৪১তম বিসিএস: ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি

৫ ডিসেম্বর থেকে ৪১তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। কয়েকটি ধাপে হবে এই পরীক্ষা। চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত। ভাইভা পরীক্ষায় যা যা জানা জরুরি, কী কী কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে, প্রার্থীর ড্রেসআপ ও গেটআপ কেমন হবে—তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

 

মোহাইমিনুল ইসলাম

প্রিলিমিনারি এবং লিখিতের কঠিন ধাপ পেরিয়ে ২০০ মার্কের ভাইভার জন্য পরীক্ষার্থীদের নিজেদের প্রস্তুত করতে হয়। ভাইভার প্রস্তুতির জন্য অনেক আগে থেকেই নিজেকে শাণিত করতে হয়। কেননা ভাইভার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই; বরং অনেক ধরনের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হতে পারে।

  • নিজের সম্পর্কে: নিজের নামের অর্থ, নিজের নামে কোনো স্বনামধন্য ব্যক্তি, নিজ জন্মদিনের বাংলা বর্ষপঞ্জি কত তারিখ ও মাস, নিজ স্কুল-কলেজ, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য, নিজ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা বিখ্যাত ব্যক্তি এবং নিজ পঠিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন থাকবে বেশি।
  • নিজ এলাকা সম্পর্কে: নিজের স্থায়ী ঠিকানা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য—যেমন প্রতিষ্ঠার সাল, জনসংখ্যা, শিক্ষার হার, প্রধান ধর্ম ও উপজাতি, উপজেলা, বিখ্যাত ব্যক্তি, নদ-নদী, দর্শনীয় স্থান, পত্রপত্রিকা, সংসদের আসন ও সংসদ সদস্যদের নাম, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধে কোন সেক্টরে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, স্বীকৃতি ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, শত্রুমুক্তির তারিখ, ভাষাসৈনিকদের নাম, চিহ্নিত রাজাকারদের নাম, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনওর নাম জেনে যেতে হবে।
  • বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিয়ে ভাইভায় বিস্তারিত প্রশ্ন করা হয়। যেমন জন্মস্থান, পারিবারিক ইতিহাস, শৈশব, রাজনৈতিক জীবন, কর্মজীবন ও লেখা বইগুলো নিয়ে ভাইভা বোর্ডে নিয়মিত প্রশ্ন আসে। ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোনো উত্তর আপনি না পারলে ভাইভা বোর্ডের প্রার্থী সম্পর্কে নেগেটিভ ইম্পেরেশন সৃষ্টি হয়। তাই এ ধরনের প্রশ্নের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ভুল করা যাবে না। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণ-আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনাবলি, অপারেশন সার্চলাইট, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুজিবনগর সরকার, অপারেশন জ্যাকপট, সেক্টর, সেক্টরপ্রধান, মুক্তিযুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা, বীরশ্রেষ্ঠর নাম, পদবি, জন্মস্থান, জন্ম-মৃত্যুর তারিখ, বীরাঙ্গনা, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড, আত্মসমর্পণ চুক্তি, জাতীয় চার নেতা সম্পর্কে বিস্তারিত, (নাম, জেলা, অবদান, জন্ম ও মৃত্যুর সাল) মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন দেশের ভূমিকা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারের ভূমিকা ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে। এ ছাড়া বিশেষ কিছু সংবিধানের ধারা বাংলা এবং ইংরেজি উভয়ভাবেই মুখস্থ করে রাখতে হবে। পাশাপাশি সংবিধানের বিভিন্ন ধারার প্রয়োগ বিষয়েও প্রশ্ন হয়ে থাকে।
  • ক্যাডার পছন্দ: প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় পছন্দ নিয়ে সাধারণত প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয়। প্রথম পছন্দের সঙ্গে নিজের পঠিত বিষয়ের সম্পর্ক কী, পুরো ক্যাডার পছন্দ তালিকা, শেষের পছন্দ কী ও কেন দেওয়া হয়েছে, ক্যাডারগুলোর পদসোপান, সাংগঠনিক কার্যক্রম, কাজের কাঠামো, চ্যালেঞ্জ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সচিবের নাম, ট্রেনিং একাডেমি, নিজ পদায়নস্থল ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশোনা করে যাবেন।
  • সাম্প্রতিক ঘটনাবলি: নিয়মিত পত্রিকা পড়াসহ দেশে-বিদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, মেগা প্রজেক্ট, বাংলাদেশের অর্থনীতি ইত্যাদি নিয়ে প্রচুর পরিমাণে প্রশ্ন হয়। তাই ভাইভার আগে থেকেই নিয়মিত সাম্প্রতিক ঘটনার দিকে নজর রাখবেন। সাম্প্রতিক দুই-তিন মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে পারেন। ভাইভার দিন পত্রিকার হেডলাইনে চোখ বুলিয়ে নেওয়া উচিত।

ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি

  • আঞ্চলিকতা পরিহার করবেন
  • পরিচ্ছন্ন পোশাক ও স্যুটেড-ব্যুটেড থাকুন।
  • পরীক্ষকের প্রশ্ন মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। শোনার পর একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে উত্তর দিতে হবে।
  • ভাইভায় কোনো প্রশ্ন ইংরেজিতে করলে উত্তরটাও ইংরেজিতেই দিতে হবে। অনেক সময় বাংলায় প্রশ্ন করে ইংরেজিতে উত্তর দিতে বলা হয়। কোনোভাবেই বাংলায় উত্তর করার জন্য অনুমতি চাওয়া যাবে না।
  • কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে সেটি বিনীতভাবে বলুন। একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মাঝখানে অন্য একজন প্রশ্ন করলে প্রথমজনের কাছ থেকে অনুমতি নিন।
  • একাডেমিক রেজাল্ট এতটা ভালো না হলে সে-সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য একটা কারণ তৈরি করে রাখবেন।
  • মুদ্রাদোষ সম্পর্কে সচেতন থাকবেন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
নিচের তালিকার মূল কাগজগুলো নিয়ে ১ সেট এবং এগুলোর ফটোকপি নিয়ে ৩ সেট প্রস্তুত করুন। ফটোকপি সেটের কাগজগুলোতে একজন প্রথম শ্রেণির গেজেটভুক্ত কর্মকর্তার সত্যায়ন লাগবে, সঙ্গে তার স্বাক্ষর ও সিল।

  • পাসপোর্ট সাইজ, ফরমাল ছবি ৯ কপি (প্রতি সেটে ৩ কপি)। প্রতিটি ছবির পেছনে নিজের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকবে। সঙ্গে অফিসারের স্বাক্ষর ও সিল থাকবে।
  • এসএসসি, এইচএসসি, বিএসসি, এমএসসি—সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, মূল হোক বা সাময়িক।
  • বিএসসি সনদে যদি চার বছর মেয়াদি কোর্স উল্লেখ না থাকে, তাহলে হয় ওই কথাসংবলিত ট্রান্সক্রিপ্ট বা প্রশংসাপত্র জমা দিতে হবে। তাতেও কথাটি না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে চার বছর মেয়াদি কোর্সের সার্টিফিকেট নিয়ে বোর্ডে জমা দিতে হবে।
  • বর্তমান ওজন (কেজি), উচ্চতা (সেন্টিমিটার), বুকের মাপসংবলিত (সেন্টিমিটার) সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। এই সার্টিফিকেট সত্যায়ন করবেন বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রিপ্রাপ্ত একজন মেডিকেল প্র্যাকটিশনার।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র।
  • আপনার স্থায়ী ঠিকানার স্থানীয় সরকার (ইউপি চেয়ারম্যান/সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর) প্রদত্ত নাগরিকত্বের সনদ।
  • পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম।
  • বিপিএসসি ফরম-১ (অ্যাপ্লিকেন্ট কপি)।
  • বিপিএসসি ফরম-৩
  • অ্যাডমিট কার্ড
  • সাক্ষাৎকারপত্র
  • চাকরিজীবীরা পিএসসির ওয়েবসাইট থেকে NOC ডাউনলোড করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন করিয়ে আনবেন। কেবল সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী হলে এই শর্ত প্রযোজ্য।
  • যারা অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করেছিলেন, তাঁরা নিজ বিভাগীয় প্রধান বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে সার্টিফিকেট আনবেন। যেখানে পরীক্ষার্থীর সর্বশেষ পরীক্ষা যে আবেদন করার সর্বশেষ তারিখের আগেই শেষ হয়েছে তারিখসহ তা উল্লেখ থাকবে।

ড্রেসআপ: পুরুষেরা ফরমাল হয়ে যাবেন অবশ্যই। হালকা রঙের (সাদা/আকাশি/এক কালার) ফুলহাতা শার্ট, কালো/নেভি ব্লু প্যান্ট, টাই, ফরমাল জুতা, জুতার কালারের সঙ্গে মিলিয়ে বেল্ট। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্লেজার পরতে পারেন। আর শীতকাল হলে সেটা আবশ্যক বলে মনে করি। নারীদের ক্ষেত্রে শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ যেটা মানানসই এবং পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

গেটআপ: পুরুষদের ক্ষেত্রে দাড়ি নিয়ে কনফিউশনে পড়ে যান। মূলত দাড়ি যদি সুন্নতি হয়, কোনো সমস্যা নেই; অন্যথায় ক্লিন শেভ বাঞ্ছনীয়। ড্রেস ভালোভাবে আয়রন করা থাকলে সুন্দর দেখায়। টাই পরলে বেল্টের ওপর পর্যন্ত রাখবেন। শার্ট ফুলহাতা থাকবে। স্যুট পরলে স্যুটের হাতার বাইরে শার্টের হাতা দেখা যাবে। মেয়েরা অতিরিক্ত অলংকার পরবেন না, বেশি মেকআপের প্রয়োজন নেই।

মোহাইমিনুল ইসলাম , সহকারী সচিব, ৪০তম বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার-মেধাক্রম ১)

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

৪১তম বিসিএস: ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি

৫ ডিসেম্বর থেকে ৪১তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। কয়েকটি ধাপে হবে এই পরীক্ষা। চলবে ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত। ভাইভা পরীক্ষায় যা যা জানা জরুরি, কী কী কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে, প্রার্থীর ড্রেসআপ ও গেটআপ কেমন হবে—তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা।

 

মোহাইমিনুল ইসলাম

প্রিলিমিনারি এবং লিখিতের কঠিন ধাপ পেরিয়ে ২০০ মার্কের ভাইভার জন্য পরীক্ষার্থীদের নিজেদের প্রস্তুত করতে হয়। ভাইভার প্রস্তুতির জন্য অনেক আগে থেকেই নিজেকে শাণিত করতে হয়। কেননা ভাইভার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সিলেবাস নেই; বরং অনেক ধরনের বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করা হতে পারে।

  • নিজের সম্পর্কে: নিজের নামের অর্থ, নিজের নামে কোনো স্বনামধন্য ব্যক্তি, নিজ জন্মদিনের বাংলা বর্ষপঞ্জি কত তারিখ ও মাস, নিজ স্কুল-কলেজ, নিজ বিশ্ববিদ্যালয়, বিভাগের চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানপ্রধান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য, নিজ স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা বিখ্যাত ব্যক্তি এবং নিজ পঠিত বিষয় নিয়ে প্রশ্ন থাকবে বেশি।
  • নিজ এলাকা সম্পর্কে: নিজের স্থায়ী ঠিকানা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য—যেমন প্রতিষ্ঠার সাল, জনসংখ্যা, শিক্ষার হার, প্রধান ধর্ম ও উপজাতি, উপজেলা, বিখ্যাত ব্যক্তি, নদ-নদী, দর্শনীয় স্থান, পত্রপত্রিকা, সংসদের আসন ও সংসদ সদস্যদের নাম, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, মুক্তিযুদ্ধে কোন সেক্টরে ছিল, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার, স্বীকৃতি ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম, মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, শত্রুমুক্তির তারিখ, ভাষাসৈনিকদের নাম, চিহ্নিত রাজাকারদের নাম, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, ইউএনওর নাম জেনে যেতে হবে।
  • বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও সংবিধান: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু নিয়ে ভাইভায় বিস্তারিত প্রশ্ন করা হয়। যেমন জন্মস্থান, পারিবারিক ইতিহাস, শৈশব, রাজনৈতিক জীবন, কর্মজীবন ও লেখা বইগুলো নিয়ে ভাইভা বোর্ডে নিয়মিত প্রশ্ন আসে। ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে কোনো উত্তর আপনি না পারলে ভাইভা বোর্ডের প্রার্থী সম্পর্কে নেগেটিভ ইম্পেরেশন সৃষ্টি হয়। তাই এ ধরনের প্রশ্নের ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ভুল করা যাবে না। বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলন, যুক্তফ্রন্ট, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, উনসত্তরের গণ-আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংগঠিত বিভিন্ন ঘটনাবলি, অপারেশন সার্চলাইট, স্বাধীনতার ঘোষণা, মুজিবনগর সরকার, অপারেশন জ্যাকপট, সেক্টর, সেক্টরপ্রধান, মুক্তিযুদ্ধের খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা, বীরশ্রেষ্ঠর নাম, পদবি, জন্মস্থান, জন্ম-মৃত্যুর তারিখ, বীরাঙ্গনা, বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড, আত্মসমর্পণ চুক্তি, জাতীয় চার নেতা সম্পর্কে বিস্তারিত, (নাম, জেলা, অবদান, জন্ম ও মৃত্যুর সাল) মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বিভিন্ন দেশের ভূমিকা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও সরকারের ভূমিকা ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে রাখতে হবে। এ ছাড়া বিশেষ কিছু সংবিধানের ধারা বাংলা এবং ইংরেজি উভয়ভাবেই মুখস্থ করে রাখতে হবে। পাশাপাশি সংবিধানের বিভিন্ন ধারার প্রয়োগ বিষয়েও প্রশ্ন হয়ে থাকে।
  • ক্যাডার পছন্দ: প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় পছন্দ নিয়ে সাধারণত প্রশ্ন জানতে চাওয়া হয়। প্রথম পছন্দের সঙ্গে নিজের পঠিত বিষয়ের সম্পর্ক কী, পুরো ক্যাডার পছন্দ তালিকা, শেষের পছন্দ কী ও কেন দেওয়া হয়েছে, ক্যাডারগুলোর পদসোপান, সাংগঠনিক কার্যক্রম, কাজের কাঠামো, চ্যালেঞ্জ, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সচিবের নাম, ট্রেনিং একাডেমি, নিজ পদায়নস্থল ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত পড়াশোনা করে যাবেন।
  • সাম্প্রতিক ঘটনাবলি: নিয়মিত পত্রিকা পড়াসহ দেশে-বিদেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, মেগা প্রজেক্ট, বাংলাদেশের অর্থনীতি ইত্যাদি নিয়ে প্রচুর পরিমাণে প্রশ্ন হয়। তাই ভাইভার আগে থেকেই নিয়মিত সাম্প্রতিক ঘটনার দিকে নজর রাখবেন। সাম্প্রতিক দুই-তিন মাসের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পড়তে পারেন। ভাইভার দিন পত্রিকার হেডলাইনে চোখ বুলিয়ে নেওয়া উচিত।

ভাইভা বোর্ডের মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি

  • আঞ্চলিকতা পরিহার করবেন
  • পরিচ্ছন্ন পোশাক ও স্যুটেড-ব্যুটেড থাকুন।
  • পরীক্ষকের প্রশ্ন মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে। শোনার পর একটু সময় নিয়ে গুছিয়ে উত্তর দিতে হবে।
  • ভাইভায় কোনো প্রশ্ন ইংরেজিতে করলে উত্তরটাও ইংরেজিতেই দিতে হবে। অনেক সময় বাংলায় প্রশ্ন করে ইংরেজিতে উত্তর দিতে বলা হয়। কোনোভাবেই বাংলায় উত্তর করার জন্য অনুমতি চাওয়া যাবে না।
  • কোনো প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলে সেটি বিনীতভাবে বলুন। একটি প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মাঝখানে অন্য একজন প্রশ্ন করলে প্রথমজনের কাছ থেকে অনুমতি নিন।
  • একাডেমিক রেজাল্ট এতটা ভালো না হলে সে-সম্পর্কে গ্রহণযোগ্য একটা কারণ তৈরি করে রাখবেন।
  • মুদ্রাদোষ সম্পর্কে সচেতন থাকবেন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
নিচের তালিকার মূল কাগজগুলো নিয়ে ১ সেট এবং এগুলোর ফটোকপি নিয়ে ৩ সেট প্রস্তুত করুন। ফটোকপি সেটের কাগজগুলোতে একজন প্রথম শ্রেণির গেজেটভুক্ত কর্মকর্তার সত্যায়ন লাগবে, সঙ্গে তার স্বাক্ষর ও সিল।

  • পাসপোর্ট সাইজ, ফরমাল ছবি ৯ কপি (প্রতি সেটে ৩ কপি)। প্রতিটি ছবির পেছনে নিজের নাম ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর থাকবে। সঙ্গে অফিসারের স্বাক্ষর ও সিল থাকবে।
  • এসএসসি, এইচএসসি, বিএসসি, এমএসসি—সব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, মূল হোক বা সাময়িক।
  • বিএসসি সনদে যদি চার বছর মেয়াদি কোর্স উল্লেখ না থাকে, তাহলে হয় ওই কথাসংবলিত ট্রান্সক্রিপ্ট বা প্রশংসাপত্র জমা দিতে হবে। তাতেও কথাটি না থাকলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে চার বছর মেয়াদি কোর্সের সার্টিফিকেট নিয়ে বোর্ডে জমা দিতে হবে।
  • বর্তমান ওজন (কেজি), উচ্চতা (সেন্টিমিটার), বুকের মাপসংবলিত (সেন্টিমিটার) সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে। এই সার্টিফিকেট সত্যায়ন করবেন বিএমডিসি থেকে রেজিস্ট্রিপ্রাপ্ত একজন মেডিকেল প্র্যাকটিশনার।
  • জাতীয় পরিচয়পত্র।
  • আপনার স্থায়ী ঠিকানার স্থানীয় সরকার (ইউপি চেয়ারম্যান/সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর) প্রদত্ত নাগরিকত্বের সনদ।
  • পুলিশ ভেরিফিকেশন ফরম।
  • বিপিএসসি ফরম-১ (অ্যাপ্লিকেন্ট কপি)।
  • বিপিএসসি ফরম-৩
  • অ্যাডমিট কার্ড
  • সাক্ষাৎকারপত্র
  • চাকরিজীবীরা পিএসসির ওয়েবসাইট থেকে NOC ডাউনলোড করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ থেকে অনুমোদন করিয়ে আনবেন। কেবল সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত/স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী হলে এই শর্ত প্রযোজ্য।
  • যারা অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করেছিলেন, তাঁরা নিজ বিভাগীয় প্রধান বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে সার্টিফিকেট আনবেন। যেখানে পরীক্ষার্থীর সর্বশেষ পরীক্ষা যে আবেদন করার সর্বশেষ তারিখের আগেই শেষ হয়েছে তারিখসহ তা উল্লেখ থাকবে।

ড্রেসআপ: পুরুষেরা ফরমাল হয়ে যাবেন অবশ্যই। হালকা রঙের (সাদা/আকাশি/এক কালার) ফুলহাতা শার্ট, কালো/নেভি ব্লু প্যান্ট, টাই, ফরমাল জুতা, জুতার কালারের সঙ্গে মিলিয়ে বেল্ট। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ব্লেজার পরতে পারেন। আর শীতকাল হলে সেটা আবশ্যক বলে মনে করি। নারীদের ক্ষেত্রে শাড়ি বা সালোয়ার-কামিজ যেটা মানানসই এবং পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।

গেটআপ: পুরুষদের ক্ষেত্রে দাড়ি নিয়ে কনফিউশনে পড়ে যান। মূলত দাড়ি যদি সুন্নতি হয়, কোনো সমস্যা নেই; অন্যথায় ক্লিন শেভ বাঞ্ছনীয়। ড্রেস ভালোভাবে আয়রন করা থাকলে সুন্দর দেখায়। টাই পরলে বেল্টের ওপর পর্যন্ত রাখবেন। শার্ট ফুলহাতা থাকবে। স্যুট পরলে স্যুটের হাতার বাইরে শার্টের হাতা দেখা যাবে। মেয়েরা অতিরিক্ত অলংকার পরবেন না, বেশি মেকআপের প্রয়োজন নেই।

মোহাইমিনুল ইসলাম , সহকারী সচিব, ৪০তম বিসিএস (পররাষ্ট্র ক্যাডার-মেধাক্রম ১)

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম