শেকৃবিতে অব্যবহৃত ৮০ কোটি টাকার দুই আবাসিক হল

ইমরান খান, শেকৃবি

শেকৃবির দুটি হলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। কেনা হয়েছে কোটি টাকার আসবাবও। তবু চালু করা হচ্ছে না শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য নির্মিত শেখ লুৎফর রহমান হল এবং ছাত্রীদের জন্য নির্মিত শেখ সায়েরা খাতুন হল। কোন কোন বর্ষের শিক্ষার্থীরা এ হল দুটোয় থাকবেন, কবে চালু হবে সেটিও এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদের সময় (২০১৯) হল দুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালে ছেলেদের জন্য শেখ লুৎফর রহমান হল এবং মেয়েদের জন্য শেখ সায়েরা খাতুন নামের দুটি আবাসিক হলের কাজ শুরু হয়। এরপর করোনার কারণে দেরি হলেও ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছাত্রীদের এবং ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ছাত্রদের জন্য নির্মিত হলের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় এ বছরের মার্চে। মূল কাজ শেষ হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। এক বছর চলে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলগুলো চালু করতে পারেনি। এর কারণ হিসাবে জানা গেছে, জনবলের ঘাটতির কারণেই হলগুলোতে শিক্ষার্থী উঠানো হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, জনবলের এতই ঘাটতি যে হলের সম্পূর্ণ কাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার পরও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিনিময় কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে তাদের নিজেদের অর্থ ব্যয়ে হল দেখভালের জন্য কয়েকজন লোক রাখতে বাধ্য করতে হয়েছে। যদিও সরেজমিন কয়েকবার ল–ৎফর রহমান হলে গেলে ভেতরে তালা ঝুলতে দেখা যায়।

সূত্র জানায়, লুৎফর রহমান হলটিতে রুম রয়েছে ২৫০টি। হল দুটিতে রয়েছে রান্নাঘর, শৌচাগার, ক্যান্টিন ও ডাইনিং, টিভিকক্ষ, নামাজের স্থান। মেয়েদের হলটিতে রয়েছে ২৩৮টি রুম। দুই হলেই গণরুমসহ জায়গা হবে মোট ২০০০ শিক্ষার্থীর। এদিকে হল চালুর নাম না থাকলেও ১৪ মাস আগে বিনা পারিশ্রমিকে হল প্রভোস্ট দিয়ে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গেল বছর ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. উদয় কুমার মহন্তকে শেখ লুৎফর রহমান হলের প্রভোস্ট ও কৃষি তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলামকে শেখ সাহেরা খাতুন হলের প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। শেখ লুৎফর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. উদয় কুমার মহন্ত গত ৭ মাস ধরে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলছেন, তার কারণেই হল খুলতে দেরি হচ্ছে।

হলের কাজ শেষ হওয়ার আগেই হল প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে কেন-এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মিজানুল হক বলেন, হলের কাজগুলো বুঝে নেওয়ার জন্য এবং খোঁজখবর নেওয়ার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে তারা নামমাত্র প্রভোস্ট।

তাদের প্রভোস্টের বেতন দেয়া হয় না। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছেলেদের জন্য ৩টি এবং মেয়েদের জন্য ২টি হল চালু রয়েছে। তবে সিট ভাড়া, রুম ভাড়া, ৪ জনের রুমে একা থাকা, হলে নিয়মিত না থাকলেও ক্ষমতার জোরে সিট দখল করে রাখা এবং বাইরে থেকে পড়তে আসা মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জায়গা দিয়ে এখন সিট সংকট দেখা দিয়েছে। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন সিট প্রত্যাশী ১ম ও ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, গণরুমগুলোর অবস্থা সবার জানা। ডেঙ্গু মৌসুমে ডেঙ্গু, ভাইরাল ফিভারের সময় গণহারে জ্বর ও বিভিন্ন সিজনাল রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম টার্গেট গাদাগাদি করে থাকা এ গণরুমের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, শেখ লুৎফর রহমান হল এবং শেখ সায়েরা খাতুন আবাসিক হলের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় আমরা এ বছর চালু করতে পারিনি। হলের কাজ শুরুর সময়ের অর্গানোগ্রামে লোকবলের নিয়োগ ও সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ছিল না। আগে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ভুলের কারণে আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে নতুন অর্গানোগ্রামে লোকবল নিয়োগের বিষয় সংযুক্ত করেছি। আশা করি, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব।

শেকৃবিতে অব্যবহৃত ৮০ কোটি টাকার দুই আবাসিক হল

ইমরান খান, শেকৃবি

শেকৃবির দুটি হলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর আগে। কেনা হয়েছে কোটি টাকার আসবাবও। তবু চালু করা হচ্ছে না শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য নির্মিত শেখ লুৎফর রহমান হল এবং ছাত্রীদের জন্য নির্মিত শেখ সায়েরা খাতুন হল। কোন কোন বর্ষের শিক্ষার্থীরা এ হল দুটোয় থাকবেন, কবে চালু হবে সেটিও এখনো চূড়ান্ত করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

তৎকালীন ভিসি প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহম্মদের সময় (২০১৯) হল দুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালে ছেলেদের জন্য শেখ লুৎফর রহমান হল এবং মেয়েদের জন্য শেখ সায়েরা খাতুন নামের দুটি আবাসিক হলের কাজ শুরু হয়। এরপর করোনার কারণে দেরি হলেও ৪১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ছাত্রীদের এবং ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ছাত্রদের জন্য নির্মিত হলের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয় এ বছরের মার্চে। মূল কাজ শেষ হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে। এক বছর চলে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হলগুলো চালু করতে পারেনি। এর কারণ হিসাবে জানা গেছে, জনবলের ঘাটতির কারণেই হলগুলোতে শিক্ষার্থী উঠানো হচ্ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, জনবলের এতই ঘাটতি যে হলের সম্পূর্ণ কাজ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেওয়ার পরও ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বিনিময় কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে তাদের নিজেদের অর্থ ব্যয়ে হল দেখভালের জন্য কয়েকজন লোক রাখতে বাধ্য করতে হয়েছে। যদিও সরেজমিন কয়েকবার ল–ৎফর রহমান হলে গেলে ভেতরে তালা ঝুলতে দেখা যায়।

সূত্র জানায়, লুৎফর রহমান হলটিতে রুম রয়েছে ২৫০টি। হল দুটিতে রয়েছে রান্নাঘর, শৌচাগার, ক্যান্টিন ও ডাইনিং, টিভিকক্ষ, নামাজের স্থান। মেয়েদের হলটিতে রয়েছে ২৩৮টি রুম। দুই হলেই গণরুমসহ জায়গা হবে মোট ২০০০ শিক্ষার্থীর। এদিকে হল চালুর নাম না থাকলেও ১৪ মাস আগে বিনা পারিশ্রমিকে হল প্রভোস্ট দিয়ে রেখেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গেল বছর ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ড. উদয় কুমার মহন্তকে শেখ লুৎফর রহমান হলের প্রভোস্ট ও কৃষি তত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলামকে শেখ সাহেরা খাতুন হলের প্রভোস্ট নিয়োগ দেওয়া হয়। শেখ লুৎফর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. উদয় কুমার মহন্ত গত ৭ মাস ধরে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে অবস্থান করছেন। সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ বলছেন, তার কারণেই হল খুলতে দেরি হচ্ছে।

হলের কাজ শেষ হওয়ার আগেই হল প্রভোস্ট নিয়োগ দেয়া হয়েছে কেন-এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক ড. মোহাম্মদ মিজানুল হক বলেন, হলের কাজগুলো বুঝে নেওয়ার জন্য এবং খোঁজখবর নেওয়ার জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তবে তারা নামমাত্র প্রভোস্ট।

তাদের প্রভোস্টের বেতন দেয়া হয় না। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ছেলেদের জন্য ৩টি এবং মেয়েদের জন্য ২টি হল চালু রয়েছে। তবে সিট ভাড়া, রুম ভাড়া, ৪ জনের রুমে একা থাকা, হলে নিয়মিত না থাকলেও ক্ষমতার জোরে সিট দখল করে রাখা এবং বাইরে থেকে পড়তে আসা মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের জায়গা দিয়ে এখন সিট সংকট দেখা দিয়েছে। এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন সিট প্রত্যাশী ১ম ও ২য় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা জানান, গণরুমগুলোর অবস্থা সবার জানা। ডেঙ্গু মৌসুমে ডেঙ্গু, ভাইরাল ফিভারের সময় গণহারে জ্বর ও বিভিন্ন সিজনাল রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রথম টার্গেট গাদাগাদি করে থাকা এ গণরুমের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, শেখ লুৎফর রহমান হল এবং শেখ সায়েরা খাতুন আবাসিক হলের কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় আমরা এ বছর চালু করতে পারিনি। হলের কাজ শুরুর সময়ের অর্গানোগ্রামে লোকবলের নিয়োগ ও সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ছিল না। আগে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের ভুলের কারণে আমাদের এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে নতুন অর্গানোগ্রামে লোকবল নিয়োগের বিষয় সংযুক্ত করেছি। আশা করি, দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারব।