ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

জনবল নিয়োগে ঘাপলা, নেপথ্যে অর্থবাণিজ্য

উত্তীর্ণ বৈধ প্রার্থী একজন, বাকিরা অন্য এলাকার

ঝিনাইদহে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগে বড় ধরনের ঘাপলা ধরা পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্যের। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অধিকাংশ প্রার্থী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা নির্ধারিত এলাকার (ইউনিট) বাইরের। তবু মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছে তাদের। ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে মৌখিক পরীক্ষা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ঝিনাইদহের পক্ষে ২০২১ সালের ১৭ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মোট ৮২টি পদের বিপরীতে ৩ হাজার ৭৪২ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। ১৪ জুলাই সকাল ১০টায় জেলা শহরের চারটি বিদ্যালয়কেন্দ্রে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। ৩১ অক্টোবর মৌখিক পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ২৩, পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে ২৩৬ এবং আয়া পদে ৩০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আরও জানা যায়, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (সহকারী পরিচালক সিসি) ডা. জাহিদ আহমেদের করা ছকে নিয়োগসংক্রান্ত প্রাথমিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার আগে নিজের স্বাক্ষর করা এক অফিস আদেশে ৮ সদস্যর কমিটি গঠন করেন তিনি। আদেশ বলে কমিটির সভাপতি হয়েছেন ওই কর্মকর্তা। এছাড়া অপর তিনটি পৃথক আদেশে তিনজন পরিদর্শককে নিয়োগ কাজে সহযোগিতার জন্য জেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরে সংযুক্ত করেছেন তিনি। তাদের মধ্যে একজন ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মাহমুদুল ইসলাম মামুন। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের আদেশে ডেটাবেজের কাজ করেছি। প্রার্থীরা টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন করেছেন দাবি করেন তিনি।

এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে পাওয়া যায় ভিন্নচিত্র। দেখা যায়, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নে লিখিত পরীক্ষায় চারজন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন নির্ধারিত এলাকার বাইরের আবেদনকারী। এ উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের ১/ক ইউনিটে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে লিখিত পরীক্ষায় তিনজন টিকেছেন। দুজনই অন্য এলাকার আবেদনকারী (আবেদনের অযোগ্য)। ওই ইউনিটে প্রার্থী হিসাবে থাকছেন মাত্র একজন। কোনো অঘটন না ঘটলে নিশ্চিত চাকরি হবে তার। একই পদে সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের ৩/খ ইউনিটে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চারজনের দুজনই আবেদন করার অযোগ্য ছিলেন। সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ২/ক ইউনিটে ওই পদে উত্তীর্ণ চারজনের তিনজনই আবেদনের অযোগ্য। এখন ওই ইউনিটে থাকল মাত্র একজন। সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে টিকেছেন তিনজন। তাদের মধ্যে প্রকৃত প্রার্থী একজন। মহেশপুর উপজেলার নেপা ইউনিয়নের ২/ক ইউনিটে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তিনজনের মধ্যে দুজনই অন্য এলাকার আবেদনকারী। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভায়না ইউনিয়নে ২ নম্বর ওয়ার্ডে ওই পদে উত্তীর্ণ দুজনের মধ্যে অপরজন অন্য এলাকার। এ উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নে তিনজনের মধ্যে একজন অন্য এলাকার। উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের তিনজন উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্য এলাকার একজন। এ উপজেলার চাঁদপুর ও কাপাসাটিয়া ইউনিয়নে চারজনের মধ্যে তিনজন অন্য এলাকার। শৈলকুপা, কোটচাঁদপুর, কালীগঞ্জ, উপজেলায় একই চিত্র বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, সুপরিকল্পিতভাবে চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন নেওয়া হয়েছে। তাদের আবেদন ঠিকমতো যাচাই-বাছাই করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী তিন সদস্যের নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক। ২০১১ সাল থেকে এ পদটি শূন্য। তাই বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক জাহিদ আহমেদ ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও বিভাগে ভুক্তভোগীদের দেওয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্নীতিবাজ হিসাবে খ্যাত এ কর্মকর্তা বছরের পর বছর চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে উপপরিচালকের পদ আঁকড়ে আছেন। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারেন না। এ চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা নিয়োগ পেতে চুক্তি অনুযায়ী ঘুসের টাকা জোগাড় করতে কেউ কেউ জমি বন্ধক রাখছেন। তাদের চাপ দিচ্ছে দালালরা।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডা. জাহিদ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের অনেকেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা নির্ধারিত এলাকার বাইরের বলে স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, মৌখিক পরীক্ষার আগে যাচাই করে তাদের বাদ দেওয়া হবে। তবে অর্থ লেনদেনসহ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

নিয়োগ কমিটির একমাত্র সদস্য ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. শুভা রানী দেবনাথ বলেছেন, নির্ধারিত এলাকার (ইউনিট) বাইরের প্রার্থী কীভাবে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, তা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তাই বলতে পারবেন। এর কোনো উত্তর আমার কাছে নেই।

নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মনিরা বেগমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বুধবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বিষয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঝিনাইদহ জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর

জনবল নিয়োগে ঘাপলা, নেপথ্যে অর্থবাণিজ্য

উত্তীর্ণ বৈধ প্রার্থী একজন, বাকিরা অন্য এলাকার

ঝিনাইদহে জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগে বড় ধরনের ঘাপলা ধরা পড়েছে। অভিযোগ উঠেছে লাখ লাখ টাকা বাণিজ্যের। লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অধিকাংশ প্রার্থী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা নির্ধারিত এলাকার (ইউনিট) বাইরের। তবু মৌখিক পরীক্ষার জন্য ডাকা হয়েছে তাদের। ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হবে মৌখিক পরীক্ষা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় ঝিনাইদহের পক্ষে ২০২১ সালের ১৭ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মোট ৮২টি পদের বিপরীতে ৩ হাজার ৭৪২ চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। ১৪ জুলাই সকাল ১০টায় জেলা শহরের চারটি বিদ্যালয়কেন্দ্রে প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়। ৩১ অক্টোবর মৌখিক পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ২৩, পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে ২৩৬ এবং আয়া পদে ৩০ জন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

আরও জানা যায়, জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক (সহকারী পরিচালক সিসি) ডা. জাহিদ আহমেদের করা ছকে নিয়োগসংক্রান্ত প্রাথমিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে। লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার আগে নিজের স্বাক্ষর করা এক অফিস আদেশে ৮ সদস্যর কমিটি গঠন করেন তিনি। আদেশ বলে কমিটির সভাপতি হয়েছেন ওই কর্মকর্তা। এছাড়া অপর তিনটি পৃথক আদেশে তিনজন পরিদর্শককে নিয়োগ কাজে সহযোগিতার জন্য জেলা পরিবার পরিকল্পনা দপ্তরে সংযুক্ত করেছেন তিনি। তাদের মধ্যে একজন ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক মাহমুদুল ইসলাম মামুন। তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষের আদেশে ডেটাবেজের কাজ করেছি। প্রার্থীরা টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন করেছেন দাবি করেন তিনি।

এদিকে সরেজমিন অনুসন্ধানে পাওয়া যায় ভিন্নচিত্র। দেখা যায়, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নে লিখিত পরীক্ষায় চারজন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের মধ্যে দুজন নির্ধারিত এলাকার বাইরের আবেদনকারী। এ উপজেলার পোড়াহাটি ইউনিয়নের ১/ক ইউনিটে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে লিখিত পরীক্ষায় তিনজন টিকেছেন। দুজনই অন্য এলাকার আবেদনকারী (আবেদনের অযোগ্য)। ওই ইউনিটে প্রার্থী হিসাবে থাকছেন মাত্র একজন। কোনো অঘটন না ঘটলে নিশ্চিত চাকরি হবে তার। একই পদে সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়নের ৩/খ ইউনিটে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ চারজনের দুজনই আবেদন করার অযোগ্য ছিলেন। সদর উপজেলার নলডাঙ্গা ইউনিয়নের ২/ক ইউনিটে ওই পদে উত্তীর্ণ চারজনের তিনজনই আবেদনের অযোগ্য। এখন ওই ইউনিটে থাকল মাত্র একজন। সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডে পরিবার কল্যাণ সহকারী পদে টিকেছেন তিনজন। তাদের মধ্যে প্রকৃত প্রার্থী একজন। মহেশপুর উপজেলার নেপা ইউনিয়নের ২/ক ইউনিটে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তিনজনের মধ্যে দুজনই অন্য এলাকার আবেদনকারী। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার ভায়না ইউনিয়নে ২ নম্বর ওয়ার্ডে ওই পদে উত্তীর্ণ দুজনের মধ্যে অপরজন অন্য এলাকার। এ উপজেলার তাহেরহুদা ইউনিয়নে তিনজনের মধ্যে একজন অন্য এলাকার। উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের তিনজন উত্তীর্ণ হয়েছেন। তাদের মধ্যে অন্য এলাকার একজন। এ উপজেলার চাঁদপুর ও কাপাসাটিয়া ইউনিয়নে চারজনের মধ্যে তিনজন অন্য এলাকার। শৈলকুপা, কোটচাঁদপুর, কালীগঞ্জ, উপজেলায় একই চিত্র বলে দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেছেন।

অভিযোগ উঠেছে, সুপরিকল্পিতভাবে চাকরিপ্রার্থীদের আবেদন নেওয়া হয়েছে। তাদের আবেদন ঠিকমতো যাচাই-বাছাই করা হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী তিন সদস্যের নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন জেলা পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক। ২০১১ সাল থেকে এ পদটি শূন্য। তাই বর্তমান ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক জাহিদ আহমেদ ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর ও বিভাগে ভুক্তভোগীদের দেওয়া লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্নীতিবাজ হিসাবে খ্যাত এ কর্মকর্তা বছরের পর বছর চাকরিবিধি লঙ্ঘন করে উপপরিচালকের পদ আঁকড়ে আছেন। ভয়ে তার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বলতে পারেন না। এ চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা নিয়োগ পেতে চুক্তি অনুযায়ী ঘুসের টাকা জোগাড় করতে কেউ কেউ জমি বন্ধক রাখছেন। তাদের চাপ দিচ্ছে দালালরা।

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডা. জাহিদ উত্তীর্ণ প্রার্থীদের অনেকেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা নির্ধারিত এলাকার বাইরের বলে স্বীকার করেছেন। তিনি জানান, মৌখিক পরীক্ষার আগে যাচাই করে তাদের বাদ দেওয়া হবে। তবে অর্থ লেনদেনসহ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

নিয়োগ কমিটির একমাত্র সদস্য ঝিনাইদহের সিভিল সার্জন ডা. শুভা রানী দেবনাথ বলেছেন, নির্ধারিত এলাকার (ইউনিট) বাইরের প্রার্থী কীভাবে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন, তা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের কর্মকর্তাই বলতে পারবেন। এর কোনো উত্তর আমার কাছে নেই।

নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মনিরা বেগমের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বুধবার দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের বিষয়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহের জন্য ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।