ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ যাদের লক্ষ্য

মাজেদুল ইসলাম রাকিব

ফাইল ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। তোমাদের যারা ঢাবিতে বিজ্ঞান থেকে বিভাগ পরিবর্তন করতে চাও, তাদের প্রস্তুতি নিয়েই আজ কথা বলব।

বিভাগ পরিবর্তন কি থাকছে? 
একজন শিক্ষার্থী যদি বিজ্ঞান থেকে এইচএসসি দিয়ে পরে মানবিক কিংবা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কোনো বিষয়ে স্নাতক ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চায়, তার জন্য এই ব্যবস্থা রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তোমরা জানো যে বিগত বছরগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় মূল ৫টি ইউনিটে পরীক্ষা হয়েছিল। যথা: ক ইউনিট (বিজ্ঞান), খ ইউনিট (মানবিক), গ ইউনিট (ব্যবসায় শিক্ষা) ও ঘ ইউনিট (বিভাগ পরিবর্তন যেখানে ক, খ ও গ সবাই পরীক্ষা দিতে পারতে) এবং চারুকলা ইউনিট।

তবে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ, অর্থাৎ এ বছর থেকে ঢাবিতে পরীক্ষা হচ্ছে ৪টি ইউনিটে। খ ও ঘ ইউনিটকে একত্র করে নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ’। নতুন নামে এই অনুষদে পরীক্ষা দিতে পারবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের সবাই। আসনসংখ্যা খ ও ঘ ইউনিট মিলিয়ে গত বছর যা ছিল, এবারও তাই থাকছে।

মাজেদুল ইসলাম রাকিব

মাজেদুল ইসলাম রাকিব

পরীক্ষার তারিখ ও মানবণ্ট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৬ মে বেলা ১১টায় এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিভাগীয় শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই পরীক্ষায় গতবারের মতোই নম্বর বণ্টনের কথা জানিয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল।

পরীক্ষায় মোট নম্বর ১২০। এর মধ্যে বহুনির্বাচনী বা এমসিকিউ ৬০ নম্বর,লিখিত ৪০ নম্বর এবং জিপিএ ২০ নম্বর (এইচএসসি ও এসএসসির জিপিএর ওপর নির্ভর করে হয়)। এই ১২০-এর মধ্যে যারা ৯৩+ স্কোর করবে, তারা শ্রেষ্ঠ ১০০ জনের তালিকায় স্থান পায়। প্রস্তুতিটা নিতে হবে এতই সূক্ষ্ম যে প্রতিযোগিতার এই দৌড়ে নিশ্চিত করতে হবে নিজের আসন।

বিষয় ও পাস নম্বর
কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে পরীক্ষা বিগত বছরের মতো হবে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে। তবে সাধারণ জ্ঞান অংশে এক-দুটি বেসিক সাধারণ গণিত এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রশ্ন আসতে পারে।

ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়েই পৃথকভাবে পাস করতে হয়; এইচএসসির মতো প্রথম পত্রে নম্বর কম পেলে দ্বিতীয় পত্র দিয়ে তা পূরণ করার সুযোগ থাকে না। বাংলা ও ইংরেজিতে ১৫ নম্বরের বহুনির্বাচনী অংশের মাঝে ৫ নম্বর ও সাধারণ জ্ঞানে ১২ নম্বর না পেলে সে ফেল বা অকৃতকার্য বলে গণ্য হবে। বহুনির্বাচনীতে ফেল করা শিক্ষার্থীর লিখিত খাতা পর্যবেক্ষণ করা হবে না। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, শুধু পাস করলেই যে লিখিত খাতা কাটবে এমন নয়, তাই সেখানে বেশি নম্বর পাওয়া জরুরি। লিখিত অংশের ৪০ নম্বরের মাঝে পাস নম্বর ১২।

প্রস্তুতি শর্ট সিলেবাস, নাকি ফুল সিলেবাস–বিষয়ভিত্তিক
বাংলা: এইচএসসি পরীক্ষায় তোমরা শর্ট সিলেবাসে অংশ নিয়েছ। বাংলার ক্ষেত্রে শুধু প্রথম পত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রস্তুতি নিতে পারবে। তবে দ্বিতীয় পত্রে তা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বিগত বছরের প্রশ্ন বলছে, প্রায় ৬৫ শতাংশ বহুনির্বাচনী প্রশ্ন আসছে বাংলা প্রথম পত্র থেকে। তাই এখন থেকেই ঢাবি ও বিইউপির প্রস্তুতিতে প্রথম পত্রের প্রতি বিশেষ জোর দেবে। খ ইউনিটের বিগত দুই বছরের প্রশ্ন বলছে, সহপাঠের উপন্যাস ও নাটক অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ঘ ইউনিটের ক্ষেত্রে সেটা কম হলেও এবার সবাইকে বিশেষ নজরদারি করতে হবে। লিখিতর জন্য শুদ্ধিকরণ, অনুচ্ছেদ, বাক্যগঠন ও অনুবাদ লেখার নিয়ম জানতে হবে।

ইংরেজি
ইংরেজিতে আসলে শর্ট সিলেবাস বলে কিছু নেই। মানবিকের প্রশ্ন অনেক বেশি আসত মূল টেক্সট বই থেকেই। গ্রামার, বানান, সমার্থক শব্দ, প্রিপজিশনসহ অধিকাংশ প্রশ্ন আসছে টেক্সট বই থেকেই। বিভাগ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ঘ ইউনিটের প্রশ্ন আবার সরাসরি টেক্সট বই থেকে আসে না। একটুখানি বেসিক গ্রামার, ভোকাবুলারি অংশ থেকেই প্রশ্ন বেশি আসছে এবং সঙ্গে একটি প্যাসেজ থেকে ৫টি প্রশ্ন আসছে। এবার যেহেতু দুই ইউনিট একত্র হয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, প্রশ্নকর্তা হতে চলেছেন কলা অনুষদের শিক্ষকেরা, তাই হয়তো সবাইকে টেক্সট বইয়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। প্যারাগ্রাফ, বাক্যগঠন, অনুবাদ ও ১০ বাক্যের অনুচ্ছেদ লেখা জানতে হবে।

সাধারণ জ্ঞান
খ ও ঘ ইউনিটের সাধারণ জ্ঞানে বিগত বছরগুলোতে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও এবার থেকে নতুন একত্র অনুষদে তা হবে না। কেননা, মানবিকের বেসিক বিষয়, যেমন অর্থনীতি, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ের মৌলিক কিছু প্রশ্ন আসছে, যেগুলো অন্য দুই বিভাগ যুক্ত হওয়ায় হয়তো এতটা আসবে না। বৈশ্বিক সূচক, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, বাংলাদেশের চুক্তি, ক্রীড়া, প্রযুক্তি, উন্নয়নমূলক প্রজেক্ট, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বিখ্যাত পুরস্কার, সাম্প্রতিক বিশ্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে জানতে হবে সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষার জন্য। যেকোনো টপিকে ৫-১০ লাইন লেখার অনুশীলন রাখতে হবে। এতে করে তোমার ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং স্কিলটা বাড়বে। সময় ৫ মিনিট ধরে সাত-আট লাইন লিখে ফেলার অভ্যাস করা জরুরি।

সাধারণ জ্ঞানের লিখিত কী থাকছে? 
ঘ ইউনিটের ক্ষেত্রে ২০১৯ সাল থেকেই লিখিত অংশে দুটি প্রশ্ন আসে সাধারণ জ্ঞানে, যা খ ইউনিটের ক্ষেত্রে ছিল না। এই দুটি প্রশ্নের একটি লিখতে হয় বাংলায় আর একটি ইংরেজিতে। যেহেতু খ ও ঘ যুক্ত হয়েছে, তাই হয়তো এ বছর সাধারণ জ্ঞানেও লিখিত রাখা হবে। তাই মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞানে একটি লিখিত বাংলায় ও ইংরেজিতে লেখার প্রস্তুতি রাখতে বলব।

বিগত বছরের প্রশ্ন
বিগত বছরের প্রশ্নপত্র পড়ার মাধ্যমে তুমি ধারণা পাবে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও প্রশ্নের ধরনের। এই ধারণা তোমায় প্রয়োজনীয় টপিক খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। গত দশ বছরের প্রশ্ন নিজের থেকেই উত্তর না দেখে সমাধান করলে নিজের অবস্থান যাচাই করতে পারবে এবং একই সঙ্গে কোন অনুশীলনীগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কোন অধ্যায় থেকে বেশি এবং বারবার প্রশ্ন আসবে, তা জানতে পারবে। এখন থেকেই মডেল টেস্টগুলোয় যাচাই করতে তোমরা একটি প্রশ্নের উত্তরের একটি মাত্র অপশনই দাগাবে। সময় মেইনটেন করে পরীক্ষা দেবে এবং লিখিত ৪০ নম্বরের জন্য ৪০ মিনিটই বরাদ্দ রাখবে। কেননা বাকি ৫ মিনিট চিন্তা করতে ও প্রশ্ন পড়তে কেটে যাবে।

ব্যক্তিগত পরামর্শ
ভর্তির পড়াশোনাকে কাচ্চি খাওয়ার মতো গ্যাপ দিয়ে দিয়ে একদিন হঠাৎ বেশি গিলে খেলে চলবে না। বেসিক পাকাপোক্ত করে প্রতিদিনের খাবার ভাতের মতো মেইনটেন করতে হবে। শ্রেষ্ঠদের কাতারে স্থান নিতে এখন থেকেই ৬-১১ ঘণ্টা পড়াশোনা চালিয়ে যাও। তবে, পড়াশোনার মাঝে বিরতি দেওয়া চলবে না। অনলাইনেও অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের সঠিক পরামর্শ দিয়ে থাকে। আমি নিজেও একটি কোচিংয়ের শিক্ষক হিসেবে ঢাবিয়ান তৈরি করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। আমার ক্ষুদ্র পেজ ‘Root to Public University’তে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। তোমরা যেকোনো পরামর্শে আমায় এখানেই পাবে।

আমার ভালোবাসার ক্যাম্পাসে তোমাদের পদচারণা হোক মেধার লড়াইয়ে। নিজ স্বপ্নকে পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করো। তোমাদের জন্য শুভকামনা রইল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আছে বিজয়ীদের অপেক্ষায়।

মাজেদুল ইসলাম রাকিব, ২য়, ঘ ইউনিট, শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০২০, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ

ঢাবির কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ যাদের লক্ষ্য

মাজেদুল ইসলাম রাকিব

ফাইল ছবি

এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরই দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা। তোমাদের যারা ঢাবিতে বিজ্ঞান থেকে বিভাগ পরিবর্তন করতে চাও, তাদের প্রস্তুতি নিয়েই আজ কথা বলব।

বিভাগ পরিবর্তন কি থাকছে? 
একজন শিক্ষার্থী যদি বিজ্ঞান থেকে এইচএসসি দিয়ে পরে মানবিক কিংবা ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের কোনো বিষয়ে স্নাতক ও উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে চায়, তার জন্য এই ব্যবস্থা রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তোমরা জানো যে বিগত বছরগুলোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় মূল ৫টি ইউনিটে পরীক্ষা হয়েছিল। যথা: ক ইউনিট (বিজ্ঞান), খ ইউনিট (মানবিক), গ ইউনিট (ব্যবসায় শিক্ষা) ও ঘ ইউনিট (বিভাগ পরিবর্তন যেখানে ক, খ ও গ সবাই পরীক্ষা দিতে পারতে) এবং চারুকলা ইউনিট।

তবে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষ, অর্থাৎ এ বছর থেকে ঢাবিতে পরীক্ষা হচ্ছে ৪টি ইউনিটে। খ ও ঘ ইউনিটকে একত্র করে নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ’। নতুন নামে এই অনুষদে পরীক্ষা দিতে পারবে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের সবাই। আসনসংখ্যা খ ও ঘ ইউনিট মিলিয়ে গত বছর যা ছিল, এবারও তাই থাকছে।

মাজেদুল ইসলাম রাকিব

মাজেদুল ইসলাম রাকিব

পরীক্ষার তারিখ ও মানবণ্ট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৬ মে বেলা ১১টায় এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বিভাগীয় শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই পরীক্ষায় গতবারের মতোই নম্বর বণ্টনের কথা জানিয়েছে একাডেমিক কাউন্সিল।

পরীক্ষায় মোট নম্বর ১২০। এর মধ্যে বহুনির্বাচনী বা এমসিকিউ ৬০ নম্বর,লিখিত ৪০ নম্বর এবং জিপিএ ২০ নম্বর (এইচএসসি ও এসএসসির জিপিএর ওপর নির্ভর করে হয়)। এই ১২০-এর মধ্যে যারা ৯৩+ স্কোর করবে, তারা শ্রেষ্ঠ ১০০ জনের তালিকায় স্থান পায়। প্রস্তুতিটা নিতে হবে এতই সূক্ষ্ম যে প্রতিযোগিতার এই দৌড়ে নিশ্চিত করতে হবে নিজের আসন।

