রাত জাগলে পরীক্ষা ভালো হয় না

লেখাপড়া

প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

অনেকেই সারা বছরের পড়াশোনা শেষ রাতের জন্য তুলে রাখে। মনে করে, তাদের মনে রাখার ক্ষমতা অসাধারণ। তাই পরীক্ষার আগের রাতে পড়েই ঠিকঠিক ভালো পরীক্ষা দিতে পারবে।

কেউ কেউ আবার সারা বছরই পড়ে, কিন্তু কম পড়ে। পরীক্ষার আগের রাতে তারা আদাজল খেয়ে নেমে পড়ে, ঘুমটুম বাদ দিয়ে সারা রাত পড়ে। তারপর কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে সকালবেলা পড়তে যায়।

আরেক দল আছে, সারা বছর প্রচুর পড়ে, মনেও থাকে। তারপরও তারা সন্তুষ্ট নয়। পরীক্ষার আগের রাতেও না ঘুমিয়ে পড়তে হবে।

শেষ দলটা, সারা বছর পড়ে। ভালোভাবেই পড়ে। সময়মতো বিশ্রাম নেয়, খেলাধুলা করে, পরীক্ষার আগের রাতটাও তেমন জাগে না।

এখন বলুন তো, কার পরীক্ষা সবচেয়ে ভালো হবে?

অবশ্যই শেষের জনের। নিয়ম মেনে পড়াশোনা করলে মস্তিষ্কে সেটার প্রভাব থাকে বেশি। মানুষের মেমোরি দুই ধরনের। শর্ট টার্ম আর লং টার্ম। শর্ট টার্ম মেমোরি খুব প্রয়োজনীয় হলেও দীর্ঘ সময়ের জন্য এটা দরকারি নয়। অর্থাৎ মানব মস্তিষ্কের শর্ট টার্ম মেমোরিতে যেসব স্মৃতি জমা হয়, সেগুলো বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। মস্তিষ্ক এসব স্মৃতিকে অপ্রয়োজনীয় ভেবে স্মৃতিকোষ থেকে মুছে ফেলে। আরেকটা লং টার্ম মেমোরি। এখানে স্মৃতি সঞ্চয় হয় দীর্ঘ সময়ের জন্য। পড়াশোনার বিষয়গুলো যদি লং টার্ম মেমোরিতে সংরক্ষতি না হয় তাহলে পরীক্ষায় ভালো করা কঠিন।

রাতে ঘুম কেন দরকার সেটা জানা জরুরি। ঘুমের সময় মস্তিষ্কের বেশির ভাগ অংশই নিষ্ক্রিয় থাকে। তবে পুরোটা নয়। কিছু অংশ জেগে থাকে। সেই অংশটার কিছু হরমোন নিয়ন্ত্রণ, পেশি ও শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো মেরামত করে। সবচেয়ে বড় কাজটা স্মৃতিবিন্যাস ও সংরক্ষণ। জেগে থাকা অবস্থায় আপনি সারা দিন কী করলেন, সেগুলো এলোমেলোভাবে স্মৃতিতে জমা হয়। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক এসব স্মৃতি বিশ্লেষণ করে, গুরুত্ব অনুসারে সেগুলো সাজায়। এসব স্মৃতির কোনগুলো লং টার্ম, কোনগুলো শর্ট টার্ম মেমোরিতে জায়গা দিতে হয়, সেই অনুসারে মস্তিষ্ক স্মৃতিগুলোর পুনর্বিন্যাস করে। অপ্রয়োজনীয় স্মৃতিগুলো মুছে ফেলার প্রক্রিয়া এ সময় করে মস্তিষ্ক। অর্থাৎ স্মৃতি সংরক্ষণ ও পুনর্বিন্যাসের পুরো প্রক্রিয়াটাই ঘটে ঘুমের ভেতর।

এখন আপনিই ভেবে দেখুন রাত জেগে পড়লে কোনো লাভ হবে কি না। আপনি সারা রাত যা পড়লেন, সেগুলো মেমোরিতে সংরক্ষণ করার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের দরকার। সেই ঘুমটাই শরীর ও মস্তিষ্ক পেল না। সুতরাং সারা রাত ধরে যা পড়লেন, সেগুলোর বেশির ভাগই পরীক্ষায় লেখার সময় মনে থাকবে না। এ ছাড়া ঘুমের অভাবে পেশি, হরমোনসহ বিভিন্ন অঙ্গের শারীরবৃত্তীয় কাজগুলো ঠিকঠাক হবে না। তাই পরীক্ষার সময় মাথাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, ঝিমুনিভাব এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। তাই পরীক্ষার্থীদের প্রতি পরামর্শ থাকবে, পরীক্ষার আগের রাতগুলোতে মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিন। দশটার মধ্যে ঘুমাতে যান। পরীক্ষার আগে বেশি বেশি না পড়ে সারা বছর নিয়মিত পড়ুন।

