বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

আসন নিশ্চিত করবে যেভাবে

মো. শাহ জালাল মিশুক

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে: পাবলিক (সরকারি মালিকানাধীন), বেসরকারি (বেসরকারি মালিকানাধীন) এবং আন্তর্জাতিক (আন্তর্জাতিক সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত) বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫৩টি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার জন্য আসন রয়েছে; অর্থাৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসন নিশ্চিত করা শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কঠিন ও সৌভাগ্যের বিষয়। তবে সঠিকভাবে প্ল্যান করে ভর্তি পরীক্ষার আগের সময়টুকু যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সেই অনুযায়ী প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারলে, একজন শিক্ষার্থীর শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন নিশ্চিতই করবে না; বরং পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের পছন্দের বিভাগের ভর্তির সম্ভাবনা সর্বোচ্চ থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধ দিন দিন আরও কঠিন হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়েই দেখা যায় একটি আসনের বিপরীতে প্রায় ৫০-১৫০ জন প্রতিযোগিতা করে। তাই পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো না থাকলে টিকে থাকা সম্ভব নয়। প্রতিযোগী বেশি থাকায় ভালো প্রস্তুতি থাকার পরও অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে টিকে থাকতে পারে না। এখন আসি ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন সেই কথায়।

পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি
বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত বর্তমান সময়ে তিনটি গুচ্ছ (প্রকৌশল, GST ও কৃষি) এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছের বাইরে পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। তাই একজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে প্রস্তুতির শুরুতেই পছন্দের গুচ্ছ কিংবা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে। পাশাপাশি সেই গুচ্ছ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ধরন অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে। এ ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন কিছুটা সহযোগিতা করতে পারে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণের পরে তাকে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতেই হবে।

স্বাস্থ্য ভালো রেখে নিয়মিত পড়াশোনা ধরে রাখা
ভর্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা নানাবিধ মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। সবচেয়ে বেশি চাপ কাজ করে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিভাগে চান্স না পেলে তার চারপাশের সবার কাছ থেকে নেতিবাচক কথা শুনতে হবে এবং সবার কটুকথার পাত্র হতে হবে। তাই ভর্তি পরীক্ষার সময় মানসিক চাপ যতটা কম রাখা যায়, সেটার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা নিয়ে কোনো কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। তাই হতাশ হওয়া যাবে না।

হতে হবে আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় মনোবলের অধিকারী 
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় দুটি বিশেষ অস্ত্রের নাম ‘আত্মবিশ্বাস’ ও ‘দৃঢ় মনোবল’। ভর্তি পরীক্ষার আগের সময়টি শিক্ষার্থীকে পদে পদে হোঁচট খেতে হবে। বারবার মনে হবে যে তাকে দিয়ে হবে না। কোচিংয়ের পরীক্ষায় অনেক সময়ই দেখা যাবে একটিতে বেশ ভালো মার্কস পাবে, আবার একটু ভুলের জন্য হয়তো কিছুটা খারাপ মার্কস পাবে। তখন এই স্রোতের ওঠানামার সঙ্গে টিকে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়বে। মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখাটা হবে খুব কঠিন। কিন্তু মনে রাখতে হবে “হোঁচট খাওয়ার মানেই হেরে যাওয়া নয়, জয়ের অনীহা থেকেই পরাজয়ের শুরু হয়।” তাই পরীক্ষাগুলো নিয়মিত দিতে হবে এবং প্রতিটি পরীক্ষার প্রস্তুতি এমনভাবে নিতে হবে যেন প্রতিটিই চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষা। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, কোচিং সেন্টার পরীক্ষার্থীদের যুদ্ধের রাস্তাগুলো চিনিয়ে দেয়। কিন্তু যুদ্ধটা শিক্ষার্থীকে নিজেকেই করতে হয়। তাই শিক্ষার্থীকে সিলেবাস শেষ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বারবার রিভিশন দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে, যেন পরীক্ষার সময় স্মরণ করে সঠিকভাবে সেগুলো লিখতে পারে।

পরিশেষে এটাই বলব ধৈর্য, তীব্র সাধনা, কঠোর পরিশ্রম ও তুখোড় মেধা দিয়ে দিন শেষে একজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর পক্ষে সাফল্যের মুকুট অর্জন করা সম্ভব। অন্যদিকে সঠিক প্রস্তুতির অভাব ও কিছু ভুলের কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে দিন শেষে পরাজয় মেনে নিতে হবে। তাই শিক্ষার্থীদের নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখা উচিত এবং অন্যের সঙ্গে নিজের পড়াশোনাকে তুলনা করে কোনোভাবেই হতাশ হওয়া যাবে না; বরং শিক্ষার্থীদের বলব, নিজের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করুন এবং প্রতিদিন নিজেকে আরও এগিয়ে নিতে চেষ্টা করুন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক , চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

অনুলিখন: মো. আশিকুর রহমান

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি

আসন নিশ্চিত করবে যেভাবে

মো. শাহ জালাল মিশুক

প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে: পাবলিক (সরকারি মালিকানাধীন), বেসরকারি (বেসরকারি মালিকানাধীন) এবং আন্তর্জাতিক (আন্তর্জাতিক সংগঠন কর্তৃক পরিচালিত) বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ৫৩টি। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ হাজারের অধিক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার জন্য আসন রয়েছে; অর্থাৎ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আসন নিশ্চিত করা শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ কঠিন ও সৌভাগ্যের বিষয়। তবে সঠিকভাবে প্ল্যান করে ভর্তি পরীক্ষার আগের সময়টুকু যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সেই অনুযায়ী প্ল্যান বাস্তবায়ন করতে পারলে, একজন শিক্ষার্থীর শুধু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আসন নিশ্চিতই করবে না; বরং পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ের পছন্দের বিভাগের ভর্তির সম্ভাবনা সর্বোচ্চ থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিযুদ্ধ দিন দিন আরও কঠিন হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশের প্রায় সবগুলো বিশ্ববিদ্যালয়েই দেখা যায় একটি আসনের বিপরীতে প্রায় ৫০-১৫০ জন প্রতিযোগিতা করে। তাই পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো না থাকলে টিকে থাকা সম্ভব নয়। প্রতিযোগী বেশি থাকায় ভালো প্রস্তুতি থাকার পরও অনেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে টিকে থাকতে পারে না। এখন আসি ভর্তি পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন সেই কথায়।

পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন এবং সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি
বাংলাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত বর্তমান সময়ে তিনটি গুচ্ছ (প্রকৌশল, GST ও কৃষি) এবং কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছের বাইরে পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে থাকে। তাই একজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীকে প্রস্তুতির শুরুতেই পছন্দের গুচ্ছ কিংবা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় নির্বাচন করতে হবে। পাশাপাশি সেই গুচ্ছ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার ধরন অনুযায়ী প্রস্তুতি নিতে। এ ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন কিছুটা সহযোগিতা করতে পারে। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারণের পরে তাকে বিগত বছরের প্রশ্নগুলো সমাধান করতেই হবে।

স্বাস্থ্য ভালো রেখে নিয়মিত পড়াশোনা ধরে রাখা
ভর্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীরা নানাবিধ মানসিক চাপের মধ্যে থাকে। সবচেয়ে বেশি চাপ কাজ করে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিভাগে চান্স না পেলে তার চারপাশের সবার কাছ থেকে নেতিবাচক কথা শুনতে হবে এবং সবার কটুকথার পাত্র হতে হবে। তাই ভর্তি পরীক্ষার সময় মানসিক চাপ যতটা কম রাখা যায়, সেটার চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল থাকতে হবে। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা নিয়ে কোনো কাজ সঠিকভাবে করা সম্ভব নয়। তাই হতাশ হওয়া যাবে না।

হতে হবে আত্মবিশ্বাসী ও দৃঢ় মনোবলের অধিকারী 
বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় দুটি বিশেষ অস্ত্রের নাম ‘আত্মবিশ্বাস’ ও ‘দৃঢ় মনোবল’। ভর্তি পরীক্ষার আগের সময়টি শিক্ষার্থীকে পদে পদে হোঁচট খেতে হবে। বারবার মনে হবে যে তাকে দিয়ে হবে না। কোচিংয়ের পরীক্ষায় অনেক সময়ই দেখা যাবে একটিতে বেশ ভালো মার্কস পাবে, আবার একটু ভুলের জন্য হয়তো কিছুটা খারাপ মার্কস পাবে। তখন এই স্রোতের ওঠানামার সঙ্গে টিকে থাকাটা কঠিন হয়ে পড়বে। মানসিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখাটা হবে খুব কঠিন। কিন্তু মনে রাখতে হবে “হোঁচট খাওয়ার মানেই হেরে যাওয়া নয়, জয়ের অনীহা থেকেই পরাজয়ের শুরু হয়।” তাই পরীক্ষাগুলো নিয়মিত দিতে হবে এবং প্রতিটি পরীক্ষার প্রস্তুতি এমনভাবে নিতে হবে যেন প্রতিটিই চূড়ান্ত ভর্তি পরীক্ষা। পাশাপাশি মনে রাখতে হবে, কোচিং সেন্টার পরীক্ষার্থীদের যুদ্ধের রাস্তাগুলো চিনিয়ে দেয়। কিন্তু যুদ্ধটা শিক্ষার্থীকে নিজেকেই করতে হয়। তাই শিক্ষার্থীকে সিলেবাস শেষ করে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বারবার রিভিশন দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে, যেন পরীক্ষার সময় স্মরণ করে সঠিকভাবে সেগুলো লিখতে পারে।

পরিশেষে এটাই বলব ধৈর্য, তীব্র সাধনা, কঠোর পরিশ্রম ও তুখোড় মেধা দিয়ে দিন শেষে একজন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীর পক্ষে সাফল্যের মুকুট অর্জন করা সম্ভব। অন্যদিকে সঠিক প্রস্তুতির অভাব ও কিছু ভুলের কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে দিন শেষে পরাজয় মেনে নিতে হবে। তাই শিক্ষার্থীদের নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস রাখা উচিত এবং অন্যের সঙ্গে নিজের পড়াশোনাকে তুলনা করে কোনোভাবেই হতাশ হওয়া যাবে না; বরং শিক্ষার্থীদের বলব, নিজের সঙ্গে নিজেকে তুলনা করুন এবং প্রতিদিন নিজেকে আরও এগিয়ে নিতে চেষ্টা করুন।

লেখক: সহকারী অধ্যাপক , চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

অনুলিখন: মো. আশিকুর রহমান