‘কষ্ট লাঘবের’ গুচ্ছে বেড়েছে ভোগান্তি, মাইগ্রেশন চান শিক্ষার্থীরা

সাকেরুল ইসলাম, জবি প্রতিনিধি

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাগবে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে ঘটেছে তার বিপরীত। ভোগান্তি হতাশা বেড়েছে আরও বেশি। গুচ্ছে কর্তৃপক্ষের অনিয়মে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এমনই একজন মাহফুজ আলম অনি (২০)।  নীলফামারীর চিলাহাটি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে প্রস্তুতি নিতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য। এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ‘বি’ ইউনিটে ৫৫.৫ নম্বর পান। প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করেন ৮ জায়গায়।  চতুর্থ মেরিট লিস্ট প্রকাশ হলে প্রাথমিক ভর্তি নিশ্চিত করেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। দিন গুনতে থাকেন পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে সুযোগ করে নেওয়ার।

তবে গত ১৯ ডিসেম্বর ভর্তি কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে সপ্তম মেধাতালিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানায় গুচ্ছ কমিটি। বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সপ্তম মেধাতালিকা থেকে ভর্তিচ্ছুরা গুচ্ছভুক্ত এক বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিবেচিত হলে তাকে অবশ্যই পছন্দমতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় গুচ্ছভুক্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না। এ পর্যায় থেকে প্রাথমিক ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে না (বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ)। ফলে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বাধ্যতামূলকভাবেই ভর্তি হতে হচ্ছে তাদের।

গুচ্ছ কমিটির এ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। ফলে ২০ ডিসেম্বর শুরু হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন ও অনশন কর্মসূচি।  শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কথা বললেও গত বৃহস্পতিবার গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সপ্তম মেধাতালিকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধের পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে গুচ্ছ ভর্তি সংক্রান্ত মূল কমিটি। তবে দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান একাধিক উপাচার্য।

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুচ্ছ কমিটি পরীক্ষা শেষ করে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিল। ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে দেরিতে, এখন এই দায় আমাদের ওপর চাপাচ্ছে।

গুচ্ছ কমিটির এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগী মাহফুজ আলম অনি বলেন, ‘গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধ করার সিদ্ধান্তে আমি ভালো স্কোর নিয়েও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাব না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থাকায় তা পরিবর্তনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। এটা অন্যায়। উপাচার্যদের সিদ্ধান্তে অসহায় আমরা।’

আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আবু ওবায়দা বলেন, ‘উপাচার্যদের এ সিদ্ধান্ত এক প্রকার জুলুম। আমাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুরুতে বলেছিল মাইগ্রেশনে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় পাবে শিক্ষার্থীরা কিন্তু এখন তারা উল্টোটা করছে। নিজেদের দোষ ঢাকতে তড়িঘড়ি করে ভর্তি শেষ করতে চাইছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্তে গুচ্ছ কমিটি অটল থাকলেও মুখ খুলতে চান না গুচ্ছ কমিটিভুক্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। একাধিক উপাচার্য বলেন, কোনো বিষয়ে আলোচনা হলে আমরা পরামর্শ বা সঠিক নির্দেশনা দিতে পারি কিন্তু মুখপাত্র আমরা নই।

তবে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির নেতৃত্বে থাকা জবি উপাচার্য এবং শাবিপ্রবি উপাচার্যকে একাধিকবার ফোন করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। অনেকে কোনো প্রকার মন্তব্য না করেই ফোন রেখে দেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক উপাচার্য বলেন, এখানে এক-দুইজন সদস্যদের দ্বিমতে কিছুই হয় না। সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ মেধাতালিকা পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া হয়েছে- এখন দ্রুত ক্লাশ শুরু করতে চায় সবাই। যে কারণে তাড়াতাড়ি করা হচ্ছে। তবে সবার কথা চিন্তা করা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