লেখক: চিকিৎসক, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা

রাত জাগলে পরীক্ষা ভালো হয় না

লেখাপড়া

প্রতিবেদক, দৈনিক বাংলা

অনেকেই সারা বছরের পড়াশোনা শেষ রাতের জন্য তুলে রাখে। মনে করে, তাদের মনে রাখার ক্ষমতা অসাধারণ। তাই পরীক্ষার আগের রাতে পড়েই ঠিকঠিক ভালো পরীক্ষা দিতে পারবে।

কেউ কেউ আবার সারা বছরই পড়ে, কিন্তু কম পড়ে। পরীক্ষার আগের রাতে তারা আদাজল খেয়ে নেমে পড়ে, ঘুমটুম বাদ দিয়ে সারা রাত পড়ে। তারপর কয়েক ঘণ্টা ঘুমিয়ে সকালবেলা পড়তে যায়।

আরেক দল আছে, সারা বছর প্রচুর পড়ে, মনেও থাকে। তারপরও তারা সন্তুষ্ট নয়। পরীক্ষার আগের রাতেও না ঘুমিয়ে পড়তে হবে।

শেষ দলটা, সারা বছর পড়ে। ভালোভাবেই পড়ে। সময়মতো বিশ্রাম নেয়, খেলাধুলা করে, পরীক্ষার আগের রাতটাও তেমন জাগে না।

এখন বলুন তো, কার পরীক্ষা সবচেয়ে ভালো হবে?

অবশ্যই শেষের জনের। নিয়ম মেনে পড়াশোনা করলে মস্তিষ্কে সেটার প্রভাব থাকে বেশি। মানুষের মেমোরি দুই ধরনের। শর্ট টার্ম আর লং টার্ম। শর্ট টার্ম মেমোরি খুব প্রয়োজনীয় হলেও দীর্ঘ সময়ের জন্য এটা দরকারি নয়। অর্থাৎ মানব মস্তিষ্কের শর্ট টার্ম মেমোরিতে যেসব স্মৃতি জমা হয়, সেগুলো বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না। মস্তিষ্ক এসব স্মৃতিকে অপ্রয়োজনীয় ভেবে স্মৃতিকোষ থেকে মুছে ফেলে। আরেকটা লং টার্ম মেমোরি। এখানে স্মৃতি সঞ্চয় হয় দীর্ঘ সময়ের জন্য। পড়াশোনার বিষয়গুলো যদি লং টার্ম মেমোরিতে সংরক্ষতি না হয় তাহলে পরীক্ষায় ভালো করা কঠিন।

রাতে ঘুম কেন দরকার সেটা জানা জরুরি। ঘুমের সময় মস্তিষ্কের বেশির ভাগ অংশই নিষ্ক্রিয় থাকে। তবে পুরোটা নয়। কিছু অংশ জেগে থাকে। সেই অংশটার কিছু হরমোন নিয়ন্ত্রণ, পেশি ও শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত কোষগুলো মেরামত করে। সবচেয়ে বড় কাজটা স্মৃতিবিন্যাস ও সংরক্ষণ। জেগে থাকা অবস্থায় আপনি সারা দিন কী করলেন, সেগুলো এলোমেলোভাবে স্মৃতিতে জমা হয়। ঘুমের সময় মস্তিষ্ক এসব স্মৃতি বিশ্লেষণ করে, গুরুত্ব অনুসারে সেগুলো সাজায়। এসব স্মৃতির কোনগুলো লং টার্ম, কোনগুলো শর্ট টার্ম মেমোরিতে জায়গা দিতে হয়, সেই অনুসারে মস্তিষ্ক স্মৃতিগুলোর পুনর্বিন্যাস করে। অপ্রয়োজনীয় স্মৃতিগুলো মুছে ফেলার প্রক্রিয়া এ সময় করে মস্তিষ্ক। অর্থাৎ স্মৃতি সংরক্ষণ ও পুনর্বিন্যাসের পুরো প্রক্রিয়াটাই ঘটে ঘুমের ভেতর।

এখন আপনিই ভেবে দেখুন রাত জেগে পড়লে কোনো লাভ হবে কি না। আপনি সারা রাত যা পড়লেন, সেগুলো মেমোরিতে সংরক্ষণ করার জন্য পর্যাপ্ত ঘুমের দরকার। সেই ঘুমটাই শরীর ও মস্তিষ্ক পেল না। সুতরাং সারা রাত ধরে যা পড়লেন, সেগুলোর বেশির ভাগই পরীক্ষায় লেখার সময় মনে থাকবে না। এ ছাড়া ঘুমের অভাবে পেশি, হরমোনসহ বিভিন্ন অঙ্গের শারীরবৃত্তীয় কাজগুলো ঠিকঠাক হবে না। তাই পরীক্ষার সময় মাথাব্যথা, শারীরিক দুর্বলতা, ঝিমুনিভাব এমনকি অজ্ঞান হয়ে যাওয়াও অসম্ভব নয়। তাই পরীক্ষার্থীদের প্রতি পরামর্শ থাকবে, পরীক্ষার আগের রাতগুলোতে মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দিন। দশটার মধ্যে ঘুমাতে যান। পরীক্ষার আগে বেশি বেশি না পড়ে সারা বছর নিয়মিত পড়ুন।

লেখক: চিকিৎসক, সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা