এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছে খোলা চিঠি

আগামী ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা নিশ্চয়ই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। তাঁদের জন্য এই খোলা চিঠি লিখেছেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সুদীপা বড়ুয়া

নিজেকে শাণিত করতে, স্বচ্ছ ও আলোকিত করতে পড়াশোনা করবে, সর্বাগ্রে এ কথাই আমরা বলব। মুখস্থবিদ্যার অসার প্রাণহীন পথ তোমাদের জন্য নয়। শিক্ষা এমন এক আলো, যা তোমার ভেতরের সব কলুষতা মুছে নির্মল-সুন্দর করতে পারে। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে—ভালো ফল সামনের অনেক কটি বন্ধ দরজা খুলে দেবে। সাফল্যের ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকার জন্য নয়, নিজের কাছে নিজেকে, নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করতেই তোমাকে ভালো ফল করতে হবে।

একটু বাড়তি চেষ্টা, একটু বাড়তি মনঃসংযোগ আর আধ ছটাকের মতো বাড়তি জেদ। ব্যস, আর কী চাই? চেষ্টা করেছ, অথচ সাফল্য আসেনি, এটা হতেই পারে না

একটু বাড়তি চেষ্টা, একটু বাড়তি মনঃসংযোগ আর আধ ছটাকের মতো বাড়তি জেদ। ব্যস, আর কী চাই? চেষ্টা করেছ, অথচ সাফল্য আসেনি, এটা হতেই পারে না। আর ভালো ফল এক লহমায় বাড়িয়ে দিতে পারে তোমার আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাসের জোরেই কিন্তু তোমার সামনের পথচলা সহজ হয়ে যাবে। এর সঙ্গে বাড়তি পাওনা—মা-বাবার মুখে আলো ঝলমলে হাসি। সন্তানের সাফল্যে অভিভাবকের যে মানসিক তৃপ্তি, যে প্রশান্তি, সেই আনন্দ আজ হয়তো তোমরা ঠিক বুঝবে না, তবে কোনো একদিন অবশ্যই বুঝবে।

আরেকটা কথা না বললেই নয়। ভালো ফল করতে গিয়ে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। মনে রেখো, সাফল্যের কোনো ‘শর্টকাট’ হয় না। জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই যেন মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরে তোমাদের বাঁচতে না হয়।

এ কথা তোমরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে, ততই মঙ্গল; শুধু তোমাদের নয়, সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র, সবার জন্যই মঙ্গল। নিজেকে এখন থেকে প্রস্তুত করো, যেন কখনোই অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে না হয়। একবারের একটুখানি পদস্খলন সারা জীবনের জন্য তোমার উঁচু মাথাটা হেঁট করে দিতে পারে নিমেষেই।

এই পরীক্ষার পর অপেক্ষা করে আছে বিশাল এক নবজীবন। ঘরে আত্মীয়স্বজন এলে যে লাজুক ছেলে মায়ের পেছনে আড়াল খুঁজত, সে-ই হয়তো হবে ক্ষুরধার তার্কিক। কদিন আগেও যে মেয়ে মায়ের হাত ধরে রাস্তা পার হতো, সে-ই হয়তো বেরিয়ে পড়বে বিশ্বভ্রমণে। বিশাল পরিসর, বিস্তৃত ভাবনার জগৎ আর নানা রকম সমীকরণ এখন থেকেই তোমাদের গড়েপিটে নেবে। তোমাদের কাছে অনুরোধ, বিভ্রান্ত কিংবা দিগ্ভ্রান্ত হয়ো না।

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সুদীপা বড়ুয়া।ছবি: সংগৃহীত

অনেক কটি টিভি চ্যানেলের মতো তোমাদের সামনেও এখন অনেক ‘অপশন’। বেছে নেওয়ার আগে ১০ বার ভাবো। অভিজ্ঞ মুখগুলোর কাছে বারবার যাও। যাচাই করো। বাছাই করো।

অভিভাবকদেরও বলব, নিজের অপ্রাপ্তিটুকু জোর করে সন্তানের পিঠে বাড়তি বোঝার মতো চাপিয়ে দেবেন না। অনিচ্ছুক, অনাগ্রহী ছেলেমেয়েগুলোকে ধরেবেঁধে একটা অচেনা পথে ঠেলে দেবেন না। এমনিতেই ওরা বড্ড অভিমানী। সময় দিন ওদের সঙ্গে, ওদের মতো করে বাইরের পৃথিবীটা দেখুন। ওরা কিন্তু আমাদের সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে। ভেবে দেখুন তো, মুঠোফোন নামের যন্ত্রটার কত কঠিন কঠিন সমস্যা, যা সামলাতে আমরা হিমশিম খেয়ে যাই, আর ওরা কেমন তুড়ি মেরে সমাধান করে দেয়! কত অনায়াসে বাস্তবটাকে বুঝে নেয়। যুক্তি তর্কে সব সময় কিন্তু ওদের হারাতেও পারবেন না। সময় বদলেছে। নিজেকেও বদলান।

আর তোমরা, তোমাদের বলছি, বৃত্তের বাইরে গিয়ে একটুখানি ভাবো। শুধু নিজেকে নিয়ে থাকতে কিংবা ভাবতে চাওয়ার মধ্যে কেমন যেন একটা স্বার্থপরতা আছে। জীবনে জীবন যোগ করো। আর্তের পাশে দাঁড়াও। সহমর্মী হও। পিছিয়ে থাকা বন্ধুটাকে সঙ্গে নিয়ে নাও। অঙ্কে যে বন্ধুটা দুর্বল, তাকে সঙ্গে নিয়েই না হয় পড়তে বসো। তোমার তাতে কিচ্ছু কমবে না। আর যদি কেউ তারপরেও অকৃতজ্ঞ হয়, সেটি তার দীনতা। দুহাত উজাড় করে দাও। দিতে শেখো। নতুন জীবনের পথে যা কিছু আসবে, তার ভালো-মন্দ সহজভাবে নিয়ো। আমরা যারা ক্ষয়ে যাচ্ছি, ক্রমশ ধূসর হয়ে যাচ্ছি, তারা নির্নিমেষে তোমাদের দিকেই তাকিয়ে আছি।

এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছে খোলা চিঠি

আগামী ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা। শিক্ষার্থীরা নিশ্চয়ই শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত। তাঁদের জন্য এই খোলা চিঠি লিখেছেন রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সুদীপা বড়ুয়া

নিজেকে শাণিত করতে, স্বচ্ছ ও আলোকিত করতে পড়াশোনা করবে, সর্বাগ্রে এ কথাই আমরা বলব। মুখস্থবিদ্যার অসার প্রাণহীন পথ তোমাদের জন্য নয়। শিক্ষা এমন এক আলো, যা তোমার ভেতরের সব কলুষতা মুছে নির্মল-সুন্দর করতে পারে। কিন্তু সেই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে—ভালো ফল সামনের অনেক কটি বন্ধ দরজা খুলে দেবে। সাফল্যের ইঁদুর দৌড়ে টিকে থাকার জন্য নয়, নিজের কাছে নিজেকে, নিজের যোগ্যতাকে প্রমাণ করতেই তোমাকে ভালো ফল করতে হবে।

একটু বাড়তি চেষ্টা, একটু বাড়তি মনঃসংযোগ আর আধ ছটাকের মতো বাড়তি জেদ। ব্যস, আর কী চাই? চেষ্টা করেছ, অথচ সাফল্য আসেনি, এটা হতেই পারে না

একটু বাড়তি চেষ্টা, একটু বাড়তি মনঃসংযোগ আর আধ ছটাকের মতো বাড়তি জেদ। ব্যস, আর কী চাই? চেষ্টা করেছ, অথচ সাফল্য আসেনি, এটা হতেই পারে না। আর ভালো ফল এক লহমায় বাড়িয়ে দিতে পারে তোমার আত্মবিশ্বাস। সেই আত্মবিশ্বাসের জোরেই কিন্তু তোমার সামনের পথচলা সহজ হয়ে যাবে। এর সঙ্গে বাড়তি পাওনা—মা-বাবার মুখে আলো ঝলমলে হাসি। সন্তানের সাফল্যে অভিভাবকের যে মানসিক তৃপ্তি, যে প্রশান্তি, সেই আনন্দ আজ হয়তো তোমরা ঠিক বুঝবে না, তবে কোনো একদিন অবশ্যই বুঝবে।

আরেকটা কথা না বললেই নয়। ভালো ফল করতে গিয়ে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। মনে রেখো, সাফল্যের কোনো ‘শর্টকাট’ হয় না। জীবনের কোনো ক্ষেত্রেই যেন মিথ্যাকে আঁকড়ে ধরে তোমাদের বাঁচতে না হয়।

এ কথা তোমরা যত তাড়াতাড়ি বুঝবে, ততই মঙ্গল; শুধু তোমাদের নয়, সমাজ, জাতি, রাষ্ট্র, সবার জন্যই মঙ্গল। নিজেকে এখন থেকে প্রস্তুত করো, যেন কখনোই অন্যায়ের সঙ্গে আপস করতে না হয়। একবারের একটুখানি পদস্খলন সারা জীবনের জন্য তোমার উঁচু মাথাটা হেঁট করে দিতে পারে নিমেষেই।

এই পরীক্ষার পর অপেক্ষা করে আছে বিশাল এক নবজীবন। ঘরে আত্মীয়স্বজন এলে যে লাজুক ছেলে মায়ের পেছনে আড়াল খুঁজত, সে-ই হয়তো হবে ক্ষুরধার তার্কিক। কদিন আগেও যে মেয়ে মায়ের হাত ধরে রাস্তা পার হতো, সে-ই হয়তো বেরিয়ে পড়বে বিশ্বভ্রমণে। বিশাল পরিসর, বিস্তৃত ভাবনার জগৎ আর নানা রকম সমীকরণ এখন থেকেই তোমাদের গড়েপিটে নেবে। তোমাদের কাছে অনুরোধ, বিভ্রান্ত কিংবা দিগ্ভ্রান্ত হয়ো না।

রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সুদীপা বড়ুয়া।ছবি: সংগৃহীত

অনেক কটি টিভি চ্যানেলের মতো তোমাদের সামনেও এখন অনেক ‘অপশন’। বেছে নেওয়ার আগে ১০ বার ভাবো। অভিজ্ঞ মুখগুলোর কাছে বারবার যাও। যাচাই করো। বাছাই করো।

অভিভাবকদেরও বলব, নিজের অপ্রাপ্তিটুকু জোর করে সন্তানের পিঠে বাড়তি বোঝার মতো চাপিয়ে দেবেন না। অনিচ্ছুক, অনাগ্রহী ছেলেমেয়েগুলোকে ধরেবেঁধে একটা অচেনা পথে ঠেলে দেবেন না। এমনিতেই ওরা বড্ড অভিমানী। সময় দিন ওদের সঙ্গে, ওদের মতো করে বাইরের পৃথিবীটা দেখুন। ওরা কিন্তু আমাদের সময়ের থেকে অনেক এগিয়ে। ভেবে দেখুন তো, মুঠোফোন নামের যন্ত্রটার কত কঠিন কঠিন সমস্যা, যা সামলাতে আমরা হিমশিম খেয়ে যাই, আর ওরা কেমন তুড়ি মেরে সমাধান করে দেয়! কত অনায়াসে বাস্তবটাকে বুঝে নেয়। যুক্তি তর্কে সব সময় কিন্তু ওদের হারাতেও পারবেন না। সময় বদলেছে। নিজেকেও বদলান।

আর তোমরা, তোমাদের বলছি, বৃত্তের বাইরে গিয়ে একটুখানি ভাবো। শুধু নিজেকে নিয়ে থাকতে কিংবা ভাবতে চাওয়ার মধ্যে কেমন যেন একটা স্বার্থপরতা আছে। জীবনে জীবন যোগ করো। আর্তের পাশে দাঁড়াও। সহমর্মী হও। পিছিয়ে থাকা বন্ধুটাকে সঙ্গে নিয়ে নাও। অঙ্কে যে বন্ধুটা দুর্বল, তাকে সঙ্গে নিয়েই না হয় পড়তে বসো। তোমার তাতে কিচ্ছু কমবে না। আর যদি কেউ তারপরেও অকৃতজ্ঞ হয়, সেটি তার দীনতা। দুহাত উজাড় করে দাও। দিতে শেখো। নতুন জীবনের পথে যা কিছু আসবে, তার ভালো-মন্দ সহজভাবে নিয়ো। আমরা যারা ক্ষয়ে যাচ্ছি, ক্রমশ ধূসর হয়ে যাচ্ছি, তারা নির্নিমেষে তোমাদের দিকেই তাকিয়ে আছি।