উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর শেষ মুহূর্তের অনুশীলন

মো. মাহমুদুল হাছান অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুল হাছান :প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা

৬ নভেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে একটু হলেও মানসিক চাপ থাকে। কী পড়বে, কীভাবে পড়বে, পরীক্ষা কেমন হবে, পড়লেও মনে থাকছে না কেন, হলরুমের পরিবেশ কেমন হবে, রেজাল্ট ভালো হবে তো! ইত্যাকার নানা দুশ্চিন্তা তোমাদের মাথায় ভর করে বসতে পারে। এগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বর্তমান সময়টুকু কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটিই ভাবতে হবে। নিচে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি অনুশীলন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো-

নিজেকে সুস্থ রাখো : যেহেতু পরীক্ষা অত্যাসন্ন, তোমাদের প্রথম কাজটি হবে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়। ঠিকমতো পানাহার করা, পুষ্টিকর খাবারের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং নিয়মিত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া হবে তোমাদের নিয়মিত চর্চা। হতে পারে, পরীক্ষার জন্য তোমাদের ভীষণ টেনশন হচ্ছে, তোমরা ভেঙে পড়বে না। তোমাদের মনোবল দৃঢ় রাখতে হবে এবং এজন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিচল আস্থা রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। তবে গভীর রাত জেগে রুটিনের বাইরে বেশি পড়া ঠিক হবে না। প্রস্তুতির জন্য নিয়ম মেনে বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে পড়াশোনা করলে, সেটি টেকসই হবে এবং স্মৃতিতে ধরে রাখা সহজ হবে।

রুটিন মেনে পড়বে : সময় অতি অল্প। তাই যেসব সাবজেক্ট পরীক্ষার রুটিনের শেষের দিকে রয়েছে সেগুলির প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। পরীক্ষা শুরুর আগের দু’দিন থেকে তোমাদের পরীক্ষার রুটিন মেনে পড়তে হবে। শুধু পরীক্ষার সাবজেক্টই পড়া উচিত। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, পরীক্ষার ঠিক আগের দিনটিতে গড়পড়তায় বইয়ের সবকিছু পড়া ঠিক নয়। এতে যথেষ্ট সময় পাবে না এবং পুরো বই শেষও করতে পারবে না। ফলে ব্রেইন লক হয়ে যেতে পারে এবং মানসিক দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে। যেটি করতে হবে সেটি হলো, গোটা বইয়ের মাঝে যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর প্রতি নজর দেবে। ভুলেও নতুন করে মুখস্থ করার চেষ্টা করা যাবে না, বরং চোখ বুলিয়ে তা আত্মস্থ করতে হবে।

বেশি রাত জাগবে না : পরীক্ষার আগের রাতে মোটেও রাত জাগা যাবে না, এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, মস্তিস্কের জন্য আরও বেশি বিপজ্জনক; যা তোমাদের স্মৃতিভ্রম করে তুলতে পারে। উত্তম কাজ হলো- এ রাতে যতটুকু সম্ভব ব্র্রেইনকে বিশ্রাম দিতে হবে। বেশি কথা বললে, কারও সঙ্গে অযথা আড্ডায় বসলে, সহপাঠী বা ভাইবোনের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করলে কিংবা যে কোনো কারণে মনমেজাজ খারাপ করলে মস্তিস্কের ক্ষতি হতে পারে, যা পরীক্ষার কক্ষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ফ্ল্যাশ কার্ড বানিয়ে পড়ো : পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে দ্রুত পড়া মনে রাখার জন্য শুধু নির্বাচিত কিছু প্রশ্ন পড়তে পারো। এ ক্ষেত্রে ফ্ল্যাশ কার্ড তৈরি করে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের কিওয়ার্ড বা মেইন পয়েন্ট লিখে লিখে পড়তে পারলে পরীক্ষার্থীর জন্য পড়া মনে রাখতে অনেক সহজ হবে। ম্যাথমেটিকস ও সায়েন্সের সাবজেক্টগুলোর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য থিওরি ও সূত্রসমষ্টির ওপর চোখ বোলানো ভালো। অন্যান্য সাবজেক্টের ব্যাপারে যেসব অধ্যায়ে তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে, সেগুলোর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। ফ্ল্যাশ কার্ড, চিরকুট বা নির্দিষ্ট কাগজে তথ্যভিত্তিক পয়েন্ট লিখে পড়তে পারলে পরীক্ষায় ভালো করার সম্ভাবনা থাকে।

পরীক্ষাসামগ্রী গুছিয়ে রাখো : এরই মধ্যে যেহেতু তোমরা রেজিস্ট্রেশন কার্ড, প্রবেশপত্র হাতে পেয়ে গেছ, সেহেতু পরীক্ষার আগের দিন রাতে এগুলোসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাসামগ্রী যেমন- কলম, পেনসিল, শার্পনার, রুলার, সায়েন্স বিভাগের জন্য জ্যামিতি বপ ইত্যাদি একটি ট্রান্সপারেন্ট ফাইলে সাজিয়ে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবা কিংবা অভিভাবকতুল্য কারোর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, কোনোভাবেই রঙিন ফাইল বহন করা যাবে না।

প্রবেশপত্রের মূল কপি সঙ্গে নাও : পরীক্ষার হলে অবশ্যই প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের মূল কপি নিতে হবে। কোনো কারণে এগুলো নিতে ভুলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বা শিক্ষককে অবহিত করে সমাধান করতে হবে। কোনোরকম চেঁচামেচি বা হইহুল্লোড় করা যাবে না।

পোশাকে মনোযোগ : শিক্ষার্থীরা ছেলে হোক বা মেয়ে, প্রত্যেককে শালীন পোশাক পরে পরীক্ষার হলে যেতে হবে। স্কুলের ইউনিফর্ম থাকলে সেটি পরে যাওয়াই সর্বোত্তম। ছেলেদের চুল ছোট রাখা এবং মেয়েদের চুলে ঝুঁটি বা বেণি বেঁধে যাওয়া শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক। অতিরিক্ত কোনো প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহার না করাই শ্রেয়। মনে রাখতে হবে, প্রবেশপত্রে কিছু নির্দেশিকা লেখা রয়েছে- সেগুলো ভালোভাবে তোমাদের মেনে চলতে হবে।

সবার আশীর্বাদ নেবে : পরীক্ষা শুরুর আগে তোমাদের উচিত বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে দোয়া ও আশীর্বাদ নেওয়া। তবে এটি প্রতিদিন না হলেও চলবে।

সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হবে : প্রথম পরীক্ষার দিন তোমরা অবশ্যই বাসা বা বাড়ি থেকে এমন সময় রওনা হবে যেন পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারো। কারণ, এ দিনে তোমাদের প্রথমে আসনবিন্যাস দেখে নিতে হবে এবং যে রুমে আসন পড়েছে, সেটি চিনে যথাসময়ে নিজ আসন গ্রহণ করতে হবে। এরপর অন্যান্য দিনে আধা ঘণ্টা আগে পৌঁছালে যথেষ্ট। মনে রাখতে হবে, যেসব শহরে ট্রাফিক জ্যাম তীব্র সেখানকার পরীক্ষার্থী হলে তাদের আরও সচেতনভাবে বের হতে হবে।

ওয়াশরুমের কাজ আগেই সেরে নেবে : পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশের পূর্বে ওয়াশরুমের কাজটি সেরে নেওয়া ভালো, যেন পরীক্ষা চলাকালে বাইরে বের হতে না হয়।

হলে বাহুল্য খোশালাপ করবে না : হলে ঢোকার পর হাতে সময় থাকলে চুপচাপ বসে বসে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য কামনা করবে। কারও সঙ্গে খোশালাপ বা বাহুল্য তর্কবিতর্কে লিপ্ত হবে না। এ সময়টুকুতে মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেকে স্বাভাবিক রাখাই শ্রেয়। পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষক প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সালাম বা শুভেচ্ছা জানানো কর্তব্য।

উত্তরপত্রের তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করবে : নিয়ম অনুযায়ী উত্তরপত্র হাতে পেলে খুব সতর্কতার সঙ্গে তোমার নিজের তথ্য প্রদান করবে এবং কোথাও আটকে গেলে বা ফরম পূরণে ভুল হলে অনতিবিলম্বে হলে দায়িত্বরত শিক্ষককে অবহিত করে তা ঠিক করে নেবে। এরপর উত্তরপত্রটি লেখার জন্য প্রস্তুত করবে। যেমন- মার্জিন টানা, পৃষ্ঠা নম্বর দেওয়া ও কোনো ছেঁড়া-ফাটা পৃষ্ঠা আছে কিনা দেখে নেবে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিক রাখবে : পরীক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত নির্ধারিত সময়টুকু মেনে কাজ করাই টাইম ম্যানেজমেন্ট। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবে। প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা প্রশ্নের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে যেটি সহজ পারতপক্ষে সেটি দিয়ে লেখা আরম্ভ করবে। তবে প্রশ্নের ক্রমধারা ঠিক রেখে লিখতে পারলে উত্তম। পরীক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রথম, মাঝের ও শেষ উত্তরগুলো ভালো হওয়া কাম্য।

উত্তরপত্রের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবে : উত্তরপত্রের পরিচ্ছন্নতা, শ্রীমান, যথাযথ মার্জিন, এক প্রশ্ন থেকে আরেকটির মধ্যে পরিমিত গ্যাপ, কাটাছেঁড়া কম করা, বিভিন্ন কালির কলমের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি পদ্ধতি মেনে চলা উচিত। সাধারণত কালো কালির কলম দিয়েই উত্তর লিখতে হয়। তবে মার্জিন টানার জন্য পেনসিল এবং শিরোনাম লিখতে নীল কালির কলম ব্যবহার করা যেতে পারে। পরীক্ষার খাতায় ওভাররাইটিং করা দূষণীয়।

অসদুপায় অবলম্বন করবে না : পরীক্ষা কক্ষে অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত কাগজপত্র নেওয়া ঠিক নয়। ভুলেও কোনো ধরনের অসদুপায় অবলম্ব্বন করা, পাশের সিটের অন্য পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলা বা টুকরো কাগজ কোথাও ছুড়ে মারা আইনত দণ্ডনীয়। আবার নিজের পায়ের আশপাশে টুকরো কোনো কাগজ পড়ে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে হল পরিদর্শককে অবহিত করতে হবে।

 একটু আগেই লেখা শেষ করবে : বরাদ্দকৃত সময়ের অন্তত দশ মিনিট আগেই লেখা শেষ করার চেষ্টা করবে। ধরো, দুর্ভাগ্যবশত তোমার লেখা শেষ হচ্ছে না, তবুও তোমাদের তো উত্তরপত্র জমা দিতে হবে। তাই লেখা শেষ না হলেও তোমাদের লেখা থামিয়ে নিচে একটি ক্ষুদ্র দাগ টেনে এন্ডিং মার্ক (সমাপ্তিসূচক চিহ্ন) দেওয়া উচিত। আর যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারো, তাহলে উত্তরগুলো বারবার রিভাইজ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তর ঠিকমতো লেখা হয়েছে কিনা, ক্রমিক নম্বর সঠিকভাবে লিখতে পেরেছ কিনা, তথ্যগত ভুল আছে কিনা, এগুলো ফের দেখে নিতে হবে। বিশেষ করে উত্তরপত্রের ওপরের তথ্য ফরমটিতে তোমার নিজের নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, রোল নম্বর ইত্যাদি সঠিক আছে কিনা তা ভালোভাবে চেক করে নিতে হবে। লিখতে লিখতে উত্তরপত্রের মূল অংশ শেষ হয়ে গেলে অতিরিক্ত লুজশিট নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, সেক্ষেত্রে লুজশিটের ক্রমিক সংখ্যা মূলপত্রের যথাস্থানে লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করে যথাযথভাবে সেলাই বা পিনআপ করতে হবে।

বিনয়ের সঙ্গে খাতা জমা দেবে : তোমার উত্তরপত্র লেখা ও রিভিশন শেষ হয়ে গেলে খাতাটি সুন্দরভাবে সাজিয়ে বিনয়ের সঙ্গে হল পরিদর্শকের কাছে জমা দেবে। খাতা জমাদানকালে শিক্ষককে আবার সালাম দিয়ে হল ত্যাগের প্রস্তুতি নেবে। মনে রাখবে, হল ত্যাগের আগে কলম, পেনসিল, প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্র্রেশন কার্ড যথাযথভাবে ফাইলের মধ্যে গুছিয়ে নিতে হবে।

পরীক্ষা খারাপ হলে ঘাবড়াবে না : যে কোনো কারণে কোনো পরীক্ষা খারাপ হতে পারে, তুমি ঘাবড়াবে না। পরীক্ষার প্রশ্ন কমন না পড়তে পারে, সময়ের অভাবে সব প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারো, কিংবা তোমার পরীক্ষা আশানুরূপ নাও হতে পারে। এজন্য তুমি মন খারাপ করে থাকবে না, বরং আগামীর পরীক্ষা ভালো করার প্রস্তুতি নাও। মনকে শান্ত রাখবে এবং যে কারণে পরীক্ষা খারাপ হয়েছে, সেটি যেন আবার না হয় সেজন্য প্রস্তুতি নেবে।

তোমাদের জন্য আমার একরাশ দোয়া ও আশীর্বাদ। আশা করি, তোমাদের পরীক্ষা ভালো হবে এবং তোমরা একটি সন্তোষজনক রেজাল্ট অর্জন করতে পারবে। তোমাদের পরীক্ষা ভালো হোক। তোমাদের শিক্ষক ও পিতামাতা খুশি হোক- এ কামনাই রইল অফুরান।

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর শেষ মুহূর্তের অনুশীলন

মো. মাহমুদুল হাছান অধ্যাপক ড. মো. মাহমুদুল হাছান :প্রিন্সিপাল, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, ঢাকা

৬ নভেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। পরীক্ষার আগে একটু হলেও মানসিক চাপ থাকে। কী পড়বে, কীভাবে পড়বে, পরীক্ষা কেমন হবে, পড়লেও মনে থাকছে না কেন, হলরুমের পরিবেশ কেমন হবে, রেজাল্ট ভালো হবে তো! ইত্যাকার নানা দুশ্চিন্তা তোমাদের মাথায় ভর করে বসতে পারে। এগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বর্তমান সময়টুকু কীভাবে কাজে লাগানো যায়, সেটিই ভাবতে হবে। নিচে শিক্ষার্থীদের কয়েকটি অনুশীলন সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলো-

নিজেকে সুস্থ রাখো : যেহেতু পরীক্ষা অত্যাসন্ন, তোমাদের প্রথম কাজটি হবে কীভাবে সুস্থ থাকা যায়। ঠিকমতো পানাহার করা, পুষ্টিকর খাবারের প্রতি যত্নশীল হওয়া এবং নিয়মিত ঘুম ও বিশ্রাম নেওয়া হবে তোমাদের নিয়মিত চর্চা। হতে পারে, পরীক্ষার জন্য তোমাদের ভীষণ টেনশন হচ্ছে, তোমরা ভেঙে পড়বে না। তোমাদের মনোবল দৃঢ় রাখতে হবে এবং এজন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবিচল আস্থা রেখে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। তবে গভীর রাত জেগে রুটিনের বাইরে বেশি পড়া ঠিক হবে না। প্রস্তুতির জন্য নিয়ম মেনে বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে পড়াশোনা করলে, সেটি টেকসই হবে এবং স্মৃতিতে ধরে রাখা সহজ হবে।

রুটিন মেনে পড়বে : সময় অতি অল্প। তাই যেসব সাবজেক্ট পরীক্ষার রুটিনের শেষের দিকে রয়েছে সেগুলির প্রতি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। পরীক্ষা শুরুর আগের দু’দিন থেকে তোমাদের পরীক্ষার রুটিন মেনে পড়তে হবে। শুধু পরীক্ষার সাবজেক্টই পড়া উচিত। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, পরীক্ষার ঠিক আগের দিনটিতে গড়পড়তায় বইয়ের সবকিছু পড়া ঠিক নয়। এতে যথেষ্ট সময় পাবে না এবং পুরো বই শেষও করতে পারবে না। ফলে ব্রেইন লক হয়ে যেতে পারে এবং মানসিক দুশ্চিন্তা বাড়তে পারে। যেটি করতে হবে সেটি হলো, গোটা বইয়ের মাঝে যেগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলোর প্রতি নজর দেবে। ভুলেও নতুন করে মুখস্থ করার চেষ্টা করা যাবে না, বরং চোখ বুলিয়ে তা আত্মস্থ করতে হবে।

বেশি রাত জাগবে না : পরীক্ষার আগের রাতে মোটেও রাত জাগা যাবে না, এটি স্বাস্থ্যের জন্য যেমন ক্ষতিকর, মস্তিস্কের জন্য আরও বেশি বিপজ্জনক; যা তোমাদের স্মৃতিভ্রম করে তুলতে পারে। উত্তম কাজ হলো- এ রাতে যতটুকু সম্ভব ব্র্রেইনকে বিশ্রাম দিতে হবে। বেশি কথা বললে, কারও সঙ্গে অযথা আড্ডায় বসলে, সহপাঠী বা ভাইবোনের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করলে কিংবা যে কোনো কারণে মনমেজাজ খারাপ করলে মস্তিস্কের ক্ষতি হতে পারে, যা পরীক্ষার কক্ষে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ফ্ল্যাশ কার্ড বানিয়ে পড়ো : পরীক্ষার আগের দিনগুলোতে দ্রুত পড়া মনে রাখার জন্য শুধু নির্বাচিত কিছু প্রশ্ন পড়তে পারো। এ ক্ষেত্রে ফ্ল্যাশ কার্ড তৈরি করে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের কিওয়ার্ড বা মেইন পয়েন্ট লিখে লিখে পড়তে পারলে পরীক্ষার্থীর জন্য পড়া মনে রাখতে অনেক সহজ হবে। ম্যাথমেটিকস ও সায়েন্সের সাবজেক্টগুলোর ক্ষেত্রে সম্ভাব্য থিওরি ও সূত্রসমষ্টির ওপর চোখ বোলানো ভালো। অন্যান্য সাবজেক্টের ব্যাপারে যেসব অধ্যায়ে তথ্য সন্নিবেশিত রয়েছে, সেগুলোর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। ফ্ল্যাশ কার্ড, চিরকুট বা নির্দিষ্ট কাগজে তথ্যভিত্তিক পয়েন্ট লিখে পড়তে পারলে পরীক্ষায় ভালো করার সম্ভাবনা থাকে।

পরীক্ষাসামগ্রী গুছিয়ে রাখো : এরই মধ্যে যেহেতু তোমরা রেজিস্ট্রেশন কার্ড, প্রবেশপত্র হাতে পেয়ে গেছ, সেহেতু পরীক্ষার আগের দিন রাতে এগুলোসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষাসামগ্রী যেমন- কলম, পেনসিল, শার্পনার, রুলার, সায়েন্স বিভাগের জন্য জ্যামিতি বপ ইত্যাদি একটি ট্রান্সপারেন্ট ফাইলে সাজিয়ে রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবা কিংবা অভিভাবকতুল্য কারোর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। মনে রাখতে হবে, কোনোভাবেই রঙিন ফাইল বহন করা যাবে না।

প্রবেশপত্রের মূল কপি সঙ্গে নাও : পরীক্ষার হলে অবশ্যই প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্রেশন কার্ডের মূল কপি নিতে হবে। কোনো কারণে এগুলো নিতে ভুলে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পরীক্ষা কেন্দ্রে দায়িত্বরত কর্মকর্তা বা শিক্ষককে অবহিত করে সমাধান করতে হবে। কোনোরকম চেঁচামেচি বা হইহুল্লোড় করা যাবে না।

পোশাকে মনোযোগ : শিক্ষার্থীরা ছেলে হোক বা মেয়ে, প্রত্যেককে শালীন পোশাক পরে পরীক্ষার হলে যেতে হবে। স্কুলের ইউনিফর্ম থাকলে সেটি পরে যাওয়াই সর্বোত্তম। ছেলেদের চুল ছোট রাখা এবং মেয়েদের চুলে ঝুঁটি বা বেণি বেঁধে যাওয়া শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়ক। অতিরিক্ত কোনো প্রসাধনসামগ্রী ব্যবহার না করাই শ্রেয়। মনে রাখতে হবে, প্রবেশপত্রে কিছু নির্দেশিকা লেখা রয়েছে- সেগুলো ভালোভাবে তোমাদের মেনে চলতে হবে।

সবার আশীর্বাদ নেবে : পরীক্ষা শুরুর আগে তোমাদের উচিত বাবা-মা, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে দোয়া ও আশীর্বাদ নেওয়া। তবে এটি প্রতিদিন না হলেও চলবে।

সময়মতো পরীক্ষা কেন্দ্রে উপস্থিত হবে : প্রথম পরীক্ষার দিন তোমরা অবশ্যই বাসা বা বাড়ি থেকে এমন সময় রওনা হবে যেন পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগে পরীক্ষা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারো। কারণ, এ দিনে তোমাদের প্রথমে আসনবিন্যাস দেখে নিতে হবে এবং যে রুমে আসন পড়েছে, সেটি চিনে যথাসময়ে নিজ আসন গ্রহণ করতে হবে। এরপর অন্যান্য দিনে আধা ঘণ্টা আগে পৌঁছালে যথেষ্ট। মনে রাখতে হবে, যেসব শহরে ট্রাফিক জ্যাম তীব্র সেখানকার পরীক্ষার্থী হলে তাদের আরও সচেতনভাবে বের হতে হবে।

ওয়াশরুমের কাজ আগেই সেরে নেবে : পরীক্ষা কক্ষে প্রবেশের পূর্বে ওয়াশরুমের কাজটি সেরে নেওয়া ভালো, যেন পরীক্ষা চলাকালে বাইরে বের হতে না হয়।

হলে বাহুল্য খোশালাপ করবে না : হলে ঢোকার পর হাতে সময় থাকলে চুপচাপ বসে বসে সৃষ্টিকর্তার সাহায্য কামনা করবে। কারও সঙ্গে খোশালাপ বা বাহুল্য তর্কবিতর্কে লিপ্ত হবে না। এ সময়টুকুতে মাথা ঠান্ডা রেখে নিজেকে স্বাভাবিক রাখাই শ্রেয়। পরীক্ষার হলে দায়িত্বরত শিক্ষক প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সালাম বা শুভেচ্ছা জানানো কর্তব্য।

উত্তরপত্রের তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করবে : নিয়ম অনুযায়ী উত্তরপত্র হাতে পেলে খুব সতর্কতার সঙ্গে তোমার নিজের তথ্য প্রদান করবে এবং কোথাও আটকে গেলে বা ফরম পূরণে ভুল হলে অনতিবিলম্বে হলে দায়িত্বরত শিক্ষককে অবহিত করে তা ঠিক করে নেবে। এরপর উত্তরপত্রটি লেখার জন্য প্রস্তুত করবে। যেমন- মার্জিন টানা, পৃষ্ঠা নম্বর দেওয়া ও কোনো ছেঁড়া-ফাটা পৃষ্ঠা আছে কিনা দেখে নেবে।

টাইম ম্যানেজমেন্ট ঠিক রাখবে : পরীক্ষার জন্য বরাদ্দকৃত নির্ধারিত সময়টুকু মেনে কাজ করাই টাইম ম্যানেজমেন্ট। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করবে। প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গোটা প্রশ্নের ওপর একবার চোখ বুলিয়ে যেটি সহজ পারতপক্ষে সেটি দিয়ে লেখা আরম্ভ করবে। তবে প্রশ্নের ক্রমধারা ঠিক রেখে লিখতে পারলে উত্তম। পরীক্ষকের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য প্রথম, মাঝের ও শেষ উত্তরগুলো ভালো হওয়া কাম্য।

উত্তরপত্রের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখবে : উত্তরপত্রের পরিচ্ছন্নতা, শ্রীমান, যথাযথ মার্জিন, এক প্রশ্ন থেকে আরেকটির মধ্যে পরিমিত গ্যাপ, কাটাছেঁড়া কম করা, বিভিন্ন কালির কলমের ব্যবহার থেকে বিরত থাকা ইত্যাদি পদ্ধতি মেনে চলা উচিত। সাধারণত কালো কালির কলম দিয়েই উত্তর লিখতে হয়। তবে মার্জিন টানার জন্য পেনসিল এবং শিরোনাম লিখতে নীল কালির কলম ব্যবহার করা যেতে পারে। পরীক্ষার খাতায় ওভাররাইটিং করা দূষণীয়।

অসদুপায় অবলম্বন করবে না : পরীক্ষা কক্ষে অপ্রয়োজনীয় বা অতিরিক্ত কাগজপত্র নেওয়া ঠিক নয়। ভুলেও কোনো ধরনের অসদুপায় অবলম্ব্বন করা, পাশের সিটের অন্য পরীক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলা বা টুকরো কাগজ কোথাও ছুড়ে মারা আইনত দণ্ডনীয়। আবার নিজের পায়ের আশপাশে টুকরো কোনো কাগজ পড়ে থাকলে সঙ্গে সঙ্গে হল পরিদর্শককে অবহিত করতে হবে।

 একটু আগেই লেখা শেষ করবে : বরাদ্দকৃত সময়ের অন্তত দশ মিনিট আগেই লেখা শেষ করার চেষ্টা করবে। ধরো, দুর্ভাগ্যবশত তোমার লেখা শেষ হচ্ছে না, তবুও তোমাদের তো উত্তরপত্র জমা দিতে হবে। তাই লেখা শেষ না হলেও তোমাদের লেখা থামিয়ে নিচে একটি ক্ষুদ্র দাগ টেনে এন্ডিং মার্ক (সমাপ্তিসূচক চিহ্ন) দেওয়া উচিত। আর যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে পারো, তাহলে উত্তরগুলো বারবার রিভাইজ দিতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন অনুযায়ী উত্তর ঠিকমতো লেখা হয়েছে কিনা, ক্রমিক নম্বর সঠিকভাবে লিখতে পেরেছ কিনা, তথ্যগত ভুল আছে কিনা, এগুলো ফের দেখে নিতে হবে। বিশেষ করে উত্তরপত্রের ওপরের তথ্য ফরমটিতে তোমার নিজের নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, রোল নম্বর ইত্যাদি সঠিক আছে কিনা তা ভালোভাবে চেক করে নিতে হবে। লিখতে লিখতে উত্তরপত্রের মূল অংশ শেষ হয়ে গেলে অতিরিক্ত লুজশিট নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে, সেক্ষেত্রে লুজশিটের ক্রমিক সংখ্যা মূলপত্রের যথাস্থানে লিপিবদ্ধ করার বিষয়টি নিশ্চিত করে যথাযথভাবে সেলাই বা পিনআপ করতে হবে।

বিনয়ের সঙ্গে খাতা জমা দেবে : তোমার উত্তরপত্র লেখা ও রিভিশন শেষ হয়ে গেলে খাতাটি সুন্দরভাবে সাজিয়ে বিনয়ের সঙ্গে হল পরিদর্শকের কাছে জমা দেবে। খাতা জমাদানকালে শিক্ষককে আবার সালাম দিয়ে হল ত্যাগের প্রস্তুতি নেবে। মনে রাখবে, হল ত্যাগের আগে কলম, পেনসিল, প্রবেশপত্র ও রেজিস্ট্র্রেশন কার্ড যথাযথভাবে ফাইলের মধ্যে গুছিয়ে নিতে হবে।

পরীক্ষা খারাপ হলে ঘাবড়াবে না : যে কোনো কারণে কোনো পরীক্ষা খারাপ হতে পারে, তুমি ঘাবড়াবে না। পরীক্ষার প্রশ্ন কমন না পড়তে পারে, সময়ের অভাবে সব প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারো, কিংবা তোমার পরীক্ষা আশানুরূপ নাও হতে পারে। এজন্য তুমি মন খারাপ করে থাকবে না, বরং আগামীর পরীক্ষা ভালো করার প্রস্তুতি নাও। মনকে শান্ত রাখবে এবং যে কারণে পরীক্ষা খারাপ হয়েছে, সেটি যেন আবার না হয় সেজন্য প্রস্তুতি নেবে।

তোমাদের জন্য আমার একরাশ দোয়া ও আশীর্বাদ। আশা করি, তোমাদের পরীক্ষা ভালো হবে এবং তোমরা একটি সন্তোষজনক রেজাল্ট অর্জন করতে পারবে। তোমাদের পরীক্ষা ভালো হোক। তোমাদের শিক্ষক ও পিতামাতা খুশি হোক- এ কামনাই রইল অফুরান।