচন চাই না।’

ডাকসু নির্বাচন না হলেও শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রতি বছর ডাকসু ও হল সংসদ বাবদ ১৬০ টাকা ফি নেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থী ৩৭ হাজার। সেই হিসাবে প্রতি বছর ৫৯ লাখ ২০ হাজার টাকা ডাকসু ও হল সংসদের ফি বাবদ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আদায় করা হয়। এই অর্থ কোথায় যাচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক কামাল উদ্দীন বলেন, ‘ডাকসু ও হল সংসদ না থাকায় এই অর্থ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে খরচ করা হচ্ছে।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর নির্বাচনের বিষয়ে দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম ধারাবাহিকভাবে ডাকসু নির্বাচন হবে। কিন্তু সেই রকম কিছু দেখছি না। নির্বাচন না হওয়ার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে। আমাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই আমি নির্বাচনের তাগিদ দিয়েছিলাম। প্রশাসন উদ্যোগ নেয়নি। আমার দাবি, দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা হোক।’

ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের জন্য একটা প্রস্তুতির বিষয় রয়েছে। আমরা সুন্দর পরিবেশে সময়মতো ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করব। তার আগে আমাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের উন্নতি করা দরকার।’