সরকারি স্কুলে ভর্তি যেন ‘সোনার হরিণ’

শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম

আহমেদুর রহমানের ইচ্ছা- পঞ্চম শ্রেণি থেকে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়বে। এখানে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৫১৪ আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে কয়েক গুণ। ফলে আহমেদুরকে তাকিয়ে থাকতে হবে লটারি ভাগ্যের ওপর। আগামীকাল সোমবার সরকারি স্কুলে ভর্তির লটারি হবে। এর পর ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ করা হবে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরের ১০টি সরকারি স্কুলের মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ৫১৪, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪৭৫, সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে ৪৭৯, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৪৭, নাছিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪৭২, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৩৫, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৩৮, হাজী মহম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৯, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বালক ও বালিকা শাখায় ৪৯৯ এবং চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাত্র ৬০টি আসন শূন্য রয়েছে। এসব স্কুলে মোট আসন ৩ হাজার ৯১৮টি। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণিতে ২ হাজার ৭৬, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৮০৩, সপ্তম শ্রেণিতে ১৪৫, অষ্টম শ্রেণিতে ১৬৯ ও নবম শ্রেণিতে রয়েছে ৭২৫ আসন। এসব শ্রেণিতে এবার ভর্তির জন্য আবেদন করেছে রেকর্ড ২ লাখ ৩৫ হাজার ৩১ শিক্ষার্থী। প্রতি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৬০টি।

এমন অবস্থায় নগরীর পছন্দের সরকারি স্কুলে সন্তানদের পড়ানোর সুযোগকে ‘সোনার হরিণ’ বলছেন অভিভাবকরা। তাঁদের অভিযোগ, দেশ স্বাধীনের পর এত বছরেও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বাড়েনি সরকারি স্কুল। প্রত্যেক বছর শিক্ষার্থী বাড়লেও স্কুল ১০টিই রয়ে গেছে। ফলে পছন্দের স্কুলে পড়া থেকে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ‘লটারি’ প্রক্রিয়ার কারণে বঞ্চিত হচ্ছে, যা মেধা বিকাশের বড় বাধা বলেও মনে করেন অভিভাবকরা।

নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক মো. ইমন বলে, প্রাথমিক সমাপনীতে জিপিএ ৫ পেয়েছি। পরের তিন শ্রেণিতেই ভালো ফলাফল করেছি। অথচ এখন নবম শ্রেণিতে পছন্দের স্কুলে ভর্তি হতে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। বিষয়টি মোটেও ভালো লাগছে না। পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলে ভালো লাগত।

পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সীমা ইসলামের মা ইবনে বিনতে ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক থেকেই মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়িয়েছি। যথাযথ গাইডলাইন পাওয়ায় প্রতিটি শ্রেণিতে ভালো ফলাফল করেছে। চট্টগ্রামের নামকরা সরকারি স্কুলে পড়ানোর স্বপ্ন আমাদের। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে লটারি। এ প্রক্রিয়ায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পছন্দের স্কুলে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।’

অনেক অভিভাবক দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ না পেলে সন্তানদের পড়ালেখা কীভাবে চালাবেন, তা নিয়েও উদ্বেগের কথা জানান। সরকারি স্কুল বাড়ানোর দাবিও জানান তাঁরা।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু রায়হান দোলন সমকালকে বলেন, ‘এবার ১০টি সরকারি স্কুলে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। ডিজিটাল লটারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের নির্বাচন করা হবে।’ তিনি স্বীকার করেন, ‘পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ থাকলে প্রকৃত মেধার বিকাশ ঘটত। লটারিতে সেটি সম্ভব নয়। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী লটারির কারণে পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে ছিটকে যাবে, যা তাদের মনোজগতেও প্রভাব ফেলতে পারে।’

সরকারি স্কুলে ভর্তি যেন ‘সোনার হরিণ’

