পবিপ্রবি

অফিস করেন এক মাস, বেতন পান দেড় মাসের

আশিকুর রহমান

মো. শামসুল হক।

মো. শামসুল হক ওরফে রাসেল, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখার মাস্টাররোল তথা অস্থায়ী কর্মকর্তা। সময়ের হিসেবে একমাসে সর্বোচ্চ ৩০ কিংবা ৩১ দিন থাকলেও তিনি বেতন নিচ্ছেন ৪৫ দিনের। সম্প্রতি অনুসন্ধানে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে সুসম্পর্কের খাতিরে মাসে ৪৫ দিনের বেতন তোলার এ অভিযোগ রয়েছে।

রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য মতে, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দপ্তরের ছাব্বিশ (২৬) জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মাস্টাররোলে কর্মরত আছেন। তাদের সকলের মাসিক বেতনের হিসাব ত্রিশ (৩০) দিনে হলেও মো. শামসুল হক (রাসেল) একদিন অফিস করে বেতন পান দেড় দিনের অর্থাৎ একমাস অফিস করে ৪৫ দিনের বেতন নিচ্ছেন। অভিযুক্ত রাসেল অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনের জন্য অতিরিক্ত বেতন নেওয়ার দাবি করলেও নীতিমালায় তার দাবির যৌক্তিকতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের তথ্যমতে, উপাচার্যের কার্যালয়, জরুরি বিভাগ, অতিথি ভবন ও পরিবহন শাখায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেবল অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের সুযোগ নীতিমালায় থাকলেও তিনি আছেন রেজিস্ট্রার অফিসের সংস্থাপন শাখায়। তাছাড়া তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের দাবি করলেও একাধিকবার তার দপ্তরে খোঁজ নিয়েও তাকে পাওয়া যায় নি। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ, মাসে ৯০ ঘণ্টা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন বাবদ বেতন উত্তোলন করতে পারেন। কিন্তু এখানে মো. শামসুল হক (রাসেল) কিভাবে ১২০ ঘণ্টা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের বেতন নেন সেটাই এখন প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। তার সাথে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তার দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক মতো অফিস করেন না তিনি, বেশিরভাগ সময়ই তিনি ক্যাম্পাসের বাহিরে অবস্থান করেন।

শুধু তাই নয়, তার দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হওয়ায় প্রশাসনের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে রয়েছে তার সুসম্পর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে একাধিকবার দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া ক্যাম্পাসের বাসে কয়েকজন শিক্ষকদের সাথে তার একাধিক বাকবিতণ্ডা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানানো হয়। এমনকি এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে মো. শামসুল হককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার রোলে কাজ করছি। প্রশাসন ভালো মনে করেই অতিরিক্ত বেতন দিচ্ছেন।’ নিয়মিত অফিস না করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার সিনিয়র কর্মকর্তা আছে, এ বিষয়টি তারা দেখবেন৷’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান মিয়া জানান, ‘মো. শামসুল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ইতিমধ্যে আমাদের নিকট অভিযোগ দিয়েছেন। তাছাড়া তার অতিরিক্ত বেতন উত্তোলন বিষয়েও অভিযোগ পেয়েছি। তার বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আলোচনা হবে, একই সাথে উপাচার্যকে অবহিত করা হবে’

উল্লেখ্য, মো. শামসুল হক ছাড়াও কর্মকর্তা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাদল এর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ও শিক্ষা ও বৃত্তি শাখার নাসরিন আক্তারের বিরুদ্ধেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত বেতন আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ‘এখানে কয়েকজন নির্ধারিত আট ঘণ্টার পরে অতিরিক্ত সময় কাজ করার কারণে তাদেরকে অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হচ্ছে।’ তবে দপ্তরিক সময়েও তাদের নিয়মিত অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা করলে তারা বেতন পাবেনা। বিভিন্ন কারণে তাদের চাকুরি স্থায়ী হয়নি এজন্য তাদেরকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ইবিহো/এসএস

