বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ

অপরাধবিজ্ঞানে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার

এ বি এম নাজমুস সাকিব

অপরাধবিজ্ঞান হলো অপরাধের কারণ, প্রভাব, অপরাধীর চরিত্র, বিষয় বিবেচনা, প্রতিকার বা নিয়ন্ত্রণের সামাজিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক অনুশীলন। অপরাধ, রহস্য সম্পর্কে রয়েছে যাদের অনেক আগ্রহ, যারা একটু রোমাঞ্চপ্রিয় কিংবা গতানুগতিক বিষয়ের বাইরে পড়ালেখা করতে চান, তাঁরা পড়তে পারেন ক্রিমিনোলজি বা অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে ক্রিমিনোলজি বা অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের নানা বিষয় নিয়ে থাকছে আজকের আলোচনা।

পড়ার যোগ্যতা কী
মানবিক, ব্যবসায় শাখা ও বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ক্রিমিনোলজি বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। স্নাতকের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ স্নাতক ভর্তি-প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষা এবং মেধাক্রম বিবেচনায় এ বিষয়ে ভর্তি হওয়া যায়।

কোথায় কোথায় ভর্তি হওয়া যায়
উন্নত বিশ্বে বহু আগে থেকেই ক্রিমিনোলজি নিয়ে একাডেমিক পর্যায়ে গবেষণা হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের মাধ্যমে অপরাধ বিষয়ে পর্যালোচনা এবং রূপকল্প তৈরিতে সহায়তা করার জন্যই ক্রিমিনোলজি বিভাগের জন্ম। বাংলাদেশে বর্তমানে তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিমিনোলজি পড়ার সুযোগ রয়েছে। ২০০৪ সালে ‘ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স’ বিভাগ নামে প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একই নামে বিভাগের কার্যক্রম ২০১৭-১৮ সেশন থেকে চলমান। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ক্রিমিনোলজি’ বিভাগ।

কী কী বিষয়ে পড়ানো হয়
বিভাগের একজন শিক্ষার্থী অপরাধ সংঘটনের কারণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারবিষয়ক পুঁথিগত বিদ্যা ও সম্যক ধারণা লাভ করেন। অধ্যয়নের বিষয় হিসেবে অপরাধবিজ্ঞান পরিচিতি, অপরাধবিজ্ঞানের তত্ত্ব, অপরাধীর মনস্তত্ত্ব, কিশোর অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, অপরাধবিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণাপদ্ধতি এবং ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য। পুলিশিং, পুলিশ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা, অপরাধ তদন্ত, ফরেনসিক সায়েন্স, সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট, আদালতব্যবস্থা, কারাব্যবস্থা ও সংশোধন কেন্দ্র, অপরাধী পুনর্বাসন, অপরাধ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রধান আইন, যেমন দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন, পুলিশ আইন ইত্যাদি বিষয়ে পড়ানো হয়। এ ছাড়া অর্থনীতি ও উন্নয়নের সঙ্গে অপরাধের সম্পৃক্ততা, ভিকটিমোলজি, সাইবার ক্রাইম প্রভৃতি বিষয়েও পাঠদান করা হয়।

চাকরির সুযোগ কেমন
ডাক্তার যেমন রোগ নির্ণয় ও উপশমের ক্ষেত্রে নিজের অর্জিত জ্ঞানের ঠিক ব্যবহারটা করতে পারেন, তেমনি ক্রিমিনোলজি বিভাগে পড়ে একজন শিক্ষার্থী অপরাধের ধরন, কারণ নির্ণয় এবং সম্ভাব্য সমাধানের ক্ষেত্রে জ্ঞানের যথাযথ ব্যবহার শিখতে পারেন। তুলনামূলক নতুন হলেও বাংলাদেশে অপরাধবিজ্ঞান বিষয়টির কাজের ক্ষেত্র বিস্তৃত। বিসিএসে স্বতন্ত্র পুলিশ ক্যাডার ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, যেমন এনএসআই, পুলিশের এসবি, ডিবি, সিআইডি, ডিজিএফআই, জেলখানার জেলার, বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা, বিভিন্ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, এনজিও, মানবাধিকার সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকসহ অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছে কাজের সুযোগ। এ ছাড়া কাজের সুযোগ আছে উন্নত দেশগুলোতেও। এসব দেশের বিভিন্ন সংস্থায় তথ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং অনুসন্ধানী বিভিন্ন সংস্থার নিয়োগে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। যদিও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখনো স্বীকৃতি মেলেনি; তবুও ক্রিমিনোলজি বিষয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রের স্বাতন্ত্র্য তৈরি করার প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।

অপরাধবিজ্ঞানীদের প্রয়োজনীয়তা কী
অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি সদা পরিবর্তনশীল। শিল্পায়ন ও প্রযুক্তির অগ্রগতির চাকা খুব জোরে ঘুরছে। তাল মিলিয়ে জগৎসংসারের অন্যায়-অপরাধের হিসাবও জটিলতর হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমাজে অপরাধের ধরন বদলেছে এবং অপরাধীরা এখন নতুন নতুন প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করছে। অপরাধ নির্মূলে কেবল অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া এবং বল প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন অপরাধের যথাযথ বিশ্লেষণ ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রস্তাবনা। এই জটিল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে অপরাধবিজ্ঞানীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভীষণ অপরাধপ্রবণ। আবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এ দেশে অপরাধের ধরন, গতি ও প্রকৃতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই একুশ শতকের অন্য সব অপরাধের পাশাপাশি সাইবার অপরাধ, অর্থ পাচার, ব্যাংক জালিয়াতি, নিত্যনতুন অপরাধ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। এসব অপরাধ নির্মূলে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গবেষণা, অপরাধীদের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ ও সমাজের সব স্তরে পলিসি প্রণয়ন করে অপরাধপ্রবণতা কমানোর ক্ষেত্রে অপরাধবিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশে ব্যাংকিং ও ঋণসেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাত; বিশেষ করে এই সেক্টরে অপরাধের ঝুঁকি কমাতে এখন উন্নয়নশীল বাংলাদেশেও অপরাধবিজ্ঞানীদের নিবেদন খুব জরুরি।

পড়ার খরচ কেমন
তুলনামূলকভাবে এ দেশে ক্রিমিনোলজি বিষয়ের যাত্রা মোটামুটি নতুন বললেই চলে। বর্তমানে চলমান তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র অর্থ খরচ করে ক্রিমিনোলজি বিষয় নিয়ে পড়া যায়। এত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে কোনো প্রোগ্রাম চালু হয়নি। তবে আশা করা যাচ্ছে, দ্রুতই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ক্রিমিনোলজির একাডেমিক চর্চা যাত্রা শুরু করবে।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা কেমন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগে বর্তমানে ব্যাচেলর অব অনার্স-মাস্টার্সের পাশাপাশি এমফিল এবং পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ‘ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস’ শিরোনামে এক বছরের প্রফেশনাল মাস্টার্স প্রোগ্রামও চালু আছে। স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে যেকোনো বিষয়ে স্নাতক সম্পন্নকারীরা ভর্তি পরীক্ষা এবং ভাইভায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারেন। এই মাস্টার্স প্রোগ্রাম বেশ প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিক্ষার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বহু আগে থেকেই ক্রিমিনোলজি উচ্চশিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। এসব দেশে ক্রিমিনোলজিতে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে আকর্ষণীয় নানা স্কলারশিপের সুযোগ। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সেপ্টেম্বর সেশনের জন্য জানুয়ারি অথবা অনেক ক্ষেত্রে আগের বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হয়। পড়ার পাশাপাশি বিখ্যাত ও স্বনামধন্য অধ্যাপকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

এ বি এম নাজমুস সাকিব, সহকারী অধ্যাপক, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ

অপরাধবিজ্ঞানে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ার

এ বি এম নাজমুস সাকিব

অপরাধবিজ্ঞান হলো অপরাধের কারণ, প্রভাব, অপরাধীর চরিত্র, বিষয় বিবেচনা, প্রতিকার বা নিয়ন্ত্রণের সামাজিক ও বিজ্ঞানভিত্তিক অনুশীলন। অপরাধ, রহস্য সম্পর্কে রয়েছে যাদের অনেক আগ্রহ, যারা একটু রোমাঞ্চপ্রিয় কিংবা গতানুগতিক বিষয়ের বাইরে পড়ালেখা করতে চান, তাঁরা পড়তে পারেন ক্রিমিনোলজি বা অপরাধবিজ্ঞান বিষয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে ক্রিমিনোলজি বা অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। অপরাধবিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা ও ক্যারিয়ারের নানা বিষয় নিয়ে থাকছে আজকের আলোচনা।

পড়ার যোগ্যতা কী
মানবিক, ব্যবসায় শাখা ও বিজ্ঞান বিভাগে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা ক্রিমিনোলজি বিভাগে পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। স্নাতকের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ স্নাতক ভর্তি-প্রক্রিয়া অনুসৃত হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষা এবং মেধাক্রম বিবেচনায় এ বিষয়ে ভর্তি হওয়া যায়।

কোথায় কোথায় ভর্তি হওয়া যায়
উন্নত বিশ্বে বহু আগে থেকেই ক্রিমিনোলজি নিয়ে একাডেমিক পর্যায়ে গবেষণা হচ্ছে। প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের মাধ্যমে অপরাধ বিষয়ে পর্যালোচনা এবং রূপকল্প তৈরিতে সহায়তা করার জন্যই ক্রিমিনোলজি বিভাগের জন্ম। বাংলাদেশে বর্তমানে তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিমিনোলজি পড়ার সুযোগ রয়েছে। ২০০৪ সালে ‘ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স’ বিভাগ নামে প্রথম যাত্রা শুরু হয়েছিল টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং পরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে একই নামে বিভাগের কার্যক্রম ২০১৭-১৮ সেশন থেকে চলমান। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ক্রিমিনোলজি’ বিভাগ।

কী কী বিষয়ে পড়ানো হয়
বিভাগের একজন শিক্ষার্থী অপরাধ সংঘটনের কারণ, প্রতিরোধ ও প্রতিকারবিষয়ক পুঁথিগত বিদ্যা ও সম্যক ধারণা লাভ করেন। অধ্যয়নের বিষয় হিসেবে অপরাধবিজ্ঞান পরিচিতি, অপরাধবিজ্ঞানের তত্ত্ব, অপরাধীর মনস্তত্ত্ব, কিশোর অপরাধ, সন্ত্রাসবাদ, অপরাধবিজ্ঞানবিষয়ক গবেষণাপদ্ধতি এবং ফৌজদারি বিচারব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য। পুলিশিং, পুলিশ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা, অপরাধ তদন্ত, ফরেনসিক সায়েন্স, সিকিউরিটি ম্যানেজমেন্ট, আদালতব্যবস্থা, কারাব্যবস্থা ও সংশোধন কেন্দ্র, অপরাধী পুনর্বাসন, অপরাধ ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রধান আইন, যেমন দণ্ডবিধি, ফৌজদারি কার্যবিধি, সাক্ষ্য আইন, পুলিশ আইন ইত্যাদি বিষয়ে পড়ানো হয়। এ ছাড়া অর্থনীতি ও উন্নয়নের সঙ্গে অপরাধের সম্পৃক্ততা, ভিকটিমোলজি, সাইবার ক্রাইম প্রভৃতি বিষয়েও পাঠদান করা হয়।

চাকরির সুযোগ কেমন
ডাক্তার যেমন রোগ নির্ণয় ও উপশমের ক্ষেত্রে নিজের অর্জিত জ্ঞানের ঠিক ব্যবহারটা করতে পারেন, তেমনি ক্রিমিনোলজি বিভাগে পড়ে একজন শিক্ষার্থী অপরাধের ধরন, কারণ নির্ণয় এবং সম্ভাব্য সমাধানের ক্ষেত্রে জ্ঞানের যথাযথ ব্যবহার শিখতে পারেন। তুলনামূলক নতুন হলেও বাংলাদেশে অপরাধবিজ্ঞান বিষয়টির কাজের ক্ষেত্র বিস্তৃত। বিসিএসে স্বতন্ত্র পুলিশ ক্যাডার ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, যেমন এনএসআই, পুলিশের এসবি, ডিবি, সিআইডি, ডিজিএফআই, জেলখানার জেলার, বেসরকারি গোয়েন্দা সংস্থা, বিভিন্ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠান, এনজিও, মানবাধিকার সংস্থা, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকসহ অনেক ক্ষেত্রেই রয়েছে কাজের সুযোগ। এ ছাড়া কাজের সুযোগ আছে উন্নত দেশগুলোতেও। এসব দেশের বিভিন্ন সংস্থায় তথ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ এবং অনুসন্ধানী বিভিন্ন সংস্থার নিয়োগে অপরাধ বিশেষজ্ঞদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। যদিও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে এখনো স্বীকৃতি মেলেনি; তবুও ক্রিমিনোলজি বিষয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ কর্মক্ষেত্রের স্বাতন্ত্র্য তৈরি করার প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।

অপরাধবিজ্ঞানীদের প্রয়োজনীয়তা কী
অপরাধের ধরন ও প্রকৃতি সদা পরিবর্তনশীল। শিল্পায়ন ও প্রযুক্তির অগ্রগতির চাকা খুব জোরে ঘুরছে। তাল মিলিয়ে জগৎসংসারের অন্যায়-অপরাধের হিসাবও জটিলতর হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের সমাজে অপরাধের ধরন বদলেছে এবং অপরাধীরা এখন নতুন নতুন প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করছে। অপরাধ নির্মূলে কেবল অপরাধীকে শাস্তি দেওয়া এবং বল প্রয়োগ যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন অপরাধের যথাযথ বিশ্লেষণ ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান প্রস্তাবনা। এই জটিল কর্মযজ্ঞ সম্পাদনে অপরাধবিজ্ঞানীরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারেন। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ভীষণ অপরাধপ্রবণ। আবার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে এ দেশে অপরাধের ধরন, গতি ও প্রকৃতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই একুশ শতকের অন্য সব অপরাধের পাশাপাশি সাইবার অপরাধ, অর্থ পাচার, ব্যাংক জালিয়াতি, নিত্যনতুন অপরাধ আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েই চলেছে। এসব অপরাধ নির্মূলে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গবেষণা, অপরাধীদের মনস্তত্ত্ব বিশ্লেষণ ও সমাজের সব স্তরে পলিসি প্রণয়ন করে অপরাধপ্রবণতা কমানোর ক্ষেত্রে অপরাধবিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশে ব্যাংকিং ও ঋণসেবা খুবই গুরুত্বপূর্ণ খাত; বিশেষ করে এই সেক্টরে অপরাধের ঝুঁকি কমাতে এখন উন্নয়নশীল বাংলাদেশেও অপরাধবিজ্ঞানীদের নিবেদন খুব জরুরি।

পড়ার খরচ কেমন
তুলনামূলকভাবে এ দেশে ক্রিমিনোলজি বিষয়ের যাত্রা মোটামুটি নতুন বললেই চলে। বর্তমানে চলমান তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নামমাত্র অর্থ খরচ করে ক্রিমিনোলজি বিষয় নিয়ে পড়া যায়। এত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে কোনো প্রোগ্রাম চালু হয়নি। তবে আশা করা যাচ্ছে, দ্রুতই প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও ক্রিমিনোলজির একাডেমিক চর্চা যাত্রা শুরু করবে।

উচ্চশিক্ষার সুযোগ-সুবিধা কেমন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগে বর্তমানে ব্যাচেলর অব অনার্স-মাস্টার্সের পাশাপাশি এমফিল এবং পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ‘ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস’ শিরোনামে এক বছরের প্রফেশনাল মাস্টার্স প্রোগ্রামও চালু আছে। স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান থেকে যেকোনো বিষয়ে স্নাতক সম্পন্নকারীরা ভর্তি পরীক্ষা এবং ভাইভায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে মাস্টার্স প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারেন। এই মাস্টার্স প্রোগ্রাম বেশ প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শিক্ষার্থী হিসেবে অংশগ্রহণ করে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বহু আগে থেকেই ক্রিমিনোলজি উচ্চশিক্ষার অন্তর্ভুক্ত। এসব দেশে ক্রিমিনোলজিতে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি করার সুযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে আকর্ষণীয় নানা স্কলারশিপের সুযোগ। আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সেপ্টেম্বর সেশনের জন্য জানুয়ারি অথবা অনেক ক্ষেত্রে আগের বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে আবেদন করতে হয়। পড়ার পাশাপাশি বিখ্যাত ও স্বনামধন্য অধ্যাপকদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম

এ বি এম নাজমুস সাকিব, সহকারী অধ্যাপক, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়