বিষয় ও পাস নম্বর
কলা, আইন ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে পরীক্ষা বিগত বছরের মতো হবে বাংলা, ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে। তবে সাধারণ জ্ঞান অংশে এক-দুটি বেসিক সাধারণ গণিত এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির প্রশ্ন আসতে পারে।

ভর্তি পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়েই পৃথকভাবে পাস করতে হয়; এইচএসসির মতো প্রথম পত্রে নম্বর কম পেলে দ্বিতীয় পত্র দিয়ে তা পূরণ করার সুযোগ থাকে না। বাংলা ও ইংরেজিতে ১৫ নম্বরের বহুনির্বাচনী অংশের মাঝে ৫ নম্বর ও সাধারণ জ্ঞানে ১২ নম্বর না পেলে সে ফেল বা অকৃতকার্য বলে গণ্য হবে। বহুনির্বাচনীতে ফেল করা শিক্ষার্থীর লিখিত খাতা পর্যবেক্ষণ করা হবে না। এখানে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, শুধু পাস করলেই যে লিখিত খাতা কাটবে এমন নয়, তাই সেখানে বেশি নম্বর পাওয়া জরুরি। লিখিত অংশের ৪০ নম্বরের মাঝে পাস নম্বর ১২।

প্রস্তুতি শর্ট সিলেবাস, নাকি ফুল সিলেবাস–বিষয়ভিত্তিক
বাংলা: এইচএসসি পরীক্ষায় তোমরা শর্ট সিলেবাসে অংশ নিয়েছ। বাংলার ক্ষেত্রে শুধু প্রথম পত্রে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে প্রস্তুতি নিতে পারবে। তবে দ্বিতীয় পত্রে তা করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। বিগত বছরের প্রশ্ন বলছে, প্রায় ৬৫ শতাংশ বহুনির্বাচনী প্রশ্ন আসছে বাংলা প্রথম পত্র থেকে। তাই এখন থেকেই ঢাবি ও বিইউপির প্রস্তুতিতে প্রথম পত্রের প্রতি বিশেষ জোর দেবে। খ ইউনিটের বিগত দুই বছরের প্রশ্ন বলছে, সহপাঠের উপন্যাস ও নাটক অনেক গুরুত্বপূর্ণ, ঘ ইউনিটের ক্ষেত্রে সেটা কম হলেও এবার সবাইকে বিশেষ নজরদারি করতে হবে। লিখিতর জন্য শুদ্ধিকরণ, অনুচ্ছেদ, বাক্যগঠন ও অনুবাদ লেখার নিয়ম জানতে হবে।

ইংরেজি
ইংরেজিতে আসলে শর্ট সিলেবাস বলে কিছু নেই। মানবিকের প্রশ্ন অনেক বেশি আসত মূল টেক্সট বই থেকেই। গ্রামার, বানান, সমার্থক শব্দ, প্রিপজিশনসহ অধিকাংশ প্রশ্ন আসছে টেক্সট বই থেকেই। বিভাগ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ঘ ইউনিটের প্রশ্ন আবার সরাসরি টেক্সট বই থেকে আসে না। একটুখানি বেসিক গ্রামার, ভোকাবুলারি অংশ থেকেই প্রশ্ন বেশি আসছে এবং সঙ্গে একটি প্যাসেজ থেকে ৫টি প্রশ্ন আসছে। এবার যেহেতু দুই ইউনিট একত্র হয়েছে এবং ধারণা করা হচ্ছে, প্রশ্নকর্তা হতে চলেছেন কলা অনুষদের শিক্ষকেরা, তাই হয়তো সবাইকে টেক্সট বইয়ের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। প্যারাগ্রাফ, বাক্যগঠন, অনুবাদ ও ১০ বাক্যের অনুচ্ছেদ লেখা জানতে হবে।

