পাবলিক পরীক্ষা ঘিরে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না

শরীফুল আলম সুমন

কয়েক বছর আগে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনকে। পরীক্ষার আগের রাতে ফটোকপির দোকান, শিক্ষক পরিচালিত কোচিং সেন্টার, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকেও পাওয়া যেত প্রশ্ন। কিন্তু চার বছর সেই অবস্থা থেকে কিছুটা নিষ্কৃতি পেলেও পাবলিক পরীক্ষায় বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। প্রশ্নপত্রে নানা ধরনের ভুল আর অব্যবস্থাপনা প্রায় প্রতিটি পরীক্ষায়ই চোখে পড়ছে। আর এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ফের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় নতুন ভাবনায় পড়তে হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনকে।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় আমাদের অঙ্গীকারের নিদারুণ অভাব, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এখন পর্যন্ত আমাদের অনেকগুলো শিক্ষা কমিশন হয়েছে, তারা অনেক বুদ্ধি দিয়েছেন। এর একটাও আমরা গ্রহণ করিনি। এ শুধু এই সরকারের আমলে তা নয়, কোনো সরকারই গ্রহণ করে না। এখন পাঠ্যপুস্তকে ভুল, প্রশ্নপত্রে ভুল আর ভুল। কিন্তু ৫০ থেকে ৬০ বছর আগে তো ভুল ছিল না। মুদ্রণ যন্ত্রও তো আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে, তাহলে ভুল কেন? আসলে আমাদের কমিটমেন্টের অভাব।’

অধ্যাপক কায়কোবাদ আরও বলেন, ‘আমরা শুধু মুখে মুখেই বলি শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আমরা শিক্ষার মাধ্যমে দেশের মানুষকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে না পারলে এগোতে পারব না, এটাও আমরা জানি। কিন্তু আমরা কী করছি? অন্যান্য দেশ যখন শিক্ষায় জিডিপির ৮-৯ শতাংশ বরাদ্দ করছে, সেখানে আমরা ২ শতাংশেই আটকে আছি। এভাবে শিক্ষা বলেন, পরীক্ষা বলেন, কোনোটাই এগোবে না।’

এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয় গত ১৫ সেপ্টেম্বর। বড় এই পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের দায়ে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চার বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। প্রথমে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান এবং রসায়ন বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয় এবং নতুন সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিতের পরীক্ষাও নতুন প্রশ্নপত্রে নেওয়া হয়। এই বোর্ডের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষাও ফাঁস হওয়া প্রশ্নে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।

এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ভুল সেটে পদার্থবিজ্ঞান এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ^সভ্যতা বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়ায় রাজধানীর মাদারটেক আব্দুল আজিজ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব মো. আক্তারুজ্জামানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। ঢাকা বোর্ডের সব কেন্দ্রে সেদিন ৪ নম্বর সেটের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হলেও ওই কেন্দ্রে দুটি পরীক্ষাই নেওয়া হয় ২ নম্বর সেটে। এখন ওই সব শিক্ষার্থীর খাতা আলাদাভাবে দেখছে ঢাকা বোর্ড। এরপরও শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে।

এসএসির এই প্রশ্ন ফাঁসের রেশ কাটতে না কাটতেই ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগ উঠেছে; যা নিয়ে সারা দেশে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। ইতিমধ্যে প্রশ্নপ্রণেতা একজন শিক্ষক ও চারজন পরিশোধনকারী বা মডারেটরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে প্রশ্নপত্রের মুদ্রণজনিত ত্রুটির কারণে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি বিএমটির একাদশ শ্রেণির বাংলা-১ নতুন ও পুরনো সিলেবাসের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। ৬ নভেম্বর বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক ঘণ্টা পরীক্ষা চলার পর পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। মূলত নতুন সিলেবাসের শিক্ষার্থীদের জন্য পুরনো সিলেবাসে প্রশ্ন প্রণয়ন করায় পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় কারিগরি বোর্ড।

এর আগে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের একটি অংশে পরের দিনের ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ের প্রশ্নপত্র ছাপা হয়। ফলে আইসিটি পরীক্ষার পাশাপাশি ওই বোর্ডের আরও তিনটি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরীক্ষার্থীকে ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। বরিশাল, দিনাজপুর ও রাজশাহী বোর্ডের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঁচ শতাধিক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ভুল প্রশ্নে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি পরীক্ষায়ই কোনো না কোনো কেন্দ্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক কেন্দ্রে সেট অদলবদল হয়ে যায়। এতে কোথাও কোথাও সময় বাড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। আবার কোথাও কোথাও বাড়তি সময়ও দেওয়া হয় না। অথচ পরীক্ষার শুরু থেকে প্রথম ১ ঘণ্টায় মন-স্বাস্থ্য সবই ভালো থাকে এবং তখন যা লেখা যায়, তার পরের ২ ঘণ্টায় তা করা যায় না। কিন্তু কেন্দ্রের অবস্থাপনার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই পূর্ণ প্রস্তুতি শেষেও যথাযথ ফল অর্জন করতে পারে না; যা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের ভীতিতে থাকতে হয়।

এ ছাড়া প্রতি বছরই এসএসসি ও এইচএসসির ইংরেজি ভার্সনের পরীক্ষায় অসংখ্য ভুল থাকে। প্রশ্ন মেলাতে গিয়ে হিমশিম খায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিকার না আসায় শিক্ষার্থীরা ওই সব ভুল প্রশ্নেই পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়।

সূত্র জানায়, পরীক্ষা দেওয়ার পর নম্বর গণনার ক্ষেত্রেও ভুলের শিকার হয় শিক্ষার্থীরা। এসএসসি বা এইচএসসির মতো প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার ফল দেওয়ার পরও সারা দেশে চার থেকে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়। এমনকি ফেল থেকেও জিপিএ ৫ পায় অনেক শিক্ষার্থী। কিন্তু যারা ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদনই করে না, তারা অন্ধকারেই থেকে যায়।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষায় যারা অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়, তাদের ব্যাপারে যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে সেই অনিয়মের পুনরাবৃত্তির সাহস কেউ পাবে না। এ ছাড়া প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা সেই কাজটি গুরুত্বসহকারে করছি। সর্বোপরি যারা পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাদের আরও দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে।’

পাবলিক পরীক্ষা ঘিরে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না

শরীফুল আলম সুমন

কয়েক বছর আগে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনকে। পরীক্ষার আগের রাতে ফটোকপির দোকান, শিক্ষক পরিচালিত কোচিং সেন্টার, এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকেও পাওয়া যেত প্রশ্ন। কিন্তু চার বছর সেই অবস্থা থেকে কিছুটা নিষ্কৃতি পেলেও পাবলিক পরীক্ষায় বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। প্রশ্নপত্রে নানা ধরনের ভুল আর অব্যবস্থাপনা প্রায় প্রতিটি পরীক্ষায়ই চোখে পড়ছে। আর এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ফের প্রশ্ন ফাঁস হওয়ায় নতুন ভাবনায় পড়তে হয়েছে শিক্ষা প্রশাসনকে।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘শিক্ষায় আমাদের অঙ্গীকারের নিদারুণ অভাব, এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। এখন পর্যন্ত আমাদের অনেকগুলো শিক্ষা কমিশন হয়েছে, তারা অনেক বুদ্ধি দিয়েছেন। এর একটাও আমরা গ্রহণ করিনি। এ শুধু এই সরকারের আমলে তা নয়, কোনো সরকারই গ্রহণ করে না। এখন পাঠ্যপুস্তকে ভুল, প্রশ্নপত্রে ভুল আর ভুল। কিন্তু ৫০ থেকে ৬০ বছর আগে তো ভুল ছিল না। মুদ্রণ যন্ত্রও তো আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে, তাহলে ভুল কেন? আসলে আমাদের কমিটমেন্টের অভাব।’

অধ্যাপক কায়কোবাদ আরও বলেন, ‘আমরা শুধু মুখে মুখেই বলি শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। আমরা শিক্ষার মাধ্যমে দেশের মানুষকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে না পারলে এগোতে পারব না, এটাও আমরা জানি। কিন্তু আমরা কী করছি? অন্যান্য দেশ যখন শিক্ষায় জিডিপির ৮-৯ শতাংশ বরাদ্দ করছে, সেখানে আমরা ২ শতাংশেই আটকে আছি। এভাবে শিক্ষা বলেন, পরীক্ষা বলেন, কোনোটাই এগোবে না।’

এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয় গত ১৫ সেপ্টেম্বর। বড় এই পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের দায়ে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চার বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। প্রথমে গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, কৃষিবিজ্ঞান এবং রসায়ন বিষয়ের পরীক্ষা স্থগিত করা হয় এবং নতুন সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা নেওয়া হয়। এরপর জীববিজ্ঞান ও উচ্চতর গণিতের পরীক্ষাও নতুন প্রশ্নপত্রে নেওয়া হয়। এই বোর্ডের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষাও ফাঁস হওয়া প্রশ্নে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে অভিযোগ অভিভাবকদের।

এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ভুল সেটে পদার্থবিজ্ঞান এবং বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ^সভ্যতা বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়ায় রাজধানীর মাদারটেক আব্দুল আজিজ উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব মো. আক্তারুজ্জামানকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয় ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। ঢাকা বোর্ডের সব কেন্দ্রে সেদিন ৪ নম্বর সেটের ওপর পরীক্ষা নেওয়া হলেও ওই কেন্দ্রে দুটি পরীক্ষাই নেওয়া হয় ২ নম্বর সেটে। এখন ওই সব শিক্ষার্থীর খাতা আলাদাভাবে দেখছে ঢাকা বোর্ড। এরপরও শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছে।

এসএসির এই প্রশ্ন ফাঁসের রেশ কাটতে না কাটতেই ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রে সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগ উঠেছে; যা নিয়ে সারা দেশে সৃষ্টি হয়েছে তোলপাড়। ইতিমধ্যে প্রশ্নপ্রণেতা একজন শিক্ষক ও চারজন পরিশোধনকারী বা মডারেটরকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে প্রশ্নপত্রের মুদ্রণজনিত ত্রুটির কারণে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এইচএসসি বিএমটির একাদশ শ্রেণির বাংলা-১ নতুন ও পুরনো সিলেবাসের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। ৬ নভেম্বর বেলা ২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এক ঘণ্টা পরীক্ষা চলার পর পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করা হয়। মূলত নতুন সিলেবাসের শিক্ষার্থীদের জন্য পুরনো সিলেবাসে প্রশ্ন প্রণয়ন করায় পরীক্ষা স্থগিত করতে বাধ্য হয় কারিগরি বোর্ড।

এর আগে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি যশোর শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসির তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের একটি অংশে পরের দিনের ক্যারিয়ার শিক্ষা বিষয়ের প্রশ্নপত্র ছাপা হয়। ফলে আইসিটি পরীক্ষার পাশাপাশি ওই বোর্ডের আরও তিনটি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষায় বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রায় পাঁচ শতাধিক পরীক্ষার্থীকে ভুল প্রশ্নপত্র সরবরাহ করা হয়। বরিশাল, দিনাজপুর ও রাজশাহী বোর্ডের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন কেন্দ্রে পাঁচ শতাধিক পরীক্ষার্থীর পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ভুল প্রশ্নে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রায় প্রতিটি পরীক্ষায়ই কোনো না কোনো কেন্দ্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অনেক কেন্দ্রে সেট অদলবদল হয়ে যায়। এতে কোথাও কোথাও সময় বাড়িয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। আবার কোথাও কোথাও বাড়তি সময়ও দেওয়া হয় না। অথচ পরীক্ষার শুরু থেকে প্রথম ১ ঘণ্টায় মন-স্বাস্থ্য সবই ভালো থাকে এবং তখন যা লেখা যায়, তার পরের ২ ঘণ্টায় তা করা যায় না। কিন্তু কেন্দ্রের অবস্থাপনার কারণে অনেক শিক্ষার্থীই পূর্ণ প্রস্তুতি শেষেও যথাযথ ফল অর্জন করতে পারে না; যা নিয়ে পরীক্ষার্থীদের ভীতিতে থাকতে হয়।

এ ছাড়া প্রতি বছরই এসএসসি ও এইচএসসির ইংরেজি ভার্সনের পরীক্ষায় অসংখ্য ভুল থাকে। প্রশ্ন মেলাতে গিয়ে হিমশিম খায় শিক্ষার্থীরা। কিন্তু তাৎক্ষণিক কোনো প্রতিকার না আসায় শিক্ষার্থীরা ওই সব ভুল প্রশ্নেই পরীক্ষা দিতে বাধ্য হয়।

সূত্র জানায়, পরীক্ষা দেওয়ার পর নম্বর গণনার ক্ষেত্রেও ভুলের শিকার হয় শিক্ষার্থীরা। এসএসসি বা এইচএসসির মতো প্রতিটি পাবলিক পরীক্ষার ফল দেওয়ার পরও সারা দেশে চার থেকে পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়। এমনকি ফেল থেকেও জিপিএ ৫ পায় অনেক শিক্ষার্থী। কিন্তু যারা ফল পুনর্নিরীক্ষার আবেদনই করে না, তারা অন্ধকারেই থেকে যায়।

জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘পাবলিক পরীক্ষায় যারা অনিয়মের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়, তাদের ব্যাপারে যদি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা যায়, তাহলে সেই অনিয়মের পুনরাবৃত্তির সাহস কেউ পাবে না। এ ছাড়া প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, পরীক্ষা গ্রহণ, কেন্দ্র ব্যবস্থাপনায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে আরও বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আমরা সেই কাজটি গুরুত্বসহকারে করছি। সর্বোপরি যারা পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকেন, তাদের আরও দায়িত্বশীল ও সচেতন হতে হবে।’