পবিপ্রবি

অফিস করেন এক মাস, বেতন পান দেড় মাসের

আশিকুর রহমান

মো. শামসুল হক।

মো. শামসুল হক ওরফে রাসেল, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখার মাস্টাররোল তথা অস্থায়ী কর্মকর্তা। সময়ের হিসেবে একমাসে সর্বোচ্চ ৩০ কিংবা ৩১ দিন থাকলেও তিনি বেতন নিচ্ছেন ৪৫ দিনের। সম্প্রতি অনুসন্ধানে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পায় পবিপ্রবি সাংবাদিক সমিতি। তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে সুসম্পর্কের খাতিরে মাসে ৪৫ দিনের বেতন তোলার এ অভিযোগ রয়েছে।

রেজিস্ট্রার অফিসের তথ্য মতে, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন দপ্তরের ছাব্বিশ (২৬) জন কর্মকর্তা-কর্মচারী মাস্টাররোলে কর্মরত আছেন। তাদের সকলের মাসিক বেতনের হিসাব ত্রিশ (৩০) দিনে হলেও মো. শামসুল হক (রাসেল) একদিন অফিস করে বেতন পান দেড় দিনের অর্থাৎ একমাস অফিস করে ৪৫ দিনের বেতন নিচ্ছেন। অভিযুক্ত রাসেল অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনের জন্য অতিরিক্ত বেতন নেওয়ার দাবি করলেও নীতিমালায় তার দাবির যৌক্তিকতা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের তথ্যমতে, উপাচার্যের কার্যালয়, জরুরি বিভাগ, অতিথি ভবন ও পরিবহন শাখায় কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কেবল অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের সুযোগ নীতিমালায় থাকলেও তিনি আছেন রেজিস্ট্রার অফিসের সংস্থাপন শাখায়। তাছাড়া তিনি অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের দাবি করলেও একাধিকবার তার দপ্তরে খোঁজ নিয়েও তাকে পাওয়া যায় নি। তাছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা সর্বোচ্চ, মাসে ৯০ ঘণ্টা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন বাবদ বেতন উত্তোলন করতে পারেন। কিন্তু এখানে মো. শামসুল হক (রাসেল) কিভাবে ১২০ ঘণ্টা অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের বেতন নেন সেটাই এখন প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে। তার সাথে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তার দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিক মতো অফিস করেন না তিনি, বেশিরভাগ সময়ই তিনি ক্যাম্পাসের বাহিরে অবস্থান করেন।

শুধু তাই নয়, তার দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী হওয়ায় প্রশাসনের বেশ কয়েকজন দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের সাথে রয়েছে তার সুসম্পর্ক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে একাধিকবার দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তাছাড়া ক্যাম্পাসের বাসে কয়েকজন শিক্ষকদের সাথে তার একাধিক বাকবিতণ্ডা ঘটেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানানো হয়। এমনকি এক জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে শারীরিকভাবে হেনস্তা করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

এ বিষয়ে মো. শামসুল হককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ক্যাম্পাসের প্রথম ব্যাচের ছাত্র। দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার রোলে কাজ করছি। প্রশাসন ভালো মনে করেই অতিরিক্ত বেতন দিচ্ছেন।’ নিয়মিত অফিস না করার ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার সিনিয়র কর্মকর্তা আছে, এ বিষয়টি তারা দেখবেন৷’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান মিয়া জানান, ‘মো. শামসুল হকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজন শিক্ষক ইতিমধ্যে আমাদের নিকট অভিযোগ দিয়েছেন। তাছাড়া তার অতিরিক্ত বেতন উত্তোলন বিষয়েও অভিযোগ পেয়েছি। তার বিষয়ে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আলোচনা হবে, একই সাথে উপাচার্যকে অবহিত করা হবে’

উল্লেখ্য, মো. শামসুল হক ছাড়াও কর্মকর্তা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বাদল এর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা ও শিক্ষা ও বৃত্তি শাখার নাসরিন আক্তারের বিরুদ্ধেও নিয়ম বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত বেতন আদায়ের অভিযোগ রয়েছে।

বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. স্বদেশ চন্দ্র সামন্ত বলেন, ‘এখানে কয়েকজন নির্ধারিত আট ঘণ্টার পরে অতিরিক্ত সময় কাজ করার কারণে তাদেরকে অতিরিক্ত বেতন দেওয়া হচ্ছে।’ তবে দপ্তরিক সময়েও তাদের নিয়মিত অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা করলে তারা বেতন পাবেনা। বিভিন্ন কারণে তাদের চাকুরি স্থায়ী হয়নি এজন্য তাদেরকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

ইবিহো/এসএস