বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কমবে ট্রাস্টিদের

শরীফুল আলম সুমন

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য সব ক্ষমতার অধিকারী হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আর্থিক ক্ষমতা খুবই কম। তারা মূলত অলংকারিক হিসেবে পদে বসে রয়েছেন। সাধারণত একাডেমিক বিষয়গুলো তাদের দেখভাল করতে হয়। প্রশাসনিক ও আর্থিক বিষয়ের পুরোটাই দেখেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা। তবে সরকার বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় আইন সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ট্রাস্টিদের হস্তক্ষেপ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

সংশোধিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়ায় ট্রাস্টিদের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমানো হচ্ছে। ট্রাস্টি বোর্ডে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ যুক্ত করার বিধান রাখা হচ্ছে। বিশ^বিদ্যালয়ের কোনো লাভজনক পদে ট্রাস্টিরা বসতে পারবেন না। এমনকি কোনো সভায় তারা সম্মানীও নিতে পারবেন না। অর্থ কমিটির সভাপতির পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও কঠোর হচ্ছে সরকার। এ ছাড়া ভর্তি ফি, টিউশন ফিসহ যেকোনো ধরনের ফি নির্ধারণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে।

জানা যায়, ১৯৯২ সালে করা আইনের আলোকে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন শুরু হয়। এরপর ২০১০ সালে আইনটি সংশোধন করে নতুন আইন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ১০৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রায় ২২ বছর পর এখন আবারও আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি খসড়া প্রণয়ন করেছে। আইনের খসড়ার সঙ্গে একটি খসড়া সংবিধিও করে দেওয়া হয়েছে, যাতে কাজগুলো কী হবে, তা বিস্তারিতভাবে বলে দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের কমিটি কিন্তু ইউজিসির না, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি। আমি এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আইনের খসড়ায় ট্রাস্টি বোর্ডে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ রাখার যে কথা বলা হয়েছে, তা কিন্তু ইউজিসির প্রস্তাব নয়। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সুপারিশ। এখন সংসদের একটা সুপারিশ, সেটা তো আমরা বাদ দিতে পারি না। আর যদি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এক-তৃতীয়াংশ রাখা হয়, তাহলে তো খারাপ হওয়ারও কথা নয়। তবে খসড়ায় আমরা যে প্রস্তাব পাঠিয়েছি, সেটা সংসদে যাওয়ার পর পরিবর্তন-পরিবর্ধনও হতে পারে।’

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কড়াকড়ি : বর্তমান আইনে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের ভবন হলেই হয়। আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার জন্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি, অন্য মহানগরগুলোর জন্য কমপক্ষে তিন কোটি এবং অন্যান্য এলাকার জন্য দেড় কোটি টাকার সংরক্ষিত তহবিল রাখতে হয়। স্থায়ী অনুমোদনের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় কমপক্ষে এক একর এবং অন্যান্য এলাকার জন্য কমপক্ষে দুই একর জমি থাকতে হয়।

কিন্তু সংশোধিত আইন বাস্তবায়িত হলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই কমপক্ষে এক লাখ বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা সাময়িক সময়ের জন্য ভাড়া করা ভবন থাকতে হবে। স্থায়ী অনুমোদনের জন্য জমির পরিমাণ বাড়িয়ে কমপক্ষে পাঁচ একর করা হচ্ছে। সংরক্ষিত তহবিলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার জন্য কমপক্ষে আট কোটি এবং অন্যান্য এলাকার জন্য কমপক্ষে তিন কোটি টাকা ব্যাংকে রাখতে হবে। অবশ্য ইতিমধ্যে অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এসব বিষয় প্রযোজ্য হবে না।

ক্ষমতা কমছে ট্রাস্টিদের : বর্তমান আইনে সর্বোচ্চ ২১ জন ও কমপক্ষে ৯ সদস্যের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য থাকতে হয়। এখানে আলাদা করে শিক্ষাবিদের কথা বলা নেই। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মনোনীত তিন সদস্য অর্থ কমিটিতে থাকেন, যার মধ্যে একজন সভাপতি হন।

এ ছাড়া বর্তমান আইনে কিছু বিষয়ে সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকায়, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকসহ (অর্থ) বিভিন্ন পদেও চাকরি করেন। যেখান থেকে তারা মাসে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কেনা দামি গাড়িতে চড়ছেন। প্রতি মাসেই বিভিন্ন সভার নাম করে বড় অঙ্কের সম্মানী নিচ্ছেন।

সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ থাকতে হবে। ইউজিসির সুপারিশ ও সরকারের অনুমোদন ছাড়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কোনো রকম পরিবর্তন করা যাবে না। প্রয়োজন হলে ইউজিসি বা সরকার সাময়িকভাবে একজন পর্যবেক্ষক মনোনয়ন দিতে পারবে।

এ ছাড়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কোনো সদস্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো লাভজনক পদে বসতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সভায় বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য কোনো আর্থিক সুবিধা (সম্মানী বা অ্যালাউন্স, গাড়ির সুবিধা ইত্যাদি) গ্রহণ করতে পারবেন না। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভজনক পদে বসতে পারবেন না। আর অর্থ কমিটির সভাপতি হবেন উপাচার্য। অন্য সদস্যদের পাশাপাশি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মনোনীত একজন প্রতিনিধি অর্থ কমিটিতে থাকবেন।

ফি নির্ধারণে অনুমোদন লাগবে ইউজিসির : দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে ইচ্ছেমতো ফি নির্ধারণ করছে। এমনকি ফি নির্ধারণ করে ইউজিসিকে অবহিত করার কথা থাকলেও অনেকেই তা করছে না।

সংশোধিত আইনে ফি ঠিক করে ইউজিসির অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হচ্ছে। অনুমোদনের পর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। এই ফি বাড়াতে বা কমাতেও ইউজিসির অনুমোদন লাগবে। আবার কোনো শিক্ষার্থী কোনো প্রোগ্রামে ভর্তির সময় যে ফি কাঠামো দেখে ভর্তি হবেন, প্রোগ্রাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীর ফি বাড়ানো যাবে না।

২০ বছরের শিক্ষকতা ছাড়া উপাচার্য নয় : বর্তমান আইনে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসহ গবেষণা বা প্রশাসনিক কাজে মোট ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। কিন্তু সংশোধিত আইনের খসড়ায়, উপাচার্য পদে নিয়োগের জন্য কোনো স্বীকৃত বিশ^বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া উপাচার্য নিয়োগের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি বা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যেকোনো একটি স্তরে প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩ দশমিক ৫ থাকতে হবে। একইভাবে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের যোগ্যতাও বাড়ানো হচ্ছে।

এ ছাড়া এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে বা ঠিক আগমুহূর্তে এ পদে নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ফলে উপাচার্য ছাড়াই বেশ কয়েক মাস থাকতে হয় অনেক বিশ^বিদ্যালয়কে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে চার মাস আগে নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ কমবে ট্রাস্টিদের

শরীফুল আলম সুমন

একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য সব ক্ষমতার অধিকারী হলেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের আর্থিক ক্ষমতা খুবই কম। তারা মূলত অলংকারিক হিসেবে পদে বসে রয়েছেন। সাধারণত একাডেমিক বিষয়গুলো তাদের দেখভাল করতে হয়। প্রশাসনিক ও আর্থিক বিষয়ের পুরোটাই দেখেন বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যরা। তবে সরকার বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয় আইন সংশোধন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে ট্রাস্টিদের হস্তক্ষেপ কমানোর উদ্যোগ নিয়েছে।

সংশোধিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের খসড়ায় ট্রাস্টিদের ক্ষমতা ব্যাপকভাবে কমানো হচ্ছে। ট্রাস্টি বোর্ডে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ যুক্ত করার বিধান রাখা হচ্ছে। বিশ^বিদ্যালয়ের কোনো লাভজনক পদে ট্রাস্টিরা বসতে পারবেন না। এমনকি কোনো সভায় তারা সম্মানীও নিতে পারবেন না। অর্থ কমিটির সভাপতির পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের। নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও কঠোর হচ্ছে সরকার। এ ছাড়া ভর্তি ফি, টিউশন ফিসহ যেকোনো ধরনের ফি নির্ধারণে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদন নেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে খসড়া আইনে।

জানা যায়, ১৯৯২ সালে করা আইনের আলোকে দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন শুরু হয়। এরপর ২০১০ সালে আইনটি সংশোধন করে নতুন আইন করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে ১০৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। প্রায় ২২ বছর পর এখন আবারও আইনটি সংশোধন করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দের নেতৃত্বে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি খসড়া প্রণয়ন করেছে। আইনের খসড়ার সঙ্গে একটি খসড়া সংবিধিও করে দেওয়া হয়েছে, যাতে কাজগুলো কী হবে, তা বিস্তারিতভাবে বলে দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন সংশোধনের কমিটি কিন্তু ইউজিসির না, এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি। আমি এই কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। আইনের খসড়ায় ট্রাস্টি বোর্ডে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ রাখার যে কথা বলা হয়েছে, তা কিন্তু ইউজিসির প্রস্তাব নয়। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সুপারিশ। এখন সংসদের একটা সুপারিশ, সেটা তো আমরা বাদ দিতে পারি না। আর যদি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের এক-তৃতীয়াংশ রাখা হয়, তাহলে তো খারাপ হওয়ারও কথা নয়। তবে খসড়ায় আমরা যে প্রস্তাব পাঠিয়েছি, সেটা সংসদে যাওয়ার পর পরিবর্তন-পরিবর্ধনও হতে পারে।’

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় কড়াকড়ি : বর্তমান আইনে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কমপক্ষে ২৫ হাজার বর্গফুট আয়তনের ভবন হলেই হয়। আর ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার জন্য কমপক্ষে পাঁচ কোটি, অন্য মহানগরগুলোর জন্য কমপক্ষে তিন কোটি এবং অন্যান্য এলাকার জন্য দেড় কোটি টাকার সংরক্ষিত তহবিল রাখতে হয়। স্থায়ী অনুমোদনের জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় কমপক্ষে এক একর এবং অন্যান্য এলাকার জন্য কমপক্ষে দুই একর জমি থাকতে হয়।

কিন্তু সংশোধিত আইন বাস্তবায়িত হলে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদনের পর শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর আগেই কমপক্ষে এক লাখ বর্গফুট আয়তনের নিজস্ব বা সাময়িক সময়ের জন্য ভাড়া করা ভবন থাকতে হবে। স্থায়ী অনুমোদনের জন্য জমির পরিমাণ বাড়িয়ে কমপক্ষে পাঁচ একর করা হচ্ছে। সংরক্ষিত তহবিলে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগর এলাকার জন্য কমপক্ষে আট কোটি এবং অন্যান্য এলাকার জন্য কমপক্ষে তিন কোটি টাকা ব্যাংকে রাখতে হবে। অবশ্য ইতিমধ্যে অনুমোদন পাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এসব বিষয় প্রযোজ্য হবে না।

ক্ষমতা কমছে ট্রাস্টিদের : বর্তমান আইনে সর্বোচ্চ ২১ জন ও কমপক্ষে ৯ সদস্যের বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্য থাকতে হয়। এখানে আলাদা করে শিক্ষাবিদের কথা বলা নেই। বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মনোনীত তিন সদস্য অর্থ কমিটিতে থাকেন, যার মধ্যে একজন সভাপতি হন।

এ ছাড়া বর্তমান আইনে কিছু বিষয়ে সুস্পষ্ট উল্লেখ না থাকায়, বোর্ড অব ট্রাস্টিজের সদস্যদের কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালকসহ (অর্থ) বিভিন্ন পদেও চাকরি করেন। যেখান থেকে তারা মাসে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কেনা দামি গাড়িতে চড়ছেন। প্রতি মাসেই বিভিন্ন সভার নাম করে বড় অঙ্কের সম্মানী নিচ্ছেন।

সংশোধিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজে কমপক্ষে এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষাবিদ থাকতে হবে। ইউজিসির সুপারিশ ও সরকারের অনুমোদন ছাড়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজ কোনো রকম পরিবর্তন করা যাবে না। প্রয়োজন হলে ইউজিসি বা সরকার সাময়িকভাবে একজন পর্যবেক্ষক মনোনয়ন দিতে পারবে।

এ ছাড়া বোর্ড অব ট্রাস্টিজের কোনো সদস্য ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো লাভজনক পদে বসতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সভায় বা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের জন্য কোনো আর্থিক সুবিধা (সম্মানী বা অ্যালাউন্স, গাড়ির সুবিধা ইত্যাদি) গ্রহণ করতে পারবেন না। এমনকি তাদের পরিবারের সদস্যরাও বিশ্ববিদ্যালয়ের লাভজনক পদে বসতে পারবেন না। আর অর্থ কমিটির সভাপতি হবেন উপাচার্য। অন্য সদস্যদের পাশাপাশি বোর্ড অব ট্রাস্টিজের মনোনীত একজন প্রতিনিধি অর্থ কমিটিতে থাকবেন।

ফি নির্ধারণে অনুমোদন লাগবে ইউজিসির : দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে ইচ্ছেমতো ফি নির্ধারণ করছে। এমনকি ফি নির্ধারণ করে ইউজিসিকে অবহিত করার কথা থাকলেও অনেকেই তা করছে না।

সংশোধিত আইনে ফি ঠিক করে ইউজিসির অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হচ্ছে। অনুমোদনের পর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। এই ফি বাড়াতে বা কমাতেও ইউজিসির অনুমোদন লাগবে। আবার কোনো শিক্ষার্থী কোনো প্রোগ্রামে ভর্তির সময় যে ফি কাঠামো দেখে ভর্তি হবেন, প্রোগ্রাম শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীর ফি বাড়ানো যাবে না।

২০ বছরের শিক্ষকতা ছাড়া উপাচার্য নয় : বর্তমান আইনে উপাচার্য নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপক্ষে ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতাসহ গবেষণা বা প্রশাসনিক কাজে মোট ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়। কিন্তু সংশোধিত আইনের খসড়ায়, উপাচার্য পদে নিয়োগের জন্য কোনো স্বীকৃত বিশ^বিদ্যালয়ে কমপক্ষে ২০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ ছাড়া উপাচার্য নিয়োগের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি বা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের যেকোনো একটি স্তরে প্রথম শ্রেণি বা সিজিপিএ ৪ এর মধ্যে ৩ দশমিক ৫ থাকতে হবে। একইভাবে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ পদে নিয়োগের যোগ্যতাও বাড়ানো হচ্ছে।

এ ছাড়া এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হলে বা ঠিক আগমুহূর্তে এ পদে নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানো হয়। ফলে উপাচার্য ছাড়াই বেশ কয়েক মাস থাকতে হয় অনেক বিশ^বিদ্যালয়কে। সংশোধিত আইনের খসড়ায় উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হওয়ার কমপক্ষে চার মাস আগে নিয়োগের প্রস্তাব পাঠানোর কথা বলা হয়েছে।