‘কষ্ট লাঘবের’ গুচ্ছে বেড়েছে ভোগান্তি, মাইগ্রেশন চান শিক্ষার্থীরা

সাকেরুল ইসলাম, জবি প্রতিনিধি

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের কষ্ট লাগবে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু হয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা। কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে ঘটেছে তার বিপরীত। ভোগান্তি হতাশা বেড়েছে আরও বেশি। গুচ্ছে কর্তৃপক্ষের অনিয়মে ভোগান্তিতে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এমনই একজন মাহফুজ আলম অনি (২০)।  নীলফামারীর চিলাহাটি সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে প্রস্তুতি নিতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য। এবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ‘বি’ ইউনিটে ৫৫.৫ নম্বর পান। প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০০ টাকা ফি দিয়ে আবেদন করেন ৮ জায়গায়।  চতুর্থ মেরিট লিস্ট প্রকাশ হলে প্রাথমিক ভর্তি নিশ্চিত করেন শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে। দিন গুনতে থাকেন পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশনের মাধ্যমে সুযোগ করে নেওয়ার।

তবে গত ১৯ ডিসেম্বর ভর্তি কমিটির এক বিজ্ঞপ্তিতে সপ্তম মেধাতালিকা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানায় গুচ্ছ কমিটি। বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, সপ্তম মেধাতালিকা থেকে ভর্তিচ্ছুরা গুচ্ছভুক্ত এক বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিবেচিত হলে তাকে অবশ্যই পছন্দমতো একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে। অন্যথায় গুচ্ছভুক্ত কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে না। এ পর্যায় থেকে প্রাথমিক ভর্তিকৃত বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে না (বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ)। ফলে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বাধ্যতামূলকভাবেই ভর্তি হতে হচ্ছে তাদের।

গুচ্ছ কমিটির এ সিদ্ধান্তে বিপাকে পড়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী। ফলে ২০ ডিসেম্বর শুরু হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন ও অনশন কর্মসূচি।  শিক্ষার্থীদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার কথা বললেও গত বৃহস্পতিবার গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সপ্তম মেধাতালিকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধের পূর্বের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে গুচ্ছ ভর্তি সংক্রান্ত মূল কমিটি। তবে দ্রুত ভর্তি কার্যক্রম শেষ করার জন্য এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান একাধিক উপাচার্য।

তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, গুচ্ছ কমিটি পরীক্ষা শেষ করে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় ছিল। ভর্তি কার্যক্রম শুরু করেছে দেরিতে, এখন এই দায় আমাদের ওপর চাপাচ্ছে।

গুচ্ছ কমিটির এ সিদ্ধান্ত বহাল থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে ভুক্তভোগী মাহফুজ আলম অনি বলেন, ‘গুচ্ছভুক্ত ২২ বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধ করার সিদ্ধান্তে আমি ভালো স্কোর নিয়েও ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাব না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থাকায় তা পরিবর্তনের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। এটা অন্যায়। উপাচার্যদের সিদ্ধান্তে অসহায় আমরা।’

আরেক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আবু ওবায়দা বলেন, ‘উপাচার্যদের এ সিদ্ধান্ত এক প্রকার জুলুম। আমাদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। শুরুতে বলেছিল মাইগ্রেশনে পছন্দের বিশ্ববিদ্যালয় পাবে শিক্ষার্থীরা কিন্তু এখন তারা উল্টোটা করছে। নিজেদের দোষ ঢাকতে তড়িঘড়ি করে ভর্তি শেষ করতে চাইছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন বন্ধের সিদ্ধান্তে গুচ্ছ কমিটি অটল থাকলেও মুখ খুলতে চান না গুচ্ছ কমিটিভুক্ত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। একাধিক উপাচার্য বলেন, কোনো বিষয়ে আলোচনা হলে আমরা পরামর্শ বা সঠিক নির্দেশনা দিতে পারি কিন্তু মুখপাত্র আমরা নই।

তবে গুচ্ছ ভর্তি কমিটির নেতৃত্বে থাকা জবি উপাচার্য এবং শাবিপ্রবি উপাচার্যকে একাধিকবার ফোন করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি। অনেকে কোনো প্রকার মন্তব্য না করেই ফোন রেখে দেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক উপাচার্য বলেন, এখানে এক-দুইজন সদস্যদের দ্বিমতে কিছুই হয় না। সংখ্যাগরিষ্ঠদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ হয়। তাছাড়া শিক্ষার্থীদের ষষ্ঠ মেধাতালিকা পর্যন্ত সুযোগ দেওয়া হয়েছে- এখন দ্রুত ক্লাশ শুরু করতে চায় সবাই। যে কারণে তাড়াতাড়ি করা হচ্ছে। তবে সবার কথা চিন্তা করা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।