চবিতে শিক্ষক নিয়োগ

নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই মানল না সিন্ডিকেট

মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও অর্থ লেনদেন-সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিতর্কের মুখে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত ১৩ জন প্রার্থীর নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের পরের সভায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত নিয়োগ শুদ্ধাচার পরিপন্থী উল্লেখ করে অতিরিক্ত নিয়োগ না দিতে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়।

তবে ওই সিদ্ধান্তের ৩ মাস না যেতেই বাতিল করা ১৩ জনসহ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত ১৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছে সিন্ডিকেট। গত বৃহস্পতিবার তাঁদের নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

এই নিয়োগকে অবৈধ বলছেন সিন্ডিকেটের একাধিক সাবেক সদস্য ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা। আর ইউজিসি বলছে, এ ধরনের নিয়োগ হতে পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৭তম সিন্ডিকেটের সভা হয়। এতে ১০টি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত সুপারিশ হওয়ায় সমাজতত্ত্ব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ফার্মাসি বিভাগে ৩ জন করে; ইংরেজি, ফলিত রসায়ন ও কলাকৌশল বিভাগে ১ জন করে এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২ জনসহ মোট ১৩ জন প্রার্থীর সুপারিশ বাতিল করে সিন্ডিকেট।

একই সিন্ডিকেটে ফারসি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে ফাঁস হওয়া ফোনালাপের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পর ৫৩৮তম সিন্ডিকেটে সভায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা পড়ে। প্রতিবেদনে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত নিয়োগ শুদ্ধাচার পরিপন্থী উল্লেখ করা হয়। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত নিয়োগ না দিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়; যা ওই সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হিসেবে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

এদিকে, সম্প্রতি সিন্ডিকেটে ৪ সদস্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন ৪ জনকে নিয়োগ দেয় সরকার। এরপর ১৪ অক্টোবর নতুন সদস্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় সিন্ডিকেটের ৫৩৯তম সভা। এ সভায় বাতিল করা সেই ১৩ জনের সঙ্গে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৪ জনসহ মোট ১৭ জনকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিছু বলতে রাজি হননি সিন্ডিকেট সদস্য এস এম ফজলুল হক। তবে সিন্ডিকেটের সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম মাঈনুল হক মিয়াজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারের আইন হচ্ছে, যতজনের জন্য বিজ্ঞাপন দেবে ততজনকেই নিয়োগ দিতে হবে। আমরা যেহেতু এই নিয়মের ব্যত্যয় দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় কথা শুনেছি এবং দেখেছি অতিরিক্ত সুপারিশ করা হচ্ছে, তাই শুদ্ধাচার ও ইউজিসির নিয়ম মানতে সুপারিশগুলো বাতিল করেছি। এ ছাড়া আমাদের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে বলে দিয়েছি, কখনো যেন বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া না হয়। যত দিন পর্যন্ত একটা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাতিল না হয়, তত দিন ওই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত নিয়োগ অবৈধ। এতে রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে অর্থ ব্যয় হয়। আগের সিন্ডিকেটে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে–কোনোভাবেই বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া বা অনুমোদন করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রশাসনের অদক্ষতা, অনৈতিকতা ও বিশৃঙ্খলাকেই নির্দেশ করে।

জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘আগের সিন্ডিকেট সভায় বর্তমান উপাচার্যই তো ছিলেন। তিনি তো তখন দ্বিমত করেননি। এখন নতুন কী গ্রাউন্ড তৈরি হয়েছে, যার জন্য পরের সিন্ডিকেটে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হলো? এটা দ্বারা অনেক কিছুই ইঙ্গিত করে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেট সচিব অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, এটা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত। সিন্ডিকেট চিন্তাভাবনা করে আইনগত সব বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজ বেগম আজকের পত্রিকাকে জানান, বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত নিয়োগ তো হতেই পারে না। এ-সংক্রান্ত তথ্য হাতে পেলে তাঁরা এ বিষয়ে মতামত জানাবেন। এটা কীভাবে হলো উপাচার্যের কাছে জানতে চাইবেন।

চবিতে শিক্ষক নিয়োগ

নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই মানল না সিন্ডিকেট

মিনহাজ তুহিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ফাইল ছবি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম ও অর্থ লেনদেন-সংক্রান্ত ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর চলতি বছরের জানুয়ারিতে এ নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। বিতর্কের মুখে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত ১৩ জন প্রার্থীর নিয়োগের সুপারিশ বাতিল করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের পরের সভায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত নিয়োগ শুদ্ধাচার পরিপন্থী উল্লেখ করে অতিরিক্ত নিয়োগ না দিতে সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত হয়।

তবে ওই সিদ্ধান্তের ৩ মাস না যেতেই বাতিল করা ১৩ জনসহ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত ১৭ জনকে নিয়োগ দিয়েছে সিন্ডিকেট। গত বৃহস্পতিবার তাঁদের নিয়োগপত্র ইস্যু করা হয়েছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

এই নিয়োগকে অবৈধ বলছেন সিন্ডিকেটের একাধিক সাবেক সদস্য ও জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা। আর ইউজিসি বলছে, এ ধরনের নিয়োগ হতে পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩৭তম সিন্ডিকেটের সভা হয়। এতে ১০টি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগে সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হয়। তবে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত সুপারিশ হওয়ায় সমাজতত্ত্ব, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও ফার্মাসি বিভাগে ৩ জন করে; ইংরেজি, ফলিত রসায়ন ও কলাকৌশল বিভাগে ১ জন করে এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২ জনসহ মোট ১৩ জন প্রার্থীর সুপারিশ বাতিল করে সিন্ডিকেট।

একই সিন্ডিকেটে ফারসি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগে ফাঁস হওয়া ফোনালাপের ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়। পর ৫৩৮তম সিন্ডিকেটে সভায় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন জমা পড়ে। প্রতিবেদনে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত নিয়োগ শুদ্ধাচার পরিপন্থী উল্লেখ করা হয়। সেই সঙ্গে অতিরিক্ত নিয়োগ না দিতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়; যা ওই সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হিসেবে সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়।

এদিকে, সম্প্রতি সিন্ডিকেটে ৪ সদস্যের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন ৪ জনকে নিয়োগ দেয় সরকার। এরপর ১৪ অক্টোবর নতুন সদস্যদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় সিন্ডিকেটের ৫৩৯তম সভা। এ সভায় বাতিল করা সেই ১৩ জনের সঙ্গে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৪ জনসহ মোট ১৭ জনকে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিছু বলতে রাজি হননি সিন্ডিকেট সদস্য এস এম ফজলুল হক। তবে সিন্ডিকেটের সাবেক সদস্য অধ্যাপক ড. এ কে এম মাঈনুল হক মিয়াজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারের আইন হচ্ছে, যতজনের জন্য বিজ্ঞাপন দেবে ততজনকেই নিয়োগ দিতে হবে। আমরা যেহেতু এই নিয়মের ব্যত্যয় দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় কথা শুনেছি এবং দেখেছি অতিরিক্ত সুপারিশ করা হচ্ছে, তাই শুদ্ধাচার ও ইউজিসির নিয়ম মানতে সুপারিশগুলো বাতিল করেছি। এ ছাড়া আমাদের সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে বলে দিয়েছি, কখনো যেন বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া না হয়। যত দিন পর্যন্ত একটা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত বাতিল না হয়, তত দিন ওই সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।’

চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি ও আইন বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত নিয়োগ অবৈধ। এতে রাষ্ট্রের কোষাগার থেকে অর্থ ব্যয় হয়। আগের সিন্ডিকেটে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়েছে–কোনোভাবেই বিজ্ঞাপনের অতিরিক্ত নিয়োগ দেওয়া বা অনুমোদন করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পরস্পরবিরোধী সিদ্ধান্ত প্রশাসনের অদক্ষতা, অনৈতিকতা ও বিশৃঙ্খলাকেই নির্দেশ করে।

জাকির হোসেন আরও বলেন, ‘আগের সিন্ডিকেট সভায় বর্তমান উপাচার্যই তো ছিলেন। তিনি তো তখন দ্বিমত করেননি। এখন নতুন কী গ্রাউন্ড তৈরি হয়েছে, যার জন্য পরের সিন্ডিকেটে তাঁদের নিয়োগ দেওয়া হলো? এটা দ্বারা অনেক কিছুই ইঙ্গিত করে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও সিন্ডিকেট সচিব অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান বলেন, এটা সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত। সিন্ডিকেট চিন্তাভাবনা করে আইনগত সব বিষয় বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজ বেগম আজকের পত্রিকাকে জানান, বিজ্ঞপ্তি দেওয়া পদের অতিরিক্ত নিয়োগ তো হতেই পারে না। এ-সংক্রান্ত তথ্য হাতে পেলে তাঁরা এ বিষয়ে মতামত জানাবেন। এটা কীভাবে হলো উপাচার্যের কাছে জানতে চাইবেন।