শৈবাল আচার্য্য, চট্টগ্রাম

আহমেদুর রহমানের ইচ্ছা- পঞ্চম শ্রেণি থেকে ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে পড়বে। এখানে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৫১৪ আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে কয়েক গুণ। ফলে আহমেদুরকে তাকিয়ে থাকতে হবে লটারি ভাগ্যের ওপর। আগামীকাল সোমবার সরকারি স্কুলে ভর্তির লটারি হবে। এর পর ফলাফল অনলাইনে প্রকাশ করা হবে।

সংশ্নিষ্টরা জানান, চট্টগ্রাম মহানগরের ১০টি সরকারি স্কুলের মধ্যে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ৫১৪, ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪৭৫, সরকারি মুসলিম হাইস্কুলে ৪৭৯, চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৪৭, নাছিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৪৭২, চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৩৫, সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ৫৩৮, হাজী মহম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ১৯৯, বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বালক ও বালিকা শাখায় ৪৯৯ এবং চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাত্র ৬০টি আসন শূন্য রয়েছে। এসব স্কুলে মোট আসন ৩ হাজার ৯১৮টি। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণিতে ২ হাজার ৭৬, ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৮০৩, সপ্তম শ্রেণিতে ১৪৫, অষ্টম শ্রেণিতে ১৬৯ ও নবম শ্রেণিতে রয়েছে ৭২৫ আসন। এসব শ্রেণিতে এবার ভর্তির জন্য আবেদন করেছে রেকর্ড ২ লাখ ৩৫ হাজার ৩১ শিক্ষার্থী। প্রতি আসনের বিপরীতে আবেদন পড়েছে ৬০টি।

এমন অবস্থায় নগরীর পছন্দের সরকারি স্কুলে সন্তানদের পড়ানোর সুযোগকে ‘সোনার হরিণ’ বলছেন অভিভাবকরা। তাঁদের অভিযোগ, দেশ স্বাধীনের পর এত বছরেও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে বাড়েনি সরকারি স্কুল। প্রত্যেক বছর শিক্ষার্থী বাড়লেও স্কুল ১০টিই রয়ে গেছে। ফলে পছন্দের স্কুলে পড়া থেকে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ‘লটারি’ প্রক্রিয়ার কারণে বঞ্চিত হচ্ছে, যা মেধা বিকাশের বড় বাধা বলেও মনে করেন অভিভাবকরা।

নবম শ্রেণিতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক মো. ইমন বলে, প্রাথমিক সমাপনীতে জিপিএ ৫ পেয়েছি। পরের তিন শ্রেণিতেই ভালো ফলাফল করেছি। অথচ এখন নবম শ্রেণিতে পছন্দের স্কুলে ভর্তি হতে ভাগ্যের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। বিষয়টি মোটেও ভালো লাগছে না। পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেলে ভালো লাগত।

পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হতে ইচ্ছুক সীমা ইসলামের মা ইবনে বিনতে ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক থেকেই মেয়েকে ভালো স্কুলে পড়িয়েছি। যথাযথ গাইডলাইন পাওয়ায় প্রতিটি শ্রেণিতে ভালো ফলাফল করেছে। চট্টগ্রামের নামকরা সরকারি স্কুলে পড়ানোর স্বপ্ন আমাদের। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে লটারি। এ প্রক্রিয়ায় অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী পছন্দের স্কুলে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে।’

অনেক অভিভাবক দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ না পেলে সন্তানদের পড়ালেখা কীভাবে চালাবেন, তা নিয়েও উদ্বেগের কথা জানান। সরকারি স্কুল বাড়ানোর দাবিও জানান তাঁরা।

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আবু রায়হান দোলন সমকালকে বলেন, ‘এবার ১০টি সরকারি স্কুলে পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার শিক্ষার্থী ভর্তির সুযোগ পাবে। ডিজিটাল লটারি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের নির্বাচন করা হবে।’ তিনি স্বীকার করেন, ‘পরীক্ষার মাধ্যমে ভর্তির সুযোগ থাকলে প্রকৃত মেধার বিকাশ ঘটত। লটারিতে সেটি সম্ভব নয়। অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী লটারির কারণে পছন্দের প্রতিষ্ঠান থেকে ছিটকে যাবে, যা তাদের মনোজগতেও প্রভাব ফেলতে পারে।’