সাধারণ জ্ঞান
খ ও ঘ ইউনিটের সাধারণ জ্ঞানে বিগত বছরগুলোতে পার্থক্য পরিলক্ষিত হলেও এবার থেকে নতুন একত্র অনুষদে তা হবে না। কেননা, মানবিকের বেসিক বিষয়, যেমন অর্থনীতি, ভূগোল ইত্যাদি বিষয়ের মৌলিক কিছু প্রশ্ন আসছে, যেগুলো অন্য দুই বিভাগ যুক্ত হওয়ায় হয়তো এতটা আসবে না। বৈশ্বিক সূচক, মুক্তিযুদ্ধ, সংবিধান, বাংলাদেশের চুক্তি, ক্রীড়া, প্রযুক্তি, উন্নয়নমূলক প্রজেক্ট, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বিখ্যাত পুরস্কার, সাম্প্রতিক বিশ্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে জানতে হবে সাধারণ জ্ঞান পরীক্ষার জন্য। যেকোনো টপিকে ৫-১০ লাইন লেখার অনুশীলন রাখতে হবে। এতে করে তোমার ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং স্কিলটা বাড়বে। সময় ৫ মিনিট ধরে সাত-আট লাইন লিখে ফেলার অভ্যাস করা জরুরি।

সাধারণ জ্ঞানের লিখিত কী থাকছে? 
ঘ ইউনিটের ক্ষেত্রে ২০১৯ সাল থেকেই লিখিত অংশে দুটি প্রশ্ন আসে সাধারণ জ্ঞানে, যা খ ইউনিটের ক্ষেত্রে ছিল না। এই দুটি প্রশ্নের একটি লিখতে হয় বাংলায় আর একটি ইংরেজিতে। যেহেতু খ ও ঘ যুক্ত হয়েছে, তাই হয়তো এ বছর সাধারণ জ্ঞানেও লিখিত রাখা হবে। তাই মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের সাধারণ জ্ঞানে একটি লিখিত বাংলায় ও ইংরেজিতে লেখার প্রস্তুতি রাখতে বলব।

বিগত বছরের প্রশ্ন
বিগত বছরের প্রশ্নপত্র পড়ার মাধ্যমে তুমি ধারণা পাবে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ও প্রশ্নের ধরনের। এই ধারণা তোমায় প্রয়োজনীয় টপিক খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। গত দশ বছরের প্রশ্ন নিজের থেকেই উত্তর না দেখে সমাধান করলে নিজের অবস্থান যাচাই করতে পারবে এবং একই সঙ্গে কোন অনুশীলনীগুলো গুরুত্বপূর্ণ, কোন অধ্যায় থেকে বেশি এবং বারবার প্রশ্ন আসবে, তা জানতে পারবে। এখন থেকেই মডেল টেস্টগুলোয় যাচাই করতে তোমরা একটি প্রশ্নের উত্তরের একটি মাত্র অপশনই দাগাবে। সময় মেইনটেন করে পরীক্ষা দেবে এবং লিখিত ৪০ নম্বরের জন্য ৪০ মিনিটই বরাদ্দ রাখবে। কেননা বাকি ৫ মিনিট চিন্তা করতে ও প্রশ্ন পড়তে কেটে যাবে।

ব্যক্তিগত পরামর্শ
ভর্তির পড়াশোনাকে কাচ্চি খাওয়ার মতো গ্যাপ দিয়ে দিয়ে একদিন হঠাৎ বেশি গিলে খেলে চলবে না। বেসিক পাকাপোক্ত করে প্রতিদিনের খাবার ভাতের মতো মেইনটেন করতে হবে। শ্রেষ্ঠদের কাতারে স্থান নিতে এখন থেকেই ৬-১১ ঘণ্টা পড়াশোনা চালিয়ে যাও। তবে, পড়াশোনার মাঝে বিরতি দেওয়া চলবে না। অনলাইনেও অনেক প্রতিষ্ঠানই শিক্ষার্থীদের সঠিক পরামর্শ দিয়ে থাকে। আমি নিজেও একটি কোচিংয়ের শিক্ষক হিসেবে ঢাবিয়ান তৈরি করার সৌভাগ্য অর্জন করেছি। আমার ক্ষুদ্র পেজ ‘Root to Public University’তে শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দিয়ে থাকি। তোমরা যেকোনো পরামর্শে আমায় এখানেই পাবে।

আমার ভালোবাসার ক্যাম্পাসে তোমাদের পদচারণা হোক মেধার লড়াইয়ে। নিজ স্বপ্নকে পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্জন করো। তোমাদের জন্য শুভকামনা রইল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আছে বিজয়ীদের অপেক্ষায়।

মাজেদুল ইসলাম রাকিব, ২য়, ঘ ইউনিট, শিক্ষাবর্ষ ২০১৯-২০২০, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অনুলিখন: জুবায়ের আহম্মেদ