একই পদে ঘুরপাক শিক্ষা ক্যাডারদের

রাহুল শর্মা, ঢাকা

চাকরিজীবনের দীর্ঘ সময়েও পদোন্নতি পাচ্ছেন না বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। কিছু ক্যাডারে পদোন্নতি হচ্ছে নিয়মিত। আর শিক্ষক ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এক পদেই ঘুরপাক খাচ্ছেন বছরের পর বছর। পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্য ও বঞ্চনায় হতাশার পাশাপাশি চাপা অসন্তোষ আছে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে। এই ক্যাডারের অধিকাংশ সদস্যই সরকারি কলেজের শিক্ষক। অনেক শিক্ষকের সরাসরি ছাত্রদেরও কেউ কেউ অন্য ক্যাডারে উঁচু পদে আসীন হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় আছেন তাঁরা। এসব কারণে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরোক্ষভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

সূত্রমতে, সংকট সমাধান করতে সাড়ে ১২ হাজার পদ সৃষ্টির উদ্যোগ ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে’ আটকে আছে আট বছর ধরে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদটি গ্রেড-১ করা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চতুর্থ গ্রেডের ওপরে যেতে পারার নিয়ম না থাকায় তাঁদের সে সুযোগ মিলছে না। অথচ বেশির ভাগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকই অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার। বড় সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের পদ গ্রেড-৩-এ উন্নীত করার সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

ইডেন মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সেলিনা আক্তার ২৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ২০০৫ সালে। এরপর ১৭ বছরে পদোন্নতি পেয়েছেন মাত্র একবার। অথচ একই ব্যাচের প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে পদোন্নতি হয়েছে অন্তত দুটি। এ দুই ক্যাডারের একই ব্যাচের অধিকাংশ কর্মকর্তা এখন উপসচিব ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদায় কর্মরত। সেলিনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। অন্য ক্যাডারে সময়মতো পদোন্নতি হলেও আমাদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, একই সঙ্গে বিসিএসে যোগদান করলেও পদমর্যাদায় এখন আমরা জুনিয়র হয়ে গেছি।’

ইডেন মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সেলিনা আক্তার ২৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ২০০৫ সালে। এরপর ১৭ বছরে পদোন্নতি পেয়েছেন মাত্র একবার। অথচ একই ব্যাচের প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে পদোন্নতি হয়েছে অন্তত দুটি। এ দুই ক্যাডারের একই ব্যাচের অধিকাংশ কর্মকর্তা এখন উপসচিব ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদায় কর্মরত। সেলিনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। অন্য ক্যাডারে সময়মতো পদোন্নতি হলেও আমাদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, একই সঙ্গে বিসিএসে যোগদান করলেও পদমর্যাদায় এখন আমরা জুনিয়র হয়ে গেছি।’

সেলিনা আক্তার ২০০৯ সালে ইডেন কলেজে শিক্ষক থাকাকালে ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হিসেবে পেয়েছিলেন মেরীন জামানকে। ৩২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সেই ছাত্রীও এখন একই বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত। এই দুই শিক্ষকের বিসিএসের ব্যাচভিত্তিক ব্যবধান আট। বিষয়টি দুজনের জন্যই বিব্রতকর বলে মনে করেন তাঁরা।

কর্মকর্তার সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি ক্যাডারের একটি হলো শিক্ষা। বর্তমানে এই ক্যাডারে মোট পদ আছে ১৫ হাজার ৯৫০টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ১৪ হাজারের কিছু বেশি কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়মিত পদোন্নতি না হওয়া এবং কাম্যসংখ্যক নতুন পদ সৃষ্টি না হওয়ার কারণেই শিক্ষা ক্যাডারে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আট বছর আগে নতুন করে সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি অধিদপ্তর ও শিক্ষা ক্যাডারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডারে উচ্চতর পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জনের সময়সীমা পেরোনো অনেক শিক্ষক ১০-১২ বছরেও পদোন্নতি পাননি। এ ক্যাডারে সাধারণত পদোন্নতি হয় শূন্য পদে। ফলে দেখা যায়, একই বিসিএসের কোনো কোনো বিষয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতি হলেও সব বিষয়ে হয় না। মূলত পদ না থাকায় এ ক্যাডারে পদোন্নতিবঞ্চনা বাড়ছে। ফলে অনেক শিক্ষক পদোন্নতি ছাড়াই চলে যাচ্ছেন অবসরে।

অন্তত ২০ জন শিক্ষক জানিয়েছেন, শিক্ষা ক্যাডারে আগে প্রতিবছর কিছু পদ সৃজন করত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এ প্রক্রিয়াটি বন্ধ। এ ক্যাডারে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পদ একসঙ্গে সৃষ্টি করতে হবে—এমন অজুহাত দেখানো হচ্ছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে নতুন পদ সৃষ্টির উদ্যোগ। ওই শিক্ষকেরা জানান, দীর্ঘদিন পদোন্নতি না হওয়ায় সবার মধ্যে হতাশার পাশাপাশি চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নতুন পদ সৃষ্টির কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাউশির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে খুব শিগগির বিষয়টি আলোর মুখ দেখবে না। কেননা, ফাইল (নথি) চালাচালিতেই কেটে গেছে আট বছর। আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লোক পরিবর্তনের ফলে একই প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে বারবার। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিরক্ত ও বিব্রত।’

নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত ২৯ আগস্ট বলেন, ‘অনেক দিন থেকে আমরা সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টির জন্য কাজ করছি। এই চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

মাউশি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডারে ১২ হাজার ৫১৯ পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। ২০১৫ সালে ২৩টি কর্ম-এলাকায় ২৩ জন কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে একটি সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে অধ্যাপক ১ হাজার ৩৭৭, সহযোগী অধ্যাপক ৩ হাজার ৩৪৮, সহকারী অধ্যাপক ৪ হাজার ৩২৬ এবং প্রভাষক পদ ৩ হাজার ৪৬৮টি পদ সৃষ্টি করার প্রস্তাব পাঠানো হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে’ দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি। ফলে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে শিক্ষা ক্যাডারের হাজার হাজার কর্মকর্তা অবসরে চলে যাচ্ছেন। বারবার তাগাদা দিয়েও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।’
পদোন্নতিবৈষম্যের বিষয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে হতাশা প্রকাশ করেছেন খোদ মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। ১৪তম বিসিএসের এই সদস্য বলেন, ‘আমার কয়েকজন সরাসরি ছাত্র এখন যুগ্ম সচিব (গ্রেড-৩) হয়ে গেছে। অতিরিক্ত সচিবেরা (গ্রেড-২) আমাদের জুনিয়র। কিন্তু আমরা চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তাই আছি।’

একই পদে ঘুরপাক শিক্ষা ক্যাডারদের

রাহুল শর্মা, ঢাকা

চাকরিজীবনের দীর্ঘ সময়েও পদোন্নতি পাচ্ছেন না বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। কিছু ক্যাডারে পদোন্নতি হচ্ছে নিয়মিত। আর শিক্ষক ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এক পদেই ঘুরপাক খাচ্ছেন বছরের পর বছর। পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্য ও বঞ্চনায় হতাশার পাশাপাশি চাপা অসন্তোষ আছে শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মধ্যে। এই ক্যাডারের অধিকাংশ সদস্যই সরকারি কলেজের শিক্ষক। অনেক শিক্ষকের সরাসরি ছাত্রদেরও কেউ কেউ অন্য ক্যাডারে উঁচু পদে আসীন হওয়ায় বিব্রতকর অবস্থায় আছেন তাঁরা। এসব কারণে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম পরোক্ষভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।

সূত্রমতে, সংকট সমাধান করতে সাড়ে ১২ হাজার পদ সৃষ্টির উদ্যোগ ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে’ আটকে আছে আট বছর ধরে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পদটি গ্রেড-১ করা হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের চতুর্থ গ্রেডের ওপরে যেতে পারার নিয়ম না থাকায় তাঁদের সে সুযোগ মিলছে না। অথচ বেশির ভাগ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকই অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার। বড় সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের পদ গ্রেড-৩-এ উন্নীত করার সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

ইডেন মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সেলিনা আক্তার ২৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ২০০৫ সালে। এরপর ১৭ বছরে পদোন্নতি পেয়েছেন মাত্র একবার। অথচ একই ব্যাচের প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে পদোন্নতি হয়েছে অন্তত দুটি। এ দুই ক্যাডারের একই ব্যাচের অধিকাংশ কর্মকর্তা এখন উপসচিব ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদায় কর্মরত। সেলিনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। অন্য ক্যাডারে সময়মতো পদোন্নতি হলেও আমাদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, একই সঙ্গে বিসিএসে যোগদান করলেও পদমর্যাদায় এখন আমরা জুনিয়র হয়ে গেছি।’

ইডেন মহিলা কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সেলিনা আক্তার ২৪তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন ২০০৫ সালে। এরপর ১৭ বছরে পদোন্নতি পেয়েছেন মাত্র একবার। অথচ একই ব্যাচের প্রশাসন ও পুলিশ ক্যাডারে পদোন্নতি হয়েছে অন্তত দুটি। এ দুই ক্যাডারের একই ব্যাচের অধিকাংশ কর্মকর্তা এখন উপসচিব ও পুলিশ সুপার পদমর্যাদায় কর্মরত। সেলিনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বৈষম্য দিন দিন বাড়ছে। অন্য ক্যাডারে সময়মতো পদোন্নতি হলেও আমাদের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, একই সঙ্গে বিসিএসে যোগদান করলেও পদমর্যাদায় এখন আমরা জুনিয়র হয়ে গেছি।’

সেলিনা আক্তার ২০০৯ সালে ইডেন কলেজে শিক্ষক থাকাকালে ব্যবস্থাপনা বিভাগে মাস্টার্সের শিক্ষার্থী হিসেবে পেয়েছিলেন মেরীন জামানকে। ৩২তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়ে সেই ছাত্রীও এখন একই বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে কর্মরত। এই দুই শিক্ষকের বিসিএসের ব্যাচভিত্তিক ব্যবধান আট। বিষয়টি দুজনের জন্যই বিব্রতকর বলে মনে করেন তাঁরা।

কর্মকর্তার সংখ্যার দিক দিয়ে সবচেয়ে বড় দুটি ক্যাডারের একটি হলো শিক্ষা। বর্তমানে এই ক্যাডারে মোট পদ আছে ১৫ হাজার ৯৫০টি। এর মধ্যে কর্মরত আছেন ১৪ হাজারের কিছু বেশি কর্মকর্তা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিয়মিত পদোন্নতি না হওয়া এবং কাম্যসংখ্যক নতুন পদ সৃষ্টি না হওয়ার কারণেই শিক্ষা ক্যাডারে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আট বছর আগে নতুন করে সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাউশি অধিদপ্তর ও শিক্ষা ক্যাডারের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডারে উচ্চতর পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জনের সময়সীমা পেরোনো অনেক শিক্ষক ১০-১২ বছরেও পদোন্নতি পাননি। এ ক্যাডারে সাধারণত পদোন্নতি হয় শূন্য পদে। ফলে দেখা যায়, একই বিসিএসের কোনো কোনো বিষয়ের শিক্ষকদের পদোন্নতি হলেও সব বিষয়ে হয় না। মূলত পদ না থাকায় এ ক্যাডারে পদোন্নতিবঞ্চনা বাড়ছে। ফলে অনেক শিক্ষক পদোন্নতি ছাড়াই চলে যাচ্ছেন অবসরে।

অন্তত ২০ জন শিক্ষক জানিয়েছেন, শিক্ষা ক্যাডারে আগে প্রতিবছর কিছু পদ সৃজন করত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে এ প্রক্রিয়াটি বন্ধ। এ ক্যাডারে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার পদ একসঙ্গে সৃষ্টি করতে হবে—এমন অজুহাত দেখানো হচ্ছে। কিন্তু আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে নতুন পদ সৃষ্টির উদ্যোগ। ওই শিক্ষকেরা জানান, দীর্ঘদিন পদোন্নতি না হওয়ায় সবার মধ্যে হতাশার পাশাপাশি চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

নতুন পদ সৃষ্টির কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মাউশির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে খুব শিগগির বিষয়টি আলোর মুখ দেখবে না। কেননা, ফাইল (নথি) চালাচালিতেই কেটে গেছে আট বছর। আর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লোক পরিবর্তনের ফলে একই প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে বারবার। বিষয়টি নিয়ে আমরা বিরক্ত ও বিব্রত।’

নতুন পদ সৃষ্টির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গত ২৯ আগস্ট বলেন, ‘অনেক দিন থেকে আমরা সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টির জন্য কাজ করছি। এই চেষ্টা অব্যাহত আছে।’

মাউশি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, শিক্ষা ক্যাডারে ১২ হাজার ৫১৯ পদ সৃষ্টির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। ২০১৫ সালে ২৩টি কর্ম-এলাকায় ২৩ জন কর্মকর্তা নিয়োগের মাধ্যমে একটি সমীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটির কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে অধ্যাপক ১ হাজার ৩৭৭, সহযোগী অধ্যাপক ৩ হাজার ৩৪৮, সহকারী অধ্যাপক ৪ হাজার ৩২৬ এবং প্রভাষক পদ ৩ হাজার ৪৬৮টি পদ সৃষ্টি করার প্রস্তাব পাঠানো হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে’ দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে সাড়ে ১২ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি। ফলে শিক্ষার স্বাভাবিক কার্যক্রম নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে। পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে শিক্ষা ক্যাডারের হাজার হাজার কর্মকর্তা অবসরে চলে যাচ্ছেন। বারবার তাগাদা দিয়েও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না।’
পদোন্নতিবৈষম্যের বিষয়ে সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে হতাশা প্রকাশ করেছেন খোদ মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ। ১৪তম বিসিএসের এই সদস্য বলেন, ‘আমার কয়েকজন সরাসরি ছাত্র এখন যুগ্ম সচিব (গ্রেড-৩) হয়ে গেছে। অতিরিক্ত সচিবেরা (গ্রেড-২) আমাদের জুনিয়র। কিন্তু আমরা চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তাই আছি।’