ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাসে ধূমপানের ছড়াছড়ি!

মোজাহিদুল ইসলাম নিরব

গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

ধূমপান ও মাদকমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) বেশ সুনাম রয়েছে। এমনকি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ২০১৫ সালে প্রণীত বিধিমালা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসপেক্টাসে নিজেদেরকে ‘ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মরত সকলের ওপর ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে ধূমপান সেবনে কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা এবং তার আলামত দেখা গিয়েছে বিভিন্ন সময়ে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) এক গোপন তথ্যের ভিত্তিতে একাডেমিক ভবনের ৩য় তলার বি-ব্লকের ওয়াশরুমে অভিযান চালায় গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)। সেখানে বিভিন্ন প্রমাণাদিসহ ধূমপানের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হলেও পাওয়া যায়নি কাউকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী এটাকে প্রশাসনের ব্যর্থতা দাবি করে বলেন, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ধূমপানে অভ্যস্ত থাকে। যেখানে বর্তমান প্রজন্ম ধূমপানের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। এমন অবস্থা থেকে ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত শাস্তিসমূহ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। বিষয়টাকে শুধুমাত্র কাগজে-কলমে না রেখে বাস্তবায়ন করা হলে সকলে একটু সচেতন হবে আশা করি।

এই বিষয়ে ৩য় তলার বি-ব্লকে অবস্থিত কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. করিম নেওয়াজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন জানিয়ে বলেন, এটা একেবারে নির্মুল করা যাবেনা, তবে দ্রুতই বিষয়টা সমাধান করতে পারবো। সিসি টিভির ব্যবস্থা করবো সম্ভব হলে।

তিনি আরও বলেন, সিগারেটের বিষয়টা নিয়ে আমরা আজ সকালেও বসেছি। দায়িত্ব দিয়েছি শিক্ষকদের। তারা সময় করে ওয়াশরুমে যাবেন এবং খোঁজ নিবেন। হাতেনাতে ধরতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত শাস্তির ব্যবস্থা করবো আমরা। সম্পূর্ণ নির্মুল করতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

প্রক্টরিয়াল বডি না থাকার অযুহাত দেখিয়ে প্রধান রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা
শামীম আহমেদ বলেন, আসলে এই বিষয়টায় ম্যানেজমেন্টের ত্রুটি আছে। সেটা ঠিক করতে হবে।

খালি সিগারেটের পেকেট পড়ে আছে।

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ধূমপান করার বিষয়টি অবগত আছেন স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, এটা প্রশাসন এককভাবে বন্ধ করতে পারবে না। প্রতিটি বিভাগ ও শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে এটাকে বন্ধ করতে হবে। আমি আগামী মাসের মধ্যেই প্রক্টরিয়াল বডি করে ফেলবো।

তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র প্রশাসনিকভাবে এটা বন্ধ করা সম্ভব না। আমি সকল শিক্ষকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। তাদেরকে বলেছি, প্রতিটি ক্লাসে কাউন্সেলিং করার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের কাছে একটা বার্তা পৌঁছাতে বলেছি যে, কোনো শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ধূমপান করে তাকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু পোস্টারিং ও করতে বলেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানের সাথে আমি কথা বলবো৷

মাদকাসক্তি ও ধূমপানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসপেক্টাসে বলা আছে, কোনো ধূমপানসেবী, মাদকাসক্ত বা ধূমপায়ী ছাত্র, শিক্ষক বা কর্মচারীর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বা চাকুরীর জন্য আবেদন করার প্রয়োজন নেই। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বা বাসস্থানেও ধূমপান করা যাবে না। ধূমপান অথবা মাদকাসক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য গোপন করা হলে ভর্তি বা চাকুরী বাতিল হবে। ভর্তির টাকাও ফেরত দেয়া হবে না। এমনকি পরীক্ষা পাশের পরও সার্টিফিকেট রহিত করা হতে পারে। এছাড়াও মাদক সেবনে অনুৎসাহিত করে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন থেকে নোটিশও করা হয়েছে।

এমবিএইচ/এসএস

ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাসে ধূমপানের ছড়াছড়ি!

মোজাহিদুল ইসলাম নিরব

গণ বিশ্ববিদ্যালয়।

ধূমপান ও মাদকমুক্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) বেশ সুনাম রয়েছে। এমনকি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের ২০১৫ সালে প্রণীত বিধিমালা অনুসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসপেক্টাসে নিজেদেরকে ‘ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এখানকার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মরত সকলের ওপর ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে ধূমপান সেবনে কড়া নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসের আনাচে কানাচে ধূমপানে আসক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা এবং তার আলামত দেখা গিয়েছে বিভিন্ন সময়ে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) এক গোপন তথ্যের ভিত্তিতে একাডেমিক ভবনের ৩য় তলার বি-ব্লকের ওয়াশরুমে অভিযান চালায় গণ বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (গবিসাস)। সেখানে বিভিন্ন প্রমাণাদিসহ ধূমপানের বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত হলেও পাওয়া যায়নি কাউকেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী এটাকে প্রশাসনের ব্যর্থতা দাবি করে বলেন, সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী ধূমপানে অভ্যস্ত থাকে। যেখানে বর্তমান প্রজন্ম ধূমপানের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িত। এমন অবস্থা থেকে ধূমপানমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত শাস্তিসমূহ কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত। বিষয়টাকে শুধুমাত্র কাগজে-কলমে না রেখে বাস্তবায়ন করা হলে সকলে একটু সচেতন হবে আশা করি।

এই বিষয়ে ৩য় তলার বি-ব্লকে অবস্থিত কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক মো. করিম নেওয়াজের কাছে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন জানিয়ে বলেন, এটা একেবারে নির্মুল করা যাবেনা, তবে দ্রুতই বিষয়টা সমাধান করতে পারবো। সিসি টিভির ব্যবস্থা করবো সম্ভব হলে।

তিনি আরও বলেন, সিগারেটের বিষয়টা নিয়ে আমরা আজ সকালেও বসেছি। দায়িত্ব দিয়েছি শিক্ষকদের। তারা সময় করে ওয়াশরুমে যাবেন এবং খোঁজ নিবেন। হাতেনাতে ধরতে পারলে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত শাস্তির ব্যবস্থা করবো আমরা। সম্পূর্ণ নির্মুল করতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সহযোগিতা প্রয়োজন।

প্রক্টরিয়াল বডি না থাকার অযুহাত দেখিয়ে প্রধান রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপত্তা কর্মকর্তা
শামীম আহমেদ বলেন, আসলে এই বিষয়টায় ম্যানেজমেন্টের ত্রুটি আছে। সেটা ঠিক করতে হবে।

খালি সিগারেটের পেকেট পড়ে আছে।

বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ধূমপান করার বিষয়টি অবগত আছেন স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল হোসেন বলেন, এটা প্রশাসন এককভাবে বন্ধ করতে পারবে না। প্রতিটি বিভাগ ও শিক্ষার্থীরা সম্মিলিতভাবে এটাকে বন্ধ করতে হবে। আমি আগামী মাসের মধ্যেই প্রক্টরিয়াল বডি করে ফেলবো।

তিনি আরও জানান, শুধুমাত্র প্রশাসনিকভাবে এটা বন্ধ করা সম্ভব না। আমি সকল শিক্ষকদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করেছি। তাদেরকে বলেছি, প্রতিটি ক্লাসে কাউন্সেলিং করার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের কাছে একটা বার্তা পৌঁছাতে বলেছি যে, কোনো শিক্ষার্থী যদি বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ধূমপান করে তাকে বহিষ্কার করার ক্ষমতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু পোস্টারিং ও করতে বলেছি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় প্রধানের সাথে আমি কথা বলবো৷

মাদকাসক্তি ও ধূমপানের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসপেক্টাসে বলা আছে, কোনো ধূমপানসেবী, মাদকাসক্ত বা ধূমপায়ী ছাত্র, শিক্ষক বা কর্মচারীর গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি বা চাকুরীর জন্য আবেদন করার প্রয়োজন নেই। গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বা বাসস্থানেও ধূমপান করা যাবে না। ধূমপান অথবা মাদকাসক্তি সম্পর্কে কোন তথ্য গোপন করা হলে ভর্তি বা চাকুরী বাতিল হবে। ভর্তির টাকাও ফেরত দেয়া হবে না। এমনকি পরীক্ষা পাশের পরও সার্টিফিকেট রহিত করা হতে পারে। এছাড়াও মাদক সেবনে অনুৎসাহিত করে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন থেকে নোটিশও করা হয়েছে।

এমবিএইচ